দাওয়াতে বা বন্ধুর বাড়িতে মেয়েটিকে দেখা যেত কুর্তা-লেগিংস বা জিনস ও টি-শার্টেই স্বচ্ছন্দ। শখ করে শাড়ি পরা বলতে বড়জোর পয়লা বৈশাখে বা কোনো বিয়ের নিমন্ত্রণে। তবে এখন এ ধারাটা বদলেছে। অনেক কিশোরী বা তরুণীই পরছেন শাড়ি। দেশি ধাঁচের তাঁত বা সুতির শাড়ি, তবে সাজটা একদম আধুনিক। তাতে নিজস্ব স্টাইলের ছাপ। কোনো উপলক্ষ নয়, এমনিতেই শাড়িতে দেখা যাচ্ছে অনেককে।
সুতি বা তাঁতের শাড়ি মানেই তার সঙ্গে পরতে হবে ঐতিহ্যবাহী গয়না, কাচের চুড়ি আর কপালে গোল টিপ—এমন ধারা থেকে কিছুটা সরে এসে নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে এখন। দেশি শাড়ির সঙ্গে একটু ফাঙ্কি বা পশ্চিমা ধাঁচের অনুষঙ্গ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। হাতে চুড়ির বদলে দেখা যাচ্ছে মোটা বালা বা ব্রেসলেট, গলায় বিব নেকলেস অথবা বড় কোনো লকেট। চুলটা হয়তো সাজিয়ে নিচ্ছেন স্টাইলিশ কোনো খোঁপা বা বেণির বাঁধনে।
কথা হলো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভলিন জয়িতার সঙ্গে। ক্লাসে ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকই পরেন তিনি; কিন্তু শাড়ি তাঁর ভীষণ প্রিয় বলেই বিভিন্ন উৎসবে শাড়ি পরার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। আগে শাড়ির সঙ্গে শুধু ঝুমকা, মাটির গয়না, কাচের চুড়ি—এসবই সবাই পরতেন। কিন্তু অন্য পোশাকের সঙ্গে যে গয়নাগুলো পরা হয়, তা-ই যদি পরেন শাড়ির সঙ্গেও, তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়ায়, সেটিই পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন তিনি। সাদামাটা সুতির শাড়ির সঙ্গে তিনি কড়ি, সুতা ও মেটালের আধুনিক গয়না পরেন। হাতে বালা ও বড় ডায়ালের কোনো ঘড়ি পরতে পছন্দ করেন। চুলটা এক পাশে এলোমেলো খোঁপা করে একটা মেসি লুক আনার চেষ্টা করেন। কখনো বা সাজে ভিন্নতা আনেন বড় আকৃতির কালো ফ্রেমের চশমা পরে। আর এর সঙ্গে মেকআপটা হয় একদমই হালকা, শুধু ঠোঁট রাঙিয়ে থাকেন উজ্জ্বল কোনো রঙে। তাঁর ব্লাউজগুলোও গতানুগতিক কাটের থেকে ভিন্ন হয় বলে জানা গেল।
সাধারণত চিকন পাড়ের সুতি, তাঁত বা অ্যান্ডি কাপড়ের শাড়িই তরুণীরা বেশি পরছেন। প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো শাড়ির চাহিদাও কম নয়। চেক বা গামছা কাপড়ের শাড়িও নতুনরূপে জনপ্রিয় হয়েছে। এই শাড়িগুলোতে ব্লকপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি বা এ ধরনের কাজ তেমন থাকে না। বুননেই বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। হালকা ও উজ্জ্বল—দুই রকম রংই তাঁরা বেশ পছন্দ করছেন।
ফ্যাশন হাউস যাত্রার ফ্যাশন ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা জানালেন, সাধারণ সুতির শাড়িকে আকর্ষণীয় করা যায় তার সঙ্গে গামছা প্রিন্ট, চেক, পোলকা ডটসহ বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট, বাটিক ও বিপরীত রঙের ব্লাউজ বেছে নিয়ে। তাঁর মতে, বয়স কম হলে যে কেবল উজ্জ্বল রংই বেছে নিতে হবে তা নয়; বরং চাপা সাদা, ছাই বা হালকা কোনো রঙের শাড়ির সঙ্গে রংচংয়ে ব্লাউজেও স্টাইলিশ লুক আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্লাউজের কাটছাঁটও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের শাড়ির সঙ্গে তরুণীদের হাইনেক, স্লিভলেস, বেন্ড কলার, বোট কলার, শার্টের কলার দেওয়া ব্লাউজ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। কোমর পর্যন্ত ঝুল ও দুই পাশের কাটা একটু বেশি দেওয়া ব্লাউজ পরলেও বেশ ভালো দেখাবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ধরনের সাজে আদিবাসী ধাঁচের গয়না, গলায় বিভিন্ন রঙের পুঁতির মালা, হাতে মোটা বালা অথবা শুধু কানে এক জোড়া বড় দুলে বেশ মানিয়ে যাবে; বললেন তিনি। নৃত্যশিল্পী ও উপস্থাপিকা শ্রীমন্তি পূজা সেনগুপ্ত সুতি শাড়ি পরতেই বেশি স্বাছন্দ্য বোধ করেন, শাড়ির সঙ্গে হল্টার নেক টপ ও ব্যাকলেস ব্লাউজ তাঁর খুব প্রিয়। নাচের অনুষ্ঠানে শাড়ির সঙ্গে স্বভাবতই একটু ভারী গয়না পরতে হয়। কিন্তু অন্যান্য সময় তিনি সুতি শাড়ির সঙ্গে খুব ছিমছাম সাজ ও অনুষঙ্গ বেছে নেন বলে জানালেন। ঘরোয়া কোনো আয়োজনে যে শাড়ির সঙ্গে হালকা গয়না পরেন, সেই শাড়ির সঙ্গেই আবার ভারী গয়না পরে পার্টিতে হাজির হন তিনি।
দেশাল, অরণ্য, আড়ং, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির ও অন্যান্য দেশি শাড়ির দোকানে পেয়ে যাবেন এ ধরনের ছিমছাম নকশার শাড়ি। আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানগুলোতেও চোখে পড়বে। ব্লাউজের কাপড় আলাদাভাবে কিনে বানিয়ে নিতে পারেন। ম্যাচিং নয়, বরং কন্ট্রাস্টই ভালো মানাবে।
সূত্র- নকশা।