banner

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1078 বার পঠিত

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হোক ব্যবসা

দিন বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ক্যারিয়ার আর ব্যবসার ধারণা। ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের থেকে শুরু করে বড় কর্পোরেট হাউজগুলো এখন নিত্য নতুন ব্যবসা নিয়ে হাজির হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে দুই কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন। ব্যবহারকারীরা কোনো না কোনো ভাবে একজন ভোক্তা। ফলে তাদের টার্গেট করেই মূলত এখন ব্যবসা পরিকল্পনা করছেন অনেকে। যেখানে পোস্টার, ব্যানার বা সংবাদমাধ্যমে শত কোটি টাকা খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সেখানে স্বল্প খরচে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে সামাজিক এই মাধ্যমগুলো। ট্র্যাডিশনাল বিজ্ঞাপন মানুষ দেখতে চায় না। পত্রিকার প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন দিলে পেজ উল্টিয়ে আর টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিলে রিমোর্ট ঘুরিয়ে অন্যত্রে চলে যায় টার্গেট ক্লাইন্ট। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ নিজেই এসে সচল থাকে এসব বিজ্ঞাপনে। সাধারণ মানুষের কাছে শৈল্পিক উপায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো।

অনেকেই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া অনেকেই যারা আগে থেকে ই-কমার্স ব্যবসা করছেন তারাও মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আপনার যে কোনো ছোট বা বড় ব্যবসাকেও প্রমোট করতে পারেন ফেসবুকের মাধ্যমে। তার আগে কেনো ব্যবসা ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতা নেবেন বা কীভাবে এ খাতে ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমে জানতে হবে আপনার ব্যবসা কী? আপনার টার্গেট ক্লায়েন্ট কে? আপনার টার্গেট ইভেন্ট কোনটি? তবে ফেসবুক কীভাবে আপনার জন্য ব্যবসা নিয়ে আসছে? চলুন একপলকে জেনে নেওয়া যাক।

❏ ফেসবুকে খুঁজুন আপনার ক্লায়েন্টকে

আপনি যদি কনজিউমার কেন্দ্রিক কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায় শুরু করেন যেমন: ক্যাফে, বুটিক,পার্লার, ই-কমার্স বা এফ-কমার্স ওয়েবসাইট তবে অনেকেই ফেসবুকে আপনার পণ্য নিতে সরাসরি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এ জন্য লাগবে না বাড়তি কোনো দোকান ভাড়া কিংবা যাতায়াত খরচ। ব্যবসায় শুরু ও তার প্রচার যদি এভাবেই করা যায়, তাহলে তা লাভজনক না হয়ে উপায় কী?

❏ রেজিস্টার করুন ফেসবুক বিজনেস পেজে

যদি আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুজ অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তবে চাইলে আজই আপনি রেজিস্টার করে ফেলতে পারেন ফেসবুক বিজনেস পেজে। আপনার ব্যক্তিগত পেজই আপনার ভিজিটর বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে। আর কখনো যদি জানতে চান ফেসবুক বিজনেস কেস স্টাডিজ তবে গুগল তো রয়েছেই। জাস্ট ক্লিক অ্যান্ড সার্চ।

❏ আপনার ব্যবসা সম্পর্কে মানুষকে জানান 

শুধু ফেসবুকেই থেমে থাকবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ফেসবুক ছাড়াও ব্যবহার করুন ইন্সটাগ্রাম, লিংকড ইন, টুইটার বা পিন্টারেস্ট। প্রত্যেক জায়গায় ছড়িয়ে দিন আপনার ফেসবুক বিজনেস পেজের লিঙ্ক। জানান আপনার ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা।

❏ আপনার প্রোফাইল বা পেজকে করে তুলুন আকর্ষণীয়

আপনার প্রোফাইলের সার্থক ব্যবহার করুন। ফুটিয়ে তুলুন ইমেজ/ছবিতে আপনার ব্যবসায়ের ইউনিক অফার বা নতুন প্রোডাক্ট লাইন। তুলে ধরুন আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরুন।

❏ ব্যবহার করুন কী-ওয়ার্ড

দ্রুত ব্যবসার প্রসারে ব্যবহার করুন স্পেসিফিক কী-ওয়ার্ড। যেন মানুষ যে কোনো ডিভাইসেই (ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল) সার্চ করুক না কেন, তা যদি আপনার ব্যবসায়িক পণ্য বা সেবা সংশ্লিষ্ট হয় তবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাঙ্কিং এ সবার প্রথমে যেন আপনার নাম আসে।

❏ সবাই পছন্দ করে এমন কন্টেন্ট ব্যবহার করুন

আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন ‘কনটেন্ট ইজ দ্য কিং’ আর এটি আক্ষরিক ভাবে সত্য। আপনার কন্টেন্ট যদি আকর্ষণীয় না হয় তবে আপনার পোষ্টটি ক্লায়েন্টের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে ছবি বা ভিডিওতে সবচেয়ে বেশি কমেন্ট পরে। এছাড়া জিআইএফ, অ্যানিমেশন এগুলো বেশি শেয়ার করা হয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের মতে ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কন্টেন্টের ৭৫ শতাংশ ইমেজে খরচ করে যার রেসপন্স রেট সবচেয়ে বেশি।

❏ যে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে

আপনার পেজ আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু সৃষ্টিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে এমন কাজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার দেওয়া মেসেজ যেন বিতর্কিত না হয়; তবে এতেও এক ধরনের মার্কেটিং হবে যাকে বলা হয় ‘নেগেটিভ মার্কেটিং’। এ ধরনের মার্কেটিং কোনো কোনো সময় কাজে দেয় তবে সেটা কতটা কাজে দেবে বা ক্ষতি হতে পারে সেটাও চিন্তা করে নিতে হবে। এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া পলিসি ফলো করুন যেন তা মার্কেট ভাইব ধরতে পারে। প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট কোনো প্রতিষ্ঠানকে পেজ ও কন্টেন্ট ম্যানেজ করার দায়িত্ব দিতে পারেন।

❏ এনগেজমেন্ট বাড়ান

আপনার ফলোয়ারদের সাথে সরাসরি কথা বলুন। তাদের মতামত ও প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত জবাব দিন। তাদের আলচনার সুযোগ করে দিন। এতে আপনার এনডরসমেন্ট বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায় আপনি বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনার ফেসবুক পেজ থেকে আপনার ভিজিটরকে ওয়েবসাইটে নিয়ে যান। তুলে ধরুন আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব। দরকার হলে তৈরি করুন ব্লগ ও সেখানে আলাদা একটি বিভাগ রাখুন পাঠক প্রতিক্রিয়া ও মতামতের। এতে আপনি আপনার ভোক্তারা আসলে কি চাচ্ছে তা অনুমান করতে পারবেন।

❏ আপনার ফেসবুক ফলোয়ারদের দিন কিছু এক্সট্রা বেনিফিট

কন্টেস্ট, কম্পিটিশন, ডিস্কাউন্ট প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখুন। আপনার ফেসবুক ফলোয়ারদের দিন এক্সট্রা বেনিফিট। তাদের কাছ থেকে রিভিউ নিয়ে পেজে অন্তর্ভুক্ত করুন। অনেকেই ফেসবুকে খুঁজে বেড়ান ইউনিক অফার, তারা হতে পারে আপনার প্রাইম কাস্টোমার। তাদের যদি আপনি সন্তুষ্ট রাখতে পারেন তারাই আপনাকে এনে দিবে আরও ক্লায়েন্ট।

❏ হিসেবে রাখুন প্রতিটি বিষয়

আপনার বিজেনেজ পেজে ঘটা যাবতীয় বিষয়ের হিসাব রাখুন। ফেসবুক পেজ ইনসাইট আপনাকে যাবতীয় তথ্য দিবে যে কোথা থেকে আপনার কাস্টোমাররা কীভাবে আপনার বিজনেসে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও আপনি ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ম্যানেজার ড্যাশবোর্ড থেকে জানতে পারবেন আপনার অ্যাড বিজনেস অবজেক্টের সাথে কেমন পারফর্ম করছে। বিশ্বাস করুন এই সবই করা সম্ভব শুধুমাত্র ফেসবুককে ব্যবহার করে। তাই আজই ভেবে নিন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সহায়তা নেবেন কিনা। এই বৈশাখ থেকেই আপনার ব্যবসায় খুলুক নতুন দিগন্ত ফেসবুকের মাধ্যমে।

❏ ফেসবুক অ্যাড

আপনি যদি কোনো স্পেসিফিক গ্রুপের কাছে পৌঁছাতে চান তবে ফেসবুক অ্যাডভারটাইজিং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পন্থা হতে পারে। আপনি নির্ধারন করে দিতে পারেন কারা আপনার দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখবে। যেটা টেলিভিশন বা পত্রিকা করতে পারে না। যেমন আপনি অনলাইনের মাধ্যমে গহনা বিক্রি করতে চান। এই গহনার টার্গেট ক্লাইন্ট কারা তা ঠিক করে দিতে পারবেন। এই ক্লাইন্ট ছেলে না মেয়ে হবে? বয়স ২৫ না ৫০ হবে? ঢাকার মানুষ দেখবে নাকি শুধু চট্টগ্রামের মানুষ এই বিজ্ঞাপন দেখবে তা ঠিক করে দেওয়া যায়। ফেসবুক অ্যাডের মাধ্যম আপনি পাবেন লোকেশন, ইন্টারেস্ট, জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য, বয়স ও ব্যবহারসহ আরও নানান তথ্য। এ জন্য কোনো ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে পারেন।

Facebook Comments