banner

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 23, 2024

 

গর্ভাবস্থায় আপনার ভ্রুণের সঠিক গঠন ও বৃদ্ধি- আপনার খাদ্যতালিকা

ডা.ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় একটি ভ্রুণের গঠন ও বৃদ্ধি একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। প্রথম ৪ সপ্তাহ ভ্রূণে একটি দৈহিক কাঠামো তৈরী হয়, অতঃপর পর্যায়ক্রমে হাত, পা, চোখ, নাক, কান সহ অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ গঠন হয়। ২৪ সপ্তাহের একটি ভ্রূনের স্বাভাবিক ওজন হয় ১.৪ পাউন্ড। এই ওজন ২৮ সপ্তাহ বা সাত মাসে ২.৫ পাউন্ডে বেড়ে যায়।

গর্ভকালীন শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ যে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার মধ্যে অন্যতম হল মায়ের শারিরীক অবস্থা ও খাদ্যাভ্যাস।

একজন সুস্থ ও পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণকারী মায়ের সন্তান সাধারনত সুস্থই হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতেও পারে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম ৬-৭ মাসে বাচ্চার বৃদ্ধি হার তুলনা মুলকভাবে কারও কারও ক্ষেত্রে কম থাকে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। যদি ৭ মাসেও বাচ্চার ওজন ‘যদি একটু কমও হয়’ তবুও চিন্তার কিছু নেই, এ ক্ষেত্রে মায়েদের খাবারের দিকে বিশেষ ভাল করে নজর দিতে হবে। শেষের তিন মাস বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে বাচ্চার ওজন এর চেয়েও কম হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।

আসুন দেখে নেই কোন কোন খাবারগুলো খেলে বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি পাবেঃ

(১)ভাত, রুটি, অন্যান্য, শর্করাজাতীয় খাবার- ওজন বাড়াতে শর্করাজাতীয় খাবারের জুড়ি নেই। ভাত বা রুটি ছাড়াও সুজি কিংবা ওটস ও গমের দানার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে, এর সাথে মেশাতে পারেন পছন্দের মাংস বা সিজনিং বিভিন্ন সবজি ও ডিম বা পছন্দের মাংস দিয়ে নুডুলস প্রতিদিনের তালিকায় থাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় রুচির তারতম্য হয় খুব বেশী। সেক্ষেত্রে একই খাবার ভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন ভাত ভাল না লাগলে পায়েশ, চালের গুড়ার রুটি বা পিঠা বা চিড়া দই বিকল্প খাবার হতে পারে।

(২)ফল ও শাকসবজি- রকমারী ফল বা ফ্রুট সালাদ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। কলাতে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ভরপুর। ওজন বাড়াতে কলা আর আমের তুলনা নেই।প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় কলা রাখা যেতে পারে। পাচমিশালি শাকসবজি রান্না বা স্যুপ করে দুবেলা খাবারের সাথে খেতে পারেন। ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উচ্চ মাত্রায় থাকে এসব খাদ্যে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ফল রস করে খাওয়ার চেয়ে এমনিতে ফল চিবিয়ে খাওয়া বেশী ভাল। পালং শাক, লালশাক, কচুশাক, লাউ কুমড়া, ঢেড়শ সহ সব ধরনের মৌসুমী শাকসবজি সবচেয়ে উপকারী। কমলা বা লাল সবজি বিটা ক্যারোটিন ও আয়রনের অন্যতম উৎস। তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টি আলু ওজন বাড়াতে ও খনিজ এর সরবরাহ করতে খুব সহযোগী।

(৩)ডাল ও অন্যান্য শস্যজাতীয় খাবার – অম্ল বা এসিডিটির যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ডাল বা ছোলা জাতীয় খাবার আমিষের অন্যতম উৎস। তবে এগুলো কাঁচা বা ভাজা খাওয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়াই উত্তম। মাছ, মাংসের পর এই লিগিউমস গুলো প্রোটিন যুক্ত খাবার যা গর্ভের সন্তানের ওজন বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে আছে মুগ, মসুর, ছোলার ডাল, সীমের বিচি ইত্যাদি। ডালের স্যুপ বা পাতলা ডাল উপাদেয় ও পুষ্টিকরও বটে।

(৪)বাচ্চামুরগী বা কবুতর- অনেকের ধারণা শুধু দুধ বা ডিম বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি করবে। এ ধারণা ঠিক নয়। বাচ্চা মুরগির ঝোল বা কবুতরের মাংস নিয়মিত খেতে পারেন। এটি বাচ্চার ওজন বাড়াবে ও সন্তান জন্মদানের পরও মাকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।

(৫)মাছ ও মাংস- সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়োডিন থাকে ও প্রোটিনের ভাল উৎস। সামুদ্রিক বা নদীর মাছ বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকর। তবে তাজা ও কেমিকেলমুক্ত হতে হবে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে যেগুলো হজমে দেরি হয় বা মার্কারীযুক্ত থাকে সেগুলো না খাওয়াই ভাল। ছোটমাছ ক্যালশিয়ামের যোগান দেয় যা বাচ্চার হাড়ের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এ সময় যেকোন এলার্জিক মাছ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। রেডমিট বা গরু ও খাশির মাংসতে ওজন বৃদ্ধি ও আয়রনের যোগান দিতে খুব সহায়ক। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ ও মাংস অবশ্যই থাকা উচিৎ।

(৬)ড্রাই ফ্রুট ও বাদাম- এর মধ্যে আছে খেজুর, কিসমিস, শুকনো এপ্রিকোট, চিনাবাদাম, এলমোন্ড বা কাঠবাদাম, কাজু ইত্যাদি। পিনাট বাটার বা শুধু চিনাবাদামও দ্রুত ওজন বাড়ায়। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। সুতরাং গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে মায়েদের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে এসময় খেজুর খেতে মায়ের দুর্বলতা কমবে পাশাপাশি বাচ্চার জন্য উপকারী।

লেখিকা: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি

মুশফিকুর রহমান আশিক


গত কয়েকদিনে ফেইসবুকে যে ব্যাপারটা খুব বেশি চোখে পড়ছে সেটা হলো, লোকাল বাসে মেয়েদের সিকিউরিটি নিয়ে।  দুজনের লেখা ঘটনা পড়লাম, সকাল ১০-১১ টার মত সময়ে যখন লোকাল বাসে একটা মেয়েকে দরজা আটকে হ্যারাজ করার মত সাহস করা হয়, সেটা ভয়াবহ রকমের অ্যালার্মিং!

সকাল ৯ টায় এলিফ্যান্ট রোডের মত একটা ব্যস্ত এলাকায় শত শত মানুষের সামনে থেকে যেদিন আমার ফোন হাইজ্যাক করা হয়েছিল, সেদিনই বুঝে গেছিলাম এই দেশে আমাকে বা আপনাকে কেউ সিকিউরিটি দিবে না। নিজে সাবধান থেকে যতটুকু পারা যায়, ততটুকুই !

যেহেতু মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটা বেশি হচ্ছে, যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন, কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেনঃ

১) বাসটা খালি কিনা
বাস যদি খালি হয়, অবশ্যই অবশ্যই উঠবেন না

২)অল্প কিছু যাত্রী
বাসে অল্প কিছু যাত্রী থাকলেও না উঠার চেষ্টা করবেন। যদি উঠতেই হয়, যাত্রীদের অবস্থা দেখে নিবেন।

এবার আসি যাত্রীদের অবস্থা দেখার বিষয় নিয়ে। দুটো ঘটনা পড়ে যেটা বুঝলাম, বাসওয়ালারা বেশ চালাক হয়ে গেছে। এরা বাস একদমই খালি না রেখে নিজেদেরই কিছু স্টাফ হেলপারকে যাত্রী সাজিয়ে বসিয়ে রাখে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। তাই বাসে উঠার সময় যদি সন্দেহ হয় যে যাত্রীরা তাদেরই কেউ, দয়া করে উঠবেন না। এখানে নিজের Deduction Skill কাজে লাগান।

৩) গেটের কাছে বসুন
বাসে যদি উঠেই পড়েন, গেটের কাছে বসবেন। পেছনে যাবেন না। পেছনে গেলে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যদি দেখেন কোন একটা স্টপেজে বাসের সব যাত্রী নেমে যাচ্ছে, এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনিও নেমে যান। লাগলে ওখান থেকে অন্য উপায়ে বাসায় যাবেন। কিন্তু বাসে যেন একা পড়ে না থাকেন – এটা খেয়াল রাখবেন।

৪) বিপদে পড়ে গেছেন
কখনো যদি মনেই হয় বাসের ভেতর আটকে গেছেন, বিপদে পড়ে গেছেন, ফোন বের করে কোন বন্ধু বা কাউকে ফোন দিয়ে জোরে জোরে বাসের নাম, লোকেশন এগুলা জানিয়ে দিন। একটু হলেও সেটা বাসের ড্রাইভারকে ভীত করবে।

৫)999 ফোন দিন
আমি জানিনা বাংলাদেশে 999 এ ফোন দিলে ইমারজেন্সি পুলিশের হেল্প পাওয়া যায় কিনা। সেটাও ট্রাই করা যেতে পারে

৬)অ্যাথলেটিক হন
নরম বা দুর্বল হয়ে থাকার দিন এখন আর নাই। পারলে একটু অ্যাথলেটিক হন। আপনার কারাতে শেখার দরকার নাই। কিন্তু লাফিয়ে বাস থেকে নামতে পারার মত ক্যাপাবিলিটি যেন থাকে। এইটা নিশ্চিত করবেন !!

৭)বিকল্প চিন্তা করুন
রাতের দিকে যদি ট্রান্সপোর্ট না-ই পান, চেষ্টা করবেন UBER কিংবা Pathao তে আসার। ফাঁকা লোকাল বাসে উঠার চেয়ে UBER Pathao এর কার বা বাইকে উঠা ভালো। আনইজি লাগতে পারে। কিন্তু ঐখানে আপনার পুরা জার্নিটা ট্র্যাক করা হয়, ড্রাইভার/রাইডার এবং কার/বাইক এর ইনফরমেশনও থাকে। তাই সিকিউর বলা যায়। টাকা বেশি লাগুক। জীবনের মূল্যটা বেশি।

চোখ-কান খোলা রেখে চলবেন। নরমালি আপনি যে রাস্তায় নিয়মিত হাঁটেন, খেয়াল রাখবেন কেউ আপনাকে ফলো করছে কিনা। নিয়মিত এক রাস্তায় না চলে মাঝে মাঝে রুট চেঞ্জ করবেন। নিজের নিরাপত্তাটা নিজেরই নিশ্চিত করতে হবে। কারো ভরসায় থেকে লাভ নেই !

এই লেখাটা পারলে শেয়ার করেন। আমার ফ্রেন্ড আর ফলোয়ার লিস্ট মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের অর্ধেকের কাছেও যদি এটি পৌছায়, হয়তো অনেকের লাইফ সিকিউর হবে। প্রতিদিনই আমার আপনার মা-বোন-বান্ধবী কিংবা আপনজন বাইরে বের হচ্ছে। তাদেরকে সতর্ক করা আমাদের দায়িত্ব !!

আপনার বাসায় যারা আছেন, কাছের মানুষ যারা আছেন, তাদেরকে জানান, সতর্ক করেন। আমরা আসলে নিজেরা বিপদে পড়ার আগ পর্যন্ত টের পাই না যে কতটা সতর্ক থাকা দরকার ছিল !

“আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।”

KUET