নারী সংবাদ
দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পাল্টাতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের অসুস্থ সেই কোহিনূরের কষ্টের জীবন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও মাধ্যমে বিনা খরচে চিকিৎসা শেষে এবার হাতে পেল নগদ লক্ষাধিক টাকা।
‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ নামের একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপের সদস্যরা ১৩ আগষ্ট মঙ্গলবার রতনপুর গ্রামে গিয়ে কোহিনূরের হাতে নগদ এক লাখ ৯ হাজার ২৯২ টাকা তুলে দেন। একই সময়ে নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা, ১১ আগস্ট যুবদল প্রবাসী অনলাইনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।
নবীনগরের আঞ্চলিক কথা নামের ওই গ্রুপের সভাপতি মোজাম্মেল হক ও অ্যাডমিন বাবুল ভূঁইয়া বলেন, ‘নয়া দিগন্তে সংবাদটি প্রকাশের পর কোহিনূরের চিকিৎসার জন্য মাসখানেক আগে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজটিতে একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে সহযোগিতা চাই। এরপরই বিভিন্ন বন্ধুরা দেশ বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে থাকেন। আজ বন্ধুদের পাঠানো পুরো টাকাটা কোহিনূরের হাতে তুলে দিতে পেরে ভীষণ তৃপ্তিবোধ করছি।’
টাকা হস্তান্তরের সময় নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজেদ উল্লাহ জসীম, আবদুল কাইয়ুম এবং ‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ গ্রুপের সদস্য মজিবুর রহমান পথিক, আসাদুজ্জামান, সোহেল রানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের মৃত কবির হোসেনের মেয়ে কোহিনুর বেগম গত ৪ বছর আগে মেরুদন্ডের সমস্যার কারণে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার পিঠে অপারেশন করে দুইটি রড স্থাপন করা হয়। এর পর থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে অন্যের বাড়িতে থেকে, ৫ বছর বয়সী একমাত্র ভাইটিকে রসুল্লাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়িয়ে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অর্থের অভাবে নির্ধারিত সময়ে সেই রড খুলতে না পারায় চামড়া ছিঁড়ে রডগুলো বেড়িয়ে গিয়ে ওই স্থানে পচন ধরে পোকা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। গত কয়েক মাস ধরে তার মেরুদন্ডে ব্যথা আবারো ফিরে আসে। তীব্র আকার ধারণ করলে কোহিনূর আবারো শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।
তার জীবনের করুণ এই চিত্র নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে ২৮ জুন ‘এই যন্ত্রণা থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর, এই মানবিক ঘটনাটি নবীনগরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুমের নজরে আসে। পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে ১ জুলাই কোহিনূরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ঢাকার ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশনে’ পাঠান। সেখানে ফাউন্ডেশনের দুই সদস্য ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা বর্ণা ও ডা: হাসান মাহমুদের তত্ত্বাবধানে কোহিনূরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৩ ও ১৬ মে তার মেরুদন্ডে সফল অস্ত্রোপচার করেন অধ্যাপক ডা: শাহ আলম। এরপর কোহিনূর সুস্থ হয়ে ১ আগস্ট রতনপুর গ্রামে ফিরে আসে। এক মাস পর আবার যেতে হবে হাসপাতালে। তার এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলে জানান ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা।
নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, কোহিনুরের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করছি এবং নবীনগর উপজেলা প্রসাশন সব সময় তার পাশে থাকবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জন্য সরকারি খাস জায়গা বন্দোবস্ত দেয়াসহ তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
মা-বাবাহীন কোহিনুর বেগম সু-চিকিৎসার সুযোগ ও হাতে নগদ টাকা পেয়ে আনন্দে কান্না জড়িতকন্ঠে সকলের কাছে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।
কোহিনুর বেগমকে আর্থিক সহায়তা করতে ইচ্ছুকরা যোগাযোগ করতে পারেন। বিকাশ নম্বর : ০১৮৪৬৯৮৭২৮১ (ব্যক্তিগত)।
দৈনিক নয়া দিগন্তে