অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আমানত (আনুগত্য, ইবাদত, সম্পদ, গচ্ছিত দ্রব্য ইত্যাদি) এর নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। [সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪২০]
আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়।
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে”। [সহীহ বুখার; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪০৭]
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল”। [সুনান আবু দাউদ; তিরমিযী, মিশকাত, হাদীস নং ৩৪১৯]
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আমানত (আনুগত্য, ইবাদত, সম্পদ, গচ্ছিত দ্রব্য ইত্যাদি) এর নামে কসম করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”। [সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪২০]
সুতরাং কাবা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে তবে তার কাফ্ফারা হলো ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন, সহীহ হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উয্যার নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”। [সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৪০৯]
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শিরক ও হারাম কথা কতিপয় মুসলিমের মুখে উচ্চারিত হতে শোনা যায়। যেমন, বলা হয় ‘আমি আল্লাহ ও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার ওপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ থেকে হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নিচে আপনি আছেন’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’। ‘‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’। ‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলক্ষণে’। ‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই গালি দেওয়া হয় বলে হাদীসে কুদসীতে এসেছে। সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে প্রকৃতি যা চেয়েছে বলাও একই পর্যায়ভুক্ত।
অনুরূপভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে দাসত্ব বা দাস অর্থবোধক শব্দ ব্যবহারও এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আব্দুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী, আবদুল হুসাইন ইত্যাদি। আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের পরিপন্থী। যেমন, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা, দীন আল্লাহর আর দেশ সকল মানুষের, আরব্য জাতীয়তাবাদের নামে শপথ, বিপ্লবের নামে শপথ করে বলছি ইত্যাদি।
কোনো রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’ বলাও হারাম। একইভাবে কোনো মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা যাবে না। অনুরূপভাবে কোনো কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোনো শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ নয়। আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি’ ব্যবহার করে বলা (যেমন এটা বলা যে, ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’), কারণ, এমন কথা বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়। অনুরূপ ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’ এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়। [বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মুজামুল মানাহিল লাফযিয়্যাহ, শাইখ বকর আবদুল্লাহ আবু যায়েদ]
মূল : শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদক : মু. সাইফুল ইসলাম
সম্পাদক : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
গ্রন্থনায় : ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
সৌজন্যে : ইসলামহাউজ