banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 397 বার পঠিত

 

ভালো মানুষ

সোহা ফারাহ


গাড়িতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করেই আমড়া বিক্রেতা ছোট ছেলেটার আমড়াগুলো মাথা থেকে পড়ে গেলো পাকা রাস্তায়। আশেপাশের সকলেই তাকিয়ে দেখছে, আমিও দেখছি! সে মন খারাপ করে কাঁদোকাঁদো সুরে কি যেন বলছে আর পড়ে যাওয়া আমড়াগুলো উঠাচ্ছে। শেষমেষ কয়টা ভাঙ্গা আমড়া নিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিলো। এমন সময় একটা লোক তাকে কাছে ডাক দিলো তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা হাতে দিয়ে বললো- মন খারাপ করোনা আবার শুরু করো।
(ভালো মানুষ)

শহর থেকে ফিরছিলাম বাড়িতে। হঠাৎ শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম একটা লেগুনায়। হেল্পার বাচ্চা ছেলেটা বৃষ্টিতে ভিজেই গেটে দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ গাড়িতে বসে থাকা এক লোক তাকে ভেতরে বসতে বললো। ছেলেটা রাজি না হলে হাতে টান দিয়ে ভেতরে বাসিয়ে দিলো। আবার বললো, ভেজার কি দরকার অসুস্থ্য হয়ে যাবা। ভেতরে ফাঁকাই তো রয়েছে। আর যারা উঠার এমনিতেই উঠবে ডাকতে হবেনা।
(ভালো মানুষ)

বাসের জানালা দিয়ে বই মেলার সারি সারি স্টলগুলো নজরে পড়া মাত্রই দ্রুত ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরছিলাম। হঠাৎ ‘এই যে আপা শুনেন’ বলে হেল্পার দৌড়ে এসে সামনে দাড়ালো। বললো, আপা আপনার টাকা পড়েছে। ড্রাইভারটাও অনেক্ষণ গাড়ি স্লো করে রেখেছিলো! অবাক হয়ে দেখলাম হেল্পার এক হাজার টাকার নোট’টা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে। ভাড়া দিতে গিয়ে কখন যে নোট’টা নিচে পরেছিলো তা খেয়াল করিনি।
(ভালো মানুষ)

বোনের চার মাসের বাচ্চার জ্বর হয়। সন্ধায় জ্বরের মাত্রা ছড়িয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের উদ্দেশ্যে দু বোন বাচ্চাটাকে নিয়ে বেরোই। ফেরার পথে রিক্সায় আসতেই রাস্তায় দু’গ্রুপের মারামারি লাগে। চারিদিকে চিৎকার হট্টগোলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। হঠাৎ রিক্সার পেছনে লাঠি দিয়ে জোড়ে বাড়ি দেয় একজন। রিক্সার হুড আধভাঙ্গা হয়ে একপাশে ঝুলে পরে। অসুস্থ্য বাচ্চাটা ভয়ে কান্না শুরু করে। দিশেহারা হয়ে বোন রিক্সা থেকে নেমে যেতে চায়। রিক্সাওয়ালা তাড়াতাড়ি তাকে বাধা দিয়ে বলে, আম্মা এই মারামারিতে বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নামলে আরও বিপদে পরবেন। পাশের ঐ বস্তিতে আমার বাড়ি, আমি কোনও ভাবে রিক্সা একপাশে নেই। আপনারা আমার বাড়িতে কিছু সময় বসেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে বাসায় ফিরেন। তিনি বহু কসরতে ভাঙ্গা রিক্সাটা নিয়ে যান রাস্তার সাইডে। আমরা তার বাসায় গিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাচি। কিছু সময় পর রাস্তা ফাঁকা হলে বেরিয়ে গাড়ি খুজতে থাকি। ঐ রিক্সাওয়ালা তার ভেঙ্গে যাওয়া রিক্সায় আমাদের রেখে আসতে পারবেননা। কিন্তু রিক্সা বা গাড়ি কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছিল না। আবারও এগিয়ে এলেন তিনি। প্রায় এক ঘন্টা সময় রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে আমাদের জন্যে রিক্সা আনলেন। দু’বোনকে রিক্সায় তুলে দিয়েই তিনি ঘরমুখো হলেন।
(ভালো মানুষ)

ভালো মানুষে ছেয়ে আছে এ দেশ ও জগৎ তাই হয়তো এখনো পৃথিবী জীবিত। আমাদের নজরে চট করে মানুষের খারাপটা সহজেই পরে যায়। কিন্তু আশেপাশে থাকা অসংখ্য ভাল মানুষদের যেন আমরা দেখতেই পাইনা। তারা দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় বেশিরভাগ!
হ্যঁ মন্দ মানুষও আছে, কিন্তু আমাদের একটু ভাল ব্যবহারে তারাও ভাল হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী তো বাঁচবেই শুধু তাকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখাটার দায়িত্বই আমাদের। চারপাশের শুধু মন্দ বিষয়গুলো না দেখে ভাল কিছু যে হচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখা জরুরী।
(ভালো মানুষ)

Facebook Comments