ফাতিমা খান
Obsessive love বলে একটা কথা আছে যেখানে কারো প্রতি আকর্ষণ এবং possessiveness এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছায় যে ” তাকে ছাড়া বাঁচব না” বা “এই জীবন আর রাখব না” জাতীয় একটা মানসিক সমস্যার তৈরী হয়। অবশ্য কোন ব্যাপারে মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া অসুস্থতা অথবা অপরাধ বলে আমি মনে করি। এই প্রবনতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো অহরহ ভুল করে। হয়ত নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নয়ত সংগীর বড় কোন ক্ষতি করে ফেলে।
আবেগেরও একটা সীমারেখা আছে যার অন্যপাশটা প্রাণঘাতী। আপনার সাথে কেউ অন্যায় বা প্রতারণা করেছে, হোক কাছের বা দূরের – তার সমাধান অবশ্যই আছে! আত্নাহুতি দেয়া মানে নিজে হেরে যাওয়া আর অন্যায়কে জিতিয়ে দেওয়া। অনেকেই বলছে “আত্নহত্যার জন্য ছাতিতে সাহস লাগে, সবাই পারেনা”….তো এই সাহস তবে বেঁচে থাকার জন্য কাজে লাগালে কি হত? সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে তারচেয়েও বেশি সাহস লাগে!
দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরার জন্য সবসময়ই একটা তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যার অন্যায় অবদারগুলোকে আপনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেই আপনি দিনকে দিন বৈধ সম্পর্কের কাছে তথা জীবনের কাছে হেরে যাচ্ছেন। এই তৃতীয় পক্ষ কোন এক্সট্রা ম্যারিটাল এ্যাফেয়ার /পার্টনারই হতে হবে এমনটা জরুরী না। আপনার নিজের কুচরিত্র, অন্য কোন চাপিয়ে দেয়া দায়িত্ব অথবা আপনার উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটানো তৃতীয় কোন ব্যাক্তিও হতে পারে যার বা যাদের অন্যায় আবদার আর চাহিদাগুলো টিউমারের মত আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে, যার ফলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কটা দিনকে দিন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে।
প্রত্যেকটি সম্পর্কের শুরু হয় দুইপাতার চারাগাছটার মত। নাজুক সম্পর্কটাকে নিত্যদিন প্রয়োজনীয় সব খোরাকের যোগান দিয়ে একটু একটু করে বাড়তে দিতে হয়। দূর্বল দিকগুলোতে মনোযোগ দিতে হয় অনেক বেশি। প্রয়োজনে একে অপরের সাথে কাউন্সিলিং করে নিলে সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়। যে সম্পর্কের শুরু হয় অবিশ্বাস বা ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে, বলাবাহুল্য সে সম্পর্ক অস্থায়ী।
এখন কথা হল, দাম্পত্য জীবনে হাজার রকম সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা বা সমাধানের চেষ্টা করাটা আমাদের সুশীল সমাজের জনগণ মানহানীকর বলে মনে করেন। “মানুষ কি বলবে”, ” ছিঃ আমার বংশে কেউ কোনদিন বউ/ স্বামী তালাক দেয়নি”, ” চুপ, মেয়ে মানুষের এত কথা বলতে নেই, মানিয়ে নিতে হয়”, ” তুই না পুরুষ মানুষ, বউ সামলে রাখতে পারিস না!”…..কথাগুলো শোনার ভয়ে অনেকেই নীরবতার আশ্রয় নেন। নীরবে প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণা সহ্য করতে গিয়ে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। লোক সমাজে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে পরকীয়া বা অন্য নেশায় ডুবে যান, নয়ত আত্নাহুতি দেন।
ডাঃ আকাশ আর ডাঃ মিতুর কেইসটা যদি আদ্যোপান্ত ভেবে দেখা হয় তাহলে বলব ( মিতু অবশ্যই অপরাধী) ডাঃ আকাশ কোন মহানায়ক ছিলনা ( মিডিয়া আকাশেকে সত্যি সত্যি আকাশে তুলেছ)। প্রেমকে অমর করতে গিয়ে নিজেকেই শেষতক বলি দিল… এরকম যারা ভাবছেন তারা অবশ্যই ভুল করছেন।
প্রথমত, একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ জেনেবুঝে কোন চরিত্রহীনাকে বিয়ে করার কথা না। ( আকাশের ভাষ্যমতে বিয়ের আগেই সে জেনেছিল তার হবুস্ত্রী ও প্রেমিকা একজন ব্যাভিচারিনী) ।
দ্বিতীয়ত, বিয়ে যখন করেই ফেলেছে, সম্পর্কটাকে বলিষ্ঠ করার জন্য তার নিজের সর্বাত্নক চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। ( এমনি এমনি বলা হয়নাই ” দায়ুস জান্নাতে প্রবেশ করবেনা”)। যদি তারপরও স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হয়, তবে সসম্মানে বিদায় করে দেয়াটাই সমিচীন হত ( ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী) ।
ডাঃ আকাশের ভাই এর বয়ানানুযায়ী মিতুকে তার স্বামী প্রায়ই মারধর করত। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ( মিতুর স্বীকারোক্তি) সেখানেও এটা স্পষ্ট যে তাকে বেদম মারধর করে জবাব নেয়া হচ্ছে। (ভিডিওটির অংশবিশেষ ভাইরাল হয়েছে, পুরাটা নয়। এর কারণ আমার অজানা).
একজন মানুষ সমাজে সবার চোখে অত্যন্ত সহজ, সরল, মেধাবী ও দায়িত্বশীল বলে পরিচিত হলেও দরজার আড়ালে প্রায়ই তার ঠিক বিপরীত একটা চেহারা দেখতে পাওয়া যায় যা তার খুব নিকটজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনা। শুধুমাত্র আবেগের বশীভুত হয়ে সমাজ আর মানসম্মানের ভয়ে মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ কোনভাবেই আত্নহত্যা করতে পারেনা। আত্নহত্যা মহাপাপ, অনেকগুলো বছর একটু একটু অপরাধের ধারাবাহিকতায় আজ এই মহা অপরাধটা করে বসেছে ডাঃ আকাশ । আল্লাহ তাকে মাফ করুন- এইটুকুই এখন বলতে পারি।
মিতুর শাস্তি হোক, তবে যেটুকু তার পাওনা সেটুকু। মিডিয়া তাকে আবর্জনার মত রাস্তায় ছুড়ে দিয়েছে, একদল নষ্ট মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতে তাকে অগণিত বার বলাতকার করছে শুধুমাত্র কমেন্ট দিয়ে।
অন্যের জীবন নিয়ে আমাদের চরম উৎসাহ বরাবরই। প্রত্যেকটা ঘটনা আর তার কন্সেকুয়েন্স আমাদের জীবনের জন্য এক বিশাল শিক্ষা ( যারা শিক্ষা নিতে চায় তাদের জন্য আরকি!)। দেখে, শুনে, ঠেকে তারপরও যদি আমরা কিছু উপলব্ধি করি/ শিক্ষা নেই, তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও আমাদের সম্পর্কগুলোর ও মন মানসিকতার সংস্কার হবে।