উত্তরটা জানাবেন কেউ ?
জিয়াউল হক
বই আমাদের অনেকেরই প্রিয়। জ্ঞান বিজ্ঞান আর সভ্যতার বিকাশ নির্ভর করে এর উপরেই! মানবসভ্যতা বিকাশে বইয়ের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। বইয়ের প্রচলন কবে, কিভাবে হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়, তবে ইতিহাস ঘেঁটে মোটামুটি একটা চিত্র পাই।
কাদামাটির ট্যাবলেট বানিয়ে ( মাত্র কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ‘শ্লেট’ বানিয়ে লেখা হতো ) তাতে লেখা হতো, এভাবেই বইয়ের প্রচলন ঘটেছে সর্বপ্রথম মেসোপটোমিয়া তথা আজকের ইরাকে খৃষ্টপূর্ব তিন হাজার বৎসর আগে। প্রাচীন বাগাদাদে আসিরীয় সম্রাটের রাজকীয় লাইব্রেরিতে এরকম বাইশ হাজার বই পাওয়া গেছে যেগুলো খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে লিখিত হয়েছিল।
মিশরে খৃষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বৎসর আগে মন্ড থেকে প্যাপিরাসে (Papyrus) লেখার প্রচলন শুরু হয়। মিশরের তৃতীয় ‘রামেসিস’ এর (খৃস্টপূর্ব দুই হাজার বৎসর সময়কাল ) শাসনকালের বর্ণনা নিয়ে ৪০ মিটার লম্বা একটা ‘বই’ পাওয়া গেছে মিশরীয় পিারামিডে। এই প্যাপিরাস (Papyrus) থেকেই আধুনিক ‘পেপার’ শব্দটির উদ্ভব।
একই সময় পাখির পালক এবং জীব জন্তুর হাড়েও লেখা হতো। প্রাচীন চীনে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যে কাঠের খন্ডের উপরে মোম লাগিয়ে তার উপরে লেখার প্রচলন ছিল, এটা অবশ্য অনেকটা প্রাচীন শ্লেট-এর অনুরুপ।
খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রোমে জীব জানোয়ারের চামড়াকে ব্যবহার করে পার্চমেন্ট উদ্ভাবন করা হলে বই তৈরিতে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চীনে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সর্বপ্রথম মন্ড থেকে কাগজ উৎপাদন করে। আর সে থেকে কাগজই বই প্রস্তুতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে।
সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাগে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে। ইসলামের প্রথম নির্দেশই হলো; ‘পড়’ অর্থাৎ জ্ঞানচর্চা ও বিস্তার করা। ফলে অচিরেই জ্ঞানচর্চায় এক অসাধারণ মাত্রা যুক্ত হয় আর এর অনিবার্যতায় বই রচনা, প্রকাশ ও প্রচারে বিপ্লব সূচিত হয়।
ইউরোপে খৃষ্টধর্ম প্রচারে বাইবেল রচনা ও প্রকাশের ধারাবাহিকতায় বই প্রকাশ ও প্রচার গতীময়তা পায়। পঞ্চদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে প্রিন্টিং মেশিন উদ্ভাবন হলে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়।
পিউ রিসার্চ সেন্টার ‘ডেটা অন আমেরিকান রিডিং হ্যবিটস’ শিরোনামে একটা গবেষণাপত্র ও জরিপ প্রকাশ করেছে ২০১৫ সালে। সে বৎসর শতকরা ৭২ জন আমরিকান বৎসরে একটা বই পড়েছে। এই ধারা গত পাঁচ বসরই পড়তির দিকে। পুরো বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন এমন আমেরিকান নাগরিকের হার ২০১১ সালে ছিল ৭৯ জন। ২০১৫ সালে; ৭২ জন।
জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ মানুষই বৎসরে ৪ টা বই পড়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বই পড়ার হার বেশি। শতকরা ৭৭ জন নারী বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন। পুরুষদের মধ্যে এই হার শতকরা ৬৭ জন।
একজন নারী গড়ে বৎসরে ১৪টা বই পড়েছেন আর পুরুষ; ৯টি। বুড়ো আমেরিকানরা বই পড়ে কম। ১৮ বৎসর থেকে ২৯ বৎসরের নারী পুরুষরাই বই পড়ে বেশি। আমেরিকায় বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারগণ সাধারণ আমেরিকান জনগণের তুলনায় অনেক বেশি পড়েন। বড় বড় অফিস ও প্রতিষ্ঠানের (সিইও) কর্ণধারগণ মাসে চার পাঁচটি বই পড়েন।
কোনো দেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু বই প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাজ্য; ২০১৪ সালে মাথাপিছু ২০ টি বই প্রকাশ করেছে (সুত্র- International Publishers Association )। দ্বিতীয় স্থানে তাইওয়ান (১৮টি), তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্লোভেনিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯ টি!
চল্লিশ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ছোট্ট রাষ্ট্র আইসল্যান্ড; জনসংখ্যা মাত্র তিনলক্ষের কিছু বেশি, এখানে প্রতি দশ জন নাগরিকের মধ্যে একজনই লেখক! লেখকরাই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছল ও সম্মানিত।
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান; বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে চীনে; চার লক্ষ চল্লিশ হাজার (৪৪০০০০টি), এরপরে যুক্তরাষ্ট্র ৩০৪৯১২টি, তৃতীয় যুক্তরাজ্য ১৮৪০০০ টি। ভারত পঞ্চম স্থানে; ৯০০০০ টি।
উক্ত তালিকায় ১২৩টি দেশের মধ্যে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে অষ্টম স্থানে ইরান (৭২৮৭১), দশম তুরস্ক (৫০৭৫২) আঠারোতম ইন্দোনেশিয়া (২৪০০০), তেইশতম মালয়েশিয়া (১৭৯২৩), আটত্রিশতম মিশর (৯০২২), উনপঞ্চাশতম সউদি আরব (৩৯০০), পঞ্চাশতম পাকিস্থান (৩৮১১), একান্নতম লেবানন (৩৬৮৬) রয়েছে। (উইকিপিডিয়া/ ইউনেস্কো)
বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন? দু:খিত, ১২৩টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। কেন নেই? উত্তরটা জানাবেন কেউ ?