banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 758 বার পঠিত

 

অন্তরে জাগাই জ্ঞানো পিপাসা……২


আফরোজা হাসান


রাহমা বলল, আর তোর রেজাল্ট আমাকে খুব বেশি বিমর্ষ করে। প্রতিবার এভাবে টেনেটুনে কোন মতে পাশ করলে হবে? কেন তুই মন দিয়ে একটু পড়াশোনা করিস না বল তো? আমাদের পুরো ফ্যামেলিতে তোর মত এত্তো খারাপ রেজাল্ট আর কেউ করেনি কোনদিন।

সাহিলের হাস্যেজ্জল চেহারাটি সাথে সাথে আঁধারে ঢেকে গেলো। ভাইয়ের চেহারার এই পরিবর্তন রাহমা চোখ এড়িয়ে গেলো না। সাহিল ঘুরে চলে যাচ্ছিলো রাহমা টেনে ধরে বলল, সরি ভাইয়া আমি তোকে কষ্ট দেবার জন্য এমন বলিনি।

সাহিল অভিমানী কন্ঠে বলল, আমার আসলে এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করাটাই ঠিক হয়নি।

ছিঃ সাহিল এটা কি ধরণের কথা? তুই জানিস এমন কথা বললে আল্লাহ নারাজ হন?

ক্ষোভের স্বরে সাহিল বলল, তোমরা সবাই মিলে আমাকে বাধ্য করেছো এমন বলতে। যেখানেই যাই সবাই সারাক্ষণ বিভিন্ন ভাবে আকার ইঙ্গিতে একথাই মনে করিয়ে দেবার চেষ্টায় করে আমাকে। আমি পরিবারের সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছি। বাইরে সারাক্ষণই বড় ভাইয়াদের আর তোমাদের বোনদের গুনগান শুনতে হয় আমাকে।

কিন্তু শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন কেন করা উচিত সেই বিষয়ে বোঝানো ছাড়া আমরা কি তোকে কখনো অন্য কিছু বলেছি?

কিন্তু মানুষ তো বলে। আর একথা তো আসলেই সত্যই। তোমরা দেশে বিদেশে যে যেখানেই পড়াশোনা করেছো সেরা স্টুডেন্ট এর খেতাব অর্জন করে নিয়ে এসেছো। বড় ভাইয়ার রুমে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে যাই সেলফে রাখা নানা ধরণের মেডেল, গোল্ড মেডেল আর ট্রফি দেখে। কিন্তু আমার নিজের কোন অর্জনই তো নেই। আমি তো কোনদিন দৌড় প্রতিযোগিতাতেও ফাস্ট, সেকেন্ড না থার্ড হতে পারিনি। আমাদের উইনারে ভরা পরিবারে আমিই একমাত্র লুজার।

হেসে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো রাহমা। আচ্ছা সত্যি করে বল তো তোর ক্ষোভটা আসলে কোথায়? আমরা উইনার এটাতে নাকি তুই লুজার সেটাতে?

আমার নিজের উপরই বিরক্ত আমি। কিন্তু আপা আমি কি করবো চেষ্টা করো করছি কিন্তু কেন জানি না মনোযোগ ধরেই রাখতে পারি না বেশীক্ষণ পড়ার ব্যাপারে।

এর কারণ তুই পড়তে হবে বা পড়া উচিত এই বোধ থেকে পড়াশোনা করিস। প্রয়োজন উপলব্ধি করে ভালোবাসা থেকে জ্ঞানার্জন করতে চাস না। কোন কিছু আমাদেরকে তখনই আকর্ষণ করে যখন সেই জিনিসটা মধ্যে আমরা ভালোলাগা, আনন্দ ইত্যাদি খুঁজে পাই। যেমন ধর তুই ফেসবুকে যে আনন্দটা খুঁজে পাচ্ছিস সেটা হয়তো বইয়ের ভেতর পাচ্ছিস না। তাই বই নিয়ে বসলেও তোর মন পড়ে থাকছে ফেসবুকে। ফলে যেই একটু দেখে আসি কি করছে বন্ধুরা, একটু দুষ্টুমি করে রিলাক্স হয়ে আসি। ইত্যাদি ভাবনা থেকে বার বার বই বন্ধ করে একটু উঁকি দেখতে গিয়ে হাতছাড়া করে ফেলিস সময়।

লজ্জা মেশানো হাসি দিয়ে সাহিল বলল, আসলেই তো এমন করি আমি। ভাবি বেড়িয়ে যাব একটু দেখেই কিন্তু কিভাবে সে সময় পার হয়ে যায় টেরই পাই না।

নিজের সমস্যা কোথায় এটা বুঝতে পারাটা কিন্তু অনেক বড় একটা বিষয়। সমস্যা বুঝতে পারা মানে সমাধানের পথে চলার পথ তোর জন্য তৈরি। তুই এখন যা পড়তে বোস। এগজাম শেষ হলে আমি তোকে সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।

কোন ব্যাপারে সাহায্য করবে আপা?

রাহমা হেসে বলল, তোর অন্তরে জ্ঞানের পিপাসা জাগানোর ব্যাপারে।

সাহিলও হাসলো। আপার সাথে কথা বলার পর অনেক হালকা লাগছে মনের ভেতরটা। নিশ্চয়ই এখন পড়া মাথায় ঢুকবে এই আশা নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
(চলবে)

Facebook Comments