অপরাজিতা ডেস্কঃ ১৯৫৩ সালের মে মাসের ২৯ তারিখে হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গে প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের স্যার অ্যাডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিংয়ের। প্রথম মানব পদচিহ্ন পড়ার পর দীর্ঘদিন চলে গেছে। অনেকেই হিলারি আর তেনজিংয়ের পথ ধরে সেখানে পৌঁছেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশ হিমালয়ের কাছাকাছি দেশ হওয়ার পরও বাঙালির কাছে হিমালয় চূড়ায় পৌঁছানোটা ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই প্রথম পূরণ করেন বাংলাদেশের তরুণ মুসা ইব্রাহীম। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ২০১০ সালের মে মাসে। দ্বিতীয় আরোহণকারী এম এ মুহিত গিয়েছিলেন পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের ২৩ মে। ২০১২ সালের ১৯ মে নিশাত মজুমদারের এবং সর্বশেষ ওয়াসফিয়া নাজরীন ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট চূড়া জয় করেন।
এভাবেই শুরু হয়েছিলো ওয়াসফিয়ার পর্বত যাত্রার স্বর্নাজ্জ্বল অধ্যায়,যার ই ধারাবাহিকতায় ওয়াসফিয়া একে একে আরোহন করেছেন, ”সেভেন সামিট” এর পাঁচ টি চূড়ায়।
মাউন্ট এভারেষ্ট,কিলিমানজারো,অ্যাকোনকাগুয়া,ভিনসন ম্যাসিফ,মাউন্ট এলব্রুস এই ৫টি পর্বত আরোহনের পর ওয়াসফিয়া পৌছে গেলেন আন্তর্জাতিক চ্যানেল ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ‘অ্যাডভেঞ্চারার অফ দ্যা ইয়ার’ এর তালিকায়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফী প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০ জন অভিযাত্রীকে এ সম্মাননা দিয়ে থাকে। সাইটে জানানো হয়, ওয়াসফিয়া তার অভিযানের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলেছেন তারই স্বীকৃতি স্বরূপ এ সম্মাননা দেওয়া হলো।
এ দিকে এ ধরনের কাজের জন্য পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডও দিয়ে থাকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি। ভোট দেওয়ার লিংক- http://on.natgeo.com/1E8oMz3। এ পুরস্কার ঘোষণা হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এভারেস্টের পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় পর্বত মাউন্ট দেনালিও জয় করেন ওয়াসফিয়া।
ওয়াসফিয়া নাজরীন হচ্ছেন বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বয়স্ক এভারেস্ট জয়ী মহিলা তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৯। ওয়াসফিয়া প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশী মহিলা যিনি হিমালয়ের বাইরে সর্বোচ্চ পর্বত আফ্রিকার একনকাগুয়া জয় করেন। তিনি একই সঙ্গে এন্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ভিনসনে আরোহণ করেন। ওয়াসফিয়া নাজরীন ১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফেনীতে। ওয়াসফিয়া নাজরীনের পিতার নাম নাজসি জামান চৌধুরী এবং মা মালিহা চৌধুরী। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন। ওয়াসফিয়ার মা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাবা বাংলাদেশের মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফরএভার লিভিং প্রডাক্টসের কান্ট্রি হেড। ওয়াসফিয়ার শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই কিছুটা ডানপিটে স্বভাবের মেয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন। বাবা-মার আদরে কোনো কিছুতেই বাধা পাননি তিনি। ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল সম্পন্ন করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান ওয়াসফিয়া। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওয়াসফিয়া যান স্কটল্যান্ডে। পড়ার বিষয় সামাজিক মনোবিজ্ঞান আর স্টুডিও আর্ট। পেশায় তিনি একটি এনজিওর উন্নয়ন কর্মী, কিন্তু নেশা তার পর্বতারোহণ। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ নামে একটি ফাউন্ডেশন। সেই থেকেই চলছে পর্বত অভিযান।
একজন নারী হিসেবে পর্বত আরোহী হওয়াটা ওয়াসফিয়ার জন্য খুব যে সহজ ছিলো তা না,আর্থিক অসুবিধা সহ,নানান রকমের সমস্যার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। কিন্তু ওয়াসফিয়া কোন বাঁধার লাছেই হার মানেননি,ওয়াসফিয়া তার অদোম্য উৎসাহ,সাহস এবং আত্নবিশ্বাস এর মাধ্যমে পেরেছেন আজ নিজেকে একজন নারী হিসেবে,এবং একজন বাংলাদেশী হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে,পেরেছেন পৃথিবীর শত কোটি মানুষের জন্য,এই দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরনীয়,অনুপ্রেরণা হতে।
ওয়াসফিয়া নাজরীন আজ এমন একটি নাম,যা সাহস,কোন বাঁধার কাছেই হার না মেনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক। আর তাই প্রবল আশা,এবং বিশ্বাস এর সাথে আমরা বলতে পারি, ওয়াসফিয়া হবেন এবারের ‘অ্যাডভেঞ্চারার অফ দ্যা ইয়ার’ এবং ‘সেভেন সামিট’ জয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী।
অনেক অনেক শুভকামনা রইলো,ওয়াসফিয়া নাজরীনের জন্য।