banner

রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 26 বার পঠিত

 

নারী উদ্যোক্তা গড়ার অগ্রদূত জান্নাতুল হক

 

নারীর ক্ষমতায়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে যাঁরা নীরবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের অন্যতম হলেন জান্নাতুল হক। ২০১৩ সালে মাত্র একটি ফেসবুক পেজ ‘আমান্দ ফ্যাশন’ দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু হয়। তখন দেশে এফ-কমার্সের সূচনালগ্ন, আর সেই সময়েই তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পথ খুঁজে নেন।
ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যার নাম ‘শৈলীর ছোঁয়া’। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন জনপ্রিয় ফুড ব্র্যান্ড এজিউর কুইজিন–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে।

জান্নাতুল হকের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে রয়েছে পারিবারিক প্রেরণা, বিশেষ করে তাঁর স্বামী আশরাফ উদ্দিন–এর ভূমিকা, যিনি একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী। স্বামীর উৎসাহেই তাঁর ব্যবসার প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং তাঁর সহযোগিতায় তিনি ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন। পরে এটিকেই তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

জান্নাতুল হকের শৈশব কেটেছে সিরাজগঞ্জে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। এই পারিবারিক বন্ধন ও আদর্শ তাঁকে আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

শিক্ষাজীবনে তিনি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০০৮ সালে চাইল্ড অ্যান্ড সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (Masters) সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে।

ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল হকের স্বপ্ন ছিল দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) নিয়ে কাজ করার। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করাটা তাঁর কাছে আবেগের জায়গা।
তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, অনেক নারী সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করলেও সামাজিক বাধা ও কাঠামোগত সমস্যার কারণে মাঝপথে থেমে যেতে হয়। এই সমস্যাগুলো তাঁকে নাড়া দিয়েছে।
এই তাড়না থেকেই ২০২২ সাল থেকে তিনি ১০০ এর বেশি নারী উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন। শুধু অর্থ নয়, তিনি দিয়েছেন মানসিক সহায়তা,ব্যক্তিগত পরামর্শ,বিপণন সহযোগিতা,নেটওয়ার্কিং সুবিধা।
এই সব সহায়তার ফলে অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নিচ্ছেন এবং রপ্তানি বাজারে পণ্য সরবরাহ করছেন।

তিনি বলেন,“আমি ১০০ নারী উদ্যোক্তাকে ছোট পরিসরে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যাতে তাঁরা নিজেরাই ই–কমার্স ও এফ–কমার্সে দক্ষ হয়ে ওঠে।”

নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য জান্নাতুল হক তৈরি করতে চান একটি সমন্বিত কো–ওয়ার্কিং স্পেস। সেখানে থাকবে-একাধিক উদ্যোক্তার কাজের জায়গা,ছোট ছোট ওয়্যারহাউস,পণ্য সরবরাহ ও ডেলিভারির ব্যবস্থা,সাপ্লাই চেইন পরিচালনার পূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

তিনি বিশ্বাস করেন, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা বড় করতে পারবেন, তৈরি করতে পারবেন নিজস্ব অফিস ও বড় আকারের স্টোরেজ সুবিধা।

জান্নাতুল হক ই–কমার্স খাতের উন্নয়নে নিরাপদ ব্যবসা পরিবেশ, গ্রাহকের আস্থা, সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, আধুনিক লজিস্টিক ও পেমেন্ট সিস্টেম, স্টার্টআপ ফান্ড এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নীতিমালা গঠনের ওপর জোর দেন।
তিনি মনে করেন “ই-কমার্স খাত কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের নয়, এটি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি বড় হাতিয়ারও হতে পারে।”

জান্নাতুল হকের যাত্রা প্রমাণ করে, একজন নারীর আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম আর প্রেরণায় গড়ে উঠতে পারে এক সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি। তাঁর কাজ শুধু নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও রাখছে গভীর প্রভাব।

তথ্যসুত্রঃ সারাবাংলা, যুগান্তর, সিমেক নিউজ.কম

Facebook Comments