হাওয়াইয়ের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান এবং কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তুলসী গ্যাবার্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরবর্তী প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্যাবার্ড একজন ইউএস আর্মি রিজার্ভ কর্মকর্তা। তার গোয়েন্দাবিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও, তিনি তার মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তবে ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তুলসীকে বেছে নেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তিনি ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন এবং ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট তদারকি করবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক প্রস্তুতিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করা তুলসী গ্যাবার্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর একটি পুরস্কার যে পাবেন, তা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের মতো পদ যে পাবেন, তা বোধহয় কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। কারণ এ বিষয়ে তার কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ট্রাম্প মূলত দেশের গোয়েন্দা সেবাগুলোর সংস্কার করতে চান, কারণ সেগুলো তিনি সন্দেহের চোখে দেখেন। এই ক্ষেত্রে, বিদেশি নীতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা গ্যাবার্ডের নিয়োগকে ট্রাম্পের পরিবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গ্যাবার্ডকে নির্বাচন করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুলসী আমাদের দেশের এবং সব আমেরিকানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি উভয় দলেই ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন, এখন তিনি গর্বিত রিপাবলিকান।’
কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?: আমেরিকান সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করা ৪৩ বছর বয়সী তুলসী গ্যাবার্ড হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য, ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন। গ্যাবার্ডের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তবে তিনি ২১ বছর বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি তখন হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেন। তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড হাওয়াই স্টেট সিনেটর, যিনি রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে যোগদান করেন।
প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম হিন্দু: ২০১২ সালে ১১৩ তম কংগ্রেসে তুলসী গ্যাবার্ড ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। তিনি রিপাবলিকান কাওভিকা ক্রাউলিকে পরাজিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রথম হিন্দু হিসেবে কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং প্রথম আমেরিকান সামোয়ান হিসেবে কংগ্রেসের সদস্য হন। নাম শুনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মনে হলেও তুলসীর সঙ্গে ভারতের কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি আমেরিকাতেই জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন। আসলে তার মা হাওয়াই যাওয়ার পর হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। আর নিজের সন্তানদের সবার নামকরণ করেছিলেন হিন্দু নামেই। তার প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গ্যাবার্ড ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী।’
তুলসী গ্যাবার্ড ২০২০ সালের ১১৭ তম কংগ্রেসে পুনঃনির্বাচনের প্রার্থী হননি। তবে ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন, পার্টি ‘একটি অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী’। এরপর গ্যাবার্ড ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন।