banner

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1037 বার পঠিত

 

শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ

আফরোজা হাসান


অফ ক্লাসে যে কোন এক ক্লাসে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে জ্ঞানার্জন করাটা আমার সবচেয়ে প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি!

ঘাপটি মেরে বসার জন্য সবসময়ই আমার ফাস্ট চয়েজ থাকে যুক্তিবিদ্যার ক্লাসগুলো!

একদিন যুক্তিবিদ্যার ক্লাসে প্রফ প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তিবিদগণ কাদের কাছ থেকে অতি উন্নত মানের যুক্তির টিউশন নিতে পারে বলো তো?

ক্লাসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলেও আমি অনেকটা অজান্তেই বলে উঠেছিলাম, শিশুদের কাছ থেকে।

প্রফ বিকট শব্দে হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, একদম ঠিক বলেছো! আমি বই পড়ে যতটা না যুক্তি শিখেছি তারচেয়ে বেশি শিখেছি আমার তিন ছেলে আর দুই মেয়ের কাছ থেকে! প্রফের সাথে সুর মিলিয়ে বললাম, আমিও পড়াশোনা না করেই যুক্তিবিদ্যার উপর বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করে ফেলেছি আমাদের পরিবারের বিচ্ছুকূল আর আমার শিষ্যকূলদের কারণেই!

শিশুদের সাথে যারা নিয়মিত কথা বলেন, তারা সবাই এই কথাটি এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে, নিজের কর্মের পেছনে যুক্তি প্রদর্শনে শিশুদের কোন তুলনা চলে না! তারা এমন সব অকাট্য যুক্তি দেয় যে বাবা-মাকে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন হতে হয়!

ঠিক তেমনি এটাও ঠিক শিশুদেরকে কোন কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে যুক্তির প্রয়োগ করলে সেটা অনেক বেশি কার্যকরি ও ফলপ্রসূ হয়! যেহেতু শিশুরা নিজেরা ওদের কাছে পেছনে যুক্তি দেখায়! সেহেতু কোন কাজের পেছনে ওদেরকেও যুক্তি দেখাতে পারলে বেশ সহজেই মেনে নেয়! আমার পুত্রকে যেমন কোন কিছু করতে বলার সাথে সাথে প্রশ্ন করে, কেন করবো? যদি কারণটা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি অপছন্দনীয় বা একটু কষ্টকর হলেও যে হেলে দুলে কাজটা করে বা অন্তত চেষ্টা করে!

বাংলা লেখা ও পড়া শিখতে নাকীব ছোটবেলা থেকেই নারাজ। আমিও খুব একটা প্রেশার দেইনি যেহেতু তার যুক্তি ছিল সে তো বাংলাদেশে থাকে না, মাঝে মাঝে শুধু বেড়াতে যাবে! সেজন্য বাংলা কথা বলতে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু যখন ইসহাক খান ভাইয়ার অফিস থেকে আমার বই বাসায় নিয়ে আসা হলো। নাকীব লাফাতে লাফাতে গিয়ে সবার আগে বই হাতে নিলো। কিন্তু উল্টে পাল্টে দেখার পর যখন কিছুই বুঝতে পারলো না খুবই ব্যথিত হলো! এরপর যখন শুনলো যে আমি বইতে তার কথাই লিখেছি! সে খুবই উৎসাহিত বোধ করছিল জানার জন্য। কিন্তু যেহেতু বাংলা পড়তে পারে না তাই কি লেখা আছে বুঝতে পারলো না কিছুই।

কাঁটা ঘা’য়ে নুনের ছিটা দেবার জন্য আমি দুঃখী কন্ঠে বললাম, কত শখ করে আমি তোমার কথা লিখেছি বাবাসোনা! কিন্তু তুমি কিছুই পড়তে পারবে না! সাথে সাথে নাকীব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাংলা শেখার! এখন তো আমি সময়ের অভাবে ফাঁকি দিতে চাইলেও সে খোঁচাতে থাকে বাংলা শেখার জন্য।

যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন,

তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য?

তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য?

তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য?

খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য?

ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য?

প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য?

এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন?

আমার কেন ডানা নেই?

দাদুর কেন দাঁত নেই?

বাবা কেন রোজ অফিসে যায়?

ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না?

আচ্ছা দিদার চামড়াকে আয়রণ করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

ব্লগে শিশুদের মনোজগত ভ্রমণকারী দু’চার জনই পাবো জানি! তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, চলুন কয়েকটা দিনের জন্য ডানা মেলে ঘুরে বেড়াই সেই জগতে…! একসময় আমরাও যার বাসিন্দা ছিলাম! দুনিয়ার নানান ম্লানতায় আমাদের যে মনোজগতের ব্যাপ্তি আজ বড় বেশি সংকীর্ণ! প্রায় নিভু নিভু যার আলো……।

মনোবিজ্ঞান

Facebook Comments