banner

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 416 বার পঠিত

উলের উষ্ণতায়

alaaঅপরাজিতাবিডি ডটকম: প্রকৃতিতে এখন শীতের দাপট। রাতে হালকা শিশিরে ভিজে যাচ্ছে পথঘাট। ভোর আর রাতের বেলায় দেখা মেলে কুয়াশারও। শীতে উষ্ণতার জন্য দরকার একটু বাড়তি কাপড়চোপড়। এ ক্ষেত্রে সবার প্রথম পছন্দ উলের কাপড়।

এমনিতেই ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে শীতকাল একটি আকর্ষণীয় ঋতু। প্রয়োজন আর শখ মিলে উপভোগ্য হয়ে ওঠে শীতের পোশাকের সমাহার। এ ক্ষেত্রে মেয়েরা একধাপ এগিয়ে। সেক্ষেত্রে বরাবরের মতো উলের পোশাকের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। সাথে রয়েছে ডিজাইনের বৈচিত্র্য। সব মিলিয়ে উলের উষ্ণতায় এবারের শীত কাটবে একটু ভিন্ন সৌন্দর্য নিয়ে। সময়ের পরিবর্তনে এখন একেবারে বেসিক উল নিটেড পোশাকের চেয়ে মিক্স স্টাইল পোশাকই বেশি চলছে। এসব সোয়েটারে জ্যাকেটের মতো জিপার বা হুড আছে। একরঙা বা স্ট্রাইপের গোলগলা উলের সোয়েটারেরও চাহিদা রয়েছে বেশ। সেই সাথে ফ্যাশনেবল হওয়ার জন্য উলের শাল, মাফলার, টুপি ইত্যাদিও বেশ বাজার মাত করছে।

উল উদ্ভাবিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে। অনেকের মতে, আরবের যাযাবররা এটিকে ইউরোপে নিয়ে যায়। কারও কারও মতে, এটি এসেছে পারসিয়ানদের কাছ থেকে। সর্বশেষ ধারণা, উলের তৈরি পোশাকের উত্পত্তি খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে, মধ্যপ্রাচ্যে এবং এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মাধ্যমে ইউরোপে বিস্তৃত হয়েছে। উলের ব্যবহার সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ইরানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে। সম্ভবত লৌহযুগে হাতে তৈরি উলের পোশাকের প্রচলন হয়। রোমান যুগে উল, লিনেন ও চামড়ার পোশাকের প্রথম প্রচলন ঘটে ইউরোপে। মধ্যযুগে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উলের ব্যবসা শুরু হয়। ইংল্যান্ডে প্রথম উল ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হয় ৫০ খ্রিস্টাব্দে উইনচেস্টারে রোমানদের দ্বারা। ১৭৯৭ সালে ব্রিটিশরা অস্ট্রেলিয়ায় ১৩টি মেরিনো ভেড়া নিয়ে একটি উলের ফ্যাক্টরি তৈরি করে। এই মেরিনো ভেড়ার লোম থেকেই তৈরি করা হয় সবচেয়ে উন্নত উল এবং তাতে তৈরি হয় পাতলা উলের পোশাক। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় উল উত্পাদক দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। উলের পোশাকের আবির্ভাব শীতপ্রধান দেশে উষ্ণতা প্রদানের লক্ষ্যে হলেও ফ্যাশনেবল প্রোডাক্ট হিসেবে এর যাত্রা শুরু ১৯ শতকে। প্রথম এমনটি দেখা যায় ১৮২৪ সালে ডাচ ম্যাগাজিন পেনিলোপি, যা ছিল উলের ক্রোসেট প্যাটার্নে তৈরি। পোশাক ছাড়াও উলের তৈরি লেইস ১৯ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্সে প্রচলিত হয় এবং ১৮০০ সালে তা চীন, ইরান, উত্তর আফ্রিকা, ভারতসহ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে উলের পোশাক হাতে বোনা হলেও পরবর্তীকালে মেশিন আবিষ্কারের ফলে অনেক জটিল প্যাটার্নের পোশাক তৈরি সহজ ও দ্রুত হয়ে যায়।

এবারের আয়োজন

এ বছরের ফ্যাশন ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে ফাইন উলের নানা রঙের কোট, মেয়েদের পোশাকে বিভিন্ন ধরনের নেকলাইন যেমন—হাইনেক, কলার, বোটনেক, কাউলনেকের সোয়েটার, পুলওভার, এ লাইন কার্ডিগান, জ্যাকেট, পঞ্চ আকৃতির শাল ইত্যাদি। সব ক্ষেত্রেই পোশাক কিছুটা বেশি লম্বা। কোমরের শেপ কিছুটা কম এবং খানিকটা ঢিলেঢালা। এ ছাড়া ছেলেদের সোয়েটার, কার্ডিগান, জ্যাকেট বা কোটের আধিপত্য; তবে সোয়েটার, কার্ডিগানে কলার, ইউ নেক ও ভি নেক এবং জ্যাকেটে রাউন্ড নেকের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। সব ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বোতামের ব্যবহারও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রিন্টের ব্যবহার। এ ছাড়া উলের তৈরি নানা রকমের স্কার্ফ, মাফলার, টুপি, মোজা, গ্লাভস তো থাকছেই। এবারের শীতের পোশাকে গাঢ় রঙের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া সাদা, কালো, অ্যাশ—এ ধরনের রং তো থাকছেই।

যত্নআত্তি

শীতে উলের কাপড়ের জন্য চাই বাড়তি যত্ন। কীভাবে এ ধরনের কাপড়ের যত্ন নেবেন আসুন জেনে নিই।

 উলের জামা স্টোর করার সময় ভাঁজ করে না রেখে ঝুলিয়ে রাখুন।

 উলের পোশাকে ভাঁজ পড়লে হালকা গরম পানিতে রাখুন, তারপর ঝুলিয়ে রাখুন। দেখবেন ভাঁজ আর নেই।

 পরপর দু’দিন এক উলের জামা-সোয়েটার টুপি পরবেন না। অন্তত ২-৩ দিন পর পর উলের পোশাক ব্যবহার করুন।

 উলের পোশাক ওয়াশিং মেশিনে কাচবেন না।

 বাড়িতে কাচতে না পারলে লন্ড্রিতে দিয়ে দিন, এতে ভালো হবে। তারা জানে কীভাবে কাচতে হবে।

 বছরের একবারের বেশি উলের পোশাক ড্রাইক্লিন করতে দেবেন না।

উলের পোশাকগুলো ছায়ায় নেড়ে দিন, সরাসরি রোদে শুকাতে দেবেন না।

ইস্ত্রি করার সময় উলের পোশাক উল্টে নিন।

 এয়ারকন্ডিশন রুমে উলের পোশাক রাখতে হলে ড্রাইক্লিন করে রাখবেন।

উলের পোশাকে রঙের কারণে আলাদা আলাদা পাত্রে রেখে কাচবেন। এতে রং ভালো থাকবে।

ঘামের দাগ বসতে দেবেন না। ঘেমে যাওয়া অংশ বাড়ি ফিরেই গরম পানি আর ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

-প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

Facebook Comments