banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 145 বার পঠিত

যেসব বিষয়ে আপোষ নয়

1fe8344218e0ca9a5d3487e408ead731_xlargeঅপরাজিতাবিডি ডটকম: বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার এই সময়ে এসে মনের মতো একটি চাকরি খুঁজে পাওয়াই শক্ত বিষয়। অনেক সময় বড় বড় ডিগ্রি নিয়েও মেলে না চাকরি। ফলে একটা সময় গিয়ে নিজের সাথেই আপোষ করতে হয়। তবে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে কিছু কিছু বিষয়ে কোনোভাবেই আপোষ করা উচিত নয়। এমন বিষয়গুলোর দিকেই এই লেখায় আলোকপাত করেছেন তরিকুর রহমান সজীব

জীবনের নানা প্রসঙ্গেই আপোষ করার প্রয়োজনীয়তাকে মেনে নেন অনেকেই। এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের কর্মজীবনেও নানা ধরনের আপোষ করে চলতে হয়। বর্তমান বিশ্বের এই প্রতিযোগিতার সময়ে এসে আপোষ যেন একটি স্বাভাবিক শব্দ ও নিয়মে পরিণত হয়েছে। অবশ্য অনার্স, মাস্টার্সে খুব ভালো ফলাফল করেও যদি বিষয়ভিত্তিক এবং মনের মতো চাকরি না পাওয়া যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য আপোষ না করেই বা উপায় কী! আবার যারা চাকরিতে ইতোমধ্যেই প্রবেশ করে ফেলেছেন তাদেরও প্রমোশন বা অন্যান্য স্বার্থে আপোষ করেই চলতে হতে পারে। তবে আপোষ করার ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। তা নইলে চাকরি একটা করলেও তাতে ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যাবে না।

আপোষ যারা করে থাকেন, তারা অনেকেই উপায়হীন অবস্থায় পড়ে আপোষ করে থাকেন বলেই মনে করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই হয়ত সবগুলো উপায় তিনি খুঁজেও দেখেননি। খুঁজে দেখলে হয়ত নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে হত না তাকে। এমন নানা ধরনের আপোষের মধ্যেও কিছু কিছু বিষয়ে কখনই আপোষ করা উচিত নয় বলেই মন্তব্য করেন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা। এসব বিষয়ে আপোষ করলে সাময়িক কোনো উপকার হলেও শেষ পর্যন্ত গিয়ে পস্তাতে হয় বলেই ধারণা তাদের। এমন বিষয়গুলোর কথাই তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

 

নিষ্ঠার সাথে আপোষ নয়

মানবজীবনের অন্যতম মূল একটি বৈশিষ্ট্য হলো নিষ্ঠা। জীবনে চলার পথে এটিই একজন ব্যক্তির অন্যতম মূল ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হয়। নিজের চিন্তা-চেতনা, পরিবেশ, সংস্কৃতি—সবকিছু মিলিয়েই গড়ে ওঠে একজন ব্যক্তির নিষ্ঠা। ফলে একজন ব্যক্তির অন্যতম মূল পরিচায়কই হলো তার নিষ্ঠা। কর্মজীবনেই হোক আর ব্যক্তিজীবনেই হোক, নিষ্ঠাই একজন ব্যক্তিকে ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে। এ কারণেই নিষ্ঠার সাথে কখনও আপোষ করতে হয় না। অনেকেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে নিজের এক অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের সাথে আপোষ করে ফেলেন। কর্মজীবনেও হয়ত নিষ্ঠার ঘাটতি পড়ে যায় অনেকের। অনেকে মোহে পড়েও নিষ্ঠা থেকে দূরে সরে যান। আসলে এতে করে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের থেকেই দূরে সরে যান। আর এই আক্ষেপ শেষ পর্যন্ত তাকে কোনোভাবেই সুখী করে না।

 

আত্মসম্মান বজায় থাক

নিষ্ঠার পাশাপাশি আত্মসম্মানও মানজীবনের একটি বড় অংশ। আত্মসম্মানহীন জীবনকে মানবজীবন হিসেবে গণ্য করে না কেউই। যার আত্মসম্মান নেই, সে কখনই অন্যকে সম্মান করতে পারে না। ফলে ঘরে-বাইরে কখনই কারও সাথে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে না। আর যার মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকে না, তার জীবনে সাফল্য কীভাবে আসবে? অনেকেই লোভে পড়ে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে অনেক কাজ করে থাকে। সাময়িকভাবে হয়ত লাভবানও হয় সে। কিন্তু আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে এই প্রাপ্তি কখনই স্থায়ী হয় না। শেষ পর্যন্ত হয়ত এই প্রাপ্তি তাকে অনেক বড় কোনো মূল্য দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। তাই আত্মসম্মানও বজায় রাখতে যেকোনো পরিস্থিতিতে।

 

শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি

যেকোনো কিছুর সাথেই শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তির গভীর যোগসূত্র রয়েছে। যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ নয়, সে তার কর্মেও কখনও ভালো করতে পারবে না। আবার মানসিকভাবে প্রশান্ত না থাকলেও কাজে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ কারণেই কর্মজীবনেও শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আপোষ করা যাবে না। অনেকেই অফিসের জন্য দিন-রাত একাকার করে কাজ করেন। এতে করে নিজের স্বাস্থ্যের ভগ্নদশা তৈরি হলেও তাতে নজর দেন না অনেকে। আবার অনেক সময় অফিসের অনেক কাজ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে করতে হয়। এটিও আপনাকে মানসিকভাবে অশান্তিতে রাখতে পারে। এর কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি আপনার কর্মদক্ষতার পরিপূর্ণ প্রকাশ করতে পারবেন না। তাছাড়া এসব করে কিছু সময়ের জন্য ভালো ফলাফল পেলেও এতে করে আপনার জীবনীশক্তি দ্রুত হরাস পেতে থাকবে, দীর্ঘমেয়াদে যা আপনার কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেবে। আপনার সৃজনশীলতায়ও ভাটা পড়বে। আর আপনি সুস্থ থাকলে তবেই নিজের যত্ন নিতে পারবেন, আপনার পরিবারের দায়িত্বগুলোও পালন করতে পারবেন। অন্যাথা হলে তা সম্ভব হবে না। কাজেই শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তির সাথে কর্মজীবনেও কোনো আপোষ নয়।

 

স্বকীয়তা ও আত্মবিশ্বাস

আপনার স্বকীয়তা এবং সৃজনশীলতাই জানিয়ে দেবে আপনি কে। কাজেই স্বকীয়তা এবং সৃজনশীলতার সাথে আপোষ করা চলবে না। আপনি জানেন, একটি কাজ আপনি খুব ভালো পারেন। আপনার মতো করে কাজটি করতে দিলে আপনার পরিপার্শ্বের সকলের চাইতে কাজটি আপনিই ভালো করতে পারবেন, এমন আত্মবিশ্বাস আপনার রয়েছে। এমন সময়ে যদি অন্য কেউ বলে যে আপনি কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন না, সে কথায় কান দেবেন না। অন্যের কথার চাইতে নিজের মনের কথার দিকেই মনোযোগ দেবেন বেশি। অন্য অনেকেই আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। স্বকীয়তা আর নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের সাথে আপোষ করলে ধীরে ধীরে আপনি পরিণত হবেন অন্যের কলের পুতুলে। তখন হাজার চেষ্টা করলেও নিজেকে আর ফিরে পাবেন না। তাই স্বকীয়তা বজায় রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই পথ চলুন।

 

দৃষ্টি থাকুক সামনে

একেকজনের কাছে জীবনের অর্থ একেক রকম। তবে শেষ পর্যন্ত সব মানুষকেই জীবনের প্রতিটি সময়ের দায় বহন করে চলতে হয়। আপনি হয়ত শেষ বয়সে গিয়ে খুব বিখ্যাত হয়ে গেলেন। কিন্তু তাই বলে কি অন্যের অজানা আপনার তরুণ বয়সের অনেক ব্যর্থতা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের দায় এড়াতে পারবেন। এই দায় সবাইকেই বহন করে চলতে হয়। এটা মাথায় নিয়েই পথ চলা উচিত। আপনার কর্মজীবনেও সাফল্য লাভের জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এমন কিছু করা উচিত নয়, যার জন্য পরবর্তী সময়ে আপনাকে অনুতাপ করতে হয়। সেটা করতে হলে কিন্তু আপনার অনেক অর্জনই শেষ পর্যন্ত আর উপভোগ্য থাকবে না, অনেক অর্জনই পরিণত হবে গলার কাঁটায়। তাই দায় থেকে যাবে, এমন বিষয়ে আপোষ করবেন না কখনই।সূত্র: ওয়েবসাইট

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/১৭৫০২৭জানুয়ারী২০১৪/আরআই/এ

 

Facebook Comments