ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী একজন বিশিষ্ট জলবায়ু গবেষক। প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে তিনি ওডব্লিউএসডি-এলসিভিয়ার ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
প্লাস্টিক দূষণ কীভাবে গঙ্গা নদী থেকে সাগরে গিয়ে পরিবেশ ও প্রাণীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণা দলের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। গবেষণার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নীতিমালা প্রণয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।
সুন্দরবনের পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে তিনি পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে কার্পেট ও অন্যান্য পণ্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি উপকূলীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে এটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিরও প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
নারী নির্যাতন ও বৈষম্য রোধে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দেন ড. গাউসিয়া। তার মতে, মা-বাবার উচিত সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্মান করতে শেখানো। নারীদের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং নারীবিজ্ঞানীদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করাই বিজ্ঞানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হবে।
শৈশব থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পারিবারিক দুর্যোগের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে বন্ধুদের উৎসাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে ওঠা গাউসিয়া তার শিক্ষা জীবনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। নারী হিসেবে গবেষণাক্ষেত্রে বহুবার বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন, তবে কখনো থেমে যাননি। তার ভাষায়, “যেখানেই ‘না’ শুনেছি, সেখানে ‘হ্যাঁ’ করার জন্য লড়ে গেছি। কারণ আমার উদ্যোগে যদি একজনও উপকৃত হয়, তাহলে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত।”
কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ স্কলারশিপের অধীনে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন তিনি। ছোটবেলায় বিজ্ঞানীদের কাজ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষণার প্রতি আগ্রহী হন এবং পরিবেশ, প্রাণী ও মানবকল্যাণে গবেষণাকে নিজের জীবন লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী তার গবেষণা ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কেউ সমাজের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। পরিবেশ রক্ষা, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নারীর ক্ষমতায়নে তার উদ্যোগ আগামী দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।