‘নিজেদের বাড়িঘর বলতে কিছুই নেই। নানার দেওয়া ত্রক টুকরো বসত ভিটায় একটা চালা ঘর আছে বাবা হোটেলের কর্মচারী আমরা দুই বোন খাওয়া খচরই হয় না তার মধ্যে লেখাপড়ার খরচ ও কাপড়চোপর দিবে কে?।আমি যখন ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করি রক্তের কোনো সর্ম্পক না থাকলেও মামা-মামী তাদের সন্তানদের মতোই আমাকে দেখে। তারাই আমার বাবা মা।’ কথাগুলো বলছিলেন এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শারমিন আক্তার। রৌমারী উপজেলার চাকতাবাড়ি গ্রামে যে বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছে ওই রাড়িতে কথা হয় শারমিন আক্তারের সঙ্গে।
শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা মা খুবই গরীব। ভাগ্যকে মেনে নিয়েই আমি রাত জেগে লেখাপড়া করেছি। তার চেয়ে বড় ভরসা ছিল আমার আশ্রয়দাতা মামা-মামী। তারা যদি সহযোগিতা না করত তাহলে হয়তো লেখাপড়া অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত। হাজারো কষ্ট সহ্য করে লেখাপড়া করেছি। কারন আমার লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। জানি না আমার ভাগ্যে লেখাপড়া আল্লাহ লেখছে কিনা। কারন আপনারা তো জানেন আমার বাবা মা’র সামর্থ নেই আমাকে পড়ানোর । এ অবস্থায় একজন মেয়ে হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা আমার জন্য খুব কঠিন হবে। তবে আমি আরো লেখাপড়া করতে চাই।’
কুড়িগ্রামের রৌমারীর যাদুরচর ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন শারমিন আক্তার। এর আগে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এসএসসিতে অল্প কয়েক নম্বরের কারনে জিপিএ-৫ পায়নি সে। তার বাবা সাজেদুল ইসলাম কর্তিমারী বাজারে একটা চা-হোটেলের কর্মচারী। মা আছমা খাতুন অন্যের বাড়িতে ঝিএর কাজ করে। শারমিনের ছোট বোন সুমাইয়া খাতুন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।
চাকতবাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলাম। তিনি এবং তার স্ত্রী দু’জনেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শ্রেণীতেই দেখেছি মেয়েটির মেধা ভালো। কিন্তু পারিবারিক দুরাবস্থার কারনে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মেয়েটিকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। সেই থেকে আমার সন্তাদের সঙ্গে সে লেখাপড়া করে। তার পরনের কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে প্রাইভেট পড়ার আমি বহন করে আসছি।’ জহুরুলের স্ত্রী আকতারা বেগম বলেন, ‘শারমিন আমাদের রক্তের সর্ম্পক না হলেও সে আমাদের সন্তান হিসেবেই দেখি। কথনও নিজের সন্তানের চেয়ে আলাদা দেখি না। কারন আমরা জানি তার বাবা মা খুবই গরীব। এর মধ্যে মেয়েটিকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল তার বাবা মা কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি। কারনে সে আরো লেখাপড়া করবে।’
শারমিন আক্তারের বাবা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে আমরা হলেও বড় অইছে, লেহাপড়া করছে মাইনসের বাড়িত থাইকা । কারন আমরা তার খরচ দিবার পারি না। চা দোকানের সবাই কয় তোর মেয়ে তো ভালো রেজাল্ট করেছে। তখন আমার সব কষ্ট দূর হইয়া যায়। আবার চিন্তা করি এহন বড় কলেজে লেহাপড়া কিভাবে করব। আমগর তো কিছুই নেই।’
শারমিনের মা আছমা খাতুন বলেন, ‘মাইনসে কয় বড় কলেজে পড়তি মেলা ট্যাহা নাগবো। এত ট্যাহা পামু কই। গেদির বাপে তো চা দোহানে কাম করে।’
যাদুরচর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলম জানান, শারমিন আক্তার মেধাবি। তার পারিবারিক দুরাবস্থার জন্য আমরাও কলেজ থেকে সুযোগ সুবিধা দিয়েছি। তাকে একটু নার্সিং করলে ভবিষ্যতে খুবই ভালো করবে।