জম্মু ও কাশ্মিরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু আসিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আট জনের বিচার শুরু হয়েছে।
সোমবার মামলার প্রথম শুনানিতে শ্রীনগরের একটি আদালতে তাদেরকে হাজির করা হয়।
তবে আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে অভিযুক্তরা। বিচারক আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
গত ১০ জানুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মিরের কাঠুয়া শহরের কাছে মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আট বছরের মেয়ে আসিফা বানু নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর কাছের একটি জঙ্গলে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মুলত কাঠুরায়া রেপ কেস এর চার্জশিট থেকে জানা যায় যে,
১) মূল অভিযুক্ত তার ছেলে এবং ভাগ্নে একসাথে বাচ্চাটিকে রেপ করে, অর্থাৎ বাপ ছেলে ভাগ্নে একসাথে! ২) মূল অভিযুক্তের ভাগ্নে তার বন্ধুকে UP থেকে ফোন করে ডেকে বলে সে যদি “কামের জ্বালা মেটাতে চায়” তবে যেন যলদি চলে আসে! ৩) FIR করা হয় পুলিশের কাছে এবং জঙ্গলে searchparty বেরোয় মেয়েটিকে খুঁজতে, এই searchparty র নেতৃত্ত্ব দেন সেই পুলিশ অফিসার যিনি নিজে বাচ্চাটিকে রেপ করছেন already!!
৪) প্রতিদিন মন্দির খোলা হত, পূজা আচ্ছা করার পর বাচ্চাটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পালা করে রেপ করা হত।
৫) রেপ রেপ খেলা হয়ে যাবার পর মূল অভিযুক্ত তার ছেলে ও ভাগ্নেকে বলে বডিটা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে দিতে। ৬) সেইমতো ছেলে জঙ্গলে বাচ্চাটিকে নিয়ে গেলে এক অভিযূক্ত পুলিশ অফিসার গিয়ে আবদার করেন মেরে ফেলার আগে তাকে শেষ বারের মতো রেপ করতে দিতে হবে!
৭) অভিযূক্তের ছেলে অনেক উদারতা দেখিয়ে , মোটে আর একবার রেপ করতে দিয়েই বাচ্চাটিকে গলায় ওড়না পেচিয়ে মারে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়।
প্রথম দিকে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই তরুণ আসিফাকে এক সপ্তাহ ধরে একটি মন্দিরে আটকে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করার কথা জানায়।
তার জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ওই মন্দিরের পরিচালক সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনা তদন্তের পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার দিন একদল আইনজীবী তাদের বাধা দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।
এছাড়া ধর্ষণের আলামত নষ্টে দুই পুলিশ শিশুটির জামা ধুয়ে ফেলে এবং রফা করতে পুলিশকে বড় অংকের ঘুষে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।
অভিযুক্তরা হিন্দু হওয়ার তাদের মুক্তির দাবিতে হিন্দু অধিকার রক্ষাকারী কয়েকটি সংগঠন সপ্তাহখানেক আগে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাটি আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র দুই মন্ত্রী অংশ নেওয়ায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার নিন্দা জানায়। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপির ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
জানুয়ারিতে আসিফার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আদালতে ঘটনার সঠিক তদন্তের আবেদন জানিয়ে আসছেন এই আইনজীবী।
সোমবার তিনি বলেন, “গতকাল আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘আমরা তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না’। এ হুমকি পাওয়ার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তা চাইতে আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব।
ওদিকে, আসিফার পরিবারের পক্ষে এই মামলায় আইনজীবী দীপিকা সিং রাওয়াত তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে দাবি করে উচ্চ আদালতে মামলার বিচারকাজ অন্য কোথাও স্থানান্তর করার আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।
“এ মামলার বিচারকাজ চলার মত পরিস্থিতি কাঠুয়ায় আছে বলে আমার মনে হয় না।”
আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধী অংশ নেন।
গণরোষ ও নিরাপত্তা আশঙ্কায় সোমবার সকালে আসিফার বাবা সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই মামলার বিচারকাজ চন্ডিগড় আদালতে স্থানান্তর করার আবেদন করেছেন বলে জানায় এনডিটিভি। (source INDIANEXPRESS)