banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 209 বার পঠিত

আত্নদ্বন্দ্ব

quote-canvas-art_10483-3অনেকক্ষণ থেকেই মনের ভেতর খচখচ করছে রুহির। কিছুতেই স্বস্থি পাচ্ছে না। কোন কাজে মনও বসাতে পারছে না। রুহির সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী নায়লা এসেছিল আজ। নায়লা যাবার পর থেকেই মনের মধ্যে এই অস্থিরতা ভর করেছে। কথায় কথায় নায়লাকে বলেছিল স্বামী রাহিবের বিশাল একান্নবর্তি পরিবারের কথা। বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে ধরতে গেলে রাহিবের উপরই পুরো পরিবারের দায়িত্ব। এখনো দুটা ননদ আর ছোট দেবর পড়াশোনা করছে। শ্বশুর-শ্বাশুড়িও প্রায়ই অসুস্থ্য থাকেন। এই সবকিছুই রাহিবকে দেখতে হয়। পরিবারের প্রতি রাহিবের প্রচন্ড টান। রুহির অবশ্য ভালোই লাগতো পরিবারকে ঘিরে রাহিবের ভালোবাসা ও দায়িত্ব সচেতনতা দেখে। কিন্তু আজ নায়লা এসে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো করে দিয়ে গেলো।

নায়লা আর খুব ভালো করেই রুহিকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে ওদের নিজেদেরও যে নিজস্ব একটা ভবিষ্যৎ আছে। উপার্জনের সমস্ত অর্থ এভাবে পরিবারে বিলিয়ে দিলে চলবে না। পরিবারের লোকজনের চাহিদা থাকবেই। তাই বলে সবার সব চাহিদা তো পূরণ করা যাবে না। আর গেলেও করা উচিত নয়। এতে সবার চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। রোজ রোজ নানা বাহানায় এসে হাজির হবে। এখন থেকেই তাই রুহির এসব ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। শ্বশুরবাড়ির সবার সব সমস্যা দেখার কোন প্রয়োজন নেই। চোখের সামনে পড়ে গেলেও এড়িয়ে যেতে হবে। রাহিবও যাতে সবকিছু না দেখে সে ব্যাপারেও তাকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

রুহির একবার মনেহচ্ছে নায়লার পরামর্শগুলো খুবই বাস্তব এবং সঠিক। এতদিন সেভাবে খেয়াল করেনি কিন্তু আজ বুঝতে পারছে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাহিব প্রায়ই ব্যর্থ হয় রুহির ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোকে পূরণ করতে। কিন্তু আবার মনেহচ্ছে যে, রাহিব যদি সাহায্য না করে তাহলে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে অনেক সমস্যায় পড়ে যেতে হবে। বাবা-মার কত স্বপ্ন, কত আশা রাহিবকে ঘিরে। দোয়া ছাড়া কোন শব্দই বের হয় না উনাদের মুখে রাহিবের জন্য। তাছাড়া চমৎকার পারস্পরিক বন্ধন রাহিবদের পরিবারের সবার ভেতর। এই সবকিছুই কি প্রভাবিত হবে না রুহি এমন কিছু করতে চেষ্টা করলে?

মানুষ অভিজ্ঞতার গন্ডিতে আবদ্ধ। নিজ অভিজ্ঞতার গন্ডিতে আমি মনেহয় একটু বেশি মাত্রায়ই আবদ্ধ। তাই নেতিবাচক কিছু লিখতে গেলে মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হই সবসময়ই। যাইহোক, এই ঘটনাটা বাস্তব। শুধু রুহির আত্মদ্বন্দ্বটুকু কাল্পনিক। রুহির মত এই ধরণের সাংসারিক পরামর্শ মেয়েরা যখন পায়। বেশির ভাগ সময়ই তাদের মনে আত্মদ্বন্দ্বের উদ্রেক হয় না বিধায় তারা পরামর্শটিকেই স্বাদরে গ্রহণ করে ফেলে।

মনের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়াটা আসলে খুবই প্রয়োজন। কেননা যে পর্যন্ত মনে দ্বন্দ্ব তৈরি না হয় মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে না। চিন্তা-ভাবনা ডাল-পালা ছড়াতে পারে না। নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্বের গুরুত্ব তাই অনস্বীকার্য। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব যাতে আমাদেরকে সঠিক পথ বা কাজ থেকে বিচ্যুত করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজন সঠিক বিচারবোধ সম্পন্ন জ্ঞানের। আমাদের চিন্তার শক্তিশালী ধারাটা আমাদেরকে যেদিকে নিয়ে যায়, আমরা ঠিক তেমন মানুষই হই। চিন্তা আসে জ্ঞান থেকে। তাই জ্ঞানের উৎসটি যদি সঠিক হয় তাহলে চিন্তার গতি বেঠিক হবার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম থাকে।

লিখেছেন- আফরোজা হাসান,মনোবিজ্ঞানী। 

Facebook Comments