নারী সংবাদ
রাজধানীর উত্তরখানে গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ আটজনের মধ্যে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন আজিজুল (২৭) ও তার স্ত্রী মোসলেমা (১৮)। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় আজিজুল ও বিকেল ৫টায় মোসলেমা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। গতকাল শনিবার ভোর ৪টায় উত্তরখান ব্যাপারীপাড়া হেলাল মার্কেটের পাশে ১১০/এ নম্বর বাড়ির নিচতলায় গ্যাসলাইনের ছিদ্র থেকে লাগা আগুনে একই পরিবারের আটজন দগ্ধ হন। নিহত দম্পতির পরিবারের অভিযোগ, গ্যাসলাইন লিকেজ থাকা সত্ত্বেও ঠিক করেননি বাড়িওয়ালা। দগ্ধরা সবাই আত্মীয়স্বজন।
এ ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যালে আহতদের দেখতে এসে স্বজনদের এ সহায়তার টাকা বুঝিয়ে দেন।
বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শংকর পাল বলেন, আগুনে আজিজুলের শরীরের ৯৯ শতাংশ এবং তার স্ত্রী মোসলেমার শরীরের ৯৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি পাঁচজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে সুফিয়ার (৫০) শরীরের ৯৯ শতাংশ, তার মেয়ে পূর্ণিমার (৩৫) ৮০ শতাংশ, পূর্ণিমার ছেলে সাগরের (১২) ৬৬ শতাংশ, ডাবলু মোল্লার (৩৩) ৬৫ শতাংশ এবং তার ছেলে সৌরভের (৫) শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
এ ছাড়া শিশু সৌরভের মা আঞ্জুয়ারা বেগমের (২৫) শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তার মতে, আগুন খুব দ্রুত সবার গায়ে ধরে গিয়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। শিশু সৌরভ ময়নারটেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণী এবং সাগর উত্তরা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আগুনে প্রত্যেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তারা অধিকাংশই গার্মেন্ট শ্রমিক। তাদের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়ার রামকানায়।
চিকিৎসাধীন আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, গ্যাসলাইন থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গন্ধ বের হচ্ছিল। বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুক্রবার রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে তাদের কেউ একজন চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়। তার দাবি, গ্যাসলাইন লিকেজ থাকায় সেখান থেকে গ্যাস বের হয়ে পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়ে। চুলার সুইচ দিতেই আগুন ধরে যায়।
বাড়িওয়ালা মেহেদি হাসান বলেন, আগুনের সময় তিনি দ্বিতীয়তলায় ছিলেন। তাই কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর তিনি চুলার সুইচ অন দেখতে পান। এতে তার ধারণা, রাতে সুইচ অফ না করাতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
উত্তরা ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান জানান, ভোরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে দগ্ধ আটজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। রান্নার জন্য দিয়াশলাই ধরার সাথে সাথে আগুন ধরে যায় বলে জানতে পেরেছি।
উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, অসাবধানতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার ধারণা, রাতে বাড়িটির চুলায় গ্যাস ছিল না। অসতর্ক অবস্থায় চুলার সুইচ বন্ধ না করেই তারা ঘুমিয়ে পড়েন। চুলায় গ্যাস আসার পর দরজা জানালা বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হতে পারেনি। ভোরে রান্না করতে উঠে আগুন জ্বালানো মাত্র চারপাশে আগুন ধরে সবাই দগ্ধ হয়েছেন।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।