ডা. সাকলায়েন রাসেল
এই নারী বয়সে আমার প্রায় ১৭ বছর বড়! প্রথম যেদিন তিনি মা হন। সেদিন আমি প্রথম পৃথিবীতে আসি। সেদিন ছিল সোমবার, ৯ নভেম্বর…।
আমার প্রথম জন্মদিন, তাঁর প্রথম মা হওয়ার দিন! বছর ঘুরে ৯ নভেম্বর আসে…।
মা মুচকি হাসে, চোখে আনন্দ নাচে, বয়স হয়ে গেছে আমার…।বয়স হয়েছে তাঁরও…।
কিন্তু পার্থক্যটা রয়ে গেছে সেই ১৭ তেই! আমি তাই আটকে আছি সেই কৈশোরে..আম্মু বলেই ডাকি…অনেকে মুচকি হাসে…বুড়া ছেলে মা কে এখনো আম্মু ডাকে!!
ক্যামনে বোঝাই তাদের…পার্থক্যটা যে এখনো সেই ১৭ তে! তাই থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত! জন্মদিন এলে তাই আগের মত কম বয়সী উচ্ছ্বাস দেখায় না মা। বলতে পারে না হালের সুরে…হ্যাপি বার্ডে বাবা!
জন্মদিন এলে তাই যেনতেন ভাবে বলে…আরে! তোর না আজ জন্মদিন!
ভাবখানা এমন যেন ভুলেই গিয়েছিল। একটু আগে মনে পড়ল!
অথচ টেবিলে বসলে…মিস নাই…। ছেলের জন্য ভালোমন্দ কত আয়োজন! উপলক্ষ জন্মদিন!
মিস হয়ে গেল শুধু এবার…৯ নভেম্বর!
ভাইরাল ইনফেকশন ও এর নানা জটিলতায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শয্যাশায়ী মা। বিকালের দিকে শুধু চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে বললেন, ‘তোর জন্মদিনে এবার কিছুই করতে পারলাম না বাবা!’
আমিও চাইনি আম্মু কিছু করুক। শুধু চেয়েছি তাঁর রিপোর্টগুলো ভাল আসুক। চোখ মেলে তাকালে, এলোমেলো কথাগুলো সাজিয়ে উঠুক। আমার বুকের ধড়পড় ভাবটা একটু স্বাভাবিক হোক!
সেদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি…মা সুস্থ হয়ে একবার হাসিমুখে তাকাবে! আজো সেই ক্ষণটা এলো না!
গত ৪৮ ঘন্টা হাসপাতালেই আছি…। এমন অপেক্ষায় থাকে অনেক সন্তানেরা।
প্রতিদিনই দেখি…কাল ছিলে তুমি, আজ আমি…কাল হয়ত সে!
পার্থক্য শুধু…মা আছেন আমারই আঙ্গিনায়…কিংবা আমি আছি তাঁর আঁচলে! ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে!
আজ এন্ডোক্রাইন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, মেডিসিন, নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট সবাই মাকে দেখেছেন..ভাল আশ্বাস শুনিয়েছেন।
তবুও মন অস্থির…কতোক্ষণে বাসায় যাব! মাকে নিয়ে…সেখানে যে আরেক মা আছে! মা ডাকতে ডাকতে অনেক সময় মনেই হয় না-নাম তার আরিবা!
আরিবা…আমার ৫ বছরের বুড়িমা…আমার সবটুকু কোলাহল!
সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম