banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 553 বার পঠিত

 

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?


ফাতেমা মাহফুজ


অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল একটি বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করলো।বাস্তব সমাজে আসলে এই বিষয়ের সঠিক ধারনার খুবই অভাব।আর সে কারণেই মানুষের জীবনের অশান্তি,অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

#ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে#

বর্তমান সময়ে আমাদের আশে পাশে অনেক পরিবার আছেন যাদের সন্তান নেই। এই একটা সন্তান না হওয়ার জন্য তাদের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। কখনো কখনো মহিলাদের কে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে যে তার স্বামীকে আরেকটি বিয়ে দেয়া হবে।কখনো কখনো স্ত্রীকে সংসার ভেংগে চলে আসতে বলা হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুবাদে একে অপরকে দোষারোপ চলছে।অথচ মানুষ ভুলে যাচ্ছে এটা শুধুই আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

বর্তমান সময়ে এই ধরনের পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কিছুই হচ্ছে না।

মূলত দুনিয়ায় আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে একটি হল সন্তান।আল্লাহ সব নিয়ামত সবাইকে দেন না।যেমন সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ, জ্ঞান, প্রতিভা, মেধা এগুলো আল্লাহ এক একজনকে একেক্টা দিয়েছেন।

আল্লাহর ভাষায়ঃ
মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহ‌র কাছে।
(.৩-আলে-ইমরান:১৪.)

যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছু জানেন এবং সব কিছু করতে সক্ষম।
(.৪২-শূরা:৫০.)

বিভিন্ন নবী ও রাসূলকেও ঠিক একইভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন-
এ অবস্থা দেখে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করলোঃ “হে আমার রব! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে সৎ সন্তান দান করো। তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। (৩-আলে-ইমরান:৩৮.)

যাকারিয়া বললোঃ “হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে।আল্লাহ্‌ যা চান তাই করেন।” (৩-আলে-ইমরান:৪০.)
হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দাও। (.৩৭-সাফ্ফাত:১০০.)

এমনকি বিবি আয়েশা রাঃ ও নিঃসন্তান ছিলেন।তবু তাদের মধ্যে কোন অসন্তোষ ছিলনা,বরং
নবী রাসূল গণ এই নিয়ামত আল্লাহর কাছে চেয়েছেন কিছু বিশেষ কারণেঃ
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”(সূরা ফুরকান-৭৪)

গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও, তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।
(.৭-আরাফ:১৮৯.)
তাদের উদ্দেশ্য ছিল একজন নেক উত্তরসুরী রেখে যাওয়া যে তাদের রেখে যাওয়া দ্বীনি দায়িত্ব পালন করবে।

তাই আল্লাহ কাউকে কাউকে সন্তান দান করেছেন তার সাথে সাথে এটাকে পরীক্ষা হিসেবে পাঠিয়েছেনঃ “এবং জেনে রাখো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী। আর আল্লাহর কাছে প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই আছে।”
(.৮-আনফাল:২৮.)

এরপর আমি তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয় লাভের সুযোগ করে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে সাহায্য করেছি অর্থ ও সন্তানের সাহায্যে আর তোমাদের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি।
(.১৭-বনী ইসরাঈল:৬.)
এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র। (.১৮-কাহাফ:৪৬.)

কাজেই অস্থিরতা, কষ্ট,হতাশা দূর করে মনে তাওয়াক্কুল টাকেই আরো জোরদার করতে হবে।অনেক চেষ্টা,দোয়া করার পরও যদি আল্লাহ আপনাকে এই নিয়ামত না দিয়ে থাকেন,তো আলহামদুলিল্লাহ! নিশ্চয়ই এমন কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জানা নেই।

তাই বিকল্প উপায়ে সৎ কাজের ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।
যেমনঃ সাদকায়ে জারিয়াহ র কাজ করে যাওয়া,কুরআনের দাওয়াত পৌছে দেয়া,দ্বীনের পথে সংগীদের নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করা,দান সাদাকাহ করা,উত্তম কথা,লেখনী এই পৃথিবীতে রেখে যাওয়া।আর বারবার দোয়া কবুল না হলেও করতে থাকা কেননা দুয়া একটি অব্যার্থ আমল,যা কোন না কোন কল্যাণ অবশ্যই বয়ে আনবে।

আল্লাহ বলে দিচ্ছেনঃ “আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম।” (কাহাফ:৪৬.)
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত কল্যাণ দান করুন। আমীন।

Facebook Comments