banner

বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 9 বার পঠিত

 

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যানের দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

“নারী কমিশনের সুপারিশমালা ও নারী সমাজের প্রত্যাশা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা ১৫মে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরামের সদস্য নাসিমা বেগম ঝুনু।

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকর্মী ও ফোরামের সহকারী সেক্রেটারি উম্মে খালেদা জাহান। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মিলনে একটি নিরাপদ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের দিকেই ইসলাম আহ্বান জানায়। অথচ নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা ইসলামী মূল্যবোধ ও পারিবারিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে ইসলাম নারীর জন্য দেনমোহর নির্ধারণ করে সম্মানিত করেছে, সেখানে সমান অধিকারের নামে কি নারীর সেই সম্মান হরণ করা হচ্ছে না?”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি ও সাহিত্যিক শামীমা রহমান শান্তা, যিনি বলেন, নারী সংস্কার কমিশন সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত না করে পক্ষপাতমূলকভাবে গঠিত হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য সৃষ্টি হতে পারে।

এশিয়ান টিভির সহ-বার্তা সম্পাদক জাবালুন নূর বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সুপারিশে তা উপেক্ষিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে নারীদের ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।

ফোরামের সদস্য তাসলিমা মুনীরা বলেন, “নারী সংস্কার কমিশন নারীর পারিবারিক দায়িত্বকে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করে নারীদের পরিবার বিমুখ করছে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।”

লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. সাজেদা হুমায়রা বলেন, “এই সুপারিশমালা আমাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে আঘাত করেছে।” তিনি বলেন, ইসলামিক পারিবারিক আইন কুরআন-ভিত্তিক, তা এড়িয়ে নতুন বিধান প্রবর্তনের প্রয়াস কুরআনকে অস্বীকার করার শামিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার” জাতীয় স্লোগান নারীর সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভাঙার অপচেষ্টা। ইসলাম নারীর শরীরকে আমানত হিসেবে দেখেছে এবং তাকে মর্যাদাসম্পন্ন দায়িত্ব প্রদান করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে নাসিমা বেগম ঝুনু বলেন, “নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দেশীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী। এই সুপারিশ জাতিকে নৈতিকতা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত করবে।” তিনি নারী সমাজের পক্ষ থেকে কমিশনের সুপারিশ বাতিল এবং নতুনভাবে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের দাবি জানান।

সভাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবি মহিলা ফোরামের সদস্য সাইয়্যেদা রাহাত তাসনিয়া ও ডা. জোবায়দা।
[12:37 pm, 20/05/2025] +880 1994-004543: কিছুদিন ধরে দেখছি কিছু লেখাকে কেন্দ্র করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা এবং চাকরিজীবি মহিলাদের কটাক্ষ করা হচ্ছে। ক্যারিয়ারিস্ট মা পারফেক্ট মা নয়, পারফেক্ট স্ত্রী না। একদল আবার যারা এটির বিপক্ষে একটু কথা বলছে তাদেরকে ফেমিনিস্ট বলে তকমা দিয়ে দিচ্ছে। নারীদের চাকরির বিষয়টি একটু জটিল বিষয়, এটা এক কথায় কখনো দাগ টেনে দেয়া যায়না। প্যারেন্টিংটাও অনেক জটিল, এখানেও একটা স্কোর দিয়ে দেয়া যায়না। অনেক জটিল এই পৃথিবী। আমরা শুধু নিজের যাপিত জীবন দিয়ে সবাইকে বিচার করি। মনে করি আমার দেখা আয়নাটা সবার সামনে আছে। যে মা তার বাচ্চার মুখে খাবার দিতে পারেনা, তার জন্য ‘বাবা সোনা’ বলে বাচ্চা ঘুম পাড়ানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় বাচ্চার মুখে খাবার দেয়া টা। অবহেলায় মার খেয়ে খেয়ে যার পিঠে ঘা হয়ে গেছে, তার জন্য যে দুনিয়া, আমার জন্য সেটি নয়। আমি চাকরিজীবী নই, তবে বহু চাকরিজীবির বাস্তবতা জানি, তাই ফুল স্টপ দিতে পারিনা।

জব করলে কেউ ভালো স্ত্রী নয়, পারফেক্ট মা নয় এটা ইসলামে সরাসরি কোথাও বলা হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা যেমন জটিল, ইসলামও বিষয়টিকে সরলরেখায় দাগ টানেনি।
নারীদের ঘরে থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে এটি সত্য, এবং নারীদেরকে উপার্জনের কঠিন দায়িত্বও দেয়া হয়নি, ঠিক। তবে ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে ঘর থেকে বের হতে পারবেন না এমনটা কোথাও বলা হয়নি। পর্দার বিষয়টা এসেছিল এইজন্য যে, যদি নারীকে ঘর থেকে বের হতে হয়, তখন সে কিভাবে বাইরের জগত ডিল করবে, পুরুষ কিভাবে তার থেকে দূরত্ব রাখবে, এটির নিয়মাবলি। ইসলামে বহু নারীদের বিজনেস ছিল, সামাজিক প্রয়োজনে অনেক কিছু করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন, নার্স ছিল ( রাসূল স: এর সময়ে), সেবিকা ছিল। তখনকার সময় এরকম প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির ফরমেট ছিলনা। হয়ত সবাই নিজের মত করেছে। তবে আমার দেখা- জব করেনা, ক্যারিয়ারিস্ট নয় এরকম বহু নারী আছে সারাদিন ঘরে থাকে, দিনে ৫-৬ ঘন্টা রীলস্ দেখেই কেটে যায়। বাচ্চার পাশে বসে মোবাইলে তাকিয়ে আছে। স্বামীকে খাবার দিয়ে ফোনে। দেশের বাইরে যারা থাকেন তাদের অনেক সময় চলে যায় ফোনে কথা বলতে বলতে। বহু নারীকে দেখি প্রতিদিন শপিংয়ে যান, কিছুই কিনবেন না, কিন্তু ঘুরে দেখতেই তাদের ভালো লাগে।

প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, পরিবারকে সময় দেয়া, সন্তানকে সময় দেয়া, এটির জন্য পারফ্যাক্ট ইনটেনশন (নিয়ত) লাগে, স্যাক্রিফাইসের মানসিকতা লাগে। এটি যারা করতে পারে তারা সব ম্যানেজ করতে পারে। যারা পারেনা, তাদের যত অজুহাত এসে দাঁড়িয়ে যায়। সে চাকরিজীবি হোক বা গৃহিণী৷

#ইসলামে_নারীদের_চাকরি_নিয়ে_সংবেদনশীল_তবে_নিষিদ্ধ_নয়
#ইসলামে_নারীদের_চাকরি_করার_অনুমতি_ও_শর্তাবলি

ইসলাম নারীদের কাজ/ চাকরি করার অনুমতি দেয়, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ও নীতিমালার ভিত্তিতে, যাতে তাদের সম্মান, নিরাপত্তা ও পারিবারিক ভারসাম্য রক্ষা পায়। এসব শর্ত ইসলামী শরিয়াহ এবং আলেমদের ফতোয়ার আলোকে নির্ধারিত।

কোন পরিস্থিতিতে কাজ করা জায়েয:
১৷ তীব্র প্রয়োজন:
যদি নারী নিজে বা তার পরিবার আর্থিক কষ্টে থাকে এবং কোন মাহরাম কর্তৃক কোন প্রকার সহায়তা না পেলে। স্বামী যদি উপার্জনে অক্ষম হয়। অথবা স্বামীর আয় দিয়ে কোনভাবেই চলছে না, তখন স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে কাজ করতে পারবে।

২. সামাজিক প্রয়োজন:
কখনো সমাজের প্রয়োজনেও নারীদের কাজ করা জরুরি হতে পারে, যেমন চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্রে, নারী বিষয়ক প্লাটফর্মে পর্দার হেফাজতে, জরুরি সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কাজ যদি সামনে আসে যেখানে নারীর প্রয়োজন (যেমন: নারী পুলিশ)

৩. নারীর স্বভাব অনুযায়ী কাজ:
কাজটি নারীর শারীরিক ও মানসিক গঠনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যদি হয়, যেমন নার্সিং, শিক্ষকতা, সেলাই (বুটিক) ইত্যাদি।

#নারীর_কাজ_করার_ইসলামি_শর্তাবলি:
১. নিরাপদ পরিবেশ ও পর্দা রক্ষা:
কর্মস্থল যেন নিরাপদ ও শালীন হয়, সেখানে পূর্ণ হিজাব পালন করতে হবে এবং পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণের মতো পোশাক, আচরণ ও সৌন্দর্য প্রকাশ এড়াতে হবে।

২. পুরুষদের সঙ্গে মিশ্র পরিবেশ এড়ানো:
যতটা সম্ভব নারী শুধুমাত্র নারীদের পরিবেশে কাজ করবে, যেখানে পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা বা একান্ত অবস্থান নেই।

৩. হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা:
কাজের মাধ্যমে হারাম উপার্জন বা ইসলামী বিধি লঙ্ঘন যেন না হয়। যেমন সুদে জড়িত চাকরি, হারাম পণ্য বিক্রি ইত্যাদি।

৪. পারিবারিক দায়িত্ব অবহেলা না করা:
নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তার পরিবার ও সন্তানের প্রতি। কাজের কারণে যেন স্বামী, সন্তান বা সংসার অবহেলিত না হয়।

৫. মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ নয়:
যদি কাজের প্রয়োজনে ভ্রমণ করতে হয়, তাহলে মাহরাম (যার সঙ্গে বিয়ে জায়েয নয় এমন ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয়) সঙ্গে থাকা উত্তম।

ইসলাম নারীদের উপার্জনের অধিকার দিয়েছে, তবে সেটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও শরিয়তের সীমানার ভিতরে থাকতে হবে।

ফরিদা খানম ফাতিহা

Facebook Comments