গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের পাশেই থাকতেন পারভীন আক্তার নাম এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। স্বামী তাকে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই। সোমবার রাতে তার প্রসব বেদনা ওঠে। পরিচিত একজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন তার গর্ভের সন্তানের অবস্থা ভালো নয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তির জন্য জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারকে লেখেন।
এরই মধ্যে একজন জানান, রোগীর সিজার করতে হবে। বেশ কিছু টাকা খরচপাতি লাগবে। কিন্তু হাতে টাকা নেই শোনার পর তিনি পারভীন আক্তারকে নিয়ে দ্রুত অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরে তাকে নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে তার কাছে ১৫শ’ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেয়ায় সেখান থেকে পারভীন আক্তারকে অন্য কোথাও যেতে বলা হয়।
সকাল ৮টার দিকে পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেয়া হয়। সেখানে তার নামে কোনো কার্ড কিংবা রেজিস্ট্রেশন না থাকায় কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। বারবার অনুরোধের পর তাকে দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান এক নারী চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হয়ে যেতেই আয়া শাহিদা সেখানে যান।
এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলেই শাহিদা তাকে টেনে দোতলা থেকে নিচে নামান। পারভীন তখন ব্যথায় ছটফট করছিলেন। অন্য একটি হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে আয়া তাকে বের করে দেন।
ম্যাটারনিটি হাসপাতাল থেকে বের হতেই প্রসব বেদনায় রাস্তার ওপর বসে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতক নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
… এবং সন্ধ্যার পর নবজাতককে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তবুও ভালো শিশুটার দাফনটা অন্তত করা গেছে। যাবেই তো।
মধ্যম আয়ের এই দেশ রাস্তায় নবজাতকের জন্ম দেবার দৃশ্য সহ্য করতে পারে – কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের গন্ধ সহ্য করতে পারে না যে।
কিছুই বলার নেই- শুধু একটা কথা ছাড়া।
শুনলাম গোয়েন্দারা নাকি সুবোধ সিরিজের সেই গ্রাফিতিগুলোর স্রষ্টাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
গোয়েন্দাদের বলছি আজিমপুর গোরস্থানে যান – দেখবেন একজন সদ্যজাত শিশু গোরস্থানের দেওয়ালে বসে হাসতে হাসতে বলছে –
“আমিই সুবোধ – পালিয়ে এসেছি – মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে!”
shomoy marma
(সৌজন্যে: bdflow24.com)