banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 632 বার পঠিত

 

আমাদের মায়েরা যেন বিস্ময়!

ডা. মারুফ রায়হান খান


আমাদের মায়েরা একেকজন নিপুণ আর্টিস্ট। কতোটুকু চালের সাথে কতোটুকু ডাল, কতোটুকু তেল, কতোটুকু ঘি, কতোটুকু লবণ, কতোটুকু আদা-রসুন-পেঁয়াজ দিলে সেটা একটা পারফেক্ট খিচুড়ি হয়ে যাবে– এটা নিঃসন্দেহে একটা উচ্চমার্গের শিল্প। একটা দুটো না, এমন কতো কতো আইটেমের সবকটাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন তারা কখন কোনটার পরে কী কতোটুকু দিতে হবে! পরিবারের কে কোনটা কীভাবে পছন্দ করে তা যেন তাদের মস্তিষ্কের একেকটা অঞ্চলে আলাদা করে খোদাইকৃত! অথচ তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এ বিষয়ে, নেই কোনো টেক্সটবুক যা দেখে দেখে প্র‍্যাক্টিস করবে কেবলমাত্র মা-শ্বাশুড়িদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখে ফেলা প্রচণ্ডমাত্রার মেধাবি না হলে সম্ভব নয়।

আমাদের মায়েরা একেকজন আর্কিটেক্ট। বাসা বানানোর সময়ে আমাদের মায়েরাই ডিজাইন করে দেন কোথায় কোথায় বেড রুম, ড্রয়িং-ডাইনিং-কিচেন, কার রুম কোনটা হবে…

আমাদের মায়েরা একেকজন ফ্যাশান ডিজাইনার। আমাদের ছোট বেলার ড্রেসগুলো তার প্রমাণ!

আমাদের মায়েরা একেকজন ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রোজেক্ট ম্যানেজার! ঘরের কোথায় কোন আসবাবপত্র থাকবে, কোন ঘরের সাজসজ্জা কেমন হবে তা তো আমাদের মায়েরাই নির্ধারণ করে দেন! অনবরত ক্লান্তিহীনভাবে কীভাবে তারা ঘরের সাজসজ্জা মেইন্টেইন করেন, গুছিয়ে রাখেন তীব্র মমতায় তা আমার কাছে এক বিস্ময়!

আমাদের মায়েরা একেকজন কুশলী জাজ! আমরা ভাই-বোনেরা মারামারি করলে, কোনো দুষ্টুমি করলে, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে কাকে কতোটুকু শাস্তি দিতে হবে–কাকে শুধু সতর্কবাণী দিতে হবে, কাকে চোখ রাঙানি, কাকে বকাঝকা, আর কাকে মৃদু প্রহার করতে হবে তা আমাদের মায়েদের চেয়ে বেশি কে জানে!

আমাদের মায়েরা একেকজন সফল ইভেন্ট ম্যানেজার। বাসায় ছোট-বড় যতো প্রোগ্রামই হোক না কেন দায়িত্ব তো তার কাঁধেই এসে পড়ে! কাদের দাওয়াত করতে হবে, কী কী মেন্যু হবে, বাজারের লিস্ট, রান্না করা, পরিবেশন করা, সব সৌজন্যতা বজায় রাখা–কী নিপুণভাবেই না তারা সবগুলো প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

আমাদের মায়েরা একেকজন কোচ-ট্রেইনার-কাউন্সেলর-সাপোর্টার। তারা আমাদের রুটিন তৈরি করে দেন, আমাদের ডায়েট প্ল্যান করে দেন, আমাদের নৈমিত্তিক কাজগুলো শেখান। কোথায় কেমন আচরণ করতে হবে, কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে, কী কী করা যাবে, কী কী করা যাবে না সব তো প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকেই শেখা। আমাদের যেকোনো সমস্যায়, যেকোনো সংশয়ে আমাদের মায়েরা হয়ে ওঠেন শ্রেষ্ঠ কাউন্সেলর, অকৃত্রিম সাপোর্টার, অতুলনীয় শুভাকাঙ্ক্ষী।

আমাদের মায়েরা একেকজন বিচক্ষণ ডাক্তার। সন্তান যে অসুস্থ সবার আগে তো তার কাছেই ধরা পড়ে। আমাদের মায়েরা একেকজন অন্তঃপ্রাণ নার্স, কী ক্লান্তিবিহীন নিবিড় যত্নে তারা আমাদের সেবা-শুশ্রূষা করে যান। তারা ওষুধও বটে, অসুস্থ সন্তান মায়ের কাছে এলে পরেই অনেকটা ভালোবোধ করেন।

আমাদের মায়েরা আমাদের পরিবারের স্তম্ভ, তাদেরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় আমাদের পরিবারগুলোর সমস্ত কার্যক্রম। তারা যেন খুঁটি, খুঁটিতে এক সূতোয় বাঁধনে বেঁধে রাখেন আমাদের পরিবারের সবাইকে। আমাদের মায়েরা একেকজন অলরাউণ্ডার। আমাদের মায়েরা পৃথিবীর একেকজন বিস্ময়। একেকজন গর্ব। একেকজন সুপারউইম্যান।

আমাদের মায়েরা আসলে কী নন!

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

Facebook Comments