নিজের কাজটি ঠিকমত করার বদলে আমরা সারাক্ষণই অন্যের ভুল ধরতে ব্যস্ত থাকি। খুবই সামান্য ব্যাপার। হয়ত অফিসের কলিগ লাঞ্চ ব্রেকে বেশী সময় নিয়ে ফেলে। সেটাই আলোচনার জন্য একটি ইস্যু। আবার কখনো হয়ত ঘটনাটি বেশ বড়। সামনের মানুষটি হয়ত সবার অগোচরে আঘাত করে চলেছে আপনাকে। তার ব্যাপারে কথা বলছেন আপনি।
মনোবিজ্ঞানী এবং মেডিটেশনের শিক্ষক তারা ব্রাচ একটি গল্প বলেন প্রায়ই। মনে করুন, আপনি হেটে বাড়ি ফিরছেন। পথে আপনি একটি ছোট কুকুর দেখতে পেলেন। কুকুরটিকে খুব সুন্দর আর আদুরে লাগলো আপনার চোখে। আপনি ভাবলেন একে বাসায় নিয়ে যাবেন। হঠাৎ কুকুরটি আপনাকে আক্রমণ করতে চাইলো। এখন আর তাকে সুন্দর বা আদুরে কোনটাই লাগছে না। এরপর অনেকদিন পর আপনি আবার কুকুরটিকে দেখতে পেলেন। ফাঁদে আটকে আছে তার পা। আপনার তার প্রতি করুণা হল। যদিও তখনো সে রেগে আছে, কিন্তু আপনি জানেন যে, পায়ের ব্যাথা এবং কষ্টের কারণে সে এমন করছে।
গল্পটি আমাদের যে শিক্ষা দেয়, ব্যাখ্যা করেছেন মনোবিজ্ঞানী বারবারা মার্কোয়ে।
আপনার আচরণ স্বাভাবিক
জন্মগতভাবেই আমরা মানুষেরা আত্মরক্ষার প্রশ্নে খুবই সচেতন নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই। স্বাভাবিক ভাবেই একজন মানুষ যখন আমাদের সাথে কেউ রূঢ় আচরণ করলে আমরা সেটি মেনে নিতে পারি না। আমরাও পাল্টা রুঢ় আচরণ করি। বোঝার চেষ্টা করি না এই ব্যবহারের পেছনে কোন কারণ আছে কিনা। নিজেকে শান্ত করুন। আগে জানার চেষ্টা করুন, কোন সমস্যা আছে কিনা।
নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই
যদিও অন্যকে জাজমেন্ট করা আমাদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য। প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে একটু সময় নিন। আগে মাথা ঠান্ডা করুন, তারপর বসের মেইলের জবাবটি পাঠাবেন। কারণ একবার আপনি যে কথাটি বলে ফেললেন তা কিন্তু আর ফেরানো যাবে না।
নিরপেক্ষ হন
যখন কেউ আপনার সাথে একমত হচ্ছে না তখন হয়ত আপনি যে কাজটি করতে চাচ্ছেন তা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ওপরের দ্বিমতের পেছনেও কারণ থাকতে পারে। আপনার কাছে আপনার জীবন অনেক সংগ্রামময়। কিন্তু অন্যরাও তাদের জীবনে কম সংগ্রাম করেন না। উইল স্মিথ বলেন, “সংগ্রাম সবাই করে চলেছে। শুধু কিছু মানুষ সেটা অন্যদের তুলনায় বেশী লুকিয়ে রাখতে পারে।” তাই সবার সিদ্ধান্তকেই শ্রদ্ধা করুন।
ভাল দিকগুলো দেখুন
এটি একটি অনুশীলনের বিষয়। মানুষের ভাল দিকগুলো বেশী মনে রাখার চেষ্টা করুন। এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষের মাঝেই ভাল-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। আমরা দূর্ব্যবহার, অসততা, কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো বেশী মনে রাখি। এবার একটু ভিন্ন ভাবে ভাবুন, মনে রাখার প্র্যাক্টিস করুন।
মন্ত্র পড়ুন
একটি বাক্য সবসময় আওরাবেন “আমার মত”। যার উপরে আমি এত রেগে আছি সে আমারই মত তার পরিবারকে ভালবাসে। আমার মতই সে যা করছে কারও না কারও ভালর জন্য করছে। সে আমার মতই একজন সুস্থ মানুষ এবং অপ্রকে ভালবাসে।
ক্ষমা করে দিন
মানুষকে ক্ষমা করে দিন। ছোট ছোট অপরাধগুলো মনে রাখবেন না। আপনার পক্ষে কখনোই জানা সম্ভব নয় একজন মানুষ কতরকম খারাপ পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। তাই তার আচরণটি দৃশ্যত খারাপ হলেও এর পেছনের কারণটি হয়ত খুবই মর্মস্পর্শী ছিল।
যা আপনার ক্ষতি করে না
আপনার সহপাঠী বা সহকর্মী যা করছে তা যদি আপনার কোন ক্ষতি না করে তাহলে সেটা নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের জীবন রয়েছে এবং সে জীবনকে সাজানোর জন্য আমাদের অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। তাই যা আমাদের চলার পথে কোনও প্রকার বাধা তৈরি করে না তা নিয়ে ভেবে নিজের জীবনের মূল্যবাণ সময় নষ্ট করবেন না।
লিখেছেন
আফসানা সুমী
ফিচার রাইটার
Facebook Comments