banner

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 645 বার পঠিত

 

সমান্তরাল

ফাতিমা মারিয়ম


(এক)

সাত মাস আগে বিয়ে হয়েছে শাহেদার। স্বামী রাশেদ আর শাহেদা গার্মেন্টসে এ কাজ করে। পাশাপাশি দুই রুম ভাড়া নিয়ে একই বাসায় শ্বশুর শাশুড়ি সহ থাকে। সংসারে আরো আছে দুই ননদ। দুজনই স্কুলে পড়ে। শাহেদার শ্বশুর ভ্যান এ করে সবজি বিক্রি করে। মোটামুটি সংসার ভালো চলে। বিয়ের পর যেহেতু এটা প্রথম ঈদ তাই শ্বাশুড়িসহ সবার মনে আশা শাহেদার বাপের বাড়ি থেকে এবার এই পরিবারের সবার জন্য কাপড়চোপড় আসবে!

-অ বউ তুমার বাপের বাড়ির থন কাপড় পাঠাইব কবে? তুমার মায়েরে কইবা শুধু জামা কাপড় দিলেই হইব না; ঈদের লাইগা চিনি, সেমাই আরো জা লাগে সব কিছুই দিতে অইব। নইলে সবার কাছে আমরা মুখ দেখামু ক্যামনে? তুমার মায়েরে মনে রাকতে কইবা এইটা তুমার বিয়ার পরে পরথম ঈদ।

শুধু শাশুড়িই নয় দুই ননদ, শ্বশুর, স্বামী সবার মুখেই প্রতিদিন এসব শুনতে শুনতে শাহেদার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে! অথচ তারা একবারও ভাবছে না যে ওরা বাবা মা কিভাবে এতগুলো মানুষকে খুশি করবে? বাবা রিকশা চালায়, মা বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে। শাহেদার আরও ছোট তিনটা ভাই বোন আছে। তাদেরকে নিয়ে কত কষ্ট করে চলতে হয়! শাহেদার বিয়ের পর তার আয়টাও এই পরিবারে চলে এসেছে। মায়ের কাছে এসব কথা বলতে তার মন চাইছে না।

সে একা একাই এই যন্ত্রণা বয়ে যাচ্ছে।

(দুই)

তিন ছেলের জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফিরলো মিনা আর শফিক।

শফিক বলল- যাক! এবার আসল কাজটা শেষ হয়ে গেছে।

মিনা হাসিমুখে মাথা নেড়ে সায় দিল।

– মিনা, কাল তো আমি সময় দিতে পারব না, তুমি মার্কেটে গিয়ে তোমার জন্য যা লাগবে কিনে নিও।

-শুধু আমার জন্য কিনব? তুমি কিছু কিনবে না?

– আমার জন্য আর কি কিনবে? আমি শ্বশুর বাড়ির একমাত্র জামাতা তারাই তো আমাকে দিবে…হাহাহা। শ্বশুর বাড়ি থেকে কবে যে ঈদের গিফট পেয়েছিলাম মনেও নেই। বিয়ের পর দুই তিন বছর দিয়েছিল… এখন তারা তো মনে হয় ভুলেই গেছে এই সব সামাজিকতা।

মিনা পাশের রুমে গিয়ে চোখের পানি মোছে। স্কুল শিক্ষক বাবার কানে এসব কথা তোলার কোন মানেই হয়না। বাবার সংসারে তো আর ঝামেলা কম না। মা অসুস্থ, ছোট ভাই দুইটির পড়ালেখার খরচ, সংসার খরচ সব মিলিয়ে বাবা মায়ের কষ্টের কথা মনে করে সে চুপচাপ সব সময়ই শফিকের এসব কথা সহ্য করে যায়। অথচ শফিক ভালো চাকুরী করে ভালো বেতন পায়। বাচ্চাগুলো এত ছোট সেজন্য সে নিজেও কোন জব করতে পারছে না। দাঁতে দাঁত চেপে সে এসব অপমান সয়ে যায়।

(তিন)

হিমেল বাসায় এসে দেখে মৌ বেশ খুশী!

-এই শোন না! আজকে আম্মু এসে টাকা দিয়ে গেছে। চল দুই একদিনের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলি। আগে আব্বুর দেয়া টাকার ঈদ শপিং শেষ করি!

– বল কি! টাকা দিয়ে গেছে? আমিতো ভাবলাম এবার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে দেশের বাইরে গিয়ে ঈদ শপিং করব! বিয়ের পর প্রথম ঈদে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েছিল! মাত্র একবার!! এতো টাকা দিয়ে তোমার আব্বু করবে টা কি শুনি? মেয়ে আর জামাইকে একটু মনের মত কেনাকাটাও করতে দিতে পারে না?

– দেশের বাইরে যেতে এত ইচ্ছে করে? তোমার নিজের টাকায় যাও না! আমার আব্বুর আশায় থাক কেন? তোমার তো প্রচুর টাকা। এমন তো না যে তোমার নিজের কিছু নেই। লজ্জা করে না পরেরটা আশা করতে? তারা যা দিয়েছে তা যদি তোমার পছন্দ না হয় তা হলে তোমার কিছু কেনা লাগবে না! আমি আমার জন্য আর হৃদিতার জন্য কিনে নেব! যত্তসব!!!

– তুমি দেখি রেগে যাচ্ছ! আমি কোন কথাটা মিথ্যা বললাম!

-রাগব না তো কি করব? সব সময় তুমি এমন সব কথা বল! কত সহ্য হয়! তুমি এসব কথা বন্ধ না করলে আমি হৃদিতাকে নিয়ে আম্মুর কাছে চলে যাব।

-আহা! রাগ করছ কেন? আচ্ছা চল,
আগামীকাল শপিং সেরেই ফেলি।

অনলাইন এক্টিভিটিস

Facebook Comments