জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩ নভেম্বর। সে হিসাবে প্রায় ৭০ বছর বয়স জহিরন বেওয়ার। তবে তাঁর ছেলে তোরাব আলীর মতে, জহিরন বেওয়ার বয়স ৮০ বছর। কথা সেটা নয়। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের এই নারী এখনো সাইকেল চালান। আর সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাস্থ্যসচেতনতার কাজ করেন। স্বাস্থ্যসেবাও দিয়ে থাকেন।
কিছুদিন আগে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামে গিয়ে জানা গেল, প্রয়াত ছাহেদ আলীর স্ত্রী জহিরন বেওয়াকে সবাই ‘নানি’ বলে ডেকে থাকেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তাঁর। ছোট ছেলে তোরাব আলীর বয়স যখন সাত-আট মাস, তখন জহিরন বেওয়ার স্বামী মারা যান। সালটা ১৯৬৯ বা ১৯৭০। সংসারের হাল ধরতে হয় জহিরন বেওয়াকে। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা আর এবাড়ি-ওবাড়ি টুকটাক কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন।
চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা জহিরন বেওয়া ১৯৮০ সালে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে ধাত্রী ও সেবিকা হিসেবে কাজ পান। জহিরন কাজ করতেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী রেহেনা বেগমের অধীনে। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পুরুষ ও মহিলা বন্ধ্যাকরণ রোগীদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন জহিরন।’
১৯৯৫ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে এখনো বাইসাইকেল চালিয়ে আশপাশের কয়েক গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করার কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ সাধারণ রোগের ওষুধ বিক্রি করেন। জহিরন বলেন, ‘এই কাজ এখন একই সঙ্গে শখ ও পেশায় পরিণত হয়েছে।’
গ্রাম্য ডাক্তার বা পল্লিচিকিৎসকেরা যে ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন, জহিরন বেওয়া সেটাই করছেন বলে জানালেন আদিতমারীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাশেম আলী। দীর্ঘদিন থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে এ কাজ করছেন তিনি।
সরকারি কাজ ছাড়ার পর জহিরন বেওয়া একবার ভেলাবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ভোটে পারি নাই, কিন্তু সব সময় মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াই। টাকার বিনিময়ে কিছু ওষুধ বিক্রি করি। রোগীর সমস্যা বেশি হলে হাসপাতালে যেতে বলি। আমি যত দিন বেঁচে আছি, এই কাজ করে যেতে চাই।’
তালুক দুলালী গ্রামেই কথা হয় দুলালী পাগলার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার, সহকারী শিক্ষক জোৎস্না বেগম, সাজেদা বেগম, সুরতন বেগম ও ফজিলা বেগমের সঙ্গে। সবাই জানান, জহিরন বেওয়া স্বল্পশিক্ষত হলেও ধাত্রী ও সেবিকার কাজের অভিজ্ঞতায় ছোটখাটো অসুখে মানুষের পাশে দাঁড়ান। এতে অনেকেরই উপকার হয়।
আর সেই উপকার করতে আজও জহিরন বেওয়া সাইকেল নিয়ে বের হন গ্রামের রাস্তায়। হাজির হন বাড়ি বাড়ি।