আমার সুখী ডেইলি লাইফ
খালেদা বীথি
এক একজন আপুর ডেইলি লাইফ পড়ছি আর নিজের জীবনের সুখটুকু যেন বেশী উপলব্ধি করতে পারছি। এক একজন হোম মেকার আপু যেন এক একজন আলাদিনের জীনি। কতটা ধৈর্য্য নিয়ে তারা নিজেদের সংসার আলোকিত করে যাচ্ছেন।
আমার বিয়ে হয় ২০০৮ এ। ২০০৯ এর জুন থেকে চাকুরী শুরু করি। ঐ বছর এ অক্টোবর থেকে নতুন জীবন শুরু করি, শশুর শাশুড়ী ও দুই দেবর সহ। অফিস থাকতো বলে প্রতিদিনের রান্না বান্না সামলানোর যুদ্ধ সেভাবে করতে হয়নি। বাসায় রান্নার জন্য আলাদা লোক সব সময়ই ছিল কারণ শাশুড়ী ও চাকরি করেন। ছুটির দিনে চেষ্টা করতাম কিছু না কিছু বা পুরো রান্নার দায়িত্ব নিতে।
২০১৪ থেকে সম্পূর্ণ নিজের একার সংসার হল। তবে ভাগ্য ভালো আমার। তখনও আমাকে প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সপ্তাহে ৫/৬ দিন চাকরি করি আর ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি। মাঝে মাঝে এটা সেটা নাস্তার আইটেম করা। এই ছিল আমার কাজ।
২০১৮ তে এসে বিভিন্ন ঝামেলায় টিকতে না পেরে জব ছেড়ে দিলাম। প্রায় ৯ বছর চাকরি করে নিজেও যেন হাপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম কিছুদিন বিশ্রাম নেই। এজন্য আর নতুন করে চাকরির চেষ্টাও করলাম না। বুঝতে পারছিলাম যে আমার স্বামীর একার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ও কখনোই আমাকে কোন কিছুর জন্য প্রেশার দেয় নি। ভাবলাম বাসায় বসে আছি। অনেক সময় আমার। একটা অনলাইন বিজনেস করি। কিন্তু যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম ততটা সহজ না আসলে কাজটা। ছোট ছোট দুটো বাচ্চা ( একজনের ৭, অন্যজনের সাড়ে ৩ চলছিল তখন) নিয়ে সারাদিন ওদের পেছনেই চলে যায়। তাই আমার দ্বারা বিজনেসও হয়ে উঠেনা।
আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। ২০১১ তে মনোবিজ্ঞানের আরেকটি Applied branch হিসেবে যাত্রা শুরু করে Educational & Counselling Psychology Department , আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু এখানে full time student হতে হয় বলে তখন চাকরি ছেড়ে এখানে পড়ার সাহস হয়নি। তো গত বছর অক্টোবরে যখন শুনলাম নতুন বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে তখনই ঠিক করে ফেললাম বসেই যখন আছি তখন কেন পড়াশোনাটা করে ফেলিনা এই সুযোগে। একাডেমিক পড়াশুনা শুরু করলাম পুরো ১০ বছর পর। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ভয়ে ভয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল যদি চান্স না পাই। আল্লাহর হুকুমে চান্স পেয়ে গেলাম। ২০১৯ জানুয়ারী থেকে শুরু করলাম নতুন করে ছাত্রী জীবন। এখন আমার ডেইলি লাইফ হল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে বাসায় আসি। তারপর কিছুটা রেস্ট নিয়ে মাঝে মাঝে ছোট কন্যাকে নিয়ে পড়তে বসি। আর নিজেও কিছুটা পড়ি। এখনো সেই আগের মতোই ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি আর বাচ্চাদের জন্য এটা সেটা নাস্তা বানানো, মাঝে মাঝে ঘর গুছানো, কাপড় গুছানো আমার কাজ এতটুকুই। সেল্ফ কেয়ার হিসেবে চলে কাজের পাশাপাশি গান শোনা।
এর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার সহপাঠীরা আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। ওরা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে যাতে আমার মনেই হয়না যে আমি বুড়ী হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় আমি যেন আমার ১০ বছর আগের স্টুডেন্ট লাইফ ফিরে পেয়েছি আবার। গত মাসে এই বন্ধুদের কয়েকজন মিলে ৪ দিনের জন্য ঘুরে এলাম কক্সবাজার। আমার সমসাময়িক অনেকে খুব অবাক হয়েছে আমার এই ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। কারণ সবাই এমন সাপোর্ট পায় না। তাই বাচ্চা রেখে একা ঘুরতে যাওয়ার কল্পনা ও করতে পারে না। আমি ভাগ্যবান আলহামদুলিল্লাহ। আমার নিজের রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য এই ট্যুরটা যে কি উপকারী ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না।
আমি বিন্দাস ইঞ্জয় করে যাচ্ছি আমার এই নতুন জীবন। আমার জন্য দোয়া করবেন আপুরা।