আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে!
সাজেদা হোমায়রা
বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে!
আবরারের মায়ের বিলাপ! বাবার কান্না ভেজা চেহারা! একজন মেধাবীর তিল তিল করে দেখা স্বপ্নগুলো নিমিষেই নিঃশ্বেষ হয়ে গেল!
নির্মমতার স্বাক্ষী আবরারের গোটা শরীর। ৬ ঘন্টা ধরে একটু একটু করে জীবনের আলো নিভে গেছে ছেলেটার…
কেমন ছিলো সেই মুহূর্তটা যখন সে আর শ্বাস নিতে পারছিলো না?
কেমন ছিলো তার সেই চাহনিটা যাতে ছিলো প্রচণ্ড বাঁচার আকুতি?
রাজনীতি মানেই এতোটা নির্মমতা, এতোটা বর্বরতা, এতোটাই সহিংসতা?
ফেসবুকে আবরারের হাত, পা, পিঠের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছি। কি হিংস্র! কি নৃশংস!
কি নির্মমভাবে তাকে পিটিয়েছে!
এই পিঠেই কতো রাত তার মা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে ! কতো যত্নে তাকে আগলে রেখেছে!
ভাবতেই খুব অবাক লাগছে…যারা আবরারকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে, তারা রাস্তার নষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো ছেলে না। এরাও মেধাবী ছাত্র।
কিন্তু এতো মেধাবী, আউটস্ট্যান্ডিং হওয়ার পরও তারা কিভাবে এমন বর্বর আচরণ করতে পারলো?
দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়লেই মানুষ হওয়া যায় না। এখানেও পশুদের অবাধ বিচরণ!
মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা আলাদা।
শিক্ষার সাথে নৈতিকতার যোগসূত্রটা খুব প্রয়োজন। নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা শুধু বর্বরতাই উপহার দিতে পারে।
যে শিক্ষা মানুষকে স্বার্থপর করে….
উগ্র ইন্দ্রিয় সুখের জন্য খুনকে উৎসাহিত করে…
যে শিক্ষায় থাকে ক্ষমতার দাপট…
যে শিক্ষায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের নির্মূল করা হয় নির্মমভাবে…
যে শিক্ষায় সহপাঠীকে পিটিয়ে হত্যা করতে কোনো দ্বিধা হয় না…
কি লাভ সে শিক্ষায়? এ শিক্ষায় মেধাবী সন্তান শুধু কুলাঙ্গারই হয়।
নৈতিক শিক্ষা আর ইতিবাচক মনোভাব ছাড়া সত্যিকারের মানুষ হওয়া কখনোই সম্ভব না! কখনোই না!
সব সন্তানই তো বাবা মার অনেক প্রিয়… অনেক ভালোবাসার! কখনো আমরা সন্তানদের এতোটাই ভালোবাসি যে তাদের ছোট ছোট ভুলগুলোও শুধরে দেই না। অথচ একসময় এই ভুলগুলোই বড় আকার ধারণ করে। তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় তাকে।
ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে দিয়ে সন্তানকে সঠিক পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা যতোটা সচেতন থাকি সে পরীক্ষার খাতায় ১০০% মার্কস পেয়েছে কিনা, ততোটা কি সচেতন থাকছি তার আচরণ, মানসিকতা আর নৈতিকতার ব্যাপারে? এসব সন্তান পরবর্তীতে সো কল্ড মেধাবী হলেও মানুষ কখনোই হতে পারে না।
আমার স্বপ্ন… আমার দোয়া…আমার চাওয়া….
আমাদের প্রত্যেকটা সন্তান হোক বাবা মায়ের চোখ শীতলকারী!
প্রত্যেকটা সন্তান মানুষ হোক!
বেঁচে থাকুক নিজে!
বাঁচতে দিক অন্যকে!