banner

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1009 বার পঠিত

 

“মুঠোফোনে পর্ণগ্রাফী” ১৪ বছরের কিশোর দ্বারা ৭ বছরের শিশু ফারজানা ধর্ষণের পর হত্যা

১৭ সেপ্টেম্বর চাচা রহমত আলীর বাড়ির পেছনে পাওয়া যায় ফারজানার হাত-পা বাঁধা লাশ। ফারজানার বাবা ঢাকার কেরানীগঞ্জের সিরাজনগর এলাকায় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয় তার মেয়ে ফারজানা আক্তার (৭)। নিহত শিশু ফারজানের বাবা কবির হোসেনের (৩৫) দুই মেয়ে ও এক ছেলে।
কবিরের সঙ্গে চাচা রহমত ও তাঁর সন্তানদের অনেক দিনের জমি নিয়ে বিরোধ। তাঁরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফারজানাকে হত্যার অভিযোগ এনে চাচাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কবির (৩৫)। সেখানে তিনি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন, এঁরাই তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন। পরে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ চাচাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।
হত্যার এজাহারভুক্ত আসামিদের অস্বীকারের মুখে ১৫ দিন পর মামলার তদন্তভার আসে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে। ডিবির কাছেও কবির একই অভিযোগ করেন। কিন্তু নিবিড় তদন্তে জেলা ডিবির এসআই মো. মনিরুজ্জামান দেখেন, ফারজানাকে খুন করেছেন অন্য আরেকজন। সেই খুনি? তাঁর পরিচয় কি?
তার তদারক কর্মকর্তা হলেন জেলা গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ওসি) দীপক কুমার সাহা।
দীপক কুমার বলেন, ফারজানাকে খুনের অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও তারা যখন অস্বীকার করে আসছিলেন, তখন তারা নিবিড়ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ফারজানার লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্থান টানা তিন দিন পরিদর্শন করেন। ফারজানার বাবা কবিরের কাছ থেকে জানতে পারেন, মুক্তিপণের জন্য ৫ লাখ টাকা চেয়েছিল কথিত অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। টুকে নেন সেই মুঠোফোন নম্বর। বের করেন মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর)। দেখা যায়, কথিত অপহরণকারীরা কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ফোন করেছেন।
কবিরের দেওয়া তথ্যমতে, কে বা কারা মুক্তিপণের টাকা চেয়েছিল কবিরের কাছে, এর রহস্য খুঁজতে শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার। কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেই মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হয়ে আবার কবিরের বাড়িতে আসেন তারা।
পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দেখেন, কবিরের অন্য এক চাচার ছেলে বাড়িতে নেই।
দীপক কুমার বলেন, ‘কিশোর ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল তাকে ঘিরে? যে ছেলে সব সময় বাড়িতে থাকে, সে কেন হঠাৎ বাড়ি ছাড়া হলো? কৌশলে তাকে আমরা নজরদারি করতে থাকি। তার গতিবিধি অনুসরণ করা হয়। তার বন্ধুবান্ধব কারা, এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকি। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও চালাক। সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু তার আচরণের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। সারাক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকত।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ফারজানা মারা যাওয়ায় একা একা ঘরে থাকতে তার ভয় লাগে। এ জন্য সে সেখানে থাকে না।
কবির এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে একই কথা বলেন কিশোরের মা। আরো জানা যায়, ওই কিশোর পিইসি ও জেএসসিতে এ প্লাস পেয়ে সেখানকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগের এই কিশোর এলাকায় মেধাবী ও ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া এই কিশোর ফারজানাকে খুব আদর করত। ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার পর ওই কিশোর তাকে খুঁজতে বের হয়েছিল। সবার সামনে অনেক কান্নাকাটিও করেছে। মারা যাওয়ার পর বাড়িতেও সে ছিল।
৭ অক্টোবর গ্রেপ্তার করার পর ওই কিশোর ফারজানাকে খুন করার কথা অস্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, ফারজানাকে সে মেরে ফেলতে চায়নি, অসাবধানতায় মারা গেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বললেন, ‘যখন কিশোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তখনো হাতে পৌঁছায়নি। যখন হাতে আসে, তখন দেখি, সাত বছরের ফারজানাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে। ওই কিশোর তার জবানবন্দিতে ধর্ষণ করার কথা অস্বীকার করেছে।’ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারজানাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। যৌনাঙ্গে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়।’
ফারজানা খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কিশোর এখন সংশোধন কেন্দ্রে আছে। তার বাবা মারা যান বিদেশে। দাদা আর মাকে নিয়ে সে থাকত। ফারজানার বাবা কবির এই কিশোরের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। দেখা হলে সে সালাম দিত। তার সঙ্গে বা তার পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। ভালো ছাত্র হিসেবে তাকে স্নেহ করতেন। ওই কিশোর কেরানীগঞ্জের যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বললেন, ওই কিশোর আগে এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়ত। সেখান থেকে খুব ভালো ফলাফল করে। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ না থাকার কারণে তার দাদা তাকে তার স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ছেলেটি গত কয়েক মাসে স্কুলে আসেনি। দেয়নি কোনো পরীক্ষা। আর নিহত ফারজানার বাবা কবির দেখেছেন, প্রায় সময় কিশোরের হাতে মুঠোফোন থাকত। কার সঙ্গে যেন কথা বলত। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। তার মুঠোফোনটি বেশ দামি ছিল।
দীপক কুমার বলেন, কিশোর তাদের বলেছে যে মুঠোফোনটি সে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে ফারজানাকে হত্যার অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। গ্রেপ্তার করা আসামিরা এখন জামিনে আছেন।
দীপক কুমারের ধারণা, কিশোরটি মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়মিত এমন কিছু দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আর আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে থাকতে পারে।
ফারজানার কথা বলার সময় হাউমাউ করে কাঁদেন বাবা কবির। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে যে খুন করেছে, তার ফাঁসি চাই। ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি চাই না।’

সমাজের অধঃপতনের চিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোরটি হাতে মুঠোফোন। যার মাধ্যমে নিয়মিত পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখত, যা তার মধ্যে যৌন–আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই শিশুটিকে ধর্ষণ। ধর্ষণের অপরাধ ধামাচাপা দিতেই হত্যা করা হয় শিশুটিকে।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা।

Facebook Comments