banner

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 15, 2024

 

‘ক্যান্সার প্রতিরোধ’ : কোনো উপায় আছে কি?

ডা.মারুফ রায়হান খান


‘ক্যান্সার’ এই একটি শব্দের মাঝে যে লুকানো কতো ভয়-শঙ্কা-আর্তনাদ আর হাহাকার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। ব্যাপারটা খুব বেদনাদায়ক যে ইদানিং খুব ফ্রিকোয়েন্টলি আমরা প্রিয় মানুষদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সংবাদ পাচ্ছি।
American Cancer Society বলছে এ বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবেন। আমরা সবাই জানি, প্রিভেনশান ইজ বেটার দ্যান কিওর।

এখানে সহজ ভাষায় ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু উপায় লেখার চেষ্টা করছি।

১। যত দ্রুত সম্ভব সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দিতে হবে। এমনকি প্যাসিভ স্মোকিংও যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই আপনার কাছের মানুষজনদেরও সিগারেট খাওয়াটা বন্ধ করাতে হবে আপনার স্বার্থেই। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে খুব কম অঙ্গই আছে যেখানের ক্যান্সারের সাথে স্মোকিংয়ের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে পুরুষদের সবচেয়ে বেশি হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। যা স্মোকিংয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এছাড়াও স্মোকিং মুখ, ঠোঁট, নাক, সাইনাস, স্বরতন্ত্র, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনী, মূত্রথলী, গর্ভাশয়, জরায়ুমুখ, কোলন, মলাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি ক্যান্সারেরও কারণ।

২। মদ্যপান করা যাবে না। মুখ, গলা, লিভারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৩। যারা বেশি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের ওজন কমাতে হবে। স্তন, বৃহদান্ত্র, মলাশয়ের ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৪। রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৫। চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। স্তন, অন্ত্র, মলাশয়, প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।

৬। প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এসবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৭। নিয়মিতভাবে সারভাইকাল স্মিয়ার টেস্ট করতে হবে (জরায়ু মুখের একটা পরীক্ষা)। বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জরায়ুমুখের ক্যান্সারে। যাদের একের অধিক সেক্সুয়াল পার্টনার থাকে, খুব ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, জন্মনিরোধক পিল সেবন করে তাদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৮। প্রতিমাসে একবার স্তন পরীক্ষা করতে হবে, যেটা নিজে নিজেও করা সম্ভব। সহজ ৫ টি ধাপ অনুসরণ করে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সাম (BSE) করা যায় নিজে নিজে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি নারী আক্রান্ত হয় স্তন ক্যান্সারে। যাদের পরিবারে অন্য কারও স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হয়, যাদের বাচ্চা নেই, বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়, বুকের দুধ বাচ্চাকে কম পান করায়, চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায় তাদের স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কেন আমরা অসুখী?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


” নিজে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমি উৎফুল্ল থাকতে এবং সুখী থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কেননা আমি জানি আমাদের দুঃখ- কষ্ট বা অসুখী থাকার বেশীর ভাগই নির্ধারিত হয় আমাদের নিজস্ব ” স্বভাব/ প্রবনতার” উপর – পরিস্থিতির উপর নয়।”

কথাগুলো বলেছেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এর স্ত্রী মার্থার।

এটা নিঃসন্দেহে আমরা সবাই সুখী থাকতে চাই।

মানুষ হিসেবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে,

ক) জীবন হচ্ছে ছোট এবং
খ) অসুখী থাকলে আমাদের এই ছোট জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের গুনগত উন্নত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের স্বভাব বা প্রবনতা। এই স্বভাব গুলো আমাদের অসুখী করে কিংবা সুখী করে। আজকের টিপসে এমন কিছু স্বভাবের কথা বলবো যা আমাদের অসুখী করে। মনে রাখতে হবে ” বিষন্নতা রোগ” বা ডিপ্রেশন ও “অসুখী জীবন- যাপন” এক বিষয় নয়। বিষন্নতা হয়, ব্রেইনের জৈব-রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে। অন্য দিকে, অসুখী বা সুখী থাকা হচ্ছে এমন মানসিক অবস্থা বা প্রবনতা/ স্বভাব- যা অর্জিত হয় ‘কিভাবে আমরা জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নেই’  তার উপর নির্ভর করে। সুখের কথা বিষন্নতাকে যেমন আমরা ডায়গনসিস ও চিকিৎসা করতে পারি, অসুখী থাকাকে ও তেমনি চিকিৎসা করতে পারি।

আমাদের অসুখী করে তেমন ১২টি স্বভাবের কথা পর্যায়ক্রমে বলবো। আজ উল্লেখ করছি তেমন দুটি স্বভাবের :

যে স্বভাবগুলো আমাদের অসুখী করে অথচ যা চাইলে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি:

১। সব সময় অভিযোগ, অনুযোগ, নালিশ করার স্বভাব ( Chronic complaining)

সুখী মানুষ অতিরিক্ত অভিযোগ, নালিশ করে না। অন্য দিকে অসুখী মানুষরা সব সময় কোন না কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতেই থাকেন।

মূল কথা হচ্ছে

সারা জীবন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকবো কিন্তু সবশেষে এ পরিস্থিতিগুলো আমাদের। তা সেগুলো ন্যায্য হোক বা অন্যায্য ; কাঙ্ক্ষিত হোক বা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন – এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নালিশ করার পরিবর্তে। কেননা নিরন্তর অভিযোগ আপনাকে / আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারে না।

২। নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ থাকা (being critical of self and others) 

আমরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কি ধরনের কথা বলি,সংলাপ করি (self-talk), তা নির্ধারন করে আমাদের আত্ম- ভাবমূর্তি ( সেল্ফ ইমেজ)। এই আত্ম সম্মান বোধ আমাদের সুখী হওয়ার অন্যতম উপাদান এবং নিজকে নিয়ে ভালো লাগা বোধ হচ্ছে সঠিক স্বভাব ও প্রবনতা। যখন ভুল করবেন সেটি বোঝার ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবেন। কখনোই এ সব নিয়ে নিজের সঙ্গে, মনে মনে নেতিবাচক সংলাপ চালিয়ে যাবেন না। তদুপরি অন্যদের মধ্যে যে ভিন্নতা রয়েছে, পার্থক্য রয়েছে, সেগুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখুন এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিন। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় না করানো।নিজকে অতিরিক্ত অভিযুক্ত করবেন না। নিজের দোষ- ক্রটি, অযোগ্যতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

বরং নিজকে ভালোবাসুন, নিজকে শ্রদ্ধা করুন, নিজকে নিঃশর্ত ভাবে গ্রহন করুন।

এ ভাবে নিজকে ও অন্যদেরকে অনাবশ্যক সমালোচনা করার স্বভাব যদি বদলাতে পারেন। কেবল তাহলেই সুখী হতে পারবেন।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।