banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 935 বার পঠিত

 

আমার বই পড়া (শেষ পর্ব)

রায়হান আতাহার


ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। পড়তে ভালোবাসতাম। নতুন বই পেলেই পড়ার জন্য উশখুশ করতাম। সেই আমি হঠাৎ করে বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এত পড়ার চাপ ছিল যে, এরপর থেকে বই দেখলেই কেন যেন অভক্তি কাজ করতো। একেবারে না পড়লে নয়, ওটুকুই পড়তাম পরীক্ষা পাশের জন্য। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই বলতে গেলে পড়াই হত না। এই সময়টাতে যা পড়েছি তার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের বই। টানা বেশ কয়েকটা বই পড়েছি তাঁর। লেখাগুলো ভালো লাগতো। কিন্তু নেশা তৈরি করতে পারেনি।

ফেসবুকিং আর মুভি দেখে সময় পার করে দিচ্ছিলাম। এমন সময় বইপড়ুয়া কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেলাম। তাদের বই পড়া, বই নিয়ে আলোচনা, ফেসবুকে পোস্ট দেখে বই পড়ার আগ্রহ আবার ফেরত আসলো। আমি বিশ্বাস করি, বই পড়তে দেখলে ও বই পড়ুয়াদের সান্নিধ্যে থাকলে বই পড়ার স্পৃহা তৈরি হয়। আমার মাঝেও তাই হয়েছিলো।

নতুন করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মানোর পর বইয়ের প্রতি আমি বলতে গেলে সর্বভুক হয়ে গেলাম। সবার লেখাই পড়তে ভালো লাগতো। এর মাঝে পরিচয় হয়ে গেল আহমদ ছফার সাথে। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড লেখকদের তালিকা তৈরি করলে আহমদ ছফার নাম প্রথমে থাকবে। তাঁর লেখা প্রথম যে বইটি পড়েছি, তা হলো ‘যদ্যপি আমার গুরু’। ছফা ও প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের সাথে পরিচয় হবার পর নিজের মাঝে পরিবর্তন আবিষ্কার করতে লাগলাম। ছফার আরো কিছু বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। প্রতিটি লেখাতেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন প্রিয় এই লেখক।

আহমদ ছফার লেখার প্রতি ভালোলাগার পাশাপাশি আরো কিছু লেখকদের বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সেরা লেখকদের সেরা বইগুলো পড়ে ফেলা। নতুন-পুরাতন সবার সেরা বইগুলোর নাম দিয়ে একটি ‘বাকেট লিস্ট’ বানানো আছে আমার। ভালো কোন বইয়ের সন্ধান পেলেই ঐ লিস্টে যোগ করে রাখি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘কবি’ উপন্যাসে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “হায়, জীবন এত ছোট কেনে?” বই পড়ার ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। জানি না, তালিকার কত ভাগ বই পড়তে পারবো।
তবে জীবনের শেষভাগে এটুকু তৃপ্তি পেতে চাই যে ভালো কিছু বই সংগ্রহ করেছি ও পড়েছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিয়ে যেতে পারলে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার একটি বড় অংশ পূরণ হবে। সৃষ্টিকর্তা মনের ইচ্ছা পূরণ করুন।

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

Facebook Comments