অফিস থেকে যেতে হবে দাওয়াতে। কথাটি মনে আসতেই কি কুঁচকে গেল ভুরু জোড়া? দাওয়াতের জায়গাটি যদি হয় বাড়ির আশপাশে, তাহলে দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু যদি যেতে হয় উল্টো পথে? বিষয়টি কষ্টকরই হয়ে দাঁড়ায়। এ রকম ক্ষেত্রে সহজ উপায় হলো অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া। কিন্তু সাজসজ্জা? সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মজীবীদের এই বিষয়টির ভেতর দিয়ে হরহামেশাই যেতে হয়। কর্মক্ষেত্রের পোশাক হওয়া উচিত হালকা ও আরামদায়ক কাপড়ের। সুতি, কোটা, সিল্ক কিংবা জর্জেটের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজেই আরামবোধ করে থাকেন বেশির ভাগ কর্মজীবী নারী। দাওয়াতের শাড়িটি সেখানে একেবারেই বিপরীত। রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান মনে করেন, আগের দিন কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে অফিস থেকেই দাওয়াতে চলে যাওয়া যাবে। ছোটখাটো বিষয়গুলো দিয়েই শুরু করা যাক। দাওয়াত কী ধরনের, সেটার ওপর নির্ভর করেই সব প্রস্তুতি নিতে হবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ ও পেটিকোট পরার পরামর্শ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘যদি বিয়ের দাওয়াত থাকে সে ক্ষেত্রে সকালবেলায় শাড়ি পরেই বের হতে পারেন। ব্লাউজ ও পেটিকোটটি দাওয়াতের শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরুন। তাহলে অফিস শেষে শুধু শাড়িটা পরিবর্তন করে নিলেই হবে।’ আগের দিনের প্রস্তুতি হিসেবে নেইলপলিশ লাগিয়ে রাখতে পারেন। চুল শ্যাম্পু করে ব্লো ড্রাই করে নিতে পারেন। কাজের মধ্যে চুলটা হালকা করে বেঁধে রাখবেন। দাওয়াতে যাওয়ার আগে চুল খুলে আঁচড়ে ছেড়ে রাখুন অথবা বেঁধে নিন। চুল সুন্দর থাকলে পুরো লুকটাই বদলে যায় বলে মনে করেন কানিজ আলমাস খান।
সারা দিন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার পর চোখে-মুখে ক্লান্তি তো থাকবেই। হালকা মেকআপ নেওয়া প্রয়োজন যদি শাড়ি জমকালো হয়। মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে, লিকুইড ফাউন্ডেশন ও পাউডার ভালোমতো মুখে লাগিয়ে নিন। ভুরু জোড়া সকালেই এঁকে আসতে পারেন। কাজ কিছুটা এগিয়ে থাকল। যদি আইশ্যাডোর ঝামেলায় যেতে না চান, তাহলে বেশি করে মাসকারা আর কাজল ব্যবহার করুন। যাঁদের চোখ ছোট, তাঁরা বাইরের দিকে কাজল লাগাবেন। চোখের ওপরে একটু চিকন করে লাইনার টানতে পারেন।
ডিজাইনার লিপি খন্দকার দাওয়াতের দিনটিতে বাড়তি পোশাক সঙ্গে নিয়েই বের হন। তিনি মনে করেন, গয়না বড় ভূমিকা পালন করে সাজে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি পরে নেন বড় গলার মালা। জুতা ও ব্যাগ বদলে ফেললে সেটাও অনেকখানি সহায়তা করেব। দাওয়াতের জায়গার আশপাশে কাছের কারও বাড়িতে পোশাক বদলানোর সুযোগ থাকলে সেটার সদ্ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। লিপি খন্দকার মনে করেন অ্যান্ডি সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি কর্মক্ষেত্র ও দাওয়াত দুই জায়গাতেই মানিয়ে যাবে। চওড়া কম আছে এমন পাড়ের মেরুন, কালো, সবুজ, নীল, পিচ, চাপা সোনালি রঙের শাড়িগুলো পরে ফেলতে পারেন।
গাজী টেলিভিশনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ও উপস্থাপক সামিয়া আফরিন নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন। অফিস থেকে প্রায়ই দাওয়াতে উপস্থিত হতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াত বুঝেই শাড়ি পরে আসি অফিসে। টুকটাক গয়না রেখে দিই ব্যাগে। অফিস শেষে মেকআপটা সেরে ফেলি। হালকা রঙের জামদানি, অ্যান্ডি সিল্কের শাড়ি পছন্দ এ ক্ষেত্রে। চুল খোলা রাখতেই ভালোবাসি। সম্ভব হলে নিচের অংশটি কোঁকড়া করে নিই।’
দাওয়াত যদি খুব জমকালো না হয় তাহলে সালোয়ার-কামিজ সহজ সমাধান। ব্যাগে করেই নিয়ে আসতে পারেন। অফিস শেষে চট করে পাল্টে নিলেন।
জানজটের শহরে অফিস শেষ করে বাড়ি গিয়ে তৈরি হয়ে আবার বের হওয়া অনেক সময়ের ব্যাপার। কর্মজীবী ও বিশেষজ্ঞরা এ কারণেই মনে করছেন, দাওয়াতের পোশাকটি সঙ্গে নিয়েই অফিসে চলে আসুন। পোশাক আনতে না পারলেও অনুষঙ্গগুলো সঙ্গে রাখুন। টুকটাক পরিবর্তনেই আপনি নিজেকে তৈরি করে ফেলতে পারবেন দাওয়াতের জন্য।
অফিস থেকে দাওয়াতে
Facebook Comments