banner

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 17 বার পঠিত

 

আতিয়া বিনতে আমিন: থ্রিএমটি প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি বিজয়ী

মা-বাবা সবসময় চাইতেন মেয়ে চিকিৎসক হোক, তবে আতিয়া বিনতে আমিনের পথটি কিছুটা আলাদা ছিল। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সফল না হওয়া তাকে প্রথম বড় ধাক্কা দেয়। তবে সেবার অতটা ভেঙে না পড়ে তিনি বুঝতে পারেন যে তার আসল লক্ষ্য ছিল অন্যকিছু। তিনি বলেছিলেন, “সাময়িক ব্যর্থতাই আমাকে আসল গন্তব্যে নিয়ে এসেছে।”

বর্তমানে কানাডার মনট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন আতিয়া, গত ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-এ অনুষ্ঠিত থ্রি মিনিট থিসিস (থ্রিএমটি) প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিজয়ী হন। থ্রিএমটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের তিন মিনিটে তাদের গবেষণা বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হয়। আতিয়া তার গবেষণায় কালাজ্বর নিয়ে কাজ করেছেন, যা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

আতিয়া ময়মনসিংহের একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তার পরবর্তী সময়টি ছিল অন্যরকম এক যাত্রা,যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক জেবা ইসলামের অধীনে দুই বছর গবেষণা কাজের সুযোগ পান, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের বৃত্তি পেতে সহায়তা করে।

আতিয়া বলেন, “২০১২ সালের আগে আমি নিজে কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয় জানতাম না, আর এখন আমি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করি। আগের সেই আমি, যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন না, আজ থ্রি মিনিট থিসিসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি।”
তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আতিয়া বড়। তার গবেষণার বিষয় কালাজ্বর সৃষ্টিকারী পরজীবী এবং এই পরজীবী কীভাবে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কীভাবে বুদবুদের মাধ্যমে পরজীবীটি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। তার গবেষণার ফল শুধু কালাজ্বরের কার্যকর ওষুধ তৈরিতেই নয়, ক্যানসারের জন্য নতুন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারেও ভূমিকা রাখবে। এর আগে তার গবেষণা কানাডার কুইবেক প্রদেশে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে।
এছাড়া, ২০২৩ সালে আতিয়া ভ্যানিয়ের স্কলারশিপ লাভ করেন, যা কানাডা সরকারের একটি মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি এবং এর আর্থিক মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি)।
আতিয়া জানান, তার জীবনের সবচেয়ে আবেগময় মুহূর্ত ছিল যখন তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এবং সেই সময় তিনি বলেন, “জীবনে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে!”
আতিয়া বিনতে আমিন বিশ্বাস করেন ”কন্যাসন্তান কখনো বোঝা নই,তারা সুযোগ পেলে পৃথিবী জয় কর‍তে সক্ষম”

Facebook Comments