ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ই নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। আপনার ইচ্ছা, চিন্তা-ভাবনাসহ অনেক বিষয়ই একটি সফল ক্যারিয়ারকে প্রভাবিত করে থাকে। তবে এতসব কিছুর মধ্যেও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ার সক্ষমতা অনেক সীমাবদ্ধতাকেই কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। আর তাতে করেই ক্যারিয়ারের পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকা যায়।
আমাদের জীবনটা খুব বেশি বড় নয়। ছোট্ট জীবনকে সীমিত চেষ্টায় অপরিসীম আন্তরিকতায় পূর্ণ করা যায় যদি সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়। নিজের সিদ্ধান্তের উপর ভর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তৃপ্তির কোনো তুলনা হয় না। অপর দিকে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করার কষ্টও কিন্তু নিজেকেই ভোগ করতে হয়। কারণ সিদ্ধান্তটা যেহেতু আপনার তাই তার দায়ভারও আপনার। অনেক বাবা-মা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ছেলে মেয়েদের পাশে এসে দাঁড়ান। তবে অনেকে আছেন যারা কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে একটুও ভুল করেন না। তাই মা বাবা যদি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বিরূপ হন, তাহলে তো আর কথাই নেই। তবে একটু ভেবে দেখুন, আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন কিন্তু তারাও দেখেছেন। তাই আপনার ক্ষতি কিংবা কষ্টে তাদের কষ্ট হয়। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সবদিক বিবেচনা করুন। তার ভালো-খারাপ দিক নিয়ে ভাবুন। পজেটিভ হওয়া ভালো কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে নেগেটিভ দিকটাও এড়াতে পারি না। তাই ভুল করার আগেই সচেতন হওয়া জরুরি।
আলোচনা ও সিদ্ধান্ত
সব সময় মনে রাখতে হবে, আলোচনার মাধ্যমে একটা বিষয়ের অনেক দুর্বল আর সবল দিকগুলো বেরিয়ে আসে। তাই সেটা আপনার সাথে কতটা যায় তা দেখার সুযোগ আপনি আলোচনার ফলেই পাবেন। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মা-বাবা, ভাই-বোন, কাছের বন্ধু কিংবা সমবয়সী চাচা-মামার সাথে আলোচনা করতে পারেন। বেশিরভাগ শুভাকাঙ্ক্ষি যে মত দিবে আর আপনার মন যা বলবে তার উপর ভর করে সিদ্ধান্ত নিন। আমাদের বক্তব্য একটাই, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজে বুদ্ধি আর মনন প্রয়োগ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সেটা আত্মবিশ্বাসের পরিচয় সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা যে সব সময় নির্ভুল হবে তার নিশ্চয়তাও নেই। তাই কাছের লোকজনের সাথে আলোচনা করুন। যারা আপনার ভালো চায় তাদের সাথে আলোচনা করে নিলে আপনার সিদ্ধান্তটাও ভালো হবে। দেখবেন এতে মনের জোরও অনেক বেড়ে যাবে। পরে কোনো সমস্যা হলে সাহায্যের হাতও পাবেন অনেক।
সব সিদ্ধান্তেই সবাই
যেকোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় হলে প্রথমে আমরা বাবা-মার দারস্থ হই। কিন্তু এমন অনেক সিদ্ধান্ত আছে যা নিয়ে বাবা-মার কাছে যাওয়া যায় না। যেমন, প্রেম-ভালোবাসার কথাই ধরা যাক। যদিও আজকাল অনেক মেয়েই মার ভালো বন্ধু। তারপরও এই বিষয়টা নিয়ে মায়ের সাথে আলোচনাটা আমাদের দেশে এখনও সহজ হয়নি। কোনো ছেলেকে অথবা মেয়েকে ভালো লাগলে তার সম্পর্কে জানা থেকে শুরু করে প্রেম প্রতিষ্ঠা করা পর্যন্ত আপনি আপনার ভালো বন্ধুর উপর নির্ভর করতে পারেন। প্রস্তাব দেওয়ার মধ্যস্থতা পর্যন্ত তাদের হাতে ছেড়ে দিতেন পারেন। আর এই সুযোগে তারা ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’ কথাটির যথার্থতা প্রমাণ করবে। পরিচয়ের প্রথম দিকে বন্ধু-বান্ধব একসাথে মিলে বেড়াতে যান, এ ক্ষেত্রে অনেক ছোটখাট দিক বের হয়ে আসে। সম্পর্কটাও সহজ স্বাভাবিকভাবে এগুতে শুরু করে।
সমাধানে আপনি
আমরা অনেকেই ছোটবেলায় ‘এইম ইন লাইফ’ পড়ে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেই। কারও ডাক্তার, কারও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত পাকা। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে সেই স্বপ্নের রঙ বদলাতে শুরু করে। স্বপ্নের রঙ তখন খয়েরি না হয়ে অন্য কোনো রঙ পায়। যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে, তখন নিজেকে প্রশ্ন করার সাথে সাথে বাবা-মার মতের ব্যাপারেও গুরুত্ব দিন। কারণ আপনার ভিতর এমন কোনো বিষয় আছে যা আপনার চেয়ে বাবা-মা ভালো বুঝেন। এ ছাড়া নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে নিজের মত নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করলে পরে কোনো সমস্যা হলে সমাধানে তারা সাহায্য করবে। সিদ্ধান্ত নিজের কিন্তু পরামর্শ বাবা-মার হতেই পারে।
পরিশেষ
‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। ছোটবেলায় এই বাক্যের সারকথা আমাদের খুব ভালো করে বুঝানো হয়েছিল যেন কোনো অবস্থায় একাকিত্বকে আঁকড়ে না ধরি। তাই সিদ্ধান্ত নিজে নিন। নিজের সাথে নিজেই আলোচনা করুন, ভাবুন। সাথে সাথে মনের কথা খুলে বলুন আরও কয়েকজনকে। যদি সিদ্ধান্ত ভুল হয়, তবে তাদের সাথে আলোচনা করে মনের বোঝা তো হাল্কা করা যাবে।
মনে রাখুন
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অন্যের পরামর্শ শোনা ও আলোচনা করা দুটোই সমান জরুরি।
যখন কোনো আলোচনায় বসবেন, তখন অন্যের মতামত শোনার সাথে সাথে নিজের ভাবনাটাও স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে সেটা কাজে লাগানো উচিত্ নয়। কারণ অনেক সময় নিজের সিদ্ধান্তও বদলে যেতে পারে। তাই সময় নিয়ে এগুতে হবে।
আবার সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতাও ঠিক নয়। ঠিক হবে না ভুল হবে, করবো কি করব না করে অনেক সময় কাজের গুরুত্ব কমে যায়। সময়মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে সময়মতো কাজ করা ভালো। এতে কাজের ফলাফল ভালো হয়।
আলোচনায় বসার পর অন্য কারও সাথে নিজের সিদ্ধান্ত বিপরীতমুখি অবস্থান নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও কারও সাথে আলোচনায় বসুন। আর শেষ পর্যন্ত নিজের মন সায় না দিলে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। এতে করে কাজের প্রতি নিজের আগ্রহ আর নিষ্ঠার ঘাটতি তৈরি হতে পারে। ফলে ওই কাজে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেতে পারে। সূত্র: ওয়েবসাইট