banner

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1493 বার পঠিত

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (বুক রিভিউ)

অনবরত বৃক্ষের গান
|| বুক রিভিউ ||


সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা
মূল বইটির ইংরেজি নাম:
Raising A Muslim Child
লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশনাঃ সিয়ান পাবলিকেশন লিমিটেড
সম্পাদনাঃ আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
মোট পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬

বইটির বিষয়বস্তু:
═════════
সন্তান প্রতিপালন ও পরিচর্যা
সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা নিয়ে বাবা-মা, পরিবারের সকলের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগের শেষ নেই।বর্তমানে প্যারেন্টিং বিষয় বেশ জনপ্রিয় হতে চলেছে,কিন্তু সঠিক লক্ষ্যে পানে সে প্রচেষ্ঠা প্রবাহিত হচ্ছে কি না, তাই যাচাই করে দেখব, লেখকের দলীল,যুক্তির কষ্টি পাথরে। সন্তানের পরিচর্যায় বইটি সকলের জন্য হতে পারে মাইলস্টোন।

বইটির বিষয়বিন্যাস:
══════════
বইটিতে “সম্পাদেকর কথা”, “দু’টি কথা” শিরোনামে দু’টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়,মৌলিক বটে। প্রথম পর্বে ভূমিকার সাথে, এদু’টি বিষয় ফোকাস করা হবে।
সম্পূর্ন নতুন আঙ্গিকে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন লেখক,

যা আপনাকে সমৃদ্ধ করবে।

যথা-
১. আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে?
২.কার সাথে কেমন হবে সম্পর্কগুল
৩.অফুরন্ত ভান্ডারের সন্ধানের পথে হাটার নাম প্যারেন্টিং
৫.মানবতা বা মানবিকতার প্রতি কি অবদান রাখবে

সম্পাদকের কথা: মানুষ প্রকৃতি গতভাবেই লিগ্যাসি রেখে যাওয়ার বাসনা পোষণ করে, চিন্হ রেখে যেতে চায়। পরকালে বিশ্বাসী হৃদয়ের কাছে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুমিন মৃত্যুর পর তার আখিরাতে অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে তার একটি হলো ‘নেক সন্তানের ‘ দোয়া। সন্তানকে অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষ করে, পিতা-মাতা এই সুবিধা প্রাপ্ত হতে পারেন। এজন্য বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে আরো বেশী যত্নবান হতে হবে, সন্তান প্রতিপালনে।

দু’টি কথা: লেখক এখানে প্রশ্ন করেছেন, “আপনার আদর্শ ব্যক্তিত্ব হলেন আপনার বাবা কিংবা মা?” আমরা কি আসলেই অনুসরণীয় হতে পারছি সন্তানের কাছে। শুধু পার্থিব নয়, সব জীবনে সাফল্য লাভের উপায় কি তাদের শেখাচ্ছি? পিতা-মাতার ব্যক্তি জীবন বলে কিছু নেই, তারা যা করবে, সন্তান তাই শিখবে।

ভূমিকা: বাবা-মা বড় রকম ভ্রান্ত ধারণ পোষণ করেন, যেটা প্যারেন্টসদের বিশেষ দায়িত্বগুলোকে চাপিয়ে যায়।

✅সন্তানের ভরনপোষন, সুন্দর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করেই,কি দায়িত্ব শেষ?
✅ সন্তানকে বাস্তবতার নিরিখে দায়িত্ব গ্রহনের উপযোগী করে তুলতে হবে।
✅সন্তানকে জনহিত কাজে উৎসাহ দিতে হবে,অন্য দশটা শিশুর চেয়ে তাকে, উপলব্ধি করাতে হবে,মানুষ ধনী না গরীব তা, তার সম্পত্তির উপর নির্ভর করে না।
✅ দরিদ্র মানেই অসম্মানিত নয়।
মানুষের কষ্টে তাকে অশ্রু ঝরাতে দিন।
✅ সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান করে তুলুন, যাতে সে আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিতে পরিণত না হয়।
✅ পরিবার, আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে শিখান।

সবোর্পরি, সন্তানকে শিখান যে,তার সকল লাজ হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, আর কারো নয়।

১.আপনার কাছে আপনার সন্তানের পরিচয় কি হবে:

✅ মানবজাতিকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল সুন্দর আদর্শিকভাবে শিশুকে গড়ে তুলতে হবে।
✅সন্তানের সম্পর্ক গড়ে তুলার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রাথমিক দায়িত্ব সঠিকভাবে বোঝা।
✅বাচ্চাকে অবশ্যই চারিত্রিক শিক্ষা দিতে হবে। শিষ্ঠাচার বিষয়টিও বুঝিয়ে দিতে হবে।
✅খাবারের সময়সূচীর ব্যাপারে তাকে ধারনা দিতে হবে,সপরিবারে একত্রে সময় মেইনটেইন করতে শেখান। খাবার সময় টিভি দেখাসহ সব বদভ্যাস ত্যাগ করা।
✅বাবা-মা সন্তানকে সাথে নিয়ে নিজেদের কাজ নিজেরা করে ফেলায় অভ্যস্হ করা।

🔷 সীমা নির্ধারণ করা:
সন্তানের সাথে ভাল বোঝাপরার সম্পর্ক রাখুন, তবে তার একটা সীমারেখা থাকা চাই। বাবা-মা সন্তানের “অভিভাবক”, “বন্ধু ” নয়। কেননা, বন্ধুর উপর বাধন আরোপ করা যায় না। তাকে বোঝাতে হবে শ্রদ্ধা ও যৌক্তিকতার সাথে সে দ্বিমত পোষণ করতে পারে, তবে, আহ্লাদ বা বেয়াদবি নয়।

অর্থবিত্ত সম্পদ বাড়ায় না, বাড়ায় কেবল সম্পত্তি:
সন্তানকে মানুষের জন্য ব্যয় করতে শিখান। তাদের অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব সঠিকভাবে বোঝাতে হবে।
‘বিনিয়োগ’ ও ‘ব্যয়’ এ মানদন্ডে বিচার করতে শেখান।

ব্যালান্স শীট:
সন্তানকে চমৎকার ব্যালান্স শীট তৈরি করতে শেখান। তাকে লেনদেনের সুযোগ দিন, পাশাপাশি হিসাব রাখতে বলুন, দেখুন যে, শুধু ব্যয়ই করছে নাকি, বিনিয়োগ করতে শিখছে। সংশোধন শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকেই।

🔹ইঁদুর বনাম বিড়াল: শিরোনাম দেখেই চমকে উঠবেন না, বোঝার স্বার্থে লেখক এ উপমাটি দিয়েছেন। আমরা দেখেছি, ইঁদুর-বিড়াল লড়াই এ, দু’টি প্রাণীকেই লড়তে হয়। দিনশেষে আসলে আমরা কি তেমনই লড়ে চলছি নাকি,
নিজেদের আত্মউন্নয়ন করছি,
সেটাই যাচাই করা যাক-

✅ইঁদুর দৌড়ানোর মতো অনেক মানুষ লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, বেশী সম্পদ জড়ো করে। এগুলো জাহির করে তৃপ্তিজনক পায়।
✅অন্যের দুঃখ-দুর্দশায় খুশি হয়। অন্যের উপরে থাকাই, এদের জীবনের লক্ষ্য।
✅আর, বিড়াল হওয়া বলতে, নিজেকে শিকারী অনুসন্ধানী করে গড়ে তোলা। নিজেদের উন্নয়ন ও পারস্পারিক সহযোগিতা করা।

ফলে, দক্ষতা লাভ, ভুল থেকে শিক্ষা লাভ, ঝুঁকি গ্রহনের ক্ষমতা বাড়ে। দিনশেষে, নিজেকে সফল উদ্যোগতার কাতারে খুঁজে পায়, যার আলো কি না গভীর অরণ্যে থেকে ওঠে আসা সিগ্ধ কুয়াশার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।(চলবে)

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Facebook Comments