banner

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1716 বার পঠিত

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-২

ফাতিমা খান


Stephen Covey এর লেখা ‘The 7 Habits of Highly Effective Families’ বইটা যখন পড়ি তখন তার প্রত্যেকটা কথা আমাকে যাদুর মত টানে। প্রায় ৩৮০ পাতার বইটার দু পাতা এগোই তো চার পাতা পিছিয়ে আবার পড়ি। ইচ্ছে করে পুরো বইটা এক চুমুকে গিলে ফেলি। অসাধারণ একটা বই!

নয় সন্তানের জনক এই লেখক বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে বাচ্চাদের সাথে কৌশলে “সুঅভ্যাস” গুলো গড়ে তোলার সহজ পথ বলে দিয়েছেন।

লেখকের টিপস এন্ড ট্রিক্স আসলে যে কত কাজে লাগল তা বাস্তবে দেখলাম, আমার ছেলেটাকে যখন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফজর নামাজ পড়ে স্কুল যাওয়ার অভ্যাস করালাম। যদিও শীতকালে আমার ঘুমকাতুরে ছেলেটার জন্য কাজটা খুব সহজ ছিল না। ভেবেচিন্তে জাওয়াদের সাথে একটা চুক্তি করলাম। দুটো কাজের জন্য প্রতিদিন তার জন্য দুই রিয়াল বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু প্রতিদিন সে টাকা হাতে পাবে না। উইকেন্ডে পুরো সপ্তাহের সঞ্চয় তার হাতে আসবে সাথে থাকবে আরো ছয় রিয়াল বাড়তি। কিন্তু যদি সে দিনের টাকা দিনে নিয়ে নেয় তাহলে বাড়তি টাকাটা পাবেনা। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল কিন্তু এভাবে শুধু দুই সপ্তাহ…। তারপর থেকে ছেলের অভ্যাস হয়ে গেছে। ছুটির দিনেও তার ভোরবেলা গোসল আর নামাজ বাদ যায়না আলহামদুলিল্লাহ।

বোনাস হিসেবে আরেকটি ছোট অভ্যাসও কিন্তু তৈরী হয়ে গেল, তা হল টাকা “সঞ্চয়ের অভ্যাস”। প্রতিদিন তাকে দুই রিয়াল দেওয়া হলে সেদিনই সে হয়ত বিনা প্র‍য়োজনেই খরচ করে ফেলত, কিন্তু উইকেন্ডে অনেকগুলো টাকা একসাথে পাওয়ার পর আমি তাকে বলেছি ওর আর্ট বা পেইন্টিং এর জিনিসগুলো যেন সে ইচ্ছেমত কিনে নেয়। সঞ্চয়ের বা মিতব্যয়ীতার যে বীজটি আপনি এখন বুনে দিলেন তা কিন্তু থাকবে আজীবন।

প্রি-টিনেজারদের মাঝে একটু একটু করে “দায়িত্ববোধ” জাগিয়ে দেওয়া উচিত যা শুনতে বা বলতে খুব সহজ হলেও করাটা বেশ কঠিন। আমার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমি পয়েন্ট কালেক্ট করার সিস্টেম চালু করেছি। যেমন যেকোন একটা কাজের জন্য ১০ পয়েন্ট করে পাবে। যদি ছোট ভাইকে কোন কাজে (যেমন হোময়ার্ক করা, খাওয়া, ড্রেস আপ ইত্যাদি) সাহায্য করে তাহলে আরো ১০ পয়েন্ট যোগ হবে। সপ্তাহ শেষে পয়েন্ট সব যোগ করা হবে, অতঃপর মিনি পার্টি বা ছোট উপহার দেওয়া হবে। তাদের উদ্যমও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে কখনো আবার মুডের উপর ও নির্ভর করে। সব দিন একইরকম হবেনা এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্বের শুরুটা হয় তাদের নিজেদেরকে দিয়েই। যেমন নিজের কাপড়, জুতা, বইখাতা, টেবিল চেয়ার গোছগাছ করা থেকে শুরু করে খাবার পর নিজের প্লেট গ্লাস টা ধুয়ে জায়গামত রেখে দেওয়া। সোজা কথায় “আত্ননির্ভরশীলতা” অভ্যাস করানো। একদিনে বা একবারে সব কাজ করতে না বলে একেক দিন এক একটা কাজের ট্রেনিং দেওয়া হলে ওরা কাজে আনন্দ ও বৈচিত্র খুঁজে পাবে।

আমি অবশ্য ওদের ছোটখাট চেষ্টাগুলোর জন্য মাঝে মাঝে “সারপ্রাইজ গিফট” দেই। এতে আগ্রহ বাড়ে। চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো পুরাপুরি ছেলেকে এই ব্যাপারে পারদর্শী করতে পারিনি।

আমরা বেশীরভাগ বাবা-মারা নিজেদের অজান্তে প্রায়ই একটা ভুল করি, যদিও আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ না। বাচ্চাদেরকে কোন কাজে অভ্যস্থ করতে বা আরো বেশী পারদর্শী করতে তার সমবয়সী বা পাড়া পড়শীদের মধ্যে কারো “উদাহরণ দিয়ে কথা” বলি। যেমন – অমুক দেখেছ কত ভাল রেজাল্ট করেছে অথবা দেখেছ অমুক বাবা মাকে কত সাহায্য করে ইত্যাদি। আবার কখনো অন্যদের সামনেই বাচ্চাকে তার ভুলের জন্য “তিরষ্কার করি”। এ ধরনের আচরণগুলো তাদের মন মস্তিষ্কে এত গভীর ক্ষত তৈরী করে যার প্রভাব সারা জীবন থেকে যায়।

প্রত্যেকটি বাচ্চা ইউনিক, আপন গুনাগুনে অদ্বিতীয়। সবাই তারা নিজেদের বাবা মায়ের কাছে ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ হতেই পছন্দ করে। তাই ওদের হতাশ হতে দিবেন না। রবিঠাকুরের ওই কবিতার লাইনটা মনে আছে তো ”খোকা বলেই ভালবাসি, ভাল বলেই নয়”! (চলবে)

লেখিকা কর্মরত আছেন: হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

Facebook Comments