banner

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 628 বার পঠিত

 

চলো ভ্রমণে শুধু দু’জন… ১

বার বার চেষ্টা করেও বইয়ের দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না জাফর। চোখ চলে যাচ্ছে সামনের সীটে বসে থাকা তরুণীর উপর। ট্রেন ছাড়ার পর থেকে গত দেড় ঘন্টায় এক মূহুর্তেও জন্য কথা বলায় বিরতি দেয়নি মেয়েটি। ক্রমাগত একজনের পর আরেকজনের সাথে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। এই হাসছে, এই কাঁদছে, এই অভিমান করছে, শঙ্কিত হচ্ছে আবার পর মূহুর্তেই নিজেই কাউকে আশ্বস্ত করছে। চোখের সামনে এইসব কর্মকান্ড চলতে দেখলে বইয়ের দিকে মন দেয়াটা কষ্টকরই বটে। হাতের বই বন্ধ করে সীটে একটু হেলান দিয়ে বসে ভালো মত তাকালো জাফর মেয়েটির দিকে। খুবই সাধারণ একটি সুতির থ্রিপিস পড়েছে। দু’হাতে মেহেদির আল্পনা ছাড়া আর কোন গহনা বা প্রসাধনীর চিহ্ন চোখে পড়লো না কোথাও। তবে লাল টুকটুকে ওড়নাটা মাথায় তুলে দেয়ার কারণে নববধূর মত লাগছে মেয়েটিকে। কার সাথে যেন কথা বলতে বলতে হেসে ফেললো মেয়েটি। সাথে সাথে জাফরের মনেহলো এমন হাসি যাকে আল্লাহ দিয়েছেন কোন কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রয়োজন তার নেই! চোখাচোখি হলে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসির রেখে ফুটে উঠেই আবার মিলিয়ে গেলো মেয়েটির মুখে। জাফরও চোখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের তাকালো। ছুটে চলছে ট্রেন গন্তব্য পানে! দৃষ্টি বাইরে থাকলেও কি এত তার সহযাত্রীনি কথা বলছে সেটা শোনার চেষ্টা করলো জাফর।

শোন নিয়মিত মেডিসিন নিতে যেন ভুল না হয়। মেডিসিন নেয়ার পর আমাকে ম্যাসেজ লিখে জানিয়ে দেবে মেডিসিন নিয়েছো। আর কোন কাজেই যেন অনিয়ম না হয় বলে দিচ্ছি। উল্টো পাল্টা হলে কিন্তু আমি ফিরে এসে তোমাকে কঠিন শাস্তি দেব সেটাও বলে রাখছি। আরেকটা কথা মার দিকেও কিন্তু খেয়াল রাখবে। দুজন মিলে কান্নাকাটি করবে না একদম। যদি আমি টের পাই তোমরা কান্না করেছো! তাহলে কিন্তু আমিও কান্না করবো বলে রাখছি। বলো তুমি চাও আমি কান্না করি? হুম! এমন আমিও চাই না তোমরা দুজন কান্না করো বুঝেছো?! আর তুমি এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি করছিলে? যদি আমার সেলফোনের চার্জ শেষ হয়ে যেত তাহলে তোমার সাথে কথা বলতাম কিভাবে? সময়ের মূল্য ওয়াশরুমে গিয়ে ভুলে গেলে চলবে? আবার হাসো কেন তুমি? সেলফোনের চার্জ নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি তিনটা মোবাইল ভর্তি করে চার্জ নিয়ে এসেছি। একটার চার্জ শেষ হলে আরেকটা দিয়ে কথা বললো। জাফরের একবার ইচ্ছে হলো বলে, তিনটা মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। আমার কাছে যেটা আছে সেটা লোন দিতে কোনই আপত্তি নেই আমার। কিন্তু ইচ্ছেটা গোপন করে আবারো কথা শোনাতে মন দিলো। এখনো বাবাকে ধমকাচ্ছে তার সহযাত্রীনি কেন ওয়াশরুমে এতক্ষণ ছিল। বলে দিচ্ছে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট থাকা যাবে ওয়াশরুমে।

কেমন যেন একটা সুখ সুখ আবেশ ছেয়ে গেলো জাফরের মনের মাঝে। সব মেয়েরাই কি এমন অদ্ভুত রকমের আদুরে হয়?! আল্লাহ চাইলে তার নিজের যদি কখনো মেয়ে হয় সে কি এই সহযাত্রীনির মতোই আদুরে হবে? সে ওয়াশরুমে কতক্ষণ থাকবে সেটাও নির্ধারণ করে দেবে?!

চলবে…

লিখেছেন- ডা.আফরোজা হাসান। সাইকোলজিস্ট,মাদ্রিদ,স্পেন।

Facebook Comments