banner

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 845 বার পঠিত

 

বাড়ির ছাদে শামীম আরার স্বপ্নের বাগান

সবুজের ছোঁয়া পেতে কার না মন চায়। কিন্তু নগরের যান্ত্রিক জীবনে সবুজ প্রকৃতির দেখা মেলা যেখানে খুবই কঠিন, সেখানে গাছপালা তো দূরের কথা, আলো বাতাসেরও যেন বড় অভাব দেখা দেয়। কিন্তু প্রবল ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে শহর জীবনের ছোট বাসা-বাড়িতেও যে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়া। সেটাই বাস্তবে প্রমাণ করলেন রাজশাহী শহরের গৃহবধূ শামীম আরা। নিজের ইচ্ছা শক্তি আর বৃক্ষপ্রেমের তাগিদে তিনি বাড়ির ছাদ গড়ে তুলেছেন এক সবুজের সমারোহ। সেখানে পায়ের নিচে নরম ঘাসের স্পর্শ না পেলেও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় বৃক্ষরাজির সবুজ পাতা।

শহরের জীবনে সবুজের ছোঁয়া পেতে রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকার বৃক্ষপ্রেমী শামীম আরা ২০১১ সালের শেষের দিকে বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি শুরু করেছিলেন। মাত্র কয়েক বছর পেরুতেই সেই শামীম আরাই হয়ে উঠেছেন ছাদে বাগান করার রোল মডেল। পেয়েছেন বাড়ির ছাদে বাগান সৃজন ক্যাটাগরীতে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ‘জাতীয় পুরস্কার ২০১৫’।

শামীম আরার বাগানে কী নেই; তার বাগানে ফলজ, বনজ, ভেজষ বা ঔষধি, শোভাবর্ধনকারী, দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ, বিরল জাতীয় গাছ ও সবজিতে ভরপুর তার  বাগান। ফলজ গাছের মধ্যে সংগ্রহে আছে, জিনিয়া পাম, থাইল্যান্ডের জাম, লটকন, শসা জামরুল, এলাচি লেবু, কলা, আম, পেঁপে, গৌড়মতি আম, সফেদা, মরিচ, কাগজি লেবু, মিষ্টি জলপাই, বাতাবি লেবু, মিষ্টি চেরি ফল, নাশপাতি, আতা, বিভিন্ন ধরনের পেয়ারা, কমলা, পাকিস্তানি মালটা, কামরাঙ্গা, কতবেল, ড্রাগন, মিষ্টি তেঁতুল, থাইড্রপ আম, তেঁতুল, কালো পাতার বাক বক্স আম, কলা, থাই জাম, দেশি জাম, করমচা, বিদেশি বেল, বেদেনা, চেরি ফল, সফেদা, সাজনে গাছ, থাইল্যান্ডের বাতাবি লেবু, সুদানের আতা, আপেল, অভিসারিকা আম, সুইট লেমন, থাই কাঁঠাল, বাউকুল, অরুনা (আম)।

মসলা জাতীয় গাছের মধ্যে আছে অল স্পাইস, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলাপজামন, ধনে পাতাসহ আরও অনেককিছু।

শোভাবর্ধনকারী গাছগুলোর মধ্যে আছে নীল অপরাজিতাসহ বিভিন্ন রঙের অপরাজিতা, ফায়ার বল, বিভিন্ন ধরনের জবা, অ্যাডেনিয়াম, এলামুন্ডা, ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির গোলাপ, লাইলী-মজনু, বিভিন্ন ধরনের পাতা বাহার, সাইকাস, অ্যারোমেটিক জুঁই, টগর, কামিনী, মধুমালতি, মাধবিলতা, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাস, বেগুনিয়াসহ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির ফুল। বর্তমানে তাদের বাগানের গাছগুলোতে মালটা, ড্রাগন, করমচা, পেয়ার, বেদেনাসহ বেশ কিছু ফল ধরে আছে। ফুটে আছে অনেক ফুল। শীতকালে এ পুরো ছাদই যেনো ফুলময় হয়ে ওঠে।

বাগানে বিকেল থেকেই শুরু হয় নানান পাখির আনাগোনা। সবুজ ঘেরা প্রকৃতিতে পাখিদের মিষ্টি নানান শব্দ যেনো মন ভরিয়ে দেয়।

শামীম আরা পেশায় গৃহিনী। তার স্বামী সেহাবউদ্দীন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। শামীম আরার এসব কাজে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন তিনি। গাছপালা আর প্রকৃতির প্রতি তার ভালবাসা থেকেই অনেকটা শখের বশেই বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগানটি। পুরো বাড়িটিই যেন সবুজের সমারোহ।

শামীম আরা জানান, ছোটবেলা থেকেই উদ্ভিদের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। সে থেকে শখ। বিয়ের পর থেকেই ছাদে গাছ লাগানো শুরু করেন তিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় বাড়ির ছাদে বাগানের সূচনা। উদ্ভিদ দিয়ে ছাদকে আরও মনোরম ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা তিনি অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘নগরে জীবনে সবুজের ছোঁয়া একেবারে নেই বললেই চলে। অথচ এই যান্ত্রিক শহরে সবুজ প্রকৃতি খুবই জরুরি। সব সময় মনে এমনটা অনুভব করি।’

শামীম আরার স্বামী সেহাব উদ্দীন জানান, স্ত্রী বাড়ির কাজের ফাঁকে বাগানের প্রতি চরম আগ্রহ। তাই বিভিন্ন নার্সারি থেকে গাছ সংগ্রহ করে ছাদে বাগান তৈরির চেষ্টা চালান। খুব যুত্ন সহকারে গাছের পরিচর্যা করেন। আমিও তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। ছাদে বাগান করার ক্ষেত্রে মাটির পাওয়ার বিষয়টি বেশ সমস্যা দেখা যায়। পদ্মা নদীর পলি মাটি সংগ্রহ করা হয়। সেই মাটির সঙ্গে গোবরসার, মিশ্র সার যোগ করা হয়। এরপরে সেগুলোতে গাছ লাগানো হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর খানিকটা চেষ্টা থাকলে আপনিও গড়ে তুলতে পারেন চমৎকার একটি বাগান। যখন ফুল-ফলে আপনার বাগান ভরে উঠবে, তখন আপনার মনও স্বর্গীয় প্রশান্তিতে ভরে যাবে।’

Facebook Comments