banner

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 188 বার পঠিত

বন্ধন

bondhon1পেপার পড়তে পড়তে খানিকটা অবেলার ঘুম হানা দিল চোখে। মাথাটা মৃদু ঝাকুনি দিয়ে চোখ মুছে আবারো পিটপিট করে পত্রিকার খোলা পাতাটায় তাকালেন রফিক সাহেব।

-স্যারের কি রাত্রে ঘুম হয় নাই?
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল পিয়ন বাদল।

-নারে, ঘুম তো হয়েছে কিন্তু আজকাল এত কাজ শরীরে মানেনা। তার উপর কত রকমের টেনশন…

-স্যার, চা-টা খান, আরাম পাইবেন। আপনের জন্য আদা দিয়া দিছি।

রফিক সাহেব মৃদু হাসলেন। ছেলেটার নিজে থেকে সবার প্রতি খেয়াল রাখার ব্যাপারটা তাঁর ভালই লাগে। তাঁর মতে, এইসব ছেলে-পুলে মানুষের দোয়ার বদৌলতেই অনেকদূর যায়।

লাঞ্চটাইমে পকেটে হাত দিয়েই আবারো মনটা খচখচ করে উঠল রফিক সাহেবের। ক’দিন ধরে খরচ হচ্ছে বেশ। বাসার ড্যাম হয়ে যাওয়া দেওয়ালে রঙ করানো, ভাঙ্গা-চুরা ফার্ণিচারগুলো মেরামত, হরেক রকম কেনাকাটা, ছেলেটা আবার কলেজে ভর্তি হল এবার। যদিও পরিচিত মানুষ দেখে আসলাম মিস্ত্রিকে বলে কয়ে খানিকটা কমে কাজ করিয়েছেন, তবুও শুধু ফার্ণিচারগুলো ঠিক করতে হাজার ছয়েক টাকা লেগে গেল। এই দুর্মূল্যের বাজারে এই-ই কম কিসের!

এসব ছাড়াও মনে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। সব ঠিকঠাক মত হবে তো! বড় মেয়েটার বিয়ের কথা চলছে বেশ কয়েক মাস। সব ঠিকঠাক, ছেলেরা আংটি পরাতে আসবে বলে খানিকটা গোছগাছের তাগাদা দিচ্ছিল রোকেয়া। প্রথম এ বাড়িতে আসবে বলে কথা। তাই কোনোরকমে ঘষামাজা করে নিচ্ছেন জোড়াতালির সংসার।
ছেলে দেখেছেন বেশ ক’জনই, তবে শেষমেষ তারেক নামের ছেলেটাকেই মনে ধরেছে সবার। ছেলে ভালই। পাশ করেই চাকুরীতে ঢুকেছে একটা ছোট-খাট মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানীতে। বেতন মোটামুটি। ফ্যামিলি ভাল, ছেলেও দ্বীনদার, আর কি-ই বা চাওয়ার থাকে মধ্যবিত্ত ছাপোষা এক সরকারী চাকুরের! তবে এর চেয়ে ভাল সম্বন্ধ যে আসেনি তা নয়, কিন্তু বেশি বড় ঘরে বিয়ে দিতে মন সায় দেয়না তাঁর। পয়সাওয়ালাদের কতরকম চাহিদা, রীতি-রেওয়াজ, বিভিন্ন অকেশনে হাজার টাকার উপহার, শীতের পিঠা, গরমের ফল আরো কত কি! আবার, ওবাড়ির লোকজন এলে প্রতিবেলা কোরমা-পোলাউয়ের সাথে হরেক রকম আইটেম খাওয়ানো… এসব যে কঠিন হয়ে যাবে তাঁর জন্য…। তাছাড়া তিনি চাননা অন্যের বাড়িতে গিয়ে তার আদরের মেয়েটা হিনমন্যতায় ভুগুক বা মন ছোট করে থাকুক। রাজপ্রাসাদের বান্দিগীরির চেয়ে কুড়ে ঘরের রাণী হয়ে থাকাও ভাল। ছেলে-মেয়েদের প্রাচুর্যের মুখ দেখাতে পারেননি বটে, তবে যতটুকু পেরেছেন দুনিয়ার কাঠিন্য থেকে আগলে তো রেখেছেন! অবশেষে এইবেলায় এসে মেয়েটা অকূল পাথারে পড়বে ভাবতে পারেন না তিনি।

কেবলই ভয়, ছেলেটা দেখে রাখতে পারবে তো রাবেয়াকে? খেয়াল রাখবে তো আমার মুখচোরা মেয়েটার??
একটা দীর্ঘশ্বাস হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়ে কাঁচা-পাকা দাড়ির ফাঁক গলে। বংশের বড় মেয়ে রাবেয়া। তাই শুধু নিজের ঘরেই না, সমস্ত স্বজনদের মধ্যেও খুশির ধুম পড়ে গেছে। ছেলে-পুলেদের কতরকম জল্পনা-কল্পনা আর আবদার… সেসব কানে আসলে কেমন যেন ঘাবড়ে যান তিনি। এত ধুমধামের বিয়ে কি এই গরীব বাবার পক্ষে সম্ভবরে…!

bondhon2২.
-তোকে না বললাম তরকারিটা নাড়তে! এখন পুড়ল তো?
বেশ জোরেই ধমক দিলেন রোকেয়া।

-কখন বললা? বললা তো ফ্রিজ থেকে কাঁচামরিচ আনতে।
মুখ কাল করে জবাব দিল রায়হানা।

-হয়েছে, আর বলতে হবেনা, মরিচগুলো কুচিয়ে দে তাড়াতাড়ি।

রায়হানা কিছু বলতে গিয়েও বললনা। অতি দুশ্চিন্তায় আম্মার মোটামুটি মাথা খারাপের অবস্থা। সবকিছু নিয়ে বেশি বেশি দুশ্চিন্তা করাটা আম্মার অন্যতম বদঅভ্যাস। কি আর করা…

রোকেয়া আলুভর্তায় শর্ষের তেল মাখাতে মাখাতে আবারো চিন্তার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে লাগলেন। বাথরুমের আয়নাটা ভেঙ্গেছে কয়েকমাস। সরকারী বাসার এই এক জালা যে, দরখাস্ত দেয়ার পর বছর চলে যায় কিন্তু মেরামতের খবর থাকেনা। নিজেরা ঠিক না করালে বিয়ের আগে আর আশা নেই। নিজেদেরই করতে হবে যা করার। আবার নিজের বিয়ের গহনাগুলো খানিকটা ঘষা-মাজা করার জন্য দিয়ে এসেছেন তাও সপ্তাহ খানেক হল। আকদে্‌ নিজের বিয়ের গহনাগুলোই রাবেয়াকে পরানোর বড় সখ তাঁর। কিন্তু এতসব খরচের কথা কি আর কর্তাকে শোনানো যাবে! হাজারটা চিন্তার ভারে এমনিতেই হুটহাট প্রেসার বেড়ে যায় তাঁর…

-আম্মাআআ, আর কতক্ষণ লাগাবা?
রায়হানার কন্ঠে তড়িঘড়ি করে ভর্তার বাটিটা হাতে তুলে দিলেন। রায়হানা একটুখানি মুখে নিয়েই ভ্রু কুচকে বলল, লবণ কে দিবে আম্মা? উফ্‌ আম্মা… কই থাকো তুমি?

-দিয়ে নে না! এত বড় বড় দুইটা মেয়ে, কোনো কাজে-কামে পাওয়া যায়না, খালি দোষ ধরবে।
রোকেয়া উচ্চ কন্ঠে কথা কয়টা বলে স্থান ত্যাগ করলেন।

রায়হানা তির্যক দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে মনে রাগ ঝাড়ল। বড় মেয়ের চিন্তা করতে করতে মরেই যাচ্ছে। বিয়ে যেন আর কারো মেয়ের হয়না!
এ সময় বেল বাজালো রাফিদ।

-কি সাহেব, আজকে এত তাড়াতাড়ি যে? ক্লাস হয়নি, নাকি আড্ডা দিয়ে চলে আসলেন?
দরজা খুলেই প্রশ্ন রায়হানার।

-এই আসলাম আর কি! তুমি বুঝবানা ছোটপু।
দাঁত বের করে পিত্তি জালানো হাসি দিয়ে বলল রাফিদ।
ভাত বেড়ে দাও, ক্ষিদেয় মরে যাচ্ছি।

-সারা দুনিয়ার ময়লা হাতে-পায়ে করে নিয়ে আসছিস, সেগুলো সাফ করে আয় বাঁদর। আর কানের থেকে ওইগুলা খোল! সারাদিন কানে ভরে রাখতে রাখতে বয়রা হয়ে গেছিস খবর আছে?
চোখ সরু করে হুকুম দিল রায়হানা।

-সেজন্যে বুঝি এরকম মাইক বাজাচ্ছো? আস্তে বললেও তো শুনি।
আম্মার কানে গেলে আরেক দফা বকা খেতে হবে ভেবে তাড়াতাড়ি বলল রাফিদ। যদিও তাঁর ধারণা আম্মার বকা খাওয়ানোর জন্যই এভাবে গলা উচিয়ে হেডফোনের গুণাগুণ বর্ণনা দিচ্ছে ছোটপু। সবকিছু নিয়ে পিছে লাগার বদ অভ্যাসটা যে আপুর কবে যাবে…

-আবার শুরু করে দিলি দুইটা মিলে? সারাদিন একজন আরেকজনের পিছে না লাগলে শান্তি হয়না তোদের দুইটার?
রোকেয়া পাশের রুম থেকে ধমকে উঠলেন।
সুতরাং দুজন দুজনকে ভেংচি কেটে প্রস্থান করলো। দুজনে পিঠাপিঠি হওয়ায় ভাবও বেশি, আবার লাগেও বেশি দুজনের।

আসর পড়ে সালাম ফিরাতেই আম্মুর ইদানিংকার নতুন কর্যকলাপ দৃষ্টি গোচর হল রায়হানার। আপুকে খোচাচ্ছে কি কি মুখে লাগাতে। আর আপু করুণ মুখ করে অসম্মতি জানাচ্ছে। উফ্‌ আল্লাহ্‌, এত্ত সুন্দর দিয়ে তারেক ভাই করবেটা কি আল্লাহ্‌ জানে। এমনিই তো সুন্দর আপু। আর কি দরকার! যাহোক, আম্মার জিত হল, এবং রাবেয়াপু গোমড়া মুখে আম্মার মধু, বেসন নাকি আর কিসের যেন মি

Facebook Comments