banner

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 101 বার পঠিত

মুক্তিযোদ্ধার পা

প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম:

image_105922ঢাকা: হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার হলদারপুর গ্রামে বাস করেন মুক্তিযোদ্ধা ফারিজা খাতুন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল বিমান সেলিংয়ে বাম পা হারান তিনি। তারপর থেকেই তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। ৪২ বছর পর আজ সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।

একটি প্রথম আলোর সহযোগিতায় তার কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করেছে ব্র্যাক। ২৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর ব্র্যাক সেন্টারের আঙ্গিনায় ঠিক ছোট্ট শিশুর মতো করে নতুন পা নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছিলেন ফারিজা।

প্রশ্ন করলাম কেমন লাগছে, চোখভরা পানি নিয়ে হেসে বলেন বালাই। একটু থেমে আবার বলেন কত কথা মনে পড়ে। কি কথা? বাবার কথা। দুই ভাই আর এক বোনের সুখের সংসার ছিল তাদের। কিন্তু আমাদের মহান স্বাধীনতা যে হাজারো মানুষের আত্মত্যাগে রচিত।

তাদের একজন হয়ে ফারিজা জীবনালেখ্য শোনালেন। শোনালেন পা হারানোর জীবনকে টেনে নেয়ার গল্প। যা তাদের সংসাকে আচমকাই স্তব্ধ করে দেয়। জমিজমা বিক্রি করে, মেয়েকে কখনো কাঁধে কখনো পিঠে করে সেই পায়ের চিকিৎসা প্রান্তর চেষ্টা বাবার। যুদ্ধকালীন সময়ে তেমন চিকিৎসা দেয়া যায়নি। কিন্তু বাবা হাল ছাড়েননি। একমাত্র মেয়েকে এই ভাবে দেখতে খুবই কষ্ট বাবা কৃষক আব্দুল হাকিমের। তাকে আর দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন দিতে নিরন্তর যুদ্ধে অবতীর্ন হন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার তাকে সু্স্থ করে একটা স্বাভাবিক জীবনদেয়ায় দায় থেকে নিজেকে কখনও বিচ্ছিন্ন করেননি আব্দুল হাকিম। তবে যখন সব জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হন, তখন আর তাকে ভাল করার আশাটুকু ধরে রাখতে পারেনেনি তিনি। ফারিজা পঙ্গু পায়ের মতো অচল হয়েগিয়েছিল তার জীবনও।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ত্যাগের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর লেখা একখণ্ড চিঠি আর দুই হাজার টাকাকে সম্বল করে প্রদীপে আলোর মতো নিভুনিভু জীবনকে বয়ে নেয়া। এ জীবনে কষ্টের অন্ত ছিল না তারপরও স্বামী আর ছেলেপুলে নিয়ে সংসার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া আজও কেমন হাহাকার তোলে ফারিজার মনে।

আর দীর্ঘদিনে কতশত জনপ্রতিনিধি তাদের সুবিধামতো অসংখ্য মানুষকে দেন মুক্তিযোদ্ধার সনদ। শুধু পাননি তিনি। তাই মহান এই ত্যাগ নিয়ে তার কোন কিছু বলার আগ্রহ থাকে না। অভিমানে গুটিয়ে নেন নিজেকে। হবিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় গড়ে ওঠা সংগঠন ‘চেতনা ৭১’ তাকে নিজের অধিকারের কথা নতুন করে জানান দেয়।

এই সংগঠনের কেয়া চৌধুরী ২০০৭ সালে তাকে খুঁজে পান। তারপর থেকেই তার অধিকারটুকু প্রতিষ্ঠা করার কাজ করেন তিনি। ফারিজা আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেডের অন্তর্ভুক্ত একটি নাম। দুই একটি সংগঠন থেকে সামান্য কিছু সাহায্য আর এই পা এখন সব। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তার সামনের দিকে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা কি আর্থিক অনটনে আবার অচল হবে? চোখের জলে সে প্রশ্নই করেন আমাদের ফারিজা খাতুন।সূত্র: ওয়েবসাইট

 

অপরাজিতাবিডিডটকম/আরএ/১২১২২ফেব্রুয়ারী২০১৪

Facebook Comments