ইসলামের মহিমান্বিত দিনগুলোর মধ্যে যিলহজ্জের ৯ তারিখ, অর্থাৎ আরাফাহ দিবস অন্যতম। এটি শুধুমাত্র হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনই নয়, বরং এই দিনকে ঘিরে রয়েছে অগণিত বরকত, ফজিলত ও রহমত। এই দিনে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, দো‘আ কবুল করেন এবং অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আসুন জেনে নিই, কেন আরাফাহ দিবস এত গুরুত্ববহ এবং আমাদের কী করণীয়।
🕋 আরাফাহ দিবস : মর্যাদা ও ফজিলত
🔹 ১. ইসলামের পূর্ণতা লাভের দিন
এই দিনে কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নাজিল হয়:
> “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম।”
📖 [সূরা মায়েদা: ৩]
এ আয়াতটি আরাফাহ দিবসে, শুক্রবার, হজ্জের সময় নাজিল হয়েছিল। এক ইহুদি বলেছিল, “এমন আয়াত আমাদের উপর নাজিল হলে আমরা তা ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম।” খলীফা উমর (রাঃ) জবাবে বলেন, “আমরা জানি এটি কবে, কোথায় এবং কী অবস্থায় নাজিল হয়েছে।”
📚 বুখারী: ৪৫, ৪৬০৬
🔹 ২. এটি ঈদের দিনের অন্তর্ভুক্ত
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
> “আরাফাহ দিবস, কুরবানির দিন এবং তাশরীক-এর দিনগুলো মুসলিমদের ঈদের দিন। এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।”
📚 আবু দাঊদ: ২৪১৯
আরাফাহ দিবসের ফজিলত
🟢 ১. দু’বছরের গুনাহ মাফ হয়
আরাফাহ দিবসে রোযা রাখা অ-হাজীদের জন্য সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
> “আমি আশা করি এই দিনের রোযা আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”
📚 মুসলিম: ১১৬৩
তবে হাজীরা এদিন রোযা রাখেন না, বরং আরাফাতে অবস্থান করে দো‘আ, যিকর ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করেন।
🟢 ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় দিন
> “আল্লাহ তাআলা আরাফার দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, ‘দেখো, আমার বান্দারা ধুলায় ধূসরিত হয়ে এসেছে, তারা কী চায়?’”
📚 মুসলিম: ১৩৪৮, ইবনু মাজাহ: ৮১
🟢 ৩. দো‘আ কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
> “সবচেয়ে উত্তম দো‘আ হল আরাফাহ দিবসের দো‘আ। আর আমি ও আগের নবীরা যেটা বলেছি তা হলো—
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ”
📚 তিরমিযী: ২৮৩৭
এই যিকর বারবার বলা, আল্লাহর প্রশংসা করা ও নিজের জন্য এবং উম্মাহর জন্য দো‘আ করা এই দিনে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ।
আমাদের করণীয়
🔸 যারা হজ্জ করছেন না, তারা এদিন রোযা পালন করবেন।
🔸 যিকর-আযকার বেশি বেশি করবেন।
🔸 তওবা ও ইস্তিগফার করবেন।
🔸 দো‘আ ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর রহমত চাইবেন।
আরাফাহ দিবস শুধু হজ্জ পালনকারীদের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের সব মুসলমানের জন্য এটি এক অপার ফযীলতের দিন। আসুন আমরা এই দিনের গুরুত্ব অনুধাবন করে, যথাযথ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।