banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1011 বার পঠিত

 

ষষ্ঠ এশিয়ান ‘কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ কনফারেন্স (বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী)

ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শেষ হল গত ১২ তারিখ সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) চারদিন ব্যাপী কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী’ সিনেট ভবনে।

‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ ইন এশিয়ান কান্ট্রিজ : স্কোপ অব সিবিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়েই ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শুরু হয়েছিল।

৯ তারিখ শুক্রবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

১০ই ফেব্রুয়ারি শনিবার এ সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “দেশে এতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশু-কিশোররা পর্যন্ত এত বেশি কম্পিউটার ট্যাব ব্যবহার করছে; এখান থেকে অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।”

১১ তারিখ রোববার ঢাবি সিনেট ভবনে সিবিটির কনফারেন্সের কর্মসূচিতে রয়েছিল— ট্রমা, সিবিটি, সাইকিয়াট্রি প্রাকটিসেসসহ সাইকোসিস, নিউরো সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, সাইকোথেরাপির বিভিন্ন , কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ, কম্পিউটারাইজড সিবিটি, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা উপস্থাপন ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের সেই দিনে উপস্থাপক হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ফলাফল তুলে ধরবেন।

গত সোমবার অর্থাৎ ১২ ই ফেব্রুয়ারি সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ আরোও কয়েকটি কর্মশালা।
যুব-সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় মনোবিজ্ঞানীদের করণীয় ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুস্থতায় কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কনফারেন্সে মনোবিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং সহৃদয় ব্যক্তিত্ব ধারণ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬ষ্ঠ সিবিটি কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন কৌশল কনফারেন্স এ অংশগ্রহণকারী বক্তব্যে উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল নিউরো সাইকোলজিস্ট ডেভিড এ কুইন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিথ ডবসন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াং হেউ কুন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিয়ান পো ওয়েই, এশিয়ান সিবিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়ুং-হাই কুন, কানাডা প্রবাসী চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সায়েদা নাফিসা বানু, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখসহ আর অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। উঠে আসবে গুরত্বপূর্ণ অজানা তথ্য। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে।

এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিকেল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (এনপিইউ) ও এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি এসোসিয়েশনের (এসিবিটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কনফারেন্স এর সর্বশেষ অভিব্যপ্তি প্রকাশ করেন,

“সব কটা জানালা খুলে দাও না:
আজ যেন আমাদের বিজয়েরই দিন। এই বিজয় শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির নয়। এটি বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের বিশ্বজয়।

গত চার দিনের কর্মযজ্ঞ এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডেলিগেটদের কাছে প্রমান করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা নিয়মিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করে আসছি এবং সবগুলোই ভীষনভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে এবারের কনফারেন্সের ব্যাপারটা বেশ ভিন্ন।

চমৎকার সব ‘কী-নোট’, ওয়ার্কশপ আর সিম্পোজিয়ামে পরিপূর্ন ছিল চারটি দিন। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বিদেশীদের সাথে সমানতালে গবেষনা পত্র উপস্থাপন করেছে, ‘কী-নোট’ দিয়েছে, আর সিম্পোজিয়াম এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা যখন আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশংসা করছিল ওদের শরীরের ভঙ্গীই বলে দিচ্ছিল যে তারা বানিয়ে বলছে না।

এটি কখনোই সম্ভব হত না যদি সারা বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সঙ্গে না থাকতেন। আট তারিখের অমন থমথমে পরিস্থিতির চাপে যদিও আমাদের ব্যাবস্থাপনায় বেশ কিছুটা নেতিবাচক ছাপ পড়েছিল, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শক্তিতে এই ছাপ ওনাদের কারো মনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের চকচকে চোখে যে স্বপ্নের ছোয়া দেখেছি – মনে হচ্ছিল এই স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছা-সেবকের দলের দিকে যতবারই তাকিয়েছি – একগুচ্ছ হাসি ছুটে এসেছে। ঢাকা কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই মাইলফলকটি অর্জনের জন্য।
এই বিজয়ে আমাদের সেনাপতি ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শাহানুর হোসেন আর পদাতিক ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা – পাশাপাশি তাদের পুর্বসুরী ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে হেটে গেছে পুরোটা পথ। ওরা প্রমান করেছে ভাল কাজের জন্য ভাল ইচ্ছা আর পরিশ্রমই যথেষ্ট আর যদি সাথে থাকে জহির ভাই আর মাহমুদ স্যারের মত নির্মোহ নেতৃত্ব তাহলে যে কোন অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।

অনেক গুলো নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিল তাদের উপস্থিতি কতটা জরুরী, অনেকগুলো নতুন নাম হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকবে, আর অনেকগুলো নাম না জানা মানুষের মুখচ্ছবি মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকবে। হয়তো কখনোই বলা হবে না তাদের ভালবাসা, তাদের অবদান কত দারুনভাবে অনুভব করছি।

মীর ফখরুজ্জামান স্যারকে দেখিনি, রোকেয়া ম্যাডাম আর আনিসুর রাহমান স্যারকে খুব কাছ থেকে জেনেছি। এ কয়েকদিন অনেক বার মনে হয়েছে তাদের কথা। আজ না হয় জানালা গুলো খোলাই থাক ওঁদের জন্যে।

দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা, আমাদের সময়, রেডিও স্বাধীন, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। ইয়ুথ এনগেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ডেইলি স্টার ইয়ুথ ফোরাম। (অপরাজিতা:http://oporajitabd.com)

Facebook Comments