banner

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 20 বার পঠিত

 

আলো ছড়ান যিনি:শিল্পী খাতুনের পাঠাগার

শিক্ষকতা, ব্যবসা আর সমাজসেবার মাঝেও যে কেউ নিজের গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারে, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার আছিম কুটিরা গ্রামের শিল্পী খাতুন।

স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে একসময় ঢাকায় বসবাস করতেন শিল্পী। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পর তারা ফিরে আসেন নিজ গ্রাম আছিম কুটিরায়। এখানে কুটিরা ডিএস ক্যাডেট একাডেমিতে পড়ানোর পাশাপাশি নিজের পাঠাভ্যাস চালিয়ে যান। আশপাশের অনেকে তাঁর কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তেন, আবার ফেরতও দিতেন। এই আগ্রহ দেখে তিনি নিজেই বই জমিয়ে তৈরি করে ফেলেন একট ছোট্ট পাঠাগার—’কুটিরা জ্ঞানের আলো পাঠাগার।’

গ্রামে একজন নারী হিসেবে পাঠাগার চালানো সহজ ছিল না। শুরুতে অনেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। স্কুলে পড়ানোর সময়ও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন শিল্পী খাতুন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। ধৈর্য আর নিষ্ঠায় গ্রামের নারীদের আস্থা অর্জন করেছেন এবং এখন পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সব সদস্যই নারী।

বর্তমানে পাঠাগারটিতে একসঙ্গে ১৪ জন পাঠক বসে বই পড়তে পারেন। সদস্যসংখ্যা ১৩৭ জন। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ নানা শ্রেণির মানুষ এখানে বই পড়তে আসেন। শিল্পী খাতুন নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে বই কিনেছেন এবং অনেকেই বই উপহারও দিয়েছেন।

শুধু পাঠাগার প্রতিষ্ঠা নয়, সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোও তাঁর নিয়মিত কাজ। রোজার সময় এতিম, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ইফতার ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করেন। গ্রামের মানুষদের জন্য চালের কার্ডের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষকতার পাশাপাশি স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী খাতুন একটি মুদি ও মনিহারি দোকান চালু করেছেন। এই ব্যবসা তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

শিল্পী খাতুন চান, তাঁর স্কুল ও পাঠাগারের মডেল আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে গ্রামের আরও মানুষ পড়ালেখা ও সচেতনতার আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারে। এজন্য তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Facebook Comments