banner

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: April 2024

 

ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শামছুন্নাহার

শওকত আলী রতন


ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন দোহার উপজেলার দোহার পৌরসভার অন্যতম বিদ্যাপীঠ কাটাখালী মিছের খান উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শামছুন্নাহার সীমা।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এই বিদ্যালয়ে কর্মরত থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ঢাকার শেরেবাংলানগরে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সহপাঠ কার্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ফলাফলে ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়।

প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধাইমরাই এ পাঁচটি উপজেলার শিক্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এর আগে দোহার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে জেলাপর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

পেশাগত দক্ষতা, সাবলীল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা ও পাঠদানে মনোযোগী হওয়ায় তাকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী জানান, শিক্ষকদের পেশাগত কর্মকাণ্ড মূল্যায়নের ভিত্তিতে সারা দেশে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে একজন করে শিক্ষককে নির্বাচিত করা হয়। শামছুন্নাহার সীমার পারফরম্যান্স সব দিক থেকে ভালো হওয়ায় তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
শামছুন্নাহার সীমা কাটাখালী উচ্চ-বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুল ইসলাম খান অনুর সহধর্মিণী।

শামছুন্নাহার সীমা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে শিক্ষার প্রসার ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাজ করার কথা বলেন। সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

দুই বিঘা জমি প্যারোডি ভার্শন

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বাবুরা কহিলেন,বুঝেছ মঈন- এ তল্লাটের লইবো দখল;
তোমাদের সবারে সহিতে হইবে সামান্য একটু ধকল।
মঈন কহিলো – মহাশয় ভূপতি,
আপনারা বিনে, আছে কি মোর গতি?
মঈন কাঁদিতে লাগিলেন হাও মাও, হাও মাও
জ্যো.বাবু কহিলেন, পঞ্চ অশ্ব লইয়া যাও।
প্রহর আসিলে জানিবে সবে,
কোথায় কখন কি করিতে হবে?
মঈন হ্রেষা সম সগতোক্তি করিয়া লইলো বিদায় ,
দেশে আসিয়া কেবলি নিজের আখের গুছায়।
অচিরেই আসিলো দিন ক্ষণ,
মঈন-ও বড্ড বিচক্ষণ;
দফায় দফায় করিলো লম্বা মিটিং সারা দিনভর,
ততক্ষণে পগার পার সকল অজ্ঞাত টার্গেট শুটার
এরপরের কাহিনী সকলের জানা,
বেশী কথা যে কইতে মানা।

 

ছড়ড়া-৬৮

আসাদ বিন হাফিজ


এসেছে ফাগুন লেগেছে আগুন মৌবনে
লাগেনি আগুন চেতনার কোষে, যৌবনে।
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচুড়া হয়েছে রক্তরাল
ছালাম রফিক বরতের ভাই ঘুমে বেহাল।

রক্ত দিলাম মায়ের ভাষায় মনের কথা কইবো
তাতে যদি বাঁধা আসে কেমন করে সইবো।
আমার দেহের রক্তের কিরে নেই রে দাম
রক্ত না দিস আজকে দে তুই একটু ঘাম।

পরাণ খুলে মনের কথা কইতে চাই
এই দাকীতে কোন কালই আপোস নাই।

 

এমন কথা বলার সাহস কার?

জিয়াউল হক


আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি শনিবার,
বইমেলা পরিলেখ স্টলের সামনে হঠাৎ করেই আমি আগামীর বাংলাদেশকে দেখলাম। প্রায় বছর পাঁচেক বয়সের একটা ছেলে ‘নাজমুল’ পথশিশু, স্টলে এসে কচি হাতে ধরা পাঁচটা টাকা এগিয়ে দিয়েছে সেলস্ ম্যানের দিকে, আংকেল আমাকে একটা বই দেন তো!

ঠিক ঐ একই সময়ে ভাগ্যচক্রে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। সেলস্ ম্যান অবাক হয়ে ঐ পুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো, কি বই নেবে তুমি? তুমি কি বই পড়ো?
ছোট্ট ছেলেটার চটপট জবাব, হ্যাঁ পড়ি।

আগ্রহ নিয়ে এবারে আমিই এগিয়ে গেলাম।

পরিচয় জানতে চাইলাম, নাম ”নাজমুল, পার্কের কোণায় এক জায়গায় থাকে, মা ঝি এর কাজ করে, বাবা নেই। মা’র কাছ থেকে কেঁদে কেঁদে পাঁচটা টাকা নিয়ে এসেছে বই কিনতে। সে পড়তে পারে। সেলস্ ম্যান পরখ করার জন্য জানতে চাইলেন, তুমি কি পড়তে পারবে? জ্বি পারবো ছেলেটার সপ্রতিভ জবাব।

তার সামনে কয়েকটি বই মেলে ধরা হলো, সে ঝর ঝরে রিডিং করে বইগুল পড়ে গেল, বাংলা অক্ষরগুলো যেমন পড়লো তেমনি সে ইংরেজি অক্ষর গুলোও সাবলীলভাবে পড়ে গেল গর গর করে।

জানতে চাইলাম কোথায় পড়া শিখলে? সে জানালো যে, পথশিশু স্কুলের আপুরা এসে তাকে পড়িয়েছে, সেখানেই সে পড়তে শিখেছে।

অবাক হলাম। সেলস্ ম্যানের দিকে বাড়িয়ে দেয়া পাঁচটা টাকা তার হাতে ফেরত দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়া হলো একটা শিশুতোষ বই। আহা, ছেলেটার সারাটা মুখ এক বর্ণনাতীত চমৎকার হাসি ফুটে উঠলো।

পাশেই এক ভদ্রমহিলা স্টলের বই নেড়ে চেড়ে দেখা বাদ দিয়ে এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে ছেলেটাকে দেখছিলেন। তিনি এগিয়ে এলেন এবার, তিনিও একটা বই কিনে উপহার দিলেন বাচ্চাটাকে। দেখা দেখি পাশের স্টল থেকে বের হয়ে এলেন ঐ স্টলের সেলস্ ম্যান ভদ্রলোক।
তিনিও এতক্ষণ অবাক বিস্ময়ে বই এর প্রতি বাচ্চাটার তীব্র আকর্ষণ খেয়াল করছিলেন, খেয়াল করছিলেন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তার সপ্রতিভ উত্তর। তিনিও তার স্টল থেকে দুটো শিশুতোষ বই এনে বাচ্চাটার হাত তুলে দিলেন। ছেলেটার মুখে সে কি হাসি! ভাষায় এ অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না।

বইগুলো একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে ও যখন পথ ধরলো, আমি তার গমন পথের দিকে চেয়ে রইলাম।

যে জাতির এক ক্ষুদে সদস্য বইকে এতটা ভালোবাসতে শিখেছে, সে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার, এমন কথা বলার সাহস কার?

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-২)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ‘পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় আরও নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

কাজী ফাবিয়া

লেখিকা পরিচিতি:

কাজী ফাবিয়া। পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। সৃষ্টিতেই যেন তার অপার আনন্দ। হোক তা ডিজাইন, হোক তা কোন কবিতা। আপন খেয়াল ছবি আঁকা, সুরের ইন্দ্রাজালে গানে গানে ভূবন গড়া তার শখ। ছেলেবেলায় সংস্কৃতমনা মায়ের লেখা মায়ের লেখা টুকরো টুকরো ছড়া ছড়া তার লেখার অনুপ্রেরণারর জায়গা করে নিয়েছিলো। লেখার অভ্যাস তাই ছোটবেলা থেকেই, ইংরেজি এবং বাংলা। চয়ন প্রকাশন থেকে হতে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অর্পণ’ ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘শিরোনামহীন’ এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করতে পের আমরা আনন্দিত।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“শিরোনামহীন”
কবি : কাজী ফাবিয়া
প্রকাশক : লিলি হক
প্রকাশন : চয়ন প্রকাশন
প্রচ্ছদ : কাজী ফাবিয়া
পাওয়া যাচ্ছে : চয়ন প্রকাশন
স্টল নং : ৬৪৮
গায়ের মূল্য :১২৫ টাকা
বইমেলা মূল্য: ৯৫ টাকা মাত্র।

­জাকিয়া জেসমিন যুথী

লেখিকা পরিচিতি:

বাবা মোঃ দিদারুল ইসলাম, মা বেগম লুৎফুন্নেছা। আশির দশকের শুরুর দিকে পদার্পণ হয় পৃথিবীতে। ঢাকায় জন্মগ্রহণ হলেও বাবার কর্মস্থলের কারণে শৈশব কৈশোর কাটে নর্থ বেঙ্গলের মফস্বল শহরে। জন্ম শহরে প্রত্যাবর্তন হয় ১৯৯৮ সালে। তারপর জীবনের উচ্চশিক্ষার সব সমাপ্ত হয় এখানে। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.কম, ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় এম কম শেষ করার পরে পড়াশুনার অদম্য আগ্রহের কারণে মায়ের উৎসাহে কৃতিত্বের সাথে ঢাকা টিটার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.এড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর থেকে এম.এড সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ফিল্যান্সর (গ্রাফিক্স ডিজাইন) পেশায় যুক্ত। ১৯৯৭ সালে ‘চলতিপত্র’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘থমকে থাকা সেদিনের পৃথিবী’। আমার ব্লগে ডটকমের চিঠি সাহিত্যের বই ‘আমার চিঠি’ এর মাধ্যমে ২০১১ সালে বইমেলায় প্রথম আত্মপ্রকাশ।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“অন্ধ স্মৃতির গলি”
লেখিকা: জাকিয়া জেসমিন যুথী
প্রচ্ছদ: হিমেল হক।
প্রকাশক: প্রকৌ. শামিম রহমান আবির
প্রকাশ করছে: কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং:১২২

 

নিঃসঙ্গ অনুভূতি

কামরুল হাসান তুহিন


আঁধার রাতের তারা গুলো
ঘুমিয়ে পড়া মেঘ গুলো
মেঘের মাঝে দুঃখ গুলো
কেউ দেখেনি, কেউ দেখেনি।

আকাশ ভরা বৃষ্টি গুলো
বৃষ্টি ভেজা পাখি গুলো
পাখির কন্ঠে গান গুলো
কেউ শোনেনি, কেউ শোনেনি।

সুবহে সাদিকের ক্ষণ গুলো
মুয়াজ্জিনের সুর গুলো
সুরের মাঝে মায়া গুলো
কেউ বোঝেনি, কেউ বোঝেনি।

ভোরে ওঠা নক্ষত্র গুলো
নিবিষ্ট মনের সালাত গুলো
সিজদারত অশ্রু গুলো
কেউ মোছেনি, কেউ মোছেনি।।

 

দীর্ঘায়ু পেতে জাপানি চিকিৎসকের ৬ পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত…


ডা. শিগেয়াকি হিনোহারা২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ১০৫ বছর বয়সে মারা যান জাপানি এই চিকিৎসক। দীর্ঘজীবন ধারণে তাঁকে একজন বিশেষজ্ঞ মানা হয়। তাঁর পরামর্শেই গড় আয়ুর দিক থেকে জাপান বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। বেশি দিন বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কিছু পরামর্শ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশেষ করে হিনোহারার ছয়টি পরামর্শ-

প্রথম পরামর্শ: যত দেরিতে সম্ভব কর্মজীবন থেকে অবসর নিন। জাপানি এই চিকিৎসক নিজে মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও কর্মজীবনে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর এই পরামর্শ খুবই কার্যকর। সাধারণত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেওয়ার পর যেন তাঁদের বার্ধক্য হু হু করে বাড়ে। দেখা দিতে থাকে নানা অসুখ-বিসুখ। কাজ মানুষের বার্ধক্য আটকে রাখে।

দ্বিতীয় পরামর্শ: ওজনের দিকে খেয়াল রাখো। দিনে একবার খাও। ডিনারে মাছ ও সবজির ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। মাংস অবশ্যই খেতে হবে। তবে সপ্তাহে দুবারের বেশি নয়। জলপাইয়ের তেল (অলিভ অয়েল) খাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। শরীরের ত্বক ও শিরা-ধমনি ভালো রাখার জন্য জলপাই তেল ভালো কাজ করে।

তৃতীয় পরামর্শ: আনন্দে সময় কাটাও। অতিরিক্ত নিয়মকানুনের চাপে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শৈশবে খাবারদাবারের অনিয়ম সত্ত্বেও শরীর অসুস্থ হয় না। কেন? কারণ, মানসিক চাপ থাকে না। মূলত ঘুমিয়ে বা কিছু না করেই শরীর ক্লান্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চতুর্থ পরামর্শ: যা জানো, তা অন্যকে জানাও। তিনি বিশ্বাস করতেন, আমরা পৃথিবীতে এসেছিই এই সভ্যতায় কিছু না কিছু অবদান রাখার জন্য, মানুষকে সাহায্য করার জন্য। আজ, আগামীকাল, এমনকি পাঁচ বছর পরের পরিকল্পনা করতেন তিনি।

পঞ্চম পরামর্শ: জাগতিক সম্পদ নিয়ে চিন্তা না করা। ভালো থাকার পেছনে অর্থবহ কাজ করাটাই জরুরি। বস্তুগত চিন্তার তুলনায় আধ্যাত্মিক চিন্তায় শরীর ও মন ভালো থাকে বলে বিশ্বাস করতেন। অর্থবিত্ত মানুষকে আরও বেশি মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে। অল্পতেই তুষ্ট হওয়া তাই জরুরি। তিনি সব সময় এটা মনে রাখতে বলেছেন, শেষ ঠিকানায় এসব কিছুই সঙ্গে যাবে না।

ষষ্ঠ পরামর্শ: সিঁড়ি ব্যবহার করা। হিনোহারা নিজে একবারে সিঁড়ির দুটি ধাপ পার করতেন, যাতে তাঁর পেশি ঠিক থাকে। শারীরিক ব্যায়ামের জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মে যান্ত্রিকতা কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কায়িক শ্রম পছন্দ করতেন। ডাক্তারের পরামর্শকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে মানা করতেন তিনি। চিকিৎসকেরা জীবন দিতে পারেন না। তাই অযথা সার্জারি করার বিপক্ষে ছিলেন। সূত্র: বিবিসি।

 

পুরানো দিনের গল্প বলি

ডা. ফাতিমা খান

আমার বড় ছেলের বয়স তখন দুই এর কিছু বেশী। সারাদিন বুলেটের মত কথার গুলি ছোড়ে। কথা শোনার চেয়ে বলে বেশী। সব ব্যাপারে তার কৌতুহল তখন তুঙ্গে। আমি সকালে কলেজে যাই, দুপুরে আসি। বিকালে হাসপাতালে প্র‍্যাক্টিস করি, রাতে ফিরি। রোগী আর রোগবিদ্যা নিয়ে তখন আমার সারাবেলা কাটে।

ছেলেটা বাসায় থাকত কাজের মেয়েটার কাছে, ওর কথাবার্তা তখন ছেলে চুম্বকের মত আত্নস্থ করছিল। (কাজের মেয়েটা কথায় কথায় ইংলিশ ঝাড়ত, মাঝে মাঝেই জিন্স গেঞ্জী কিনে দেয়ার বায়না করত, ছাদে গিয়ে নাকি লুকিয়ে বিড়িতেও দু- এক টান মারত। বাকী কাহিনী আরেকদিন বলব ) আমি অফিস যাওয়ার সময় ছেলেকে যতই বলতাম “আব্বু আল্লাহ হাফেজ”, সে খুব ভাব নিয়ে বলত ” সি ইউ মাম্মি।”
অনেক চেষ্টা করেও যখন ” মাম্মী” র বদলে “আম্মু ” শিখাতে আর ‘সি ইউ’ ছাড়াতে পারলাম না, হাল ছেড়ে দিলাম। ওর বাবা যখন আমার সাথে বিরক্ত মুখ করে বলত ” ছেলেটা আমাকে ‘বাবা’ ডাকে ভাল লাগে না, ‘আব্বা ‘ শিখিও তো “, তখন চুপ করে ভাবতাম, আমি কাকে বলব যে আমাকে ‘আম্মু ‘ বলা শেখাতে! বুঝতাম ছেলেকে সব শেখানোর দায়িত্ব টা মায়েরই বটে! ছেলে আমার ভীষণ জেদী ছিল। শিখালেই শিখবে বা বললেই মেনে নেবে এমনটা না। চাকুরী দুইটাও করতাম অনিচ্ছায়, প্রয়োজনের তাগিদে।

ছেলের বয়স যখন তিন বছর, চলে আসলাম বিদেশ। ততদিনে আমার ছেলে অনেক কথাই শিখে ফেলেছে। বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়ালে গার্মেন্টস কর্মীরা কেমনে ঝগড়া করছে, বা রিক্সাভাইকে সদা ক্ষিপ্ত রাস্তার সার্জেন্টগুলো কিরকম করে গালি দিচ্ছে, সব তার ঠোটস্থ!

এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত বলি। আমি কোন জাতি, ভাষা বা কোন কাজ কে ছোট মনে করতাম না আর এখনো করি না, যতক্ষণ না তা আমার ধর্মীয় আদর্শের বা নৈতিকতার পরিপন্থী হয়। আমার ছেলেদেরকেও এই আদর্শ কে সামনে রেখেই গড়ে তুলছি। ভাষাগত ব্যাপারে বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তাই। বিজাতীয় বা বিধর্মীয় সংস্কৃতি আমি পছন্দ করিনা। অকারণ বা অযৌক্তিক প্রথাগুলোও পছন্দ না। বছরে একদিন মাতৃভাষা দিবস পালন করি কিন্তু সারাবছর টডর মডর ইংরেজী বলার চেষ্টা করি আর বাচ্চাদেরও তাই শেখাই, এতে লাভ কি হল? ভাষার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন তারা কি শুধু বছরে একটা দিনই সম্মানিত হবেন? জন্মের পর থেকে সন্তানকে ‘মা’ না শিখিয়ে ‘মাম্মা’ শেখাই আর এদিকে বছরে একদিন ভাষা শহীদদের সমাধিতে ফুল দেই…এটা কেমন কথা ?

ছুটিতে দেশে গেলে আমার খুব আজব লাগে যখন দেখি ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর সাথে বাবা মা (হোক শিক্ষিত বা মুর্খ) বাংলা-ইংরেজী শব্দ মিলিয়ে কথা বলে। একদিন তো এক কাজের মহিলাকেও দেখলাম ছেলেটাকে একপাশে সিথি কেটে চুল আচড়ে বলছে “নাইস লাগতাসে”।
কেউ কেউ আবার সকাল বেলা ‘মর্ণিং টি’ খায়, বাচ্চাকে বলে ‘সোপ’ দিয়ে ‘শাওয়ার’ করতে, বাংলা অনুষ্ঠানে পোলাও এর বদলে ‘রাইস’ খায়, খেয়ে আবার বাচ্চাকে ‘ডার্টি হ্যান্ডটা ‘ ‘ওয়াশ’ করে আসতে বলে, সব শুনে আমার কেমন যেন আউলা লাগে। আরে বাবা, বললে ভাল করে হয় বাংলা বল, নয়ত ইংরেজী! খিচুড়ি বানানোর কি আছে!

সব দেখে আমার নিজের ছেলেদের ব্যাপারে একটা প্রশান্তি লাগে। ওরা অন্তত নিজের দেশীদের সাথে খাটি বাংলায় কথা বলে, তাও আবার কখনো বই পত্রের মত বিশুদ্ধ ভাষায়। ইংরেজীতে বাচনভঙ্গি অন্তত আমার চেয়ে ওদেরটাই ভাল! কিন্তু মানুষ ও পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতেও তারা জানে। ‘মাম্মী’ বদলে এখন বড়জন ‘আম্মু’ বলাও শিখেছে বিদেশে এসে। দেশী গালিগালাজ গুলো মনে হয় ভুলে গেছে এতদিনে । দেশীয় সংস্কৃতিগুলো সম্পর্কে তার জ্ঞান অন্তত ওর সমবয়সী দেশী আর দশজন বাচ্চার থেকে কোন অংশে কম না।
আলহামদুলিল্লাহ!

দেশে যাওয়া হয় প্রতি বছরই । সেবার শ্বশুরবাড়ির দিকের এক আত্নীয় জিজ্ঞেস করলেন ” বিদেশে থেকেও তোমার ছেলেরা এত ভাল বাংলা পারে কেমন করে? ”
আমি কিছুই বলিনি। শুধু এক বুক গর্ব হয়েছিল নিজের ভাষার জন্য, আমার পারগতার জন্য !

কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

২১শে ফেব্রুয়ারি ‘মাতৃভাষার শুদ্ধতা’

অপরাজিতা ডেক্স


আজ বুধবার ২০১৮ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৬৬ বছর পূর্ণ হল মাতৃভাষা আন্দোলনের। আজকের দিনে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে জাতিসংঘের উদ্যোগে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। রক্তস্নাত গৌরবে সাজানো একুশ আজ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণকে অনুরণিত করে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন। এই জাতির মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। এই ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমা উদ্ভাসিত।

মহান একুশে বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত ও জব্বার ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন। রক্তের বিনিময়ে মায়ের ভাষাই বরং শুধু নয় স্বাধীনতার বীজটিও সেই সময় রোপিত হয়েছিল।

২০১৮ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দেশে ও দেশের বাইরে নানান আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিশু কিশোরদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি স্কুলের উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কোন কোন স্কুলে বাংলা শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত করেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য বাংলাদেশে শুধুমাত্র ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে তেমন কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি।
এবং বাংলা ভাষার যত্রতত্র ব্যবহার এর জন্য কবিরা তাদের কলমে তুলে ধরেছেন অনেকটা ব্যঙ্গ করে।

প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার কবিতার লাইন গুল তার শক্ত প্রমাণ,

“শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।”

আজ প্রায় লুপ্ত মাতৃভাষা সম্বন্ধে সচেতনতা। আজ শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়না।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন।

আসুন, মাতৃভাষাও শুদ্ধভাবে বলতে ও লিখতে গেলে তা শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়—সব জাতিই তা করে। শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা খুব জরুরি যার জন্য দরকার নিজের সচেতনতা। তারপর নিজে নিজে ভালো একটি উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবী।

 

একুশে বই মেলায় নবীন লেখিকা পরিচিতি (পর্ব-১)

অপরাজিতা ডেক্স


‘একটি হলেও নবীন লেখকের বই কিনুন’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা চলে গিয়েছিল ২০১৭। এ বছর মানে ২০১৮ একুশে বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল, ”পড়ব বই, গড়ব দেশ’। এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১-২৮ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা চলবে।

আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বইমেলায় নবীব দুজন লেখিকার পরিচয় এবং আর অনেক বিষয়। আসুন জানি তাদের সম্পর্কে।

মুক্তারা বেগম নদী

এসেছে এই বইমেলায় তার একক কবিতার বই “একলা পাখি”।

লেখক পরিচিতি:

মুক্তারা বেগম নদী, জন্ম চায়ের দেশ সিলেট বিভাগের, হবিগঞ্জ জেলায়। বাবার মার বড় সন্তান। পড়াশুনা, ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে এম.এ, ইংল্যান্ডের লন্ডন স্কুল অফ কমার্স থেকে এম.বি.এ.। বর্তমানে দেশের বিখ্যাত আইটি কোম্পানিতে কর্মরত। শখ: বই পড়া, লেখালেখি, মুভি দেখা, ছবি তোলা, গান শোনা, ঘুরে বেড়ানো, বাগান করা, রান্নাবান্না, সবচেয়ে বেশি পছন্দ বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো।প্রিয় লেখক : সৈয়দ মুজতবা আলী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শহিদুল্লাহ কায়সার, জাহানারা ইমাম, আহমেদ ছফা, জীবনানন্দ দাশ, হেলাল হাফিজ রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ,পুর্নেন্দ্র পত্রী, মাওলানা জালাউদ্দিন রুমী, খলীল জিবরান, এরিক মারিয়া রেমার্ক, ও হেনরী, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে। প্রিয় বই : শবনম, পদ্মা নদীর মাঝি, পথের পাঁচালি, একাত্তরের দিনগুলি, হাজার চুরাশির মা, সংশপ্তক, যদ্যাপী আমার গুরু, যে জলে আগুন জ্বলে, কবি, আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস, ত্রী কমরেডস, দ্যা ওল্ড ম্যান এ্যান্ড সী, অলিভার টুইষ্ট, ল্যা মিজারেবল, মা।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

নাম : মুক্তারা বেগম নদী
একক কবিতার বই ” একলা পাখি”
প্রচ্ছদ – হিমেল হক।
প্রকাশ করছে – কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড।
স্টল নং ১২২
গায়ের মূল্য :২০০ টাকা
কবিতা বিষয় : ভালবাসা প্রেম বিরহ অপেক্ষা আর প্রকৃতি।

লুনা লাবিব

“নীল খামে তোমার নাম” তার একক কবিতার বই প্রথম এসেছে এবারের বই মেলায়।

লেখক পরিচিতি:

লুনা পারভীন। জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৭ অক্টোবর, পিতা মরহুম ডাঃ এস এম আলতাফ হোসেন, মাতা ডাঃ জাহেদা খান ইউসুফ জাই, পৈতৃক নিবাস খুলনার ডুমুরিয়া, ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত! তৎকালীন শিশুদের ম্যাগাজিন নিয়মিত ছড়া লিখতেন। পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড কলেজ, উত্তরা থেকে এমবিবিএস পাশ করে বর্তমানে শিশু স্বাস্থ্যের উপর উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ বছর যাবত কর্মরত আছেন। লেখাপড়া ও পেশাগত কারণে লেখালেখি থেকে সাময়িক বিরতির পর আবার নতুন করে গত এক বছর যাবত বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপ ও পত্রিকায় লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন। এবারের বই মেলায় তার প্রথম কবিতার বই ‘নীল খামে তোমার নামে প্রকাশিত হলো।

এক নজরে কোথায় পাবেন বইটি

“নীল খামে তোমার নাম”
কবি : লুনা লাবিব
প্রকাশক : শ্রাবনী মজুমদার
প্রকাশনী : আনন্দম
প্রচ্ছদ : জয়ী আলম
পাওয়া যাচ্ছে : ম্যাগনাম ওপাস
স্টল নং : ৩৮৯-৩৯০
বইমেলা মূল্য: ১২০ টাকা মাত্র।

 

 

মাতৃকথন_২

ফারিনা মাহমুদ


এই .. শোনো … শোনো,
আমার ছবি আপলোড করো না কিন্তু খবরদার ! আমাকে বাদ দিয়ে শুধু বাবুর ছবি দাও …।কিংবা গ্রুপ ছবি তোলার সময় নিজের বেখাপ্পা শরীরটাকে দুইজনের মাঝের চিপায় যথাসম্ভব ঢেকে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
কি? কমন পড়ে? মা হবার পরে মুটিয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়ে আমাদের আড়ষ্টতা কথা বলছি !

‘মাইক্রোস্কোপিক’ একটা জাইগোট থেকে জ্বলজ্যান্ত একটা মানবসন্তান প্রসব … একটা বিন্দু থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের জয়যাত্রা। না, বায়োলজি ক্লাসে পড়া ব্যাঙের জীবনচক্র নয়, মানুষের জীবনচক্রের যাত্রাপথ! সেই যাত্রা কি আর সিরাতুল মুস্তাকিম। মোটেই নয়। একটু একটু করে স্ফীত হয়ে ওঠা শরীরটা কারো কারো ক্ষেত্রে শ্রী হারাতে থাকে নানাভাবে।

জীবনে একটা আঁচড় পড়েনি যে শরীরে, সেই চামড়ায় চিঁড় ধরে। ক্রমশ সেটা রূপ নেয় ফাটলে।
নাকটা কেমন যেন ফুলে ওঠে, ঠোঁটটা কালচে হয়ে যায়। ঘাড়ের কাছে, মুখে, কপালে ছোপ ছোপ কালচে পিগমেন্টেশনের দাগ, ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া পা। আর সর্বশেষ সিজারিয়ানের আড়াআড়ি কাটা কিংবা নরমাল ডেলিভারির থ্রি ডিগ্রি টিয়ারের যন্ত্রনা!!! তবেই না “মা”!

আর যে মুহূর্ত থেকে আদরের ধন বুকে এলো, মায়ের কি আর সময় হয় নিজের দিকে তাকানোর? আমি নিজে ১৯ দিন পরে চুল আঁচড়ানোর সময় পেয়েছিলাম!

কেমন কেমন করে যেন সময় চলে যায়। বাবুটা বড় হয়। একসময় হঠাৎ মায়ের খেয়াল হয়।
একি! আমার এমন হতচ্ছাড়া শ্রী ! হাত পায়ের এ কি দশা? খিদায় তো জান বের হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পেট ভরে খেতে গিয়ে দেখি আরেক বিপদ! জামা কাপড় কিছুই গায়ে লাগে না ! নিজেকে কেমন যেন দুনিয়ার সাথে অচল মনে হয়।

..কুরূপা কুৎসিত মোটা একটা মহিলা মহিলা লাগে ! কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টা করেন সান্ত্বনা খুঁজে নিতে। মা হয়েছি, মোটা হওয়া জায়েজ এখন। কেউ কেউ ফ্রাস্টেশনে ধুঁকে ধুঁকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় আরো!

সমাধানটা আসলে কি?
বাস্তব হলো, আমরা কেউ কেট মিডলটন না, যে প্রসবের ১২ ঘন্টা পর মেকআপ করে হাই হিল পরে ওটি থেকে বের হবো আর লোকে বলবে – মাইরালা !! বাচ্চা আসলে কই আসিলো আর কইত্তে বাইর হইলো?

কাজেই ওইসব রাজ-পুত্রবধুদের কভার করা ম্যাগাজিন দেখে আক্ষেপ করতে গেলে মা না হওয়াই ভালো। আমরা হলাম প্রজাবধু।
আমরা আমাদের শান্তির জন্য যা করতে পারি তা হলো,
♥স্রেফ নিজেকে ভালোবাসা,
♥নিজের একটু যত্ন নেয়া।

হ্যা, “বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চাই আমার পৃথিবী” – এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে আপনিও আপনার বাচ্চাটার পৃথিবী। দিনের ২০ ঘন্টা ওর যত্ন নিচ্ছেন, কিন্তু আধটা ঘণ্টা নিজেকে দিন। নিজের শরীরটাকে দিন। নিজের দিকে তাকান, নিজের হাত পা গুলো ম্যানিকিউর-পেডিকিউর এর অভাবে খুব অসুন্দর দেখাচ্ছে?

বাবুকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে একটু পানিতে চুবিয়ে ফেলুন, তারপর বাবু ঘুমালে গোসলটা সেরে নিন। পরদিন চুলটাকে একটু তেল দিয়ে বাঁধুন, তার পরের দিন শরীরটা ভালো করে দেখুন, মুটিয়ে যাচ্ছেন? সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার একটু খোঁজ খবর শুরু করুন।

একদিন, দুদিন … দেখবেন হারিয়ে যাওয়া লাবণ্য ফিরে আসছে একটু একটু করে। ফিরে আসছে আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি আমাদের সবার জন্য।

স্বার্থপর হতে বলছি না মোটেই, মোটেই ছোট করছি না একজন মুটিয়ে যাওয়া মায়ের চির সাবলীল সৌন্দর্যকে। শুধু বলছি, নিজের জন্য একটু সময় বের করতে প্রতিদিন, যাতে আক্ষেপে না ভূগি। দীর্ঘশ্বাস না ফেলি পুরানো এ্যালবাম দেখে অথবা ক্যামেরার সামনে গেলেই আড়ষ্ট হয়ে না যাই।

দিনশেষে … প্রতিটি মা-ই অনন্যা। মাতৃত্বের গুনে সম্পূর্ণা। তাই একটু বাড়তি যত্ন, ভালোবাসা পাবার অধিকার তাঁদের সবার আগে। তো সেই ভালোবাসাটা না হয় সামান্য একটু নার্সিসিজম দিয়েই শুরু হোক !

কি বলেন ?
শুরু হোক, নিজেকে ভালোবাসা দিয়ে … একটু একটু করে !

 

জেগে ওঠো

আফরোজা হাসান


একটি গাছে অনেক পাতা থাকে। অসংখ্য সবুজ পাতা গাছের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। সেই সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়।

তবে অসংখ্য সবুজ পাতার মাঝে অনেক পাতাই মাঝে মাঝে শুকিয়ে যায়।
একসময় সেই শুকনো পাতাগুলো গাছ থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সেই ঝরা পাতাকে কেউ আর মূল্য দেয় না।

মানুষের জীবনও একটা গাছের মতো। এই গাছেও সবুজ পাতার মতো সৌন্দর্য থাকে, সেই সৌন্দর্য হলো অসংখ্য সাফল্যের পালক।

মানুষের জীবন যখন সাফল্যের পালক দিয়ে ঢাকা থাকে, তখন তাকে সবাই সবুজ পাতার মতো ভাবে। আর যখন সাফল্যের পালক জীবন থেকে একটা একটা করে ছিঁড়ে যায়, তখন সেই মানুষটিকে সবাই ঝরা পাতার মতো মনে করে। তার জীবনে যেন আর কোনো মূল্য নেই!

সত্যিই কি ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলোর জীবন গাছের ঝরা পাতার মতোই মূল্যহীন?

বনের ঝরা পাতাও কিন্তু অন্যের উপকার করে। বনের হিংস্র বাঘ যখন নিরীহ হরিণ শিকারের জন্য তীব্র বেগে ধেয়ে আসে, তখন শুকনো পাতাগুলো বাঘের পায়ের নিচে পড়ে মড়মড় আওয়াজ করে। সেই আওয়াজ শুনেই হরিণেরা বুঝতে পারে বিপদ আসন্ন। এভাবেই শুকনো পাতারা নিরীহ হরিণকে বিপদ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে।

আমরা যারা তরুণ মাঝি, তারা জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হই। তাই বলে কি সবসময় বিষণ্ন হয়ে বসে থেকে হাল ছেড়ে দেব?

হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেব?

গাছের ঝরা পাতাগুলোর দেহে প্রাণ থাকে না, তবুও তারা অন্যের উপকারে আসে। আমাদের দেহে তো প্রাণ আছে, তবে আমরা কেন পারব না?

জীবনে চলার পথে কষ্ট আসবেই। অর্থকষ্ট, স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার কষ্টসহ নানান ডিজাইনের কষ্ট। তারপরও কষ্টের নদী পাড়ি দিতে হবে।

কখনো যদি খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তবে মাঝে মাঝে গাছের ঝরা পাতাগুলোর কাছে যাবেন।

দেখবেন তারা আপনাকে সাহস দিয়ে বলবে, “তোমার জীবনে কিছুই হারিয়ে যায়নি। তোমার দেহে তো এখনো প্রাণ আছে। জেগে ওঠো! জ্বলে ওঠো হে তরুণ!”

 

তাহেরা রহমান প্রথম হিজাব পরা সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের টিভিতে

হলিউড রিপোর্টার


অভিবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশনে প্রথমবারের মতো পূর্ণকালীন রিপোর্টার হিসেবে একজন হিজাব পরিহিত নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করা নারীটির নাম তাহেরা রহমান।

ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কোনো টেলিভিশন স্টেশনে তিনি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিজাব পরে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি সংবাদ পাঠও করছেন নিয়মিত। ৯ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়-আইওয়া সীমান্তবর্তী এলাকা কুয়াড সিটিজে স্থানীয় টিভি স্টেশন ‘লোকাল ফোর নিউজ’-এ হিজাব পরিহিত অবস্থায় সংবাদ পাঠ করেন তাহেরা।

‘লোকাল ফোর নিউজ’ চ্যানেলটি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিবিএসের আঞ্চলিক শাখা। ইলিনয় ও আইওয়া দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি শহরকে একসঙ্গে কুয়াড সিটিজ বলা হয়।

ওই অঞ্চলে সম্প্রচার হয় ‘লোকাল ফোর নিউজ।’ ওই টিভি স্টেশনে গত দুই বছর ধরে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করছিলেন তাহেরা। তবে সব সময়ই তার স্বপ্ন ছিল টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট তুলে ধরার। কিন্তু মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোর অঘোষিত নীতি হলো- হিজাব পরা কাউকে পর্দায় হাজির না করার। মেধাবী তাহেরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়েছেন।

আগে কাজ করেছেন সিবিএসের শিকাগো অফিসে। সহকর্মী ও সিনিয়রেরা সব সময় তাকে বলে এসেছেন, পর্দার সামনে আসতে হলে তাকে হিজাব খুলতে হবে!

তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য তাহেরা জানান, ‘শিকাগোর একাধিক টিভি স্টেশনে তিনি চেষ্টা করেছেন রিপোর্টার বা সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার।

কিন্তু সবাই তাকে হিজাবের কথা বলে না করে দিয়েছে। আর টিভিতে কখনো আমার মতো দেখতে কাউকে দেখিনি। তাই একপর্যায়ে মনে হয়েছিল আমি আসলে এই সুযোগ পাব না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’ এরপরই তাহেরা যোগ দেন লোকাল ফোর নিউজে। শেষ পর্যন্ত কাজে মুগ্ধ হয়ে কর্তৃপ তাকে টিভি পর্দায় নিজের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ দেয় ৯ ফেব্রুয়ারি। সুযোগ পেয়ে তাহেরা খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমি কর্তৃপরে উদারতায় খুশি। আশা করি, আমি আমার কর্মদতায় এগিয়ে যাব।’

শুক্রবার ‘লোকাল ফোর নিউজ’ জানায়, তাহেরা হলেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো হিজাবি মুসলিম নারী যিনি অন-এয়ার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করবেন। মেয়ের সাফল্যে খুবই খুশি তাহেরার বাবা-মা। প্রথম টিভি পর্দায় সংবাদ পাঠের দিন পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাহেরার অফিসে এসে হাজির হয়েছিলেন তারা।

অনুষ্ঠান দেখতে বসে কান্না থামাতে পারেননি মা। তাহেরার মা দারদুনেহ রহমান জানান, ‘তাহেরা হিজাব মাথায় ওই টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আর মা হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত। ‘টেলিভিশনের পর্দায় মেয়েকে হিজাব মাথায় দেখে উচ্ছ্বসিত তাহেরার বাবা-মা। আর তাহেরাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে খুশি রিচা টেইলর।

উল্লেখ্য, আমেরিকার পিউ রিচার্স সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী সে দেশের ৬৮ শতাংশ মুসলিম পুরুষ এবং ৮৩ শতাংশ মুসলিম নারী বৈষম্যের স্বীকার। অন্য দিকে মার্কিন সংস্থা রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশটির স্থানীয় টিভি স্টেশনগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের হার মাত্র ২২ শতাংশ। সুত্র:নয়াদিগন্ত,যুগান্তর।

 

বসন্তের শুভেচ্ছা

ফাতিমা মারিয়াম


মালা গ্রামের মেয়ে। মামার পরিচয়ের সূত্রে বিয়ে হয় ঢাকায়।

মালার শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ি একই জেলায়। তবে তার স্বামী আনিস ঢাকাতেই প্রতিষ্ঠিত।

আনিস একজন সরকারী কর্মকর্তা। বেতনের চাইতে উপরি আয়ই বেশি। অনেক অনেক টাকা হাতে আসার কারণেই হোক অথবা গ্রামের মেয়ে হঠাৎ রাজধানীতে রাজরানি হওয়ার কারণেই হোক মালা বেশ বেহিসাবি জীবন যাপন করা শুরু করে।

আনিস কখনো কিছু বলে না। কারণ বলার মত শক্ত মেরুদণ্ড তার নেই।

মালার লাগামহীন ছন্নছাড়া জীবন যাপনের ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে বললেই আনিস বলে- আরে থাক না। এখন তো সবাই এভাবেই জীবন কাটায়। ওকে তাই কিছু বলি না।

আনিসের মা বাবা কেউ কখনো মালার ব্যাপারে কিছু বলেও আনিসের কাছে পাত্তা পায় না। সবাইকে সে বুঝাতে চায় যেভাবেই চলুক না কেন মালা মানুষ হিসেবে ভালো। তার আত্মীয়স্বজন তো বটেই এমন কি মালার আত্মীয়রাও আনিসের স্ত্রৈণ স্বভাবের জন্য আড়ালে আবডালে বিরক্তি প্রকাশ করে।

একে একে দুইটি সন্তান হয় মালা ও আনিসের। তারা দিন দিন বড় হয়। মালার বেহায়াপনা বাড়তে থাকে, বাড়ে আনিসের আয়। আয়ের পুরো টাকা বউয়ের হাতে তুলে না দেয়া পর্যন্ত মায়া আনিসকে শান্তি দেয় না।

এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রী দুজনেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এরপর
জানাজানি…..
কানাকানি।

তারপরও দিন যায়। সংসারে চরম অশান্তি।

ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। তারা বাবা মা দুজনকেই কড়া কথা শোনায়। আবার তারা নিজেরাও যে ভালো পথে চলে তা নয়। ছেলেও এক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই মেয়ের মাকে মালা দু কথা শোনায়। আবার মেয়ের প্রেমিককে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বেশ কায়দা করেই জানায়। ছেলেমেয়ে কোন শাসন মানতে চায় না।

পরিবারে চরম অশান্তি চলে…চলতে থাকে।



পহেলা ফাল্গুনে মা মেয়ে দুজনেই বাসন্তী শাড়ি পরে সাজুগুজু করে ফেসবুকে ছবি দেয়। আর ক্যাপশনে লিখে ‘সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা’। লাইক আর কমেন্টের বন্যায় আপাতত তাদের পরিবারের অশান্তির কথা মা মেয়ে ভুলে যায়। মাতা কন্যা উভয়ে একে অন্যের পোষ্ট চেক করে দেখতে থাকেন কার পোস্ট এ লাইক বা কমেন্ট কত এসেছে![ছোট গল্প]

 

ঘুড়ি

দ্য স্লেভ


শৈশবের এই এক ঘুড়ি নিয়ে বহু পৃষ্ঠা লেখা যায়। আমাদের এলাকায় কিছু ছোট ছোট দোকান ছিলো, যেখানে নানান রঙের ঘুড়ি বিক্রি হত। কারো কারো ঘুড়ি ছিলো বিখ্যাত, কিন্তু দাম সকলের কাছেই এক টাকা। সে সময় ১ টাকা দরের ওই ঘুড়িটা যে কতটা আকাঙ্ক্ষিত ছিলো তা ঠিক ভাবে বুঝানো যাবে না। ওটা যেন এক টাকা মূল্যের কিছু ছিলোনা। ওটা ছিলো বহু মূল্যবান সম্পদের একটি অংশ।

আমার জানামতে আমি ১ টাকা দিয়ে সম্ভবত দু একবার ঘুড়ি কিনেছি। আমি একই দোকান থেকে ৫০ পয়সা দামের ছোট সাইজের ঘুড়ি কিনতাম। এই ঘুড়ি কিনে এর পেছনে লেজ লাগাতাম। সেই লেজ হত আমার অংশ খাতার কাগজ দিয়ে তৈরী। কখনও কখনও এত লম্বা লেজ তৈরী করতাম গরম ভাত দিয়ে টিপে টিপে,যে লেজের ভারে ঘুড়ি উড়তে পারত না। আমি ভাবতাম বাতাসের দোষ। তবে সেই লম্বা লেজওয়ালা ঘুড়ি নিয়ে জোরে দৌড় দিতাম,তখন তীব্র বাতাসে খানিকটা উপরে উঠত।

আমি ঘুড়ি তেমন কিনতাম না, তবে প্রতিদিন বিকেলে নদীর ধারে, রেল লাইনের উপরে তুখোড় ঘুড়িবীদরা কাটাকাটি খেলত। সে সময় আমরা বাচ্চারা দূরে দাড়িয়ে সে খেলা দেখতাম। কি যে মজা সেটা দেখতে। তবে আসল মজা হল ঘুড়ি কাটার পর সেই কাটা ঘুড়ি ধরার জন্যে দৌড় প্রতিযোগীতা। কাটাকাটি হলেই বিশাল লম্বা সূতোসহ ঘুড়ি ধীরে ধীরে নীচে নামত। বহু উপরের সেসব ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা আরেক গ্রামে পৌছে যেতাম কখনও।

আবার কখনও কখনও নদীতে পড়ত গিয়ে। তবে ঘুড়িটাকে পাবার জন্যে জীবন উৎসর্গ করতাম। কখনও সেটা লম্বা গাছে গিয়ে বেধে থাকত। এমন ক্ষেত্রে আমাদের এলাকার মারাত্মক গেছো আমিনই ঘুড়িটা পেত। আমিন যে কোনো গাছে অনায়াসে উঠে যেত দ্রুত। মাটিতে বা আমাদের আয়ত্বে থাকা স্থানে কখনও ঘুড়ি পড়লে আমি কখনও কখনও সেটা পেতাম। তখন যে কি খুশী লাগত ! তবে কখনও কখনও একাধিক লোকে ঘুড়ি ধরতে গেলে আমরা আমরা কোনো লাঠি,কঞ্চি দিয়ে ঘুড়িতে বাড়ি দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম, যাতে কেউ নিতে না পারে। ঘুড়ি ধরা নিয়ে অনেক হাতাহাতিও হত। তবে অনেক ঘুড়িই ধরেছি।

আমার ধরা সেসব ঘুড়ি অনেক যত্ন করে খাটের নীচে অথবা ঘরের সানসাইডের উপর রাখতাম। আমার সুন্দর সুন্দর লাটাই(নাটাই) ছিলো। আমি এক ধরনের চমৎকার লাটাই বানাতাম। পুরোনো হাওয়াই চপ্পল সুন্দর গোল করে ২টা চাকা বানাতাম। এবার বাঁশের সরু কঞ্চী সুন্দর মাপে এর ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিতাম। চাকার মাঝ বরাবর একটা ফুটো করতাম আর সেখানে মসৃণ বাঁশের কঞ্চী অথবা সুন্দর করে বানানো বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে লাটাই বানাতাম। আমার হাতের কারুকাজ খুব দারুন ছিলো।

আমরা সূতোয় মাজন দিতাম। বাল্বসহ নানান কাচের জিনিস ভেঙ্গে গুড়ো করতাম হামানদিস্তায়। এটার কাপুড়ে ভরে পাউডার অংশ বের করে নিতাম। এবার গদের আঠা আর কি কি যেন একসাথে জ্বালিয়ে এর ভেতর কাচের পাউডার দিতাম। তারপর এটা সূতোয় লাগিয়ে শুকাতে দিতাম। খুব ধারালো হত সূতো। এই সূতো নিয়ে কাটাকাটি খেলতাম। তবে আমার সূতোয় মজন থাকলেও আমি কাটাকাটি খেলতে চাইতাম না। কারণ ঘুড়ির প্রতি আমার খুব মায়া ছিলো। আমি আকাশে উড়িয়েই মজা পেতাম। তবে অন্যের কেটে যাওয়া ঘুড়ির প্রতি খুব লোভ ছিলো।
আমি,সাবু,ইদু,মাসু,রফি,রমজান, উজ্জল,দোলন,সুমন আরও অনেকে আমাদের মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম। আবার কেউ কেউ অল্প সূতোয় ঘুড়ি বেধে সারা এলাকায় দৌড়ে বেড়াত, ওটাই আনন্দ। মাঠে ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি কত যে আনন্দ করতাম ! তবে সবশেষে মাঠের পুকুরে দল বেধে গোসল করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা, সে আনন্দের কোনো তুলনা নেই।

আমি পলিথিন দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করতাম। এই ঘুড়ি বেশী টেকসই তাই এইটা বানাতাম। আমি ভাবতাম রঙিন কাগজে এক টাকার তৈরী ওই ঘুড়ি সহজে ছিঁড়ে যায়। যদি এমন কাগজ হত, যা কখনও ছিড়বে না, তাহলে সেটা দিয়ে ঘুড়ি বানালে খুব ভালো হত। ঘুড়ি ছিলো একটা নেশা। এর অনেক কলা কৌশল রয়েছে। ঘুড়িকে বিশেষ কায়দায় বাক খাওয়ানো যায়, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা যায়। আবার পাক খাওয়ানো যায়। কাটাকাটি খেলার সময় এসব করা হয়।

এলাকার বিখ্যাত কাটাকাটিবীদ ছিলো আজিজুল ওরফে আইজুল চা(চাচা)। এছাড়া হাফি,মফিও খুব ভালো ছিলো এই বিষয়ে। ওরা রেল লাইনের উপরে গিয়ে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলত। আমাদের উপর পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা ছিলো রেললাইনের ওদিকে পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে, তাই আমরা সর্বোচ্চ নদীর ধার পর্যন্ত যেতাম। তবে বাজারের দিকে না গেলেও পায়রাডাঙ্গা, কুটিপাড়া পর্যন্ত চলে যেতাম, তাতে তেমন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু বাজারের দিকে যাওয়া নিষেধ ছিলো। শুনতাম আইজুল চা’র সাথে অন্যরা কাটাকাটি খেলতে ভয় পেত। তবে তার ঘুড়িও কেটে যেত অনেক সময়। অনেক সময় অঅমরা নদীতে গোসলের সময়ও ঘুড়ি ধরেছি। কখনও সূতো করে ঘুড়ি উড়তে থাকা অবস্থায় ডাঙ্গায় তুলে ফেলতাম।

এখনকার বাচ্চারা এসব সাধারণ বিষয়ে মজা পায়না। এদের চিন্তার জগত পাল্টে গেছে। এদের মজার মাত্রাও তেমন মজাদার না। আমরা খুবই সামান্য কারনে মজা করতে পারতাম। সেই ঝরঝরে সুন্দর দিনগুলো এখন নেই। ৫০ পয়সা ১ টাকা দামের ঘুড়ি আমাদেরকে যে আনন্দ দিয়েছে,তা আজ লাখ টাকায়ও পাওয়া যাবে না। সেই মন আর নেই মানুষের, কেমন যেন ফর্মালিনযুক্ত মানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। সেই সহজ সরল সোনালী দিনগুলোকে মনে পড়ে। বহু কথা,বহু স্মৃতি আছে কেবল এই এক ঘুড়ি নিয়ে!
আজ আর না।…

 

ভালবাসা দিবসে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন ‘সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ভালবাসা বিতরণ’

অপরাজিতার নিজস্ব প্রতিবেদন


ভালোবাসা দিবস, ভিন্ন আয়োজন হিসেবে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন ‘স্কুল অব হিউম্যানিটি’।

গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোজ বুধবার কর্মব্যস্ত ঢাকার মোহাম্মদপুর বটতলায় ছিলো উৎসবমুখর এক পরিবেশ। পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী এদিন ছিলো ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে ভালোবাসার উৎসব। তাই সুবিধা বঞ্চিত বাচ্চারা সকাল থেকেই সাজগোছ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

তাদের ভাষ্যমতে, ভালোবাসা দিবসে তাদের আয়োজনে যা যা ছিল,

★চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ।

★আহারের পূর্বে কিভাবে হাত ধৌত করতে হয় তা ব্যবহারিক ভাবে শিখানো।

★সবার জন্য লাঞ্চ বক্স।

★সবাই একসঙ্গে বেলুন উড়ানো।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক ফখরুল মজুমদার আমাদের আরো জানিয়েছেন যে, ‘আসলে আমরা সবসময় চেয়েছি এই শিশুদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে। সে থেকেই আমাদের সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছে। জেনে খুশি হবেন যে, স্কুল অব হিউম্যানিটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এ পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের সহায়তা ও ঈদ উৎসব সম্পন্ন করেছে। গত একবছর ধরে আমাদের পথচলা। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৮ এর জানুয়ারী থেকে।

বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে শুরু কথার কথা ভাবছে।
শিক্ষা কার্যক্রমে দুটি প্রদক্ষেপ-

১) যারা পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে স্পন্সর সংগ্রহের মাধ্যমে নিয়মিত পাঠদান করা।
২) যারা পড়াশুনা করবে নাহ, তাদেরকে অক্ষর জ্ঞান শিখিয়ে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান।

এছাড়াও স্কুল কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে নিতে স্কুল অব হিউম্যানিটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক দুই টাকা প্রকল্প শুরু করেছে। স্লোগান হলো- ‘রোজ দুই টাকা জমাই
পথ শিশুদের পাশে দাড়াই।’ ছবি এবং তথ্য সহযোগী: ফখরুল মজুমদার।

(http://oporajitabd.com)

 

‘প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং’ পর্ব-৩

ফাতিমা খান


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা মানেই আমার ঘরে অন্যরকম একটা আমেজ । বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের ক্লান্ত চেহারাতেও একটা “তাইরে নাইরে না” টাইপ ভাব দেখি। আমার শত ক্লান্তির মাঝেও ওদের আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে, বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওদের “যা খুশী তাই কর” দিন, রুটিন-ছাড়া, বাধনহারা সময়। আমার বয়সটা ঠুস করে কমে একদম ওদের সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়।

বাচ্চাদের মাঝে মাঝে এই ছাড় দেওয়া ওদের অনেক রিল্যাক্স আর রিফ্রেশ করে। আজকাল স্কুল কলেজের পড়াশোনার চাপ এত বেশী থাকে যে ওরা নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রায় হারাতে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসে।

এই বিশেষ গুনগুলো লালন করার জন্য একটু অবকাশ খুব দরকার যেন পরের ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে গুলোর জন্য ওদের দেহ ও মন-মস্তিষ্ক সতেজ হয়।

সংসার, চাকুরী, ঘর সামলে ক্লান্ত শুধু আমরাই হই না, ওরাও হয়, কিন্তু ধরন আর কারণটা ভিন্ন। একটু শিকল ছাড়া সময় আর বাবা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষাতেই মানসিক ভাবে ওরা ক্লান্ত থাকে, যা ওরাও প্রকাশ করে না আর আমরাও বুঝতে পারি না।

প্রায় বছর দুয়েক আগে আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখেছিলাম পনের বছর বয়স পর্যন্ত দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা বাচ্চাগুলো মেধাবী হয়।

জীবন কতটা জটিল হলে মায়ের কাছে সন্তানের জন্য আধা ঘন্টা সময়ের দাবী করে জরিপ করা হয়েছিল তাই ভেবে কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম।

আজ রাত নয়টায় বাসায় ফিরে দেখি আমার বড় ছেলে পপস্টিকাল স্টিক দিয়ে বাড়ি বানায়, ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমার ছোটজন তার বাধ্য এসিস্ট্যান্ট। কোলের উপর বিশাল ওজন ওয়ালা ‘Big book of home plans’ বই নিয়ে ভাইকে গাইড করছে। আমার সারা ঘরের মেঝেতে সদ্য কিনে আনা ক্রাইলিক পেইন্টের ছড়াছড়ি। পপস্টিকাল স্টিকের বাড়ির ওয়াল পেইন্ট হচ্ছে।

আমাকে দেখেই বড়জন বলল, ” আম্মু আমাদের ফিউচার বাড়ির মডেল বানাই। ডুপ্লেক্স বাড়ি হবে আমাদের। নিচতলায় একপাশে নানাভাই নানুমণি থাকবে, আরেকপাশে দাদু। আমরা থাকব উপরে। নাইন সিটারের একটা গাড়ী থাকবে আমাদের। যেখানে যাব সবাই একসাথে যাব। ড্রাইভিং সিটে বসব আমি, পাশে নানাভাই। বাকী সবাই পেছনে।” আমার ছেলের চোখ স্বপ্নময়, মুখ হাসি হাসি।

ছোটজন আবার একটু ভাবুক। সে প্ল্যানের বাকীটা বলে ফেলল ” আর বাড়িটা হবে লেকের পাশে। একটা ওয়ালের পুরাটাই গ্লাসের উইন্ডো হবে। আর থাকবে অনেক বড় এয়ার এলার্ম। বাতাস আসবে আর এলার্ম বাজবে…আআআহহহহ ”(তার চোখ অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে)।

আমিও বোধ হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম…!

আজ ওদের কান্ড দেখে নতুন কিছু প্যারেন্টিং এর আইডিয়া পেলাম।

♦ আমাদের প্রি-টিনেজার বা টিনেজার কে তাদের স্বপ্নগুলো লালন করার জন্য একটা মুক্ত ক্যাম্পাস দেয়া উচিৎ যেখানে তারা মনের সব কল্পনা আর রঙ মিশিয়ে স্বপ্ন গড়বে। এই চর্চাই একদিন তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের সোপান হবে।

♦ ওরা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে অকপটে, যেগুল আমরা বড়রা সাত পাঁচ ভেবে বা ইগো সমস্যার জন্য হয়ত বলতে পারি না। পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ওদের পরামর্শও নেওয়া উচিত। ওদের চিন্তার প্রসারতা ও ভালমন্দ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও এটা খুব ভাল উপায় হবে।(চলবে)

লেখিকা কর্মরত:আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

ভালবাসার স্বপ্নরা অশ্রুতে লুকায়

ডা.সাকলায়েন রাসেল


ও বয়স ৩৫! বাড়ী জলঢাকা!
নীরার এই তথ্যগুলো আগেই দেখে নিলাম। পরণে শাড়ী। পরিপাটি গেট আপ। এই বয়সটাকেও আমি সন্ধিকাল বলি। কারণ এই সময়ে মেয়ে থেকে মা হয়ে যায় বেশিরভাগ মেয়ে। দেহে তাই পরিপূর্ণ নারীভাব চলে আসে। ছেলেরাও বাবা হয়। তবে তাদের পুরুষভাব আসতে কমপক্ষে চল্লিশ লাগে!

কথাটা ফানি। তবে সত্য বলে প্রমাণিত হয় অনেক সময়। মেয়েদের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশ হতে কমপক্ষে ১৫ বছর লাগে!
নীরাকে অবশ্য তেমন মনে হল না। বয়স লুকাইনি সে। তবে ৩৫ এর চেয়ে বেশি বয়স্কা লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। এই বয়সে ওর দেহে ডায়াবেটিস, হাই প্রেসারের মত হাই প্রোফাইল রোগ গুলো বাসা বেঁধেছে।

নীরাও আপন করে নিয়েছে তাদের। থাকে না তাই ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণে আসে না প্রেসারও। না আসলে তাতে কি! পাত্তা দেয় না নীরা।

থাক না। ওতো কন্ট্রোল করে কি হবে?
রোগের কথা জানাচ্ছিল নীরা। পাশে সাথে আসা ভদ্রলোকও দুই একটা সমস্যা ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। ভদ্রলোকের পরিচয় নেয়া হয়নি। তবে কথাবার্তায় স্বামী সুলভ ভাব স্পষ্ট।

নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করে নিলাম, আপনাদের সম্পর্ক?
অবাক হলাম। কারণ লোকটি উত্তর দিতে কয়েক সেকেন্ড পজ নিলেন। অনেকটা ভাইভা বোর্ডের মত। সহজ প্রশ্ন কিন্তু টেনশনে মাথা থেকেই আউট।
হঠাৎ ‘ও হ্যা… মনে পড়েছে’!

লোকটি শুরু করলেও শেষ করলেন নীরা।

‘আমার স্বামী’। লোকটি মুচকি হাসিতে সম্মতি দিলেন। যার শাব্দিক রূপ উত্তর সঠিক হয়েছে। লোকটি হেল্পফুল। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মুখটাও কষ্টে মেখে রেখেছেন।

না নীরা প্রেসার বা ডায়াবেটিসের কথা বলতে আসেনি। তার শরীরে অনেক সমস্যা। ঢাকার বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছে। কাজ হয়নি। ইন্ডিয়া গেছে। লাভ হয়নি।

কোন এক টিভিতে আমার সাক্ষাৎকার দেখেছে। খুব ভাল লেগেছে তার। তাই আসা। অনেক আশা নিয়ে। সাথে আসা ভদ্রলোক সে ভিডিও দেখালো। স্যার, অনেক আশা নিয়ে। এসেছি।

কত জায়গায় দেখালাম। কাজ হয়নি। কেউ ভাল করে বলেও না কি হয়েছে। প্রোগ্রামে আপনার কথা শুনে খুব ভাল লেগেছে। তাই আসলাম। আপনার সিরিয়াল না পেয়ে গত ৫ দিন ঢাকাতেই আছি।

নীরার ব্যথার সমস্যা। এ ব্যথা মূলত পায়ে। হাটতে গেলে ব্যথা। বসে থাকলেও ব্যথা। ব্যথা হয় ঘুমের মাঝেও। তীব্র ব্যথা না। ব্যথার চেয়ে জ্বালাপোড়া বেশি। তার চেয়েও বেশি রগে টান ধরা। জ্বালাপোড়া আছে হাতেও। পিঠেও মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সকালে। অসহ্য ব্যথা। প্রতিদিন সকাল আসে তাই কান্না হয়ে। নীরা কান্নার শব্দে বাসার সবাই জেগে উঠে।

ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক। কাজ হয়নি। ফিজিক্যাল মেডিসিন। রিউম্যাটোলজিস্ট। অর্থোপেডিক্স। ফিজিওথেরাপিস্ট। ঘুরে এসেছে চেন্নাই থেকেও।

স্বামী লোকটাকে বেশ ব্যস্ত মনে হল। এ ব্যস্ততা মোবাইল নিয়ে। ভিডিওটা বের করলেন। স্যার আপনার এই প্রোগ্রামটা ইউ টিউবে দেখেছি। তখন থেকেই ভক্ত। ভাবছি একবার হলেও আপনাকে দেখাব।
আমি কাগজপত্র চেক করলাম। কড়া কড়া ঔষধ ইতোমধ্যে খাওয়া শেষ। আমার প্রেসক্রিপশনে নতুন করে দেয়ার জন্য কিছুই রাখা হয়নি।

নীরাকে দেখলাম। সব পালস নরমাল। ডুপ্লেক্স এর সাহায্য নিলাম। না খারাপ কিছুই ধরা পড়ল না। নীরার উপসর্গ একেবারেই বে-মানান। কোন রোগের সাথে তাই মেলানো গেল না। নীরাকে পরীক্ষা করে নিজ চেয়ার এসে হেলান দিয়ে বসলাম। নীরা ও তার স্বামীর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা! অপেক্ষায় আছে আমি কি বলি। কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা ভাঙ্গালো স্বামী।

– স্যার, কিছু বোঝা গেল? ও ভাল হবে তো?

নীরার মুখ আঁধারে ঢাকা। স্বামীর প্রশ্নে তার সায় আছে। সেও এর জবাব চায়।

আমি স্বামীর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। সবটুকু মনোযোগ তখন নীরার দিকে।

নীরা, ভুলে যান আমি আপনার ডাক্তার। ধরেন, আমি আপনার অতি পরিচিত কেউ একজন। গল্প করছি। জানিনা কিছুই। বুঝিনা অনেক কিছু। এমন কেউ। আমার কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।

-কোন কাজ কি গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন? আই মিন কাজে কনসেন্ট্রেশন কেমন আপনার?
প্রশ্ন কমন পড়েছে। উত্তর দিতে নীরাকে চিন্তাই করতে হল না।
@না পারিনা, কোন কিছুতেই মনোযোগ নেই আমার!

-আপনার কোলাহল খারাপ লাগে? গ্যাদারিং এড়িয়ে চলেন?
@জ্বী, কোলাহল একদম সহ্য করতে পারিনা।

-গান শোনেন? টিভি দেখেন?
@না গান শোনা, টিভি দেখা, সিনেমা দেখা কোন কিছুই ভাল লাগে না আমার!

নীলার চোখে মুখে বিরক্তি রেখাটা স্পষ্ট হল। মনে হল আশেপাশে কোথাও গান বাজছে। নীরার সহ্য হচ্ছেনা।
স্বামীর দিকে তাকালাম।

-একটা মুচকি হাসির ছাপ আমার মুখে। আপনার উপর রাগ টাগ করে নাকি?
স্বামী থতমত খেল। মুখে একটা মরা মরা হাসি আঁকার চেষ্টা করল। তাকে কিছু বলতে দিলাম না। আবারো নীরার দিকে তাকালাম।

-মেজাজ কি খুব খিটমিটে থাকে?
@নীরা সাথে সাথে সায় দিল। জ্বী স্যার, খুব বেশি। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। সব সময় খিটমিট করি।

-ঘুম কেমন হয়?
@নাই বললেই চলে। একটু ঘুম আসলেও গভীর ঘুম কখনোই হয়না।

নীরাকে কিছুটা বিচলিত মনে হল। কারণ যে রোগ নিয়ে এসেছে তার সাথে এসব প্রশ্ন যায় না। আমিও সময় সংক্ষিপ্ত করায় মনোযোগী হলাম। বাইরে রোগীর ভীর। একজনকে বেশি সময় দিলে বাকীদের অপেক্ষার প্রহর বেড়ে যায়।

-আচ্ছা শোনেন। দুজনকে একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। ‘সোমাটোফর্ম ডিজওর্ডার’ নামে একটা রোগ আছে। এটা মনের রোগ। কিন্তু প্রকাশ পায় দেহে। অর্থাৎ মনের কিছু দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয় শরীরে। মনে হবে শরীর ব্যথা। এ সমস্যা। ও সমস্যা। তিনি আসলে মানসিক রোগী না। আবার অনেক বড় মানসিক সমস্যাও।

আমি সতর্ক। নীরা যাতে আবার ভেবে না বসে আমি তাকে মানসিক রোগী ভাবছি।
এমনই একটি রোগের নাম ফাইব্রোমায়ালজিয়া। সর্বাঙ্গে ব্যথা। খুব বেশি কষ্ট হয় না। আবার একেবারে সারেও না সহজে। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা পরে বিরক্ত হয়ে পড়ে।
চেম্বারের আবহাওয়া ততোক্ষণে অনেকটা স্তব্ধ। গুমোট ভাব। । মনে হল এখনই ঝড় নামবে। কথা শেষ করে আনতে হবে।

-এবার সরাসরি নীরাকে প্রশ্ন করলাম, আপনার মনের মাঝে কি তীব্র কোন কষ্ট আছে?

স্বামী নিশ্চুপ। শব্দহীন নীরাও। সহসাই নীরবতা ভেঙে গেল। নীরার চোখ লাল হয়ে গেল। কন্ঠ আটকানো। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরল সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

@স্যার, আমার স্বামী আসলে মারা গেছে আড়াই বছর হল। ওর ক্যান্সার হয়েছিল। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। আমার একটা মেয়ে আছে। ক্লাস নাইনে পড়ে।
আজ আড়াই বছর হল। অথচ এক সেকেন্ডের জন্যও ভুলতে পারি না তাকে। সব সময় শুধু ওর কথা মনে পড়ে। উঠতে বসতে তার স্মৃতি আমাকে ঘিরে ধরে। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারি না। একবারের জন্যও না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব ঘিরে শুধু তার স্মৃতি।

তাকালাম পাশে থাকা লোকটির দিকে। নীরা দ্রুতই কান্নার শব্দ কমিয়ে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিল।

@আমি ওকে পরে বিয়ে করি। ও খুব ভাল স্বামী।

নতুন এ পরিস্থিতির বিষয়ে আগে থেকে কিছু আঁচ করতে পারিনি। আমিও তাই বাক্যহীন। নতুন স্বামীর মুখের অভিব্যক্তি দেখতে অস্থির হলাম। অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে। স্বামী অসহায় মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হল তার মাঝেও ঝড়। কান্নাকাটি পুরুষকে মানায় না। তাই সে সেটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

আমি সত্যিই অবাক হলাম এই লোকটিকে দেখে। এমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জিজ্ঞাসা, কেমন লাগছে লোকটির?

যে নারীকে সে বিয়ে করেছে একান্ত আপন করে নিতে। সে কিনা ভালবাসার সবটুকু আঁচল পেতে রেখেছে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া প্রাক্তন স্বামীর জন্য!

লোকটি কি বিব্রত? সে কি লজ্জিত? তার স্ত্রী তার সামনেই আগের স্বামীর ভালোবাসায় ডুবে থাকার গল্প বলছে।
আমার কন্ঠই থেমে গেল। কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম।

নীরাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, অনেক স্মৃতির অধ্যায় মিলিয়ে একটা জীবন নামক গল্প তৈরি হয়। দরকার কি সে গল্পের কোন অধ্যায় মুছে ফেলার?
আপনি অনেক হারিয়ে অনন্ত পেয়েছেন। আপনি তাই ভাগ্যবতী। স্বামী হারিয়ে বিয়ে করার গল্পটা এদেশে একেবারে সাধারণ। অসাধারণ শুধু নতুন স্বামীকে পাশে বসিয়ে হারিয়ে ফেলা স্বামীকে ভালবাসার সবটুকু অর্ঘ্য দিয়ে সাজানো।

লোকটির দিকে তাকালাম। মানুষ না। তাকে মহামানুষ মনে হল। সব শেষ। তবুও নীরার শুকনা মরুভূমিতে সবুজের চাষী সে! জীবন থেমে যায়, স্বপ্নরা গিয়ে অশ্রুতে লুকায়! অন্যের আঙিনায় দেহরা মেক আপে সাজে। মন শুধু হাতড়ে বেড়ায়। ফেলে আসা স্মৃতির দরজায়।
সব..সব কিছু একদিন স্মৃতি হয়ে যায়।
নীরারা বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে ভালবাসারা।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

ষষ্ঠ এশিয়ান ‘কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি’ কনফারেন্স (বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী)

ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শেষ হল গত ১২ তারিখ সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় (৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি) চারদিন ব্যাপী কনফারেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী’ সিনেট ভবনে।

‘মেন্টাল হেলথ গ্যাপ ইন এশিয়ান কান্ট্রিজ : স্কোপ অব সিবিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়েই ষষ্ঠ এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) কনফারেন্স শুরু হয়েছিল।

৯ তারিখ শুক্রবার ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

১০ই ফেব্রুয়ারি শনিবার এ সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, “দেশে এতো বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, শিশু-কিশোররা পর্যন্ত এত বেশি কম্পিউটার ট্যাব ব্যবহার করছে; এখান থেকে অনেক সময় তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।”

১১ তারিখ রোববার ঢাবি সিনেট ভবনে সিবিটির কনফারেন্সের কর্মসূচিতে রয়েছিল— ট্রমা, সিবিটি, সাইকিয়াট্রি প্রাকটিসেসসহ সাইকোসিস, নিউরো সাইকোলজি, হেলথ সাইকোলজি, সাইকোথেরাপির বিভিন্ন , কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজ, কম্পিউটারাইজড সিবিটি, শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা উপস্থাপন ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। কনফারেন্সের সেই দিনে উপস্থাপক হিসেবে কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ তাদের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ফলাফল তুলে ধরবেন।

গত সোমবার অর্থাৎ ১২ ই ফেব্রুয়ারি সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ আরোও কয়েকটি কর্মশালা।
যুব-সমাজকে মাদক থেকে রক্ষায় মনোবিজ্ঞানীদের করণীয় ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির সুস্থতায় কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। কনফারেন্সে মনোবিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং সহৃদয় ব্যক্তিত্ব ধারণ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা।

৬ষ্ঠ সিবিটি কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনসহ মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন কৌশল কনফারেন্স এ অংশগ্রহণকারী বক্তব্যে উঠে আসে।

যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল নিউরো সাইকোলজিস্ট ডেভিড এ কুইন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কিথ ডবসন, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াং হেউ কুন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তিয়ান পো ওয়েই, এশিয়ান সিবিটি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়ুং-হাই কুন, কানাডা প্রবাসী চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী সায়েদা নাফিসা বানু, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি ও কনফান্সের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখসহ আর অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

কনফারেন্সে দেশ-বিদেশের প্রায় ৯০টি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হবে। উঠে আসবে গুরত্বপূর্ণ অজানা তথ্য। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তুলনামূলক চিত্র উঠে আসে।

এই কনফারেন্সটি আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশ ক্লিনিকেল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস), নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট (এনপিইউ) ও এশিয়ান কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি এসোসিয়েশনের (এসিবিটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে কনফারেন্স এর সর্বশেষ অভিব্যপ্তি প্রকাশ করেন,

“সব কটা জানালা খুলে দাও না:
আজ যেন আমাদের বিজয়েরই দিন। এই বিজয় শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির নয়। এটি বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের বিশ্বজয়।

গত চার দিনের কর্মযজ্ঞ এশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ এবং অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসা ডেলিগেটদের কাছে প্রমান করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা কতটা শক্তিশালী। গত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা নিয়মিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করে আসছি এবং সবগুলোই ভীষনভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে এবারের কনফারেন্সের ব্যাপারটা বেশ ভিন্ন।

চমৎকার সব ‘কী-নোট’, ওয়ার্কশপ আর সিম্পোজিয়ামে পরিপূর্ন ছিল চারটি দিন। দেশের মনোবিজ্ঞানীরা বিদেশীদের সাথে সমানতালে গবেষনা পত্র উপস্থাপন করেছে, ‘কী-নোট’ দিয়েছে, আর সিম্পোজিয়াম এবং আন্তর্জাতিক মানের ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা যখন আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষনার বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশংসা করছিল ওদের শরীরের ভঙ্গীই বলে দিচ্ছিল যে তারা বানিয়ে বলছে না।

এটি কখনোই সম্ভব হত না যদি সারা বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা আমাদের সঙ্গে না থাকতেন। আট তারিখের অমন থমথমে পরিস্থিতির চাপে যদিও আমাদের ব্যাবস্থাপনায় বেশ কিছুটা নেতিবাচক ছাপ পড়েছিল, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসার শক্তিতে এই ছাপ ওনাদের কারো মনেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের চকচকে চোখে যে স্বপ্নের ছোয়া দেখেছি – মনে হচ্ছিল এই স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

ক্লান্তিহীন স্বেচ্ছা-সেবকের দলের দিকে যতবারই তাকিয়েছি – একগুচ্ছ হাসি ছুটে এসেছে। ঢাকা কলেজ, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাও কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসের এই মাইলফলকটি অর্জনের জন্য।
এই বিজয়ে আমাদের সেনাপতি ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক শাহানুর হোসেন আর পদাতিক ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ ২২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা – পাশাপাশি তাদের পুর্বসুরী ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও তাদের সাথে হেটে গেছে পুরোটা পথ। ওরা প্রমান করেছে ভাল কাজের জন্য ভাল ইচ্ছা আর পরিশ্রমই যথেষ্ট আর যদি সাথে থাকে জহির ভাই আর মাহমুদ স্যারের মত নির্মোহ নেতৃত্ব তাহলে যে কোন অসম্ভবকেই সম্ভব করা যায়।

অনেক গুলো নাম নতুন করে মনে করিয়ে দিল তাদের উপস্থিতি কতটা জরুরী, অনেকগুলো নতুন নাম হৃদয়ে গাঁথা হয়ে থাকবে, আর অনেকগুলো নাম না জানা মানুষের মুখচ্ছবি মনের মধ্যে আকা হয়ে থাকবে। হয়তো কখনোই বলা হবে না তাদের ভালবাসা, তাদের অবদান কত দারুনভাবে অনুভব করছি।

মীর ফখরুজ্জামান স্যারকে দেখিনি, রোকেয়া ম্যাডাম আর আনিসুর রাহমান স্যারকে খুব কাছ থেকে জেনেছি। এ কয়েকদিন অনেক বার মনে হয়েছে তাদের কথা। আজ না হয় জানালা গুলো খোলাই থাক ওঁদের জন্যে।

দুইদিনব্যাপী কনফারেন্সে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা, আমাদের সময়, রেডিও স্বাধীন, জাগোনিউজ ২৪ ডটকম। ইয়ুথ এনগেজমেন্ট পার্টনার হিসেবে রয়েছে ডেইলি স্টার ইয়ুথ ফোরাম। (অপরাজিতা:http://oporajitabd.com)

 

ভালোবাসার জাদুকরী মহিমা

আজহারুল ইসলাম


বিবাহিতরা ভালো সৈনিক হতে পারে না, এই অজুহাতে ২৭০ খৃস্টাব্দের দিকে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তরুণ-তরুণীদের বিবাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ধর্মযাজক ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসাহিত ও বিয়ের ব্যবস্থা করতে থাকেন। খবর পেয়ে সম্রাট তাঁকে কারারুদ্ধ করেন। সম্রাট অবশ্য ভ্যালেন্টাইনের প্রত্যয় ও প্রেমের প্রতি অবিচল বিশ্বাসে মোহিত হয়ে শর্তসাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শর্ত হিসেবে তাঁকে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে রোমান দেবতার প্রতি অনুরক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। ভ্যালেন্টাইন রাজি হননি বরং সম্রাটকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান। পরিণতিতে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপনের রেওয়াজ চালু হয়েছে।

অবশ্য, এই কাহিনী তথা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস, একে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপি ব্যবসা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপোযোগিতা নিয়ে রয়েছে ম্যালা বিতর্ক। আমরা সেদিকে যাব না। কীভাবে এলো, কারা আনলো ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও যে বিষয়কে কেন্দ্র করে এই দিবস সেই ‘ভালোবাসা’ কিন্তু সার্বজনিন। স্থান, কাল, পাত্র বা জাত-গোষ্ঠীতে বিভাজন বা পার্থক্য থাকলেও ভালোবাসা উপলব্ধি বা আকাঙ্ক্ষায় কারো আগ্রহের কমতি নেই। সেই ভালোবাসা নিয়েই আজকের আলোচনা।

‘ভালোবাসা কাকে বলে?’ সম্ভবত অতি পুরাতন কিন্তু সবসময়ের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় প্রশ্ন। যুগে যুগে হাজারো কবি, সাহিত্যক, দার্শনিক আর অধুনাকালে বিজ্ঞান সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে কোনও সন্দেহ নেই। কোন সাধারণ বা সরল সূত্র দিয়ে ভালোবাসাকে প্রকাশ করা খুবই দুরহ। ভালোবাসার অনুভুতি অনেক বেশি ব্যাক্তি-আপেক্ষিক। এই অনুভুতির সূত্র ধরে বলা যায়, ভালোবাসা একটা আবেগ যেটা ভীষণভাবে অনুভুত হয়। যেমনটা হয়, ঘৃণার বেলায়, দুঃখের সময় অথবা রাগান্বিত হলে। তীব্র অপছন্দ থেকে ঘৃণা তৈরি হয়। আমরা অপছন্দের জিনিস বা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। সেটার কোন মঙ্গল চাই না। বরঞ্চ ধ্বংস হলেই ভালো। অন্যদিকে, ভালোবাসা হলো কাছে টানার, একত্রিত হওয়ার, বিকশিত হওয়ার আবেগ। এই আবেগ সামান্য কিছু সময় থেকে অনেক বছরব্যাপি উপলুব্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান বলছে এগুলো আমাদের প্রাথমিক আবেগ যা সবার মাঝে থাকে। মস্তিস্কে লিম্বিক সিস্টেম নামে একগুচ্ছ ব্রেইন স্ট্রাকচার রয়েছে যা মুলত এই আবেগগুলোর জন্য দায়ী। আর আবেগগুলো দায়ী সৃষ্টি অথবা ধ্বংসে।

অন্য মানুষের অন্দরমহলে কী ঘটছে, কী চাচ্ছে সে অবচেতনে সেটা বুঝতে সাহায্য করে আমাদের আবেগ। আমরা অন্যের অনুভুতি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারি এবং সে অনুসারে নিজের চিন্তা, অনুভুতি, অথবা কার্যক্রম সাজিয়ে ফেলি। এই বিষয়টাকে শারীরবিদরা নাম দিয়েছেন ‘লিম্বিক অনুরণন’ (Limbic Reasonace)। অবাচনিকভাবে এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে পরস্পরের আবেগ অনুভুতিগুলো বিনিময় হয়ে খাপ খেয়ে যায়। এই আবেগীয় খাপ খাওয়াটাই আসলে ভালোবাসা। আর এই জন্যই বুঝি দু’জন দু’জনের সান্নিধ্য বা তাকিয়ে থাকার মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকা চরমভাবে পুলকিত হন। চোখ যে মনের সদর দরজা। এভাবে একটা গভীর, আন্ত-ব্যাক্তিক সম্পর্ক তৈরি হয়, অনেকটা অবচেতনে। অন্যের আবেগীয় চাহিদাগুলো বোঝার এবং সেই অনুসারে আবেগীয় প্রতি-উত্তর দেয়ার ক্ষমতার মধ্যে একটা ছান্দিক মিলন ভালোবাসার বন্ধন তৈরি করে। সেটা হতে পারে মায়ের সাথে শিশুর অথবা প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে।

ভালোবাসার ধরনের মধ্যেও ভিন্নতা থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা একটা সাধারণ সূত্র দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেখানে পরিপূর্ণ ভালোবাসাকে দেখা হচ্ছে চরম আবেগ, প্রতিশ্রুতি আর পারস্পরিক অন্তরঙ্গের সুষম মিশ্রণ হিসেবে। অনেকটা সমবাহু ত্রিভুজের তিন বাহুর মতো। যদি, তিনটা বাহু সমান না হয়? তাহলে, ভালোবাসা হবে তবে অসম্পূর্ণ। যেমন, শুধু অন্তরঙ্গ থাকলে সেটাকে পছন্দ বলা যায়। আবার ভালোবাসায় বিমুগ্ধদের মধ্যে শুধু তীব্র আবেগ থাকে, প্রতিশ্রুতি, অন্তরঙ্গের বালাই নেই।

একজন মানুষ ভালোবাসায় পড়লে বা ভালোবাসা পেলে কী অনুভব করে? লেখক-নির্মাতারা সুচারুভাবে সেই চিত্রায়ন করার প্রয়াস চালিয়েছেন বা যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। আমরা দেখেছি, প্রেমে পড়লে মানুষকে একটু বোকা অথবা সাহসী হতে। অন্যসব চিন্তা বা কাজকর্ম ফেলে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। একটা অদৃশ্য কিন্তু স্পস্টত অনুমেয় ঘোরের মধ্যে থাকতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা ব্রেইন এর পরীক্ষা (এফএমআরআই) করে দেখেছেন এ সময় প্রেমিক-প্রেমিকার মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল এবং কডেট অংশ উদ্দীপ্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিন নামক এক রাসয়ায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। অবশ্য অন্য কোনও কারণেও শরীরে ডোপামিন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন, ড্রাগ। আবার এই ঘোর দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। হয়তোবা, এই ঘোর রূপান্তরিত হয় সচেতনতায়, সামাজিকতায়।

পরিপূর্ণ ভালোবাসায় মগ্ন একজন মানুষের দেহ ও মন দুটোতেই ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে তার ভেতরের আবেগ অনুভূতিগুলোর সাক্ষাৎ পায় অন্যের ভালোবাসার মাধ্যমে। বুঝতে পারে ‘আমার আমি’কে। নান্দনিক সৌন্দর্য তাকে যেন শীত কালে গরম চাদরের মতো মুড়িয়ে রাখে। সঙ্গত কারণেই অন্য নেতিবাচক আবেগগুলো দুর্বল হতে থাকে। রাগ, দুঃখ, ঘৃণা, ক্রোধ ব্যপকভাবে হ্রাস পায়। ফলে, নিজের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। নিজেকে মুল্যবান ভাবতে পারে, নিজের গুরুত্ব বুঝতে পারে। একবুক সাহস নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে থাকে। এতদিন শুধু অন্যদের রোল মডেল ভাবতো, এখন নিজেকেও তাদের মতো ভাবতে পারে।

পরিপূর্ণ এই ভালোবাসার জন্য উভয়ের মধ্যে সমানভাবে আবেগীয় অনুরণন (Emotional Reasonance) হওয়া আবশ্যক। তার উপস্থিতি, স্পর্শ, চোখ, ঘ্রাণ যদি আমাকে মোহিত না করে, পুলকিত না করে, তাহলে সেই ভালোবাসায় সম্পূর্ণতা আসে না। অনেককে দেখা যায়, ভালোবাসার জন্য বাজারের লিস্টের মতো বিশাল লম্বা একটা ক্রাইটেরিয়ার ফর্দ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ হতে হবে, লাগবে অমুক, থাকতে হবে তমুক। প্রকৃত ভালোবাসায় এসবেই কী মুখ্য? এসব শর্তযুক্ত ভালোবাসায় স্বস্তি থাকে না, থাকে শংকা। যদি শর্ত পূরণ না হয়? নিজেকে না জেনে, নিজের মনের কথা না শুনে, অন্যের আবেগ না বুঝে, শুধু ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ভালোবাসার জন্য হুরুহুরি করলে কোন লাভ হয় না। এতে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভালোবাসার যাদুকরী মহিমায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ মানুষের জন্য একটি অপরিসীম পাওয়া। বিবর্তনবাদের মতে নিজের প্রজাতি রক্ষার তাগিদেই মানুষ ভালোবাসে, প্রণয় করে। কারণ যাই-ই হোক না কেন, ভালোবাসার অকৃত্রিম স্বাদ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসাকে নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সুযোগ করে দিবে, সবার মনে সঞ্চার করবে প্রেম, এই প্রত্যাশা রইল।

সহকারি অধ্যাপক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সুত্র: মনোযোগী মন।

 

মাতৃ কথন ১

ফারিনা মাহমুদ


সন্তানকে যেমন একজন মা জন্ম দেয়, সন্তানও তেমনি একজন “মা” এর জন্ম দেয়। দুটোকেই আমার সমান আনন্দের আর সমান বিষ্ময়ের মনে হয়।

আল্লাহ !! আপনার বাচ্চা এখনো ফিডারে দুধ খায়? আমারটা তো সেই কবে থেকে মুরগির রান নিজে চিবিয়ে খায়, আর কিছুদিনের মধ্যে গরুর রানও পেরে যাবে ইনশাল্লাহ।

অথবা,
এখনো মাত্র আড়াইটা দাঁত উঠেছে ? আমার বাবুর তো আক্কেল দাঁতও উঠলো বলে।

মা মাত্রই এই কথাগুলোর সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ফলাফল, নিজে হীনমন্যতায় ভোগা, এক বাচ্চার সাথে আরেক বাচ্চার তুলনা করে
“আমি কি ভুল করলাম”
জাতীয় মানসিক চাপের মধ্যে ডিপ ফ্রাই হওয়া ।

বাস্তব হলো, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে:
নো টু চাইল্ড আর সেইম । একেকটা বাচ্চা একেক বয়সে একেক রকম ভাবে বড় হয়, শরীর ও মন দুই দিক থেকেই।

যেটা লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো, নির্দিষ্ট বয়স সীমার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোনের কতোটা কাছাকাছি বা দুরে আপনার বাচ্চা এবং এই সংক্রান্ত সঠিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শ আপনি সঠিক মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন কিনা।

অনাবশ্যক মানুষজনের অকারণ পাকনামি কানে ঢুকলে তা কান পর্যন্তই থাকতে দিন, মাথায় ঢুকতে দেবেন না । আমি তো আমার বাচ্চাকে কোনদিন সন্ধ্যায় গোসল করাইনি অথবা আমি তো ৩ বছর বয়স পর্যন্ত খাবার ব্লেন্ড করে খাইয়েছি- এইসব থিওরি আসলে যার যার নিজের লাইফ স্টাইলের সাথে যায়।

পৃথিবীর হাজার হাজার মা বাচ্চাকে মাইনাস তাপমাত্রার মধ্যেও রাতে গোসল দিয়ে ঘুম পাড়ায় (আমি নিজেও তাই করি) অথবা ছয় মাস বয়স থেকে ফিঙ্গার ফুড দেয়া শুরু করে (আমি দিতে পারি নাই কারন আমার বাচ্চা চোক করতো এবং আমি ভয় পেতাম ওর গলায় খাবার আটকে গেলে) । কোনটাতেই মহাভারত রামায়ন অশুদ্ধ হয়ে যায় নাই।

কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ব্লেন্ড খাবে না আবার কোনো বাচ্চাই সারাজীবন ঘড়ি ধরে দুপুর ১২ টায় গোসল করবে না ।
কাজেই – বাচ্চা বড় করার তরিকায় কোনো রাইট এন্ড রং নাই।

শুনতে হবে সবারটাই কিন্তু মানতে হবে বাস্তবে নিজের জীবনের সাথে যা ভালো খাপ খায়। ঠিক সেটায়।

 

ভালবাসা দিবসে ‘বন্ধু নির্বাচন’ (কাছে আসার গল্প)

রায়হান শরীফ


লিমা কলেজে এসেই আজ শরীফকে খুঁজছে। না,আজ শুধু নয় প্রতিদিনই তো খোঁজে। তবে আজ খোঁজার কারণটা আলাদা, অনেকটা পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজছে।

সহপাঠি একজন বললো তাকে বটগাছের তলায় একা বসে থাকতে দেখেছে। হু একাই তো বসে থাকবে। তার কি অন্য কোনো বন্ধু আছে যে তার সাথে ঘুরবে?

আনমনে এসব ভাবছে, লিমা?

আসসালামু আলাইকুম..
শরীফ চমকে উঠেছে লিমাকে দেখে,,,,
অমাবস্যার রাতে যদি চাঁদ দেখত হয়তো এতটা চমকে উঠত না শরীফ। লিমাকে আজ প্রথম দেখছে তা ত নয়! লিমার আচরণ ও গায়ে পরা জামা কাপড়ের ধরণ দেখেই শরীফ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

যে মেয়ে জিন্সপ্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট ছাড়া কখনো জামা পড়েনি। তার আজ এত পরিবর্তন?

আজ লিমা অতি সাধারণ একটা জামা পড়েছে। ওড়না দিয়ে মুখের চারিপাশ ডেকে রেখেছে। তবে মুখটাই শুধু খোলা। আবার মুখে সালাম? জীবনে কখনো তার মা-বাবাকে সালাম দিয়েছে বলে শরীফের বিশ্বাস হয় না। শরীফ এতক্ষণ পাথরের মত তাকিয়েই ছিল। লিমা তার বাহুতে মৃদু আঘাত করায় তার ঘোর কাটলো।

কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমাকে কি নতুন দেখছিস নাকি? গত তিন বছর তো একইসাথে ক্লাস করছি কখনো চোখে চোখ রেখে কথা বলিস না
আজ কি হয়েছে?

নাহ্! কিছু না। বস। কেমন আছিস বলল, শরীফ বললো!
লিমা বলল, আমি তোর গায়ে একটু হেলান দিয়ে বসতে পারি?

অন্যদিন হলে শরীফ না বলে পাঁচ হাত দূরে সরে যেত। কিন্তু আজ কেন জানি লিমাকে দেখতেই মায়া হচ্ছে। লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড বেশি অসহায় লাগছে। লিমার মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে, মুখে কিছুই বললো না শরীফ, শুধু হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে গেল!

একটু পরে শরীফ জিজ্ঞেস করলো তুই এই দুইদিন কোথায় ছিলি? তোকে দুইদিনব্যাপী ক্যাম্পসে না দেখে কালকে তোর মেসের ওই দিকে গিয়েছিলাম। তোদের মেসের দিকে তো কখনো যায়নি। আর যাবই বা কেন? ছাত্রীদের মেসেতো যাওয়া নিষেধ।

তাহু (সহপাঠি তাহমিনা) বললো তুই ঘুমাচ্ছিস, তাই চলে আসলাম।
আর তোর ফোনটাও বন্ধ। কেন ছিল?

১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় যে ফোন দিলি তার পর তো তোর কোন খবর নেই।
প্রতিদিন তো সকাল ৭ টা বাজতে না বাজতেই ফোন না ধরা পর্যন্ত দিতেই থাকিস। তোর জ্বালায় ফজরের পর সকালে একটু ঘুমাতে পারি না। অবশ্যই এই দুই দিন শান্তিতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। তবে তোর কলকে খুব মিস করেছি! ওই দিন পার্টিতে গিয়েছিস তাই না?

=এই লিমা, আমার কথা তোর কানে যায় না!

আর রায়হান(সহপাঠি) তাকেও ওই দিনের পর এই দুই দিন দেখছি না। বলতে পারিস ও কোথায়? তুই তো বেশির ভাগ সময় ওর সাথেই থাকিস!

=কিরে কথা কস না কেন! লিমা এতক্ষণ কিছু শুনছে নাকি আবার চোখে ঘুম চলে আসছে ওর।

লিমার, রায়হানের নাম শোনা মাত্র বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে মোচড় দিয়ে উঠল। তাৎক্ষণিক শরীফের গা থেকে মাথাটা সরিয়ে নিল।

লিমার মুখটা হঠাৎ কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে গেল, চাঁদের মত মুখটা কেমন অন্ধকারে চেয়ে গেল। চোখ কেমন ছল ছল করে উঠলো, এই বুঝি পানি গড়িয়ে পড়ল কিছুই বলছে না লিমা।

মনে পড়লো ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার কথা। ভালোবাসা দিবসে পার্টিতে গিয়ে ছিলো রায়হানের সাথে।

আনন্দে মেতে উঠেছিলো লিমা,রায়হান সহ হাজারো তরুণ-তরুণী, কিছু ড্রিংক্স না হলে তো পার্টিতে আবার আনন্দ মাটি।

রায়হান-লিমা পার্টি শেষে বাসায় ফিরতে বের হল।

লিমার মাথাটা কেমন যেন ধরেছে বেশ।

রায়হানকে বলতেই সে বললো, চল আমার বাসায়, তা ছাড়া এত রাতে তো তোর মেসের গেটও খুলবে না।

লিমারও মাথা ব্যাথার জন্য বেশি কিছু না বলে রায়হানের গাড়িতে সে উঠে বসল রায়হান পাশে। মাথার ব্যাথাটা এতই বেশি করছে যে, বাসায় কে আছে কি নাই তা দেখার সময়ও ছিল না লিমার।

রায়হান রুম দেখিয়ে দিয়ে অন্য রুমে যেতেই লিমা ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল হল, লিমা তার বিবস্ত্র শরীরটা দেখে বুঝতে বাকী রইলো না ওর কাল রাতে কি ঘটে ছিল তার সাথে? কেনই বা কাল রাতে লিমার মাথা ব্যাথা করলো? সেতো এই প্রথম ড্রিংক্স নেয়নি! কত হাজার বার সে ড্রিংক্স নিয়েছে নিজেরও হিসেব নেই। কাল রাতে রায়হান যে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে তা এখন পরিষ্কার।

লিমা রুম থেকে বেরিয়ে সামনের রুমে এসে এক মহিলার দেখতে পেল। এর আগে কখনো আসেনি তাই কাউকে চিনে না সে।

লিমা বললো, আপনি রায়হানের কে?
মহিলাটি বললো, আমি রায়হানের মা।

সকালে উঠেই কোথায় যেন গেল বললো কি যেন কাজ আছে কয়দিন পর ফিরবে বন্ধুদের সাথে গেল।

আসো নাস্তা করে নাও!!
লিমা বললো না,আমারো কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

অন্য একদিন, এই বলেই চলে আসলো,
রুমে এসে কত যে কেঁদেছে লিমা। আর ভেবেছে বন্ধুত্বের দাম এইভাবেই দিলো রায়হান? আমার সরলতা নিয়ে খেলা করেছে রায়হান। কেন?

বিষ খেতে চেয়েছিলো লিমা, গলায় ফাঁসিও দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি।সবসময় হাসিখুশি থাকা মেয়েগুলো তা পারে না হয়ত!

=কিরে কথা বলিসনা কেন??

শরীফের কথায় লিমার স্বরণ এলো সে শরীফের পাশে বসে আছে, না কিছুই বললোনা সে।
সে ভাবছে তার সাথে যা ঘটেছে তাকি তার “নিয়তি না পাপের ফল”?

=শরীফের দিকে না তাকিয়ে শুধু বললো, চল!! ভালো লাগছে না আজ। তোর হাতটা ধরে হাটতে পারি?

দুই জনে উঠে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে লাগলো হাতে হাত রেখে। লিমার মনে হচ্ছে এটাই বিশ্বাসের হাত, বন্ধুত্বের হাত এটাই। ভুল করেছি, বড্ড বেশি ভুল করেছি জীবনে। বন্ধু নির্বাচনে বড় বেশি ভুল হয়ে গেছে!

যে ভুলের জন্য কোনো দিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না লিমা।

 

হলুদিয়া হাট

আখতারুজ্জামান সেলিম


সে যে আমায় খবর দিলো
আজকে অনেক ফুল ফুটেছে;
বটতলা আর বই মেলাতে
হলুদিয়া হাট বসেছে।
কুঞ্জ বনের কোকিলেরা
ব্যাকুল স্বরে ডাক দিয়াছে।
শাহাবাগের পুষ্পদামে
গাদা ফুলের দর বেড়েছে।
কিন্তু আমি ব্যস্ত অনেক
হয়নি দেখা দিনের আলো
বন্দী পাখি আপন নীড়ে
তা দিতেছে পরের ডিমে।
আমি নাহয় একাই থাকি
বসন্তের এই প্রথম দিনে;
রং এর বাহার সবার মনে
শয্যা ঢাকুক গোলাপ ফুলে।

 

অন্যরকম বসন্ত বরণ

গাজী আনোয়ার শাহ্


আমার বসন্ত আছে, কৃষ্ণচূড়া আর দক্ষিণের সমীরণও আছে।
হলুদ বা লাল পাঞ্জাবী নেই,
বাদামি রঙের হালকা প্রচ্ছদে বই আছে। যেটি স্বর্গের একটি টুকরো বলে মনে হয়।

এই পৃথিবী ভালোবাসা আর ভালো লাগার প্রাণ কেন্দ্র তখনি হবে যখন মানুষ বুঝতে শিখবে আমরা মানুষ!
আমাদের নিজস্বতা আছে, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে।

আজকের হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের কোমলতা, হৃদয়ের অনুভব। তাই সে হারিয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পেতে আমাদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিবাস হওয়া চাই লাইব্রেরী।

যেখানে হাজারো লাল কৃষ্ণচূড়া, লাল গোলাপ, হাসনাহেনা, রজনীগন্ধারা রয়েছে। সে গোলাপের নাম বই”।

বই” যে ফুল কখনো তার সৌরভ হারায় না,
লাইব্রেরী ঐ বসন্ত যেখানে শীতের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
এখানে সুরের মোহনায় হরিয়ে যাওয়া যায়।
বসন্ত তার রাজসম্মান এখানেই পাবে।

হীরাতে যেমন কোন খাদ থাকে না, তেমনি এই বসন্তে কোন খাদ নেই। ভালোবাসার অতিশয্যটা এখানেই যৌবন পায়।
সব বিষণ্নতাকে অবাঞ্ছিত করে বসন্তের সুখ দেয় পাঠক মনে।
এটি আমি নির্বিবাদে মেনে নেই।
এটি একটি গোলাপী স্বপ্ন।

জীবনের বিক্ষুদ্ধ ঢেউগুলোর আঘাতে একেবারে অবিচলিত হওয়া মানুষটি যখন পাশে কাউকে পায় না একটি উষ্ণ প্রণয়ের অনুভূতি দিবে বলে,
তখন তাকে আমি চির বসন্ত গ্রন্থাগারে আমন্ত্রণ জানাবো।
তার রুদ্ধ দরজাটা সহসা খুলে যাবে। বেশভূষায় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে।

আজ ফুসকার দোকান বা রিক্সায় রাইডিং হবে না,
হবে সব দিনকার মত রিডিং।
বসন্তকে আমি,
আমি বসন্তকে আলিঙ্গন করে নিয়েছি সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে।

জীবন হোক সুন্দর সুশোভিত মনোহর, মনরোমা।
ভালো আর সুন্দরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ুক দক্ষীণা সমিরণে।
প্রতিটি দিন যেন রাঙ্গা থাকে ভালোদের আনাগোনায়।

বিদায়বেলায় লিখে দিবো কেবল……
তোমার অর্থ সম্পদ, দালান-ইমারত আর ঐশ্বর্যের ঈর্ষা করি না আমি,
প্রায়শই নজরুল ফররুখ স্বপ্নে দর্শন দেয় আমায় জানো না তুমি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
আরবি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ

 

ভলান্টিয়ারের চোখে ACBTC কনফারেন্স…

সুমাইয়া তাসনিম


এই শহরে কাকডাকা ভোর আসে কিনা তাও জানার সময় নেই, এমন ছিল ক’টা দিন। কেমন যেন চাপ অনুভব করি ভেতরে.. এর্লাম বাজার আগে ঘুম ভেঙ্গে যায়। যন্ত্রের মত উঠে গিয়ে সময় গুনে ফ্রেশ হয়ে রেডি হওয়া আর বেরিয়ে পড়ার জীবন। ভীষণ জ্যামে নাকাল হতে ভাল্লাগেনা আর। মিরপুরে এই জ্যামের মহামারী লেগে থাকবে অনন্তকাল..

দীর্ঘ জ্যাম পেরিয়ে ছোট্ট মিটিং শেষে ফুড বুথে। এই চারদিনে কতরকম মানুষ দেখলাম। সবাই সাইকোলজির সাথে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত। কাউকে নামে চিনি, কাউকে চেহারায়। বিখ্যাত মানুষজন যারা আছেন তারাও কিছুক্ষণের জন্য এসে ঢুঁ মেরে যান। ২য় দিন এলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তারপর দিন মোহিত কামাল, শেষদিন মেহতাব খানম। কলেজের ম্যামরা এসে বেশ খুশি। নিজেদের ডিপার্টমেন্টের মেয়েরা কাজ করছে, কিছু লাগলে এগিয়ে আসছে দেখেই তাঁরা আনন্দিত। হাসিনা ম্যামকে এগিয়ে গিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করতেই কাধ চাপড়ে গাল টিপে দিলেন।
ফুডবুথের কাজটা একরকম মজার আবার স্ট্রেসফুলও বটে। খাবার নিয়ে মানুষের কতরকম মন্তব্য, পছন্দ অপছন্দ.. সেই এক মজার ব্যাপার। কফি নিয়েও মানুষের মধ্যে দারুণ উত্তেজনা। কি জানি, আমার চা-কফির নেশা নেই বলেই হয়ত আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে। চারদিনে হাজারখানেক কফি টোকেন হাত দিয়ে গেলেও এক চুমুকের বেশি কফি আমার মুখে রুচলো না।
ফুডবুথের কাজ মানেই মাথা অলওয়েজ ঠাণ্ডা। কারণ খাবার হাতে পেতে দেরী হলেই মানুষের মাথা গরম। :/
সবার খাওয়া শেষ হলে পরে আসে আমাদের পালা। সবার ছোট বলে ঠিকই খেয়াল করে “এই পিচ্চিটার ক্ষুধা লাগছে ওরে আগে দে তাড়াতাড়ি ” ইত্যাদি বলে সিনিয়ররা জোর করে আমাকেই আগে বসিয়ে দেয় খেতে।
কাজের সুবাদে আগে পরে কতজনের সাথেই জানাশোনা হলো। গত চার বছরে সাইকোলজির ফিল্ড রিলেটেড যত মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে প্রায় সবার সাথেই দেখা হলো, কথা হলো। পরিচয় হলো নতুন অনেকের সাথেই। কথায় কথায় ধর্মেন্দ্রদা জানালেন কক্সবাজারে কাজের অভিজ্ঞতা। জানালেন কাজের ভালো সুযোগ আর ঝুঁকির কথাও। রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে APA টিম সেখানে যাচ্ছে আগামীকাল।
চবির বড় আপু জানালেন মন্ত্রনালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা। বললাম, সব সময় কাউন্সেলিং করা যায়? বললেন, “যখন মুড ভালো থাকেনা তখন ত ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে দিতেই হয়। তবে এটাও মাথায় থাকে, ক্লায়েন্টের দরকারটা জরুরী”।
কাজ করতে করতে বলছিলাম, কতজনকেই চিনি জানি অথচ নাম মনে রাখতে পারিনা বলে কথা বলা হয়না। সাকিব ভাই বললেন, “আমদের সেন্স অর্গান কয়টা?
-৫ টা।
-কোনো জিনিস মনে রাখার ক্ষেত্রে তুমি যত বেশি সংখ্যক সেন্স অর্গান ব্যবহার করবা তত বেশি বিষয়টা মনে থাকবে।

জিনিসটা বইতে পড়ে মাথায় না থাকলেও এখন মাথায় বেশ আছে।
রাহাত স্যারের কথা বলতে ভালো লাগে। চিনতে পেরেই যে কোমল হাসি হাসলেন দেখে ভালো লাগলো খুব।
শেষ দিনে এসে মোখলেস স্যার সিন্সিয়ারিটির ভূয়সী প্রশংসা করে ভাসিয়ে দিলেন আর জোবেদা ম্যাম দিলেন অনেক অনেক ধন্যবাদ। লজ্জায় এতটুকুন অবস্থা।
সেশন এ্যাটেন্ড করলাম কয়েকটাই। তবে কাজের ক্লান্তিতে খুব একটা মাথায় থাকেনি কিছু। তবে আরেকটু ঝালাই করে নিলে আশা করি অর্জন নিতান্তই কম নয়। শেষদিনে ডাঃ জাং হায়ে চই আর সাংইয়ং চইর ডে লং সেশন এ্যাটেন্ড করে স্কিমা থেরাপি অনেকটাই পরিষ্কার হওয়া গেলো। দেখলাম ট্রানজেকশনাল এ্যানালাইসিসের কিছু থিউরির সাথে অনেক সামঞ্জস্যতা। তবে এ্যাপ্রোচটা ভিন্ন। বাইদ্যাওয়ে, সাংইয়ং চই অসাধারণ বক্তা এবং অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার ক্ষমতা দারুণ। বলা বাহুল্য, তিনি অত্যন্ত সুদর্শন একজন কোরিয়ান প্রফেসর।
সাং হায়ে ক্বং এর সেল্ফ ইমেজারি কনসেপ্টটা বেশ ইউনিক মনে হলো। বাকেট লিস্টে থাকলো।

৩য় দিন যখন মালয়েশিয়ান প্রফেসর ফেরদৌস মুখতার ঘোষণা এবং একটা ডকুমেন্টারি দেখানোর মাধ্যমে নেক্সট CBT কনফারেন্সের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন, তখন হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ হলো। এমনকি চোখেই পানি এসে গেল। কাজ করতে বিরক্তি লাগে। মনে হয় কখন শেষ হবে, কখন অবসর হবো, কিন্তু শেষ হয়ে যাবার পর মনে হচ্ছে যেন ঈদের অপেক্ষায় ছিলাম, সেই ঈদ চলে গেল। খালি খালি লাগছে ভেতরে। মনে হচ্ছে আরো কত অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান নেওয়ার ছিল, নেওয়া হলো না..
শেষ তো হলো, এবার গালা নাইট। ৩য়দিন সন্ধ্যা থেকে আয়োজন ছিল টিএসসিতে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে সবাই মিলে ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে গিয়ে দেখি অসংখ্য ছবি টানানো হয়েছে। সবাই মহা উৎসাহে সেসব কিনে নিচ্ছে। কালচারাল নাইটে ভীষণ শব্দে গানবাজনা চলছে। সেসব সহ্য হলো না। মাঠে নেমে খালি পায়ে ফুলের পাশে হাঁটতেই বরং ভালো লাগছিলো। খাওয়া শেষে কিছু ছবি তোলাতুলি শেষে টিএসসির সামনে রুহির সাথে বসে রইলাম। রাত দশটায় শাড়ি পরে টিসসিতে বসে থাকা আর অদ্ভুত সব প্রলাপ বকার রাত আমার জীবনে আর আসবে কিনা জানিনা। জীবনটা এত ছোট…

শেষদিনে বিদায়ের পালা। রুইয়াহ জড়িয়ে ধরে বলল, ১০.২০ এর ট্রেনে চলে যাচ্ছি। আর দেখা হবে কিনা জানিনা।
আড্ডা দিতে দিতে হাঁটতে হাঁটতে শিমু হঠাৎ বলল, সুমাইয়ারে একটা হাগ দিই। তারপর জড়িয়ে ধরে বলল, ভুলটুল করলে মাফ করে দিস। আমি খুব অবাক হলাম।
তারপর হেসে ফেললাম। এই মেয়ে এমনই আউলা। পথে যেতে যেতে রুহিকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মানুষটা কেমন নিজের মত করে বলতো! সে বেচারি যেন লজ্জা পেলো! বললো, তুই সব সময় সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলিস। তারপর বলল, একটু মুডিও আছিস। হাহাহা..
শাহবাগের ফুল দেখতে দেখতে বাস ধরতে যাচ্ছিলাম দু’জনে। এত এত ফুল এসেছে কাল পরশুর চাহিদা মেটাতে… দেখলাম টিউলিপ ফুলের মত সাদা রঙের ফুল। এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। অজস্র ফুলে ফুলে দোকান গুলো ভরে আছে।

ফিরতি পথে সিগনালে বসে জানালায় তাকাতেই দেখলাম একটা সাইকেল। হাল্কা গোলাপি রঙের সাইকেলের সামনের ঝুড়িতে রঙ মিলিয়ে কতগুলো গোলাপি প্লাস্টিকের ফুল। অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো দেখতে। লাগোয়া ঘড়ির দোকান পর্যন্ত দৃষ্টি প্রসারিত করতেই চোখে পড়লো ঘড়ি পছন্দ করতে থাকা গোলাপি টিশার্ট আর মাথায় গোলাপি ফুল লাগানো মেয়েটিকে। আমি সাইকেলের ছবি তুলছি দেখে আঢ়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি মনে মনে হাসলাম। কারো সাথে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে বৃষ্টির দিনে শহর ঘোরার চিন্তাটা বাদ দিয়ে নিজেই এমন একটা সাইকেল কিনে নিইনা কেন! আমার সাইকেলে ফুল থাকবে কিনা জানিনা, তবে একটা রঙিন উড়ন্ত বেলুন অবশ্যই বাধা থাকবে। একদিন এই শহর ছেড়ে হারিয়ে গেলে পলকা হাওয়ায় ভাসতে থাকা বেলুনটা আমায় সাহস দেবে…।

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-২

ফাতিমা খান


Stephen Covey এর লেখা ‘The 7 Habits of Highly Effective Families’ বইটা যখন পড়ি তখন তার প্রত্যেকটা কথা আমাকে যাদুর মত টানে। প্রায় ৩৮০ পাতার বইটার দু পাতা এগোই তো চার পাতা পিছিয়ে আবার পড়ি। ইচ্ছে করে পুরো বইটা এক চুমুকে গিলে ফেলি। অসাধারণ একটা বই!

নয় সন্তানের জনক এই লেখক বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে বাচ্চাদের সাথে কৌশলে “সুঅভ্যাস” গুলো গড়ে তোলার সহজ পথ বলে দিয়েছেন।

লেখকের টিপস এন্ড ট্রিক্স আসলে যে কত কাজে লাগল তা বাস্তবে দেখলাম, আমার ছেলেটাকে যখন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফজর নামাজ পড়ে স্কুল যাওয়ার অভ্যাস করালাম। যদিও শীতকালে আমার ঘুমকাতুরে ছেলেটার জন্য কাজটা খুব সহজ ছিল না। ভেবেচিন্তে জাওয়াদের সাথে একটা চুক্তি করলাম। দুটো কাজের জন্য প্রতিদিন তার জন্য দুই রিয়াল বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু প্রতিদিন সে টাকা হাতে পাবে না। উইকেন্ডে পুরো সপ্তাহের সঞ্চয় তার হাতে আসবে সাথে থাকবে আরো ছয় রিয়াল বাড়তি। কিন্তু যদি সে দিনের টাকা দিনে নিয়ে নেয় তাহলে বাড়তি টাকাটা পাবেনা। প্রথম প্রথম কাজটা কঠিন ছিল কিন্তু এভাবে শুধু দুই সপ্তাহ…। তারপর থেকে ছেলের অভ্যাস হয়ে গেছে। ছুটির দিনেও তার ভোরবেলা গোসল আর নামাজ বাদ যায়না আলহামদুলিল্লাহ।

বোনাস হিসেবে আরেকটি ছোট অভ্যাসও কিন্তু তৈরী হয়ে গেল, তা হল টাকা “সঞ্চয়ের অভ্যাস”। প্রতিদিন তাকে দুই রিয়াল দেওয়া হলে সেদিনই সে হয়ত বিনা প্র‍য়োজনেই খরচ করে ফেলত, কিন্তু উইকেন্ডে অনেকগুলো টাকা একসাথে পাওয়ার পর আমি তাকে বলেছি ওর আর্ট বা পেইন্টিং এর জিনিসগুলো যেন সে ইচ্ছেমত কিনে নেয়। সঞ্চয়ের বা মিতব্যয়ীতার যে বীজটি আপনি এখন বুনে দিলেন তা কিন্তু থাকবে আজীবন।

প্রি-টিনেজারদের মাঝে একটু একটু করে “দায়িত্ববোধ” জাগিয়ে দেওয়া উচিত যা শুনতে বা বলতে খুব সহজ হলেও করাটা বেশ কঠিন। আমার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আমি পয়েন্ট কালেক্ট করার সিস্টেম চালু করেছি। যেমন যেকোন একটা কাজের জন্য ১০ পয়েন্ট করে পাবে। যদি ছোট ভাইকে কোন কাজে (যেমন হোময়ার্ক করা, খাওয়া, ড্রেস আপ ইত্যাদি) সাহায্য করে তাহলে আরো ১০ পয়েন্ট যোগ হবে। সপ্তাহ শেষে পয়েন্ট সব যোগ করা হবে, অতঃপর মিনি পার্টি বা ছোট উপহার দেওয়া হবে। তাদের উদ্যমও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে কখনো আবার মুডের উপর ও নির্ভর করে। সব দিন একইরকম হবেনা এটাই স্বাভাবিক।

দায়িত্বের শুরুটা হয় তাদের নিজেদেরকে দিয়েই। যেমন নিজের কাপড়, জুতা, বইখাতা, টেবিল চেয়ার গোছগাছ করা থেকে শুরু করে খাবার পর নিজের প্লেট গ্লাস টা ধুয়ে জায়গামত রেখে দেওয়া। সোজা কথায় “আত্ননির্ভরশীলতা” অভ্যাস করানো। একদিনে বা একবারে সব কাজ করতে না বলে একেক দিন এক একটা কাজের ট্রেনিং দেওয়া হলে ওরা কাজে আনন্দ ও বৈচিত্র খুঁজে পাবে।

আমি অবশ্য ওদের ছোটখাট চেষ্টাগুলোর জন্য মাঝে মাঝে “সারপ্রাইজ গিফট” দেই। এতে আগ্রহ বাড়ে। চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো পুরাপুরি ছেলেকে এই ব্যাপারে পারদর্শী করতে পারিনি।

আমরা বেশীরভাগ বাবা-মারা নিজেদের অজান্তে প্রায়ই একটা ভুল করি, যদিও আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ না। বাচ্চাদেরকে কোন কাজে অভ্যস্থ করতে বা আরো বেশী পারদর্শী করতে তার সমবয়সী বা পাড়া পড়শীদের মধ্যে কারো “উদাহরণ দিয়ে কথা” বলি। যেমন – অমুক দেখেছ কত ভাল রেজাল্ট করেছে অথবা দেখেছ অমুক বাবা মাকে কত সাহায্য করে ইত্যাদি। আবার কখনো অন্যদের সামনেই বাচ্চাকে তার ভুলের জন্য “তিরষ্কার করি”। এ ধরনের আচরণগুলো তাদের মন মস্তিষ্কে এত গভীর ক্ষত তৈরী করে যার প্রভাব সারা জীবন থেকে যায়।

প্রত্যেকটি বাচ্চা ইউনিক, আপন গুনাগুনে অদ্বিতীয়। সবাই তারা নিজেদের বাবা মায়ের কাছে ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ হতেই পছন্দ করে। তাই ওদের হতাশ হতে দিবেন না। রবিঠাকুরের ওই কবিতার লাইনটা মনে আছে তো ”খোকা বলেই ভালবাসি, ভাল বলেই নয়”! (চলবে)

লেখিকা কর্মরত আছেন: হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ভালো বাবা মা হতে হলে

ফাতেমা শাহরিন


সন্তানদের লালনপালন করা অত্যন্ত কঠিন এবং একই সাথে আনন্দের কাজ। সুতরাং একথা না বললেই নয় যে, ভাল বাবা-মা হয়ে ওঠার বিষয়টি বিশাল পরিকল্পিত বিষয়।

ছোট্ট একটি ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখি আসুন, যা আমার ভাবনার দোর খুঁলতে সাহায্য করেছে।

“তখন আমার মেয়ে-দুটো অনেক ছোট। একটা বয়স থাকে না, বাচ্চারা কিউট করে অনেক অনেক অনেক কথা বলে। একদিন মেয়ে এসে বলে:

– বাপু তুমি কি করছো?
– লেখাপড়া করছি আম্মু।
– কেনো লেখাপড়া করছো?
– কারণ আমি ভালো বাবা হতে চাই।
– (হাসতে হাসতে) তুমি তো বাবা হয়েই গেছো।
– বাবা হতে লেখাপড়া করতে হয় না, তবে ভালো বাবা-মা হতে হলে কিছু পড়ালেখা করতে হয় আম্মু।
– ও, তুমি ভালো বাবা হতে চাও? তুমি তো ভালো বাবাই.. (মেয়ের হাসি চলতেই থাকে…)।” (শিবলী মেহদী)

অর্থাৎ সন্তানের বাবা-মা হতে হলে শিখতে হয়। পড়তে হয় ‘বই’। তা না হলে, মা-বাবা এবং বাচ্চা, উভয়ের জন্যই বিপদ। প্রথম মত, বাবা-মা একটি চলমান শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া। সন্তান জন্মের পর আশেপাশে থেকে অনেক রকম উপদেশ আসে। আজকে সেই সব উপদেশগুল কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং কতটুকু ক্ষতির কারণ হতে পারে?
আসুন দেখি…

সন্তানের কান্না

সন্তান কান্নাকাটি করলে বাচ্চাকে কোলে নিতে নিষেধ করা হয়। বলা হয় কোলে নেওয়া হলে তার অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে। শৃঙ্খলা শেখানোর পদ্ধতি হিসেবে কান্না করতে দিতে বলা হয়। কিন্তু সবসময় এই উপদেশটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধারণাটি ভুল এতে বাচ্চার জেদ আর বেড়ে যায় বরং কোলে নিলে বাচ্চা দ্রুত ঠান্ডা হয়। (উপদেশ-১)

ব্যথা পেলে শাসন

বাচ্চা কোন নিষেধ কাজ যেমন-দৌড়ানো।ফলে আঘাত প্রাপ্ত হলে বাবা-মা উল্টো ধমক দিয়ে থাকেন। কখন কখন গায়ে হাত উঠান। এটা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। (উপদেশ-২)

ঠাণ্ডার সময় সর্দি-কাঁশি বা জ্বর হয়

ঠান্ডার সময় শুধু নয় সব ঋতুতে সর্দি কাঁশি জ্বর হতে পারে। সব সময় বাবা-মার সচেতনতা দরকার। ঠান্ডার সময় জ্বর হবে এরূপ ধারণা ভুল। (উপদেশ -৩)

ফলের জুস বাচ্চার জন্য ভীষণ উপকারী

বাজারে বিক্রি হওয়া ফলের জুস গুলে প্রচুর সুগার থাকে। এছাড়া বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে আমসহ অন্যান্য ফলের ফ্লেভার মিশানো হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। বেশি মাত্রায় জুস খেলে বাচ্চার দাঁতের ক্ষতি হয়। (উপদেশ -৪)

ভ্যাকসিন

বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেবার ক্ষেত্রে ভুল উপদেশ পেতে পারেন। কোন কোন মানুষের ধারণা ভ্যাকসিন ভীষণ ক্ষতিকর যা অটিজমসহ নানান প্রকারে রোগের জন্য দায়ী। এমনকি একাধিক ধারণা দিয়ে প্রমাণ করাতে চাইতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ভুল নিশ্চিন্তে বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিন। (উপদেশ -৫)

সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com

 

প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং; পর্ব-১

ফাতিমা খান


চাইনিজ ব্যাম্বু ট্রি বা চীনা বাঁশ গাছের জন্মবৃত্তান্ত পড়ছিলাম। অন্যান্য হ
মত ওদেরও আলো, পানি, মাটি আর সারের প্রয়োজন হয়, দরকার হয় নিয়মিত পরিচর্যার। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে শুধু ছোট্ট চারা গাছটার জন্ম ছাড়া তাদের আর কোন বাড় বৃদ্ধি দেখা যায়না। পঞ্চম বছর হঠাতই বাঁশগাছগুলো বেড়ে লম্বায় প্রায় ৮০ ফুট হয়ে যায়, সময় লাগে শুধু ছ’সপ্তাহ!
ভাবা যায়?

এবার বলি আসল রহস্যটা কোথায়?

প্রথম চারটা বছর ছোট চারাটা না বাড়লেও নিয়মিত যত্ন আর খোরাক পেয়ে মাটির নিচে একটু একটু করে তার শেকড় মজবুত হয়, আশপাশে মাটি টাকে ইতিমধ্যে শক্ত করে সে আঁকড়ে ধরতে শিখে যায়। তারপর ঐ শক্ত শেকড়ের উপর মাত্র ছয় সপ্তাহে পই পই করে বেড়ে উঠে তার ধড়।

মূল যার শক্ত তাকে ঠেকায় সাধ্যি কার!

‘এগার শেষ করে বারো’তে পা দিয়েছে আমার জাওয়াদ। আমার এই প্রি-টিনেজার ছেলেটার সাথে আচরণগত নির্দেশনার জন্য আমি প্রায়ই প্যারেন্টিং নিয়ে স্টাডি করি। যেহেতু প্যারেন্টিং আর চাইল্ড সাইকোলজি বিষয়ে আমার ফ্যাসিনেশন একটু বেশী, সময় পেলেই এই দুই বিস্ময়কর জগতে প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও ঘুরে আসি।

আমার দুই ছেলে শুধু আমার সন্তানই না, রীতিমত তারা আমার সাধনা। ওদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমার প্যারেন্টিং এর ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়ছে প্রতিদিন।

টু বি অনেস্ট, আমার বড় ছেলেকে হ্যান্ডলিং করতে একটা সময় আমাকে বেশ বেগ পেতে হয়ে ছিল। একে তো প্রথম বাচ্চা, আর তারপর একটু জেদী ও একরোখাও ছিল ছেলেটা। সেই ছোট্টকালে যখন লেবুগাছে লেবু দেখে বলত “লেবু গাছে শুধু লেবুই হবে কেন, তাও আবার একই কালারেরই সব ?” সেই থেকে আজ অবধি তার যাবতীয় গুগলহারা, ভুগোল ছাড়া প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে নিজেও শিখেছি অনেক কিছু।

প্যারেন্টিং, রহস্যময় বটে, ওই চাইনিজ বাঁশগাছের মতই ! যত্নটাও একটু বেশী দরকার হয়।

“টিন এজ” যদিও খুব রেডমার্কড একটা সময় কিন্তু আদতে পনের বছর পর্যন্ত বাচ্চারা কিন্তু একরকম শিশুই থাকে। এসময় বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয় বাবা মায়ের সাথে “বন্ধুত্বপূর্ণ” সম্পর্ক।

রিসার্চারদের মতে এই বয়সী বাচ্চারা যখন বাবা মা কে বন্ধুর মত কাছে পায় তখন তারা অন্য কোন অজানা পথে পা বাড়ায় না। তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুধু শোনাই না বরং নিজেকে তার জায়গায় ভেবে এর ঠিকঠাক সাড়া দেয়াটা তাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরির অন্যতম ধাপ।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হল সন্তানের সাথে একটা যৌথ “ইমোশনাল ব্যাংক একাউন্ট” তৈরী করে নিন, যেখানে নেতিবাচক অনুভূতির কোন অবকাশই নেই। এখানে শুধু তার ভাল গুনাগুণ গুলো মূলধন করে তার সাথে আপনার লেনদেন হবে। ভুল সবাই করে, তাকে শুধরে দেয়ার সময় ঐ ইমোশনাল একাউন্টের সুন্দর কথাগুলো দিয়েই তাকে শুধরে দিন।

সন্তান এবং বাবা-মা দুজনে মিলে কিছু ক্লিয়ার কাট ‘নিয়মনীতি’ তৈরী করুন যেগুলো আপনার সন্তানকে তার ব্যবহারিক সীমারেখা বলে দেবে।

“বড়দের কথা শুনতেই হবে” না বলে ” আচ্ছা, আমরা না হয় একজন আরেকজনের মতামতগুলো মেনে নেব” কিংবা “এখন বাইরে যাবে না” না বলে “উইকেন্ডে না হয় আমরা একসাথে যাব” জাতীয় কথাগুলো বলা যেতে পারে। আমি নিশ্চিত আজ না হয় কাল ঠিক একই ধরনের কথা মানে আপনার কথার প্রতিধ্বনি আপনি ওদের কথায় শুনতে পাবেন। এখানে আরেকটা টিপস খুব কাজে আসবে। তা হল, আপনার সন্তানের ছোটকালের বা ইদানিং কালের কোন ভাল কাজের কথা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিবেন। ভাল কাজে তাকে উদ্দীপিত করতে এর চেয়ে বড় টনিক আর নেই।

প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন, তার নিজস্ব গুনে স্বকীয়। এই ‘স্বকীয়তা’ আল্লাহতায়ালার কাছ থেকেই সে সংগে করে নিয়ে আসে। জন্মলগ্ন থেকেই তাদের এই নিজস্বতা কিছু না কিছু প্রকাশ পায়।তাই আমার সন্তান আমার মতই হতে হবে বা তার ভবিষ্যৎ আমার ইচ্ছানুযায়ী তৈরি হবে এমনটা আশা না করাই ভাল। আমার সন্তান তার নিজের পছন্দ, যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যদি তার ক্যারিয়ার গড়ে তবে তা হবে অসাধারণ। আমি ডাক্তার বলেই যে আমার সন্তানকে ডাক্তার হতে হবে, এমনটা আবশ্যক নয়। তার অবশ্যই নিজের ‘ফ্রিডম_অফ_চয়েস’ আছে। এটা তার ব্যক্তিত্ব গঠনেও সহায়ক । আমার ছেলেদের ক্ষেত্রে তাদের নিজের জিনিসগুলো ওদেরকেই চয়েস করতে দেই, তবে ভালমন্দের একটা ধারণা আগেই দিয়ে দেই যেন ফাইনাল সিলেকশনে ভুল না হয়।

( চলবে)

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

ঘরের সৌন্দর্য রক্ষায় কিভাবে মশা তাড়াবেন

মশা এক প্রকারের ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রীমশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী এবং এমনকি কিছু মাছ, শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে হাজার রকমের প্রজাতি আছে। যদিও যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষে নেয় তা তাদের শরীরের তুলনায় খুবই অল্প, কিন্তু কিছু মশা রোগজীবাণু সংক্রামক। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে।(উইকিপিডিয়া)

কর্পূর
মশা তাড়াবার একটা সহজ উপায় হল, কয়েক টুকরো কর্পূর আধকাপ জলে ভিজিয়ে খাটের নীচে রেখে দিন। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমান।

নিমপাতা
কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পড়লে যে ধোঁয়া হবে তাতে সবংশে মশা পালাবে।

নিশিন্দা গুঁড়া
প্রতিদিন নিশিন্দা গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

দেশলাই
অনেকদিন বন্ধ থাকা বা অব্যবহৃত ঘর খুললে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বের হয়। দু-তিনটে দেশলাই কাঠি জ্বালালে দু-তিন মিনিটের মধ্যে ঘর থেকে গন্ধ চলে যাবে।

রুমাল
বোতলের ছিপি খুব শক্ত হয়ে আটকে গেলে, একটা রুমাল গরম জলে ভিজিয়ে নিংড়ে বোতলের ছিপির নীচে জড়িয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে ছিপিটি আলগা হয়ে আসবে।

ভিনিগার
রাতের দিকে বেসিনের পাইপের মুখে মাঝে মাঝে আধ কাপ মত ভিনিগার ঢেলে দেবেন। সকালে দু’মগ জল ঢেলে দিলেই বেসিনের পাইপ পরিষ্কার থাকবে।

গোলাপ সার
কাজুবাদাম ব্যবহারের সময় খোসাটা ফেলে দেওয়া হয়। ঐ ফেলে দেওয়া খোসাই গোলাপ গাছের সেরা সার।

চা পাতা
চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ঐ চা’পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা’পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।

হলুদ আলো
ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।

লবণ
বাচ্চাদের ঘরে মশা, মাছি, পিঁপড়ে হয়। যদি নুন ছিটিয়ে ঘর মোছা যায়, পিঁপড়ে মাছি ও মশাও কম হবে।

বাতিদান জ্বালান
লোডশেডিঙের সময় যদি হ্যারিকেন বা কাঁচ ঢাকা বাতিদান জ্বালান তবে তার ওপর দু-একটা ব্যবহৃত মশা মারার রিপেলেন্ট রেখে দেবেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে মশা তাড়ানোর কাজও হবে।

 

আপনি, তুমি, তুই, এবং আমাদের জাতিগত সৌজন্যতাবোধ

কবীর মনিরুজ্জামান


বাংলা ভাষায় ‘আপনি’, ‘তুমি’, ও ‘তুই’ এর বিস্তৃত ব্যবহার আছে। এই শব্দগুলো ইংরেজীতে এক (you-ইউ) হলেও বাংলায় আলাদা অর্থ বহন করে।

এই শব্দগুলো আমাদের ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় প্রকাশ করে।

তুমি
‘তুমি’ সম্বোধন টি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের গভীরতা, নৈকট্য ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। নতুন পরিচিত মেয়েটাকে তুমি বলার পার্মিশন চাওয়ার মাঝে অনেক রকম অর্থ বুঝানো হয়।

তুই
‘তুই’ সম্বোধন তুচ্ছার্থে কিংবা ঘনিষ্ঠতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। সহপাঠী বন্ধুদের তুই বলতে পারার মাঝে ঘনিষ্ঠতা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশের একটা স্টেজ অতিক্রম করা বুঝায়। কাউকে তুই-তোকারী করতে পারলে যেন আমাদের অনেক বেশী বড়ত্ব প্রকাশ হয়।

তুমি ও তুই
ক্ষেত্র বিশেষে তুমি বা তুই অনেক আন্তরিক শোনায়। মা-বাবাকে আপনি বা তুমি বলার মাঝে সম্মান ও ঘনিষ্ঠতা প্রকাশে কোন পার্থক্য হয় বলে আমার মনে হয় না। ছোট বাচ্চাকে তুমি বলার মাঝে আদর প্রকাশ পায়। সম্পর্কের ঘনিষ্টতা বা পুর্বানুমতি ছাড়া কাউকে তুমি সম্বোধন অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।

আপনি
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বি চৌধুরী একবার একটা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তা হল ‘অপরিচিতকে আপনি বলুন’। জানি না তার এই আন্দোলনের মুলে কোন ধরনের চেতনা কাজ করেছিল। তবে তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমার মনে ধরেছিল। কারণ আপনি তুমির যন্ত্রণা কম বেশি আমাদের সবাইকেই সইতে হয়। আমরা অনেক সময়ই বয়সে বা পদমর্যাদায় ছোট হলেই তুমি করে সম্বোধন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি।

প্রতিপক্ষের মর্যাদা মূলত কি?

পরিচয়ের শুরুতেই আমরা প্রতিপক্ষের মর্যাদা নির্ণয়ে তৎপর হয়ে পড়ি। অন্য অর্থে পরিচয়ের শুরু থেকেই আমরা একে অপরকে সম্মান করব কি করব না বা কতখানি সম্মান করব এর মাপ জোক করতে থাকি। এটাই আমাদের কালচার। আমার ধারনা আমাদের এই কালচারের মধ্যেই উত্তর নিহিত রয়েছে যে, কেন আমরা বাঙ্গালী/বাংলাদেশীরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে, ভালবাসতে বা বিশ্বাস করতে পারিনা। কারন এই শ্রেণীবিন্যাস করার প্রবণতা থেকেই আমাদের মাঝে সুপিরিয়রিটি বা ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্স আমাদের মননে বাসা বেধে ফেলে।

পশ্চিমা এবং আরব কালচার
পশ্চিমা এবং আরবরা এই ‘আপনি-তুমি-তুই’র জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কিন্তু আমরা বাঙ্গালিরা পারিনি। তাদের একটাই শব্দ- ইউ (you), আমাদের অনেক। বিদেশে গেলে তো বয়সে অনেক ছোটরাও নাম ধরে ডাকে এবং তা স্বাভাবিক লাগে, তুমি শোনা তো ব্যাপারই না। কারন ওটাই ওখানকার কালচার। ওরা তো বাপকেও নাম ধরে ডাকে। ‘আপনি, তুমি, তুই’র জটিলতা না থাকায় মর্যাদা নির্ণয়েরও কোন প্রশ্ন নেই। ফলে ঐ ভাষার জাতিগুলোতে পরিচয়ের প্রথম থেকেই সবাই সমান।

আপনি, তুমি এবং তুই
ইদানিং আমাদের দেশেও নব্য ইউরোপিয়ানরা নাম ধরে ডেকে ইংলিশ ব্যবহার করে আপনি তুমির ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চায়। ভারতীয় বাঙ্গালিরা নাকি অনায়াসে অপরিচতকেও তুমি বলে সম্বোধন করে। যেটা আমরা পারিনা। এটি আসলে আমাদের একটি অন্ত:সারশূন্য জাতিগত ইগো। হায়রে আমাদের অন্তঃসারশূন্য অহম! কাজের কাজ আমরা কিছুই পারি না, খালি অর্থহীন অহমিকা! আমাদের এই অনাহুত সামাজিক hierarchy ভেঙ্গে সাম্যতা আনার প্রথম পদক্ষেপ হল ‘আপনি, তুমি, তুই’ থেকে বেরিয়ে আসা।

কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? আদৌ কি তা সম্ভব?

(সংগৃহিত ও সংকলিত)

 

মিম্ মি রহমান: প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই

ফাতেমা শাহরিন


মিম্ মি রহমান পেশায় একজন ডাক্তার পাশাপাশি লেখালেখি করছেন। এবার বইমেলায় এসেছে তার একক লেখা, সম্পাদিত এবং গ্রুপ সম্মিলিতভাবে  কয়েকটি বই। এই সাক্ষাৎকারটিতে থাকছে তার একান্ত নিজস্ব কিছু কথা, একুশে বই মেলায় প্রকাশিত ও সম্পাদিত বই সম্পর্কে অজানা অনেক কথা।

‘আনটোল্ড স্টোরি ফর অ্যা স্ট্রাগলার’ বইয়ের লেখিকা মিম্ মি রহমান সাথে আছি আমি ফাতেমা শাহরিন।

অপরাজিতা: আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন আমাদের পাঠকদের?
মিম্ মি রহমান: আমার স্কুল কলেজ ছিল ফরিদপুরে। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS শেষ করে বারডেম থেকে CCD এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে MPH করেছি। চাকরি শুরু করি USAID এর সূর্যের হাসি হাসপাতালে আউট ডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। এরপর কাজ করেছি নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে। লেকচারার হিসেবে কাজ করেছি ফরিদপুর ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ট্রমা সেন্টার, অপরাজেয় বাংলাতেও কাজ করার সুযোগ ঘটেছে মেডিকেল অফিসার হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম INTERNATIONAL Baccalaureate বোর্ডিং স্কুলে PHIS এ আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছি।

অপরাজিতা: ডাক্তারি নিয়ে দীর্ঘদিন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন, আছেন এবং পাশাপাশি লেখালেখি। কেমন চলছে বর্তমান কাজ এবং লেখালেখি?
মিম্ মি রহমান: লেখালিখি ছোটবেলা থেকে করতাম টুকটাক। দৈনিক ইত্তেফাকের দাদাভাই রোকনুজ্জামান খানের ‘কচি কাঁচার আসরে, ভোরের আলো, জনকন্ঠ এবং প্রথম আলোর বন্ধুসভাসহ বিভিন্ন পাতায় লেখা পাঠাতাম। ছাপাও হতো। এরপর ২০১৫ থেকে অনলাইনে লেখালেখির শুরু বিভিন্ন পোর্টালে। আর এ বছর বইমেলায় আসছে আমার একক বই ‘আনটোল্ড স্টোরি ফ্রম এ স্ট্রাগলার’ সম্পাদক হিসেবে জড়িত আছি ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’, ডাক্তারদের সাথে সম্মেলিত বই ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ এবং সাহিত্য সংক্রান্ত ফেসবুক গ্রুপ জানালা থেকে আসছে ‘জানালা’তেও একটি লেখা।

অপরাজিতা: তাহলে বোঝা যাচ্ছে আপনার লেখার হাতিখড়ি সেই শৈশব থেকেই ‘সেই সব দিনগুল কেমন কেটেছে’ আমি শৈশবের কথা বলছি? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
মিম্ মি রহমান: দারুণ আনন্দময় এক শৈশব কাটিয়েছি। পাঁচ বোন মিলে মিশে ছোটবেলা কেটেছে প্রাণের শহর ফরিদপুরে। নাহ ফিরতে চাই না ঐ দিনগুলোতে। আমার কাছে আমার বর্তমান জীবনটা যা আমি নিজে তৈরি করেছি সেই জীবনটাই আমার প্রিয়। এই জীবনটাতেই বারবার ফিরে পেতে চাই।

অপরাজিতা: গল্প, কবিতা, উপন্যাস এই সব ক্ষেত্রে আপনার পদচারণ আছে। যে কোন একটির কথা বললে আপনি কোনটাকে বেছে নিবেন?
মিম্ মি রহমান: গল্প।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বইমেলা নিয়ে ‘কিছু বলুন’?
মিম্ মি রহমান: এবারের বইমেলায় প্রথম আসছে আমার একক এবং যৌথ বইগুলো। প্রথম ছাপার অক্ষরে হাতে নিয়েছি আমার ফেসবুক গ্রুপ ‘ভালো থাকি-ভালো রাখি’ র মেয়েদের জীবনের গল্প নিয়ে আমার সম্পাদিত বই ‘হার না মানা একদল অপরাজিতার জীবনযুদ্ধ’ বইটি। গ্রুপের সবাইকে নিয়ে খুব আনন্দের সাথে মনের ভেতর ধুকধুকানি নিয়ে কাটিয়েছি দোসরা ফেব্রুয়ারি।

অপরাজিতা: এবারের বই মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: একক বইটিতে যে লেখাটি যাচ্ছে তা একজন নারী চিকিৎসকের জীবনের ছোট বড় ঘটনা নিয়ে লেখা। যেখানে একদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং সিঙ্গেল মা হিসেবে জীবনে ব্যালেন্স করে চলছে ডা.মম। আমার সম্পাদিত বইটিতে যাচ্ছে ২৩ জন নারীর জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা জীবনের গল্প। ‘স্টেথোস্কোপ রেখে কীবোর্ডে’ যে লেখাটি যাচ্ছে তাতে কর্মস্থলে একজন নারীর বিড়ম্বনা নিয়ে ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করেছি।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় কোন ঘটনা?
মিম্ মি রহমান: স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে এই লেখালেখির বদৌলতে অনলাইনে অনেক মেয়ের সাথে কথা হয় যারা আমাকে কখনো দেখেনি কিন্তু আমার লেখার ভেতর দিয়ে নিজেকে খুঁজে পায়, ভালোবাসে।

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
মিম্ মি রহমান: লেখালেখি নিয়ে আপাততঃ পরিকল্পনা নিজের ভালো লাগে বলেই লিখছি। যতদিন ভালো লাগবে লিখব। আরো দায়িত্বশীল হতে চাই লেখালেখি নিয়ে। আরো অনেক বই পড়তে চাই লেখালেখির প্রস্তুতি হিসেবে।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ এবং অপছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাই?
মিম্ মি রহমান: পছন্দ করি নির্জনতা, একাকীত্ব, নির্ঝঞ্ঝাট, সরল জীবন কাটাতে। বই পড়তে, গান শুনতে, মুভি দেখতে এবং আহ্ নাফের সঙ্গ।
অপছন্দ– জটিলতা এবং মিথ্যে কথা।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
মিম্ মি রহমান: হাহাহা আমি নিজেই তো এখন তরুণ। আমি কি বলব ? যখন প্রবীণ হব তখন নাহয় বলব।

অপরাজিতা: উপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও এমন কোনো বিষয় আছে যা আপনি বলতে চান?
মিম্ মি রহমান: একটা কথা বলতে চাই। মরে না গেলে জীবনে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। প্রতিটা মুহুর্তেই সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো, যদি আমি তা চাই। নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং ভরসা করতে শিখলে জীবন মিরাকল ঘটাতে বাধ্য।

ধন্যবাদ, অপরাজিতার সবাইকে আমার মত সামান্য মানুষের সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। ভালো থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ অপরাজিতাকে।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
web:http://oporajitabd.com
facebook: https://www.facebook.com/Oporajitabd/

 

ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব

মল্লিকা দে


মানুষ হিসেবে আমাদের ভিতর এক ধরনের সংকীর্ণতা আছে। পারিবারিক- ভাবে চর্চার অভাব, হিংসা বা অন্য কোন কারণেই হোক, আমরা অন্যের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করি। বরং অন্যের দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা করতেই বেশী পছন্দ করি।

উদাহরণ: মা-বাবা, সন্তান কোন ভাল কাজ করলে তার প্রশংসা খুব কমই করেন কিন্তু খারাপ কাজ করলে তাকে শাস্তি ঠিকই দেন সঙ্গে সঙ্গে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মা-বাবার ধারনা, বেশী প্রশংসা করলে সন্তান বিগড়ে যেতে পারে।

আবার অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তার অধঃস্তন কর্মচারীকে সহজে প্রশংসা করতে চান না। কারণ তাদের ধারনা এতে করে কর্মচারীর অহমবোধ বেড়ে যেতে পারে।

এমনকি যে মা, সারাদিন ঘরের কাজ করেন, খাবার তৈরী করেন, সন্তানদের মানুষ করার গুরু দায়িত্ব পালন করেন, তাকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেয়া হয় না।

আবার প্রেমের শুরুতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে স্বীকৃতির আদান প্রদান বা প্রশংসা করার প্রবনতা খুব বেশী থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে এগুলো আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে এবং একটা সময় গিয়ে একেবারেই থাকে না। আর এ থেকেই মান-অভিমান এবং ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়। পরিশেষে ব্রেক-আপ বা ডিভোর্স।

সাইকিয়াট্রিস্ট এরিক বার্ণ’ মানুষের ছয় ধরনের মানসিক ক্ষুধার কথা বলেছেন। এদের ভিতর ‘স্বীকৃতির ক্ষুধা’ অন্যতম। কারণ আমরা শুধুমাত্র ব্যক্তি হিসেবেই নয়, আমাদের প্রত্যেক কাজের জন্যও মনে মনে অন্যের ‘স্বীকৃতি’ আশা করি। কাজটি যত ছোটই হোক বা বড়।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ‘স্বীকৃতি’ বলতে আসলে কি বোঝায়?
‘স্বীকৃতি’ বলতে বোঝায় কোন ব্যক্তির তার নিজের প্রতি এবং অন্য কোন ব্যক্তি তার প্রতি বা তার কোন কাজের প্রতি যে মূল্যায়ন করে তাকে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ‘স্ট্রোক’ বলে। আর এই স্বীকৃতির আদান-প্রদান ঘটে যখন ব্যক্তি নিজেই নিজের সাথে কথা বলে অথবা অন্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে।

‘স্বীকৃতি’ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে,

বাচনিক-অবাচনিক,ইতিবাচক-নেতিবাচক,শর্তযুক্ত-শর্তহীন।

আমাদের সমাজে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতির’ পরিমানই বেশি। উপরের উদাহরণগুলো থেকে এটাই বোঝা যায়। কিন্তু নেতিবাচক স্বীকৃতির তুলনায় ইতিবাচক স্বীকৃতির গুরুত্ব বেশি।

‘ইতিবাচক স্বীকৃতি’ পেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়, কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়, মনে সন্তুষ্টি আসে।

অপরদিকে ‘নেতিবাচক স্বীকৃতি’ আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা তৈরী করে, কাজ করার আগ্রহ কমিয়ে দেয়, জীবন সম্পর্কে হতাশা সৃষ্টি হয়।

তবে মানুষ যেহেতু স্বীকৃতির কাঙ্গাল, তাই অনেক সময় স্বীকৃতিহীন জীবনের চেয়ে, নেতিবাচক স্বীকৃতিও ভাল। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, ‘কোন ব্যক্তির নেতিবাচক কাজের জন্যও কি ইতিবাচক স্বীকৃতি দেব?
তবে উত্তর হবে অবশ্যই ‘না’।

কিন্তু আমাদের ভিতর ইতিবাচক স্বীকৃতি দেয়ার প্রবনতা বাড়াতে হবে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এমনকি যে রিক্সাওয়ালা আপনাকে নিজের রিক্সায় বহন করে বাড়ি পৌছিয়ে দেন, তাকেও আপনি একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন। এতে করে খুব বেশি সময় নষ্ট হবে না কিন্তু সে তার কাজের স্বীকৃতি পাবে।

মাঝে মাঝে আপনি আপনার সন্তানকেও আলিঙ্গন করতে পারেন, তার ছোট ছোট কাজের প্রশংসা করতে পারেন।

আর আপনি যদি অফিসের বস বা শিক্ষক হন, তবে আপনি আপনার কর্মচারীর বা ছাত্র-ছাত্রীর ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করতে পারেন। এতে করে তাদের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং যে ছাত্র বা ছাত্রী একসময় ক্লাসে কথাই বলতো না, তারাও আগ্রহ নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে। শুধুমাত্র প্রশংসাই নয়, অনেক সময় আপনার ছোট্ট একটা হাসিও অন্যের কাছে স্বীকৃতি হতে পারে।

কাজেই মন খুলে অন্যকে ইতিবাচক স্বীকৃতি দিন। তাহলে আপনিও দিনশেষে ইতিবাচক স্বীকৃতির ঝুড়ি নিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমোতে যেতে পারবেন। পরিবারের ভিতরেও ছোট-বড় সবাইকে যার যার কাজের স্বীকৃতি দিন। সে কাজ যত ছোটই হোক না কেন।

আর কেউ যদি আপনাকে কোন স্বীকৃতি না দেয়, তবে মনে মনে ক্ষোভ না জমিয়ে, নিজেই নিজের কাজের স্বীকৃতি দিন, নিজের প্রশংসা করুন। কারণ, অনেক সময় কেউ ঢ়াক না বাজালে, নিজের ঢ়াক নিজেই বাজাতে হয়।

উপস্থাপনায়
মল্লিকা দে
প্রভাষক
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
আই,ইউ,বি,এ,টি বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তরা, ঢাকা।

 

‘একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই!’ হাবীবাহ্ নাসরীন

ফাতেমা শাহরিন


হাবীবাহ্ নাসরীন এ প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান একজন কবি ও লেখক। তিনি পেশায় সাংবাদিক হলেও লেখালেখির ক্ষেত্রে বিরামহীন এগিয়ে চলেছেন। তার লেখার সবচেয়ে বড় জাদু হলো, ভাষার সহজ সরল ও সাবলীল উপস্থাপনা। যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে অমর একুশে বইমেলায় আসছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এর আগে ও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে একুশে বই মেলায় তার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। অপরাজিতার পক্ষ থেকে আমরা এই গুণী লেখিকার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

অপরাজিতা: কেমন কেটেছে আপনার শৈশব? হারানো সেই দিন গুলোতে কি ফিরে যেতে ইচ্ছে করে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: খুব ছোটবেলায় বিভাগীয় শহরে ছিলাম। সেখানে জীবন ছিল ফ্ল্যাটবন্দী। পরে আব্বুর পোস্টিংয়ের কারণে চাখারে চলে যাই। চাখার গ্রাম হলেও বেশ উন্নত ছিল। কারণ এটি শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের গ্রাম। না গ্রাম, না শহর- আবহের একটি পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা। পুকুরে সাতার কাটা, গাছ থেকে ফল পেড়ে আনা, বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, সকালে উঠে ফুল কুড়ানো, মধ্যরাতে রাতজাগা ডাহুকের ডাক শুনে ভয়ে ভয়ে জেগে থাকা- আমার মধুময় স্মৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুধু মধুময় স্মৃতিই বলবো না, আমার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে এর অবদান অনেক। ছেলেবেলায় ওরকম পরিবেশ না পেলে আমার লেখনীয় সত্ত্বা বিকাশিত হতে পারতো কি না কে জানে! ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না। কারণ তাতে যে আগামীর স্বপ্ন লালন করে আমি এতটা পথ এসেছি তা আবার পিছিয়ে যাবে।

অপরাজিতা: লেখা লেখির শুরুটা কী ভাবে হয়েছে? এ ক্ষেত্রে আপনার পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাই!
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল একাকিত্ব থেকে। আমার ছোট ভাইয়ের জন্মের সময়টাতে আম্মু খুব অসুস্থ ছিলেন। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতেন। আগের সেই আদর, আবদার, আহলাদ কিছুই পেতাম না। একা একা অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়াতাম। তখন মনে হলো এইসব নিবিড় দুঃখের কথা লিখে রাখি। লিখে লিখে দুঃখ যদি কিছুটা কমে। লিখতে গিয়ে একটা নেশার মতো হয়ে গেল। মনে হতো, রবী ঠাকুর, কাজী নজরুলের মতো আমিও লিখতে পারি না কেন! ওদের মতো লিখতে চাইতাম। বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা লিখতামও। কিন্তু তখন তো ছোট মানুষ ছিলাম। ছয় বছর বয়স। প্রতিদিন লিখতাম আর ওদের মতো হচ্ছে না বলে মন খারাপ করতাম। এই লিখতে না পারার ক্ষুধাই আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে লেখার শুরু। প্রথম লেখাটি প্রকাশ হয় ছোটদের পত্রিকা নামের একটি ম্যাগাজিনে। এটি ২০০৪ সালের কথা। সে বছরই ছোটদের মেলা থেকে একটি ছড়ার সংকলন প্রকাশ হয়। ছড়াগুলো লিখেছে ছোটরা নামের বইটিতে আমারও একটি ছড়া প্রকাশ হয়েছিল। পাশাপাশি আমার ছবি আর সাক্ষাৎকারও ছেপে ছিল। এরপর ২০০৮ সালে ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর আয়োজিত ছড়া প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ ছড়াকার নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০১০ সালে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে তৃতীয় ব্যাচে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তখন ঢাকায় নতুন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। বাংলা একাডেমির নেয়া পরীক্ষায় এগারোতম হয়েছিলাম। এর মাঝে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপা হতো। বাংলা একাডেমির কোর্স শেষে আবার কিছুদিন আড়ালে চলে গিয়েছিলাম। ২০১৬ সালে এসে মনে হলো, এবার একটি বই হতে পারে। প্রকাশ হলো আমার প্রথম বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। এরপর ২০১৭ সালে উপন্যাস ‘তুমি আছো, তুমি নেই’, ছোটদের গল্পের বই ‘টুম্পা ও তার বিড়ালছানা’ প্রকাশ হলো। আর এ বছর নিয়ে এসেছি কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এভাবেই একটু একটু করে আগাচ্ছি। লেখালেখি নিয়ে আমার বেশকিছু স্বপ্ন আছে। পূরণ করার চেষ্টা করে যাবো।

অপরাজিতা: প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত মিলে এ পর্যন্ত আপনার কতগুলি লেখা রয়েছে?
হাবীবাহ্ নাসরীন: লেখার সংখ্যা খুব বেশি নয়। প্রথমদিকের অনেক লেখাই কোথাও প্রকাশ করিনি। সেগুলো তত মানসম্পন্নও নয়। তবে আমি সেগুলোকে অস্বীকারও করি না। ওইসব কবিতা আমার কাছে অনেকটা সিঁড়ির মতো। প্রকাশ করার মতো কবিতা সম্ভবত একশোটির মতো লিখেছি। কমও হতে পারে। আর উপন্যাস তো একটি। গল্প আছে আটটি। এইতো।

অপরাজিতা: প্রথম প্রকাশিত বই ও প্রথম বই মেলা সম্পর্কে জানতে চাই।
হাবীবাহ্ নাসরীন: প্রথম প্রকাশিত একক বই ‘কবিতা আমার মেয়ে’। মূলত এই বইটির মাধ্যমেই আমি আমার পাঠকদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। প্রথম বইমেলায় যাওয়া ২০১০ সালে। তখন নিজে প্রচুর বই কিনতাম আর বন্ধুদেরকেও কিনে দিতাম।

অপরাজিতা: এবারের মেলায় প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে জানতে চাই?
হাবীবাহ্ নাসরীন: এবারের বই মেলায় প্রকাশ হচ্ছে কবিতার বই ‘তুমি আমার শুদ্ধতম পাপ’। এতে ষাটটির মতো কবিতা রয়েছে। যার বেশির ভাগই প্রকাশিত।

অপরাজিতা: লেখার সাথে সম্পর্কিত স্মরণীয় ঘটনা?
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমার জীবনের বেশিরভাগ ঘটনাই লেখার সাথে সম্পর্কিত। যতটা সম্মান, ভালোবাসা পেয়েছি তার প্রায় সবটাই লেখার কারণে। অনেক অচেনা মানুষ ফুল, চকোলেট, রান্না করা খাবার, নানা উপহার নিয়ে দেখা করতে আসেন এটাই আমার কাছে আশ্চার্যজনক মনে হয়। লিখতে না জানলে এমন ভালোবাসা আর কিসে পেতাম!

অপরাজিতা: আপনার লেখা নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পরিকল্পনা নেই। স্বপ্ন আছে। মৃত্যুর আগে কিছু লেখা সমাপ্ত করে যেতে চাই।

অপরাজিতা: আপনার পছন্দ অপছন্দের বিষয়গুলো কী কী?
হাবীবাহ্ নাসরীন: পছন্দের বিষয় হচ্ছে সততা, ভালোবাসা। হিংসা, কৃতঘ্নতা খুব অপছন্দ।

অপরাজিতা: তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন!
হাবীবাহ্ নাসরীন: আমি নিজেই তো তরুণ! একটা কথাই বলতে চাই, চলো, এগিয়ে যাই।

ফাতেমা শাহরিন
সহ-সম্পাদিকা(অপরাজিতা)
http://oporajitabd.com

 

শিশুর আঘাত লাগলে অস্থির হওয়া সমাধান নয়

ইরা রহমান


প্রায়ই দেখি অনেক বোন পোস্ট দেয় বা আশেপাশেও দেখি অনেককেই তারা বলেন বাচ্চার আঘাত লাগলে বাচ্চার বাবা খারাপ ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। অনেককে বলতে শুনেছি বাচ্চার মায়ের গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। খুব খারাপ লাগে শুনলে বিষয়টি।

একটা বাচ্চার সবচেয়ে আপন হল তার ‘মা’। কোন কোন ক্ষেত্রে বাবাও বাচ্চাদের ছেড়ে চলে যায় কিন্তু মা কোনও ভাবেই ছাড়তে পারেনা। হ্যাঁ ২/১ উদাহরণ আছে মা জাতির কলঙ্ক, তাদের কথা আলাদা। ব্যতিক্রম কখনওই উদাহরন নয়, হতেও পারে না। অনেক বাবা তো এমনও আছে যারা বাচ্চাকে ত্যাগ করতে গিয়ে বলে অমন বাচ্চা আরো পয়দা করতে পারব। ছিঃ, একরাশ ধিক্কার জানাই তাদের।

এখন আসি প্রসঙ্গে। কিছু কিছু বাবা আছেন যারা বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসেন, খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেই হারে বাচ্চার মা কে তোয়াক্কা করেন না।

বাচ্চা তাদের আপন আর বাচ্চার মা পরের মেয়ে (??) তাদের ধারণা বাচ্চার মা সারাদিন বাসায় বসেই কাটিয়ে দেয় তাহলে বাচ্চা পড়ে যাবে কেন বা আঘাত পাবে কেন? হায়রে হাস্যকর ভাবনা। একটা বাচ্চার পিছনে একজন মায়ের যে কি পরিমাণ শ্রম যায় তা যদি এই প্রজাতি বুঝত।

তবে এখানে পুরোপুরি বাচ্চার বাবাকেও দোষ দেয়া যায় না। বাচ্চার মায়েরও কিছু আচরণগত সমস্যা আছে। বাচ্চাকে আঘাত লাগতে দেখলেই মা ভয় পেয়ে যায় আর এটা মনে করে যে এই বুঝি বাচ্চার জন্য সে বকা খেল। তার আচরণ পালটে যায়। তার আচরণে অপরাধবোধ প্রবলভাবে দেখা যায়। যার সুযোগ নেয় বাচ্চার বাবা বা অন্য কেউ।

এই অবস্থা থেকে বের হবার জন্য প্রথমে বাচ্চার মা কে শক্ত হতে হবে। সে যদি নিজে না বদলায় তাহলে পরিস্থিতি বদলাবে না। একটা বাচ্চা যে নতুন হাঁটা বা দৌড়ানো শিখছে তাকে আঘাত লাগবেই। আঘাত লাগলেই কিছু কিছু মা আছে ‘ওরে বাবারে মারে’ শুরু করে দেয়। এটা ঠিক না।

বাচ্চার আঘাত লাগলে পরিচর্যা করতে হবে ঠিকই কিন্তু আপনাকে সেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। অস্থির হওয়া চলবে না। আপনি যখন আঘাত লাগাটা সহজ ভাবে নিবেন আর পরিবারকে এই বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হবেন, যে বাচ্চার আঘাত লাগাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন দেখবেন আপনাকে আর এর জন্য কথা শুনতে হবে না বা বকাও শুনতে হবেনা।

নিজেকে ভালো রাখতে হবে। অন্যকে ভালো রাখার চেয়েও নিজে ভালো থাকা বেশি জরুরী।

প্রধান শিক্ষিকা
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বগুড়া।

 

‘ক্যান্সার প্রতিরোধ’ : কোনো উপায় আছে কি?

ডা.মারুফ রায়হান খান


‘ক্যান্সার’ এই একটি শব্দের মাঝে যে লুকানো কতো ভয়-শঙ্কা-আর্তনাদ আর হাহাকার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। ব্যাপারটা খুব বেদনাদায়ক যে ইদানিং খুব ফ্রিকোয়েন্টলি আমরা প্রিয় মানুষদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সংবাদ পাচ্ছি।
American Cancer Society বলছে এ বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবেন। আমরা সবাই জানি, প্রিভেনশান ইজ বেটার দ্যান কিওর।

এখানে সহজ ভাষায় ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু উপায় লেখার চেষ্টা করছি।

১। যত দ্রুত সম্ভব সিগারেট খাওয়াটা ছেড়ে দিতে হবে। এমনকি প্যাসিভ স্মোকিংও যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই আপনার কাছের মানুষজনদেরও সিগারেট খাওয়াটা বন্ধ করাতে হবে আপনার স্বার্থেই। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে খুব কম অঙ্গই আছে যেখানের ক্যান্সারের সাথে স্মোকিংয়ের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে পুরুষদের সবচেয়ে বেশি হয় ফুসফুসের ক্যান্সার। যা স্মোকিংয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এছাড়াও স্মোকিং মুখ, ঠোঁট, নাক, সাইনাস, স্বরতন্ত্র, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কিডনী, মূত্রথলী, গর্ভাশয়, জরায়ুমুখ, কোলন, মলাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি ক্যান্সারেরও কারণ।

২। মদ্যপান করা যাবে না। মুখ, গলা, লিভারের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৩। যারা বেশি স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের ওজন কমাতে হবে। স্তন, বৃহদান্ত্র, মলাশয়ের ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৪। রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

৫। চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে ফেলতে হবে। স্তন, অন্ত্র, মলাশয়, প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।

৬। প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। এসবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৭। নিয়মিতভাবে সারভাইকাল স্মিয়ার টেস্ট করতে হবে (জরায়ু মুখের একটা পরীক্ষা)। বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জরায়ুমুখের ক্যান্সারে। যাদের একের অধিক সেক্সুয়াল পার্টনার থাকে, খুব ঘনঘন বাচ্চা জন্ম দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, জন্মনিরোধক পিল সেবন করে তাদের জরায়ুমুখের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৮। প্রতিমাসে একবার স্তন পরীক্ষা করতে হবে, যেটা নিজে নিজেও করা সম্ভব। সহজ ৫ টি ধাপ অনুসরণ করে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সাম (BSE) করা যায় নিজে নিজে। সারা বিশ্বে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি নারী আক্রান্ত হয় স্তন ক্যান্সারে। যাদের পরিবারে অন্য কারও স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হয়, যাদের বাচ্চা নেই, বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়, বুকের দুধ বাচ্চাকে কম পান করায়, চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খায় তাদের স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

কেন আমরা অসুখী?

অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম


” নিজে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমি উৎফুল্ল থাকতে এবং সুখী থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ। কেননা আমি জানি আমাদের দুঃখ- কষ্ট বা অসুখী থাকার বেশীর ভাগই নির্ধারিত হয় আমাদের নিজস্ব ” স্বভাব/ প্রবনতার” উপর – পরিস্থিতির উপর নয়।”

কথাগুলো বলেছেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন এর স্ত্রী মার্থার।

এটা নিঃসন্দেহে আমরা সবাই সুখী থাকতে চাই।

মানুষ হিসেবে এটা আমাদের মেনে নিতে হবে যে,

ক) জীবন হচ্ছে ছোট এবং
খ) অসুখী থাকলে আমাদের এই ছোট জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

আমাদের গুনগত উন্নত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের স্বভাব বা প্রবনতা। এই স্বভাব গুলো আমাদের অসুখী করে কিংবা সুখী করে। আজকের টিপসে এমন কিছু স্বভাবের কথা বলবো যা আমাদের অসুখী করে। মনে রাখতে হবে ” বিষন্নতা রোগ” বা ডিপ্রেশন ও “অসুখী জীবন- যাপন” এক বিষয় নয়। বিষন্নতা হয়, ব্রেইনের জৈব-রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে। অন্য দিকে, অসুখী বা সুখী থাকা হচ্ছে এমন মানসিক অবস্থা বা প্রবনতা/ স্বভাব- যা অর্জিত হয় ‘কিভাবে আমরা জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নেই’  তার উপর নির্ভর করে। সুখের কথা বিষন্নতাকে যেমন আমরা ডায়গনসিস ও চিকিৎসা করতে পারি, অসুখী থাকাকে ও তেমনি চিকিৎসা করতে পারি।

আমাদের অসুখী করে তেমন ১২টি স্বভাবের কথা পর্যায়ক্রমে বলবো। আজ উল্লেখ করছি তেমন দুটি স্বভাবের :

যে স্বভাবগুলো আমাদের অসুখী করে অথচ যা চাইলে আমরা এড়িয়ে চলতে পারি:

১। সব সময় অভিযোগ, অনুযোগ, নালিশ করার স্বভাব ( Chronic complaining)

সুখী মানুষ অতিরিক্ত অভিযোগ, নালিশ করে না। অন্য দিকে অসুখী মানুষরা সব সময় কোন না কোন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতেই থাকেন।

মূল কথা হচ্ছে

সারা জীবন আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকবো কিন্তু সবশেষে এ পরিস্থিতিগুলো আমাদের। তা সেগুলো ন্যায্য হোক বা অন্যায্য ; কাঙ্ক্ষিত হোক বা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করুন – এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নালিশ করার পরিবর্তে। কেননা নিরন্তর অভিযোগ আপনাকে / আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারে না।

২। নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ থাকা (being critical of self and others) 

আমরা নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কি ধরনের কথা বলি,সংলাপ করি (self-talk), তা নির্ধারন করে আমাদের আত্ম- ভাবমূর্তি ( সেল্ফ ইমেজ)। এই আত্ম সম্মান বোধ আমাদের সুখী হওয়ার অন্যতম উপাদান এবং নিজকে নিয়ে ভালো লাগা বোধ হচ্ছে সঠিক স্বভাব ও প্রবনতা। যখন ভুল করবেন সেটি বোঝার ও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবেন। কখনোই এ সব নিয়ে নিজের সঙ্গে, মনে মনে নেতিবাচক সংলাপ চালিয়ে যাবেন না। তদুপরি অন্যদের মধ্যে যে ভিন্নতা রয়েছে, পার্থক্য রয়েছে, সেগুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখুন এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিন। এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় না করানো।নিজকে অতিরিক্ত অভিযুক্ত করবেন না। নিজের দোষ- ক্রটি, অযোগ্যতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না।

বরং নিজকে ভালোবাসুন, নিজকে শ্রদ্ধা করুন, নিজকে নিঃশর্ত ভাবে গ্রহন করুন।

এ ভাবে নিজকে ও অন্যদেরকে অনাবশ্যক সমালোচনা করার স্বভাব যদি বদলাতে পারেন। কেবল তাহলেই সুখী হতে পারবেন।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিশ্ব হিজাব দিবস ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার


ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’। ‘Better Awareness. Greater Understanding. Peaceful World’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে এবার এই দিবসটি পালিত হয়েছে।

‘হিজাব’ মুসলিম নারীর ধর্মীয় বিধিবিধানের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অংশ।

২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এই দিবস পালন করা শুরু হয় এর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০টি দেশের নারীরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

বিশ্ব হিজাব দিবসের নেপত্যে আছেন ‘নাজমা খান’ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত । তার উদ্যোগেই এই দিবসের প্রচলন শুরু হয় ২০১৩ সালে।

মুলত বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের মুল উদ্দেশ্য ইভেন্ট আয়োজকদের হচ্ছে, হিজাব পরিধানের অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে সব ধর্ম এবং ব্যাকগ্রাউন্ড নারীদের হিজাব পড়তে উৎসাহিত করা। অ-মুসলিম এবং মুসলিম সকল নারীজাতি হিজাব পরিধান করে তার অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুন্দর সুযোগ আছে।

চলমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যাপারটিকে আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে যারা মুসলমান নন, তাদেরও এদিন হিজাব পরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আল কুরআনে “হিজাব” শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘পর্দার প্রতিনিধিত্ব’। পর্দা শব্দটি দিয়ে মুলত শালীনতা ও গোপনীয়তার প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হয়।

ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে অর্গানাইজেশনের এই প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, তারা একদিন আমার মতো করে চললে বুঝতে পারবে- আমার ও তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বরং ওই একদিনের কারণেই তারা হয়তো হিজাবকে অন্য আলোকে দেখতে সক্ষম হবে।

আল জাজিরাকে প্রশ্নে তিনি আরও বলেছেন, আমি যদি মাথায় হ্যাট পড়ি, আমাকে কেউ কিছু বলতে আসছে না, টেনে চুল বাঁধলাম বা খোলা রাখলাম বা বেনী করলাম- কেউ কিছু বলতে আসছে না, তাহলে কেন হিজাব পরার জন্য কোনো মেয়েকে কিছু বলা ঠিক হবে?

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম মহিলারা সামাজিক মাধ্যমে হিজাব ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

হিজাব পরিধানের ব্যাপারে একটি কলেজের প্রভাষক আফরীন তাসলিমা (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট) বলেছেন, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর আদেশ মানার জন্য ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য।

বাংলাদেশ থেকে ফাতিমা মারিয়াম নামে একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট বলেছেন, ‘আল্লাহর হুকুম তাই হিজাব করি। সুরা নুর আর সুরা আহযাবের দুটি আয়াতে উল্লেখ আছে। নারীদের পর্দার বিধান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরা আহজাব : ৫৩)
আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা নূরে বলা হয়,
(হে নবী!) মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আবরণ প্রদর্শন না করে (সূরা নূর : ৩১)।’

সিয়েরালিয়ন থেকে হাওয়া নামে এক মহিলা লিখেছেন,
‘হিজাব’ শুধু মাথা ঢেকে রাখার কাপড় নয়। এটা পর্দা রক্ষা করতে সহায়ক। আমাদের হাতের নখ ও লিপইস্টিকের রঙ দিয়ে মূল্যায়ন করলে চলবে না।’

 

ভাষা হোক শুদ্ধ

ডা.সাকলায়েন রাসেল


বসন্ত নেমেছিল আজ আমার রুমে..নীলার আগমনে..দরজা ঠেলে ধরে মুচকি হাসি..চোখে স্নিগ্ধতা!
ঠোট নড়ে উঠল..স্পষ্ট শোনা গেল না..তবে বোঝা গেল!
ঠোটের তুলিতে লেখাটা বুঝে নিলাম-আসতে পারি?
আমার অভিব্যক্তিতেও একই প্রকাশ..মুচকি হাসিটার আকার বেড়ে গেল..হুম, আসতে পারেন!
নীলার বাসন্তি প্রবেশ..বারবার বাসন্তি বলার কারণ এই একটাই..থ্রি পিসের পুরোটাই বাসন্তি রঙের! ওড়নাটা উলটা ইউ আকারে গলা পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ।জংলি ছাপা। চুলগুলো মোটা হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে পিছনে টেনে রাখা। চোখ কাজলে হাইলাইট করা।
নীলাকে দেখলে হঠাৎ করে মহাসুন্দরী মনে হবেনা..আমারো মনে হয়নি..সময় সেটা ডিমান্ডও করছিল না..তবে আমার এটা সহজাত অভ্যাস..চেম্বারে রোগী কিংবা রোগীর লোক ঢোকামাত্র আমি সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার আউটলুক দেখে নেই..বোঝার চেষ্টা করি এ্যাটিচুড কেমন..সামাজিক অবস্থা কেমন..কিংবা মানসিকতা কেমন!
বেশিরভাগ সময় মিলে যায়..এই মিলে যাওয়ায় অনেক সুবিধা..আপনি দ্রুতই রোগীর সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন..আত্মীক সম্পর্ক! আর চিকিৎসা মানে কাগজ কলম প্রেসক্রিপশন নয়, নয় অপারেশন টেবিলে ছুরি কাঁচির কারসাজি!
চিকিৎসা একটা প্যাকেজ! এই প্যাকেজের নায়ক রোগী, ডিরেক্টর চিকিৎসক। আর রোগীর লোক পার্শ্ব অভিনেতা। কারো পারফরমেন্স একটু খারাপ হওয়া মানেই নায়কের কষ্ট, ডিরেক্টরের ব্যর্থতা! আমি তাই ভাসকুলারের চেয়ারে বসেও সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ার চেষ্টা করি।
কী আছে রোগীর মনে? মানুষটাই বা কেমন? কতটুকু ধারণক্ষমতা আছে তার-আমাকে বোঝার, আমার চিকিৎসা বোঝার! চিকিৎসা একটা গাইড লাইন, এই গাইড লাইন হওয়া উচিত রোগী নামক ছাত্রের অন্তরের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী! এই ক্যাপাসিটি জানতে হলে খুব দ্রুত রোগীর অনুভুতি পড়ে নিতে হয়। যে অনুভুতি লেখা থাকে তার পোশাকে,চলনে, অভিব্যাক্তিতে, ভাষায়!

আমিও পড়ে নিলাম নীলাকে..একটা সৌন্দর্য আছে তার চোখে মুখে..খুব চেনা সৌন্দর্য! স্নিগ্ধ সুন্দর..পোশাকের পরিপাটি রুপ নজরকে আহত করতে যথেষ্ট! আমি আহত না হলেও আকৃষ্ট হলাম..মুগ্ধ হলাম নীলাতে!
নীলার চোখেও আড়ষ্টতা! টানা টানা ঐ চোখগুলোর ভাষা বোঝা গেল না! অগ্যতা শব্দের কোলে আশ্রয় নিলাম!
-আপনি নীলা?
নীলার শব্দহীন.. মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সে নীলা। কৈশরের আভা ছড়িয়ে পড়ল তার অভিব্যক্তিতে!
বয়সের দিকে তাকালাম, ১৯!
-কী সমস্যা নিয়ে এসেছেন!
মুখ খুলল নীলা..আমি অস্থির! স্নিগ্ধ সুন্দর এমন মানুষের দেহে কী এমন রোগ লুকিয়ে আছে! যার স্মার্টনেস অলরেডি আঁচড় কেটে মনের আংগিনায় তার কন্ঠটাই বা কেমন! প্রকাশের ভংগিমায় বা কেমন!
আমি নীরব, শান্ত স্থীর শ্রোতা হয়ে গেলাম!
‘ অ স্যার, আমার পায়ের রগগুলা ক্যামন জানি ফুইল্যা ফুইল্যা গেছে! মাঝেমধ্যে জম্মের চুলকায়!’

আমি বাকরুদ্ধ!
নীলার সব স্মার্টনেস যেন পুড়ে গেল ভাষার অনলে!
———
মেকআপ মুখের সৌন্দর্য বাড়ায়! ভাষা পুরো মানুষটার!
‘ভাষা হোক উম্মুক্ত-অভ্র’
অফটপিক-ভাষা হোক শুদ্ধ!

অথচ বেশিরভাগ শিক্ষক ও মা বাবা…শিশুকে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ শেখান ভুলভাবে!
——-
আসছে
‘অফটপিক’!
এবারের গ্রন্থমেলার ৪৫১ নং স্টল, আইডিয়া প্রকাশনে!
অফটপিক-যাপিত জীবনের বাঁকে অযত্নে পড়ে থাকা অবহেলিত চিন্তার শব্দরূপ!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

কফিমগ

শুকনো পাতা


সুখের হাসি দেখতে হয় এক ঝলক
দূর থেকে,
হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ ছুঁয়ে
ভালোবাসা জমে থাকে পর্বতের ওপাড়ে!

টেবিলের পাশের জানালা ধরে দৃষ্টির বহুদূরে
ফেলে আসা সময় দেখা যায়,হিম মাঘের দুপুরে,
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় কফির রেশ
শূণ্য মগে রয়ে যায় স্মৃতির আবেশ!

#কফিমগ