banner

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 748 বার পঠিত

 

আত্মোপলব্ধিঃ ‘প্রসঙ্গ পহেলা বৈশাখ’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ


বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের অনেক আলেমদের মধ্যে বোধদয় হয়েছে যে পহেলা বৈশাখের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর স্পষ্ট সাংঘর্ষিক, যা ইসলামে কোনভাবে অনুমোদিত নয়।

ক. মঙ্গল শোভাযাত্রা
খ. রমনা বটমূলে বৈশাখীবরণ যেখানে সূর্য ওঠার জন্য অপেক্ষা করা হয়
গ. শরীরে উল্কি আঁকা
ঘ. অবাধ মেলামেশা করা
ঙ. লাল-সাদা পোষাক পরিধান
চ. অতিরিক্ত মাত্রায় অপচয়
ছ. গরীবের সাথে উপহাস করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর ইসলামের ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে আমরা জেনে গেছি। আজকের আলোচনার বিষয় সেটা নয় বরং এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে।

আলেম সমাজের অবস্থা হল চোর-মালিকের গল্পের মত। মালিক ভাবে দেখি চোর-বেটা কী করে, ভাবতে ভাবতে চোর সব নিয়ে যায়। তেমনি আলেমরা যখন চৈতন্য ফিরে পান, তখন সব হালাল হয়ে যায়। নিজেদের সমগোত্রীয়দেরকে কাফের, ইহুদীদের দালাল, ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত। একজন আর একজনের চোর, মূর্খ, গোবর-গণেশ, ইসলামের দুশমন ইত্যাদি অবিধায় উপস্থাপন করতে থাকে। এর মাঝে যে নিজেদের প্রকৃত শত্রুরা ধাঁই ধাঁই করে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, সেই হুঁশ নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশ যেমন বীর পুরুষদের জন্মস্থল তেমনি গাদ্দারও কম জন্ম দেয়নি এই ভূমি।

আবুল ফজলের মত দরবারী চাটুকার আলেম যেমন ছিল এ মাটিতে, তেমনি মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত ক্ষণজন্মা পুরুষও এই মাটি জন্ম দিয়েছে। রাজন্যবর্গের অনুকম্পা লাভের জন্য পদলেহী আলেম যেমন ছিল ভরি ভরি, আবার রাজন্যবর্গের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে জেলের জিনজিরও স্বহাস্য বদনে অনেকে গলায় পরে নিয়েছেন, কিন্তু ইসলামের কোন বিষয়ে আপোষ করেননি।

এ উপমহাদেশের আলেমরা ফতোয়াবাজীতে যথেষ্ট এগিয়ে আছেন। মুখে আসলে যেমন যে কাউকে কাফের বলতে কার্পণ্য করেননা আবার হালুয়া-রুটি পাওয়ার জন্য শাসকের শরীয়া পরিপন্থী কাজকে জায়েজ করতে বিন্দুমাত্র সময়ও নেন না।

আচ্ছা, সমাজে প্রচলিত একটা বিষয়কে আপনি হারাম ঘোষণা করলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেই হারামে নিবিষ্ট মানুষকে হারাম থেকে ফিরিয়ে আনার আপনার বিকল্প কোন প্রচেষ্টা আছে কী?

মানুষের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিবেন ভাল কথা, কিন্তু তার বিকল্প তাকে কিছু না দিলে তো সে আপনার ইহকালীন জীবন সাঙ্গ করে দিবে। সে ভাবনা কি আছে আপনাদের? আপনি লাই দিয়ে তাকে যে নিয়ন্ত্রণহীন করেছেন সে উপলব্ধি কি আপনার হয়? সাগরের পানি অনেক গড়িয়ে গেছে। অনেক কিছু আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আর নেই।

আলেম তথা সমাজসংস্কারকদের হতে হবে প্রবাহমান নদীর মত যেখানে যেকোন অপবিত্র ও দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পড়লে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করে দিবে। বেলায় বেলায় দিন গড়িয়েছে অনেক। আর নয় ভেদাভেদ, অযাচিত ফতোয়াবাজী।

আসুন নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি বিনাশ করে অস্তিত্বের স্বার্থে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করি।

নিজেদের হারানো শিরদাঁড়া আবার খাড়া করে দাঁড়াই। শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে দরদী মন নিয়ে এগিয়ে আসি সবাই।

যেকোন বিষয়কে শুধু হারাম ঘোষণা করে খতম নয় বরং বৃহৎ জনগোষ্টীকে সঠিক পথে আনার জন্য বিকল্প চিন্তা করি।

একসময় বাঙালী যে সংস্কৃতিকে ইসলাম বিরোধী বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলেন সেটাকে কিভাবে ইসলামীকরণ করা যায় সেই চিন্তা করি। কিভাবে দলাদলি ভুলে একই সাথে কাজ করা যায়, সেই পথ খুঁজি।

আরো দেরি করেছেন তো ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কি, আপনারা প্রস্তুত তো?

Facebook Comments