banner

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 15, 2024

 

জন্ম মরণের ইতিহাস খুঁজি

ডা. মারুফ রায়হান খান


তিনি এই নিয়ে ৪ বার গর্ভধারণ করলেন। গর্ভে ৩ মাস, ৪ মাস, ৬ মাস থেকে তারা ৩ অপূর্ণ সত্ত্বা মরে গেলো। এবারে যে এসেছে গর্ভে তার বয়স ২১ সপ্তাহ। হঠাত করে গতকাল থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে শকে চলে গেলো পেশেন্ট…বাচ্চা তো টেকার আশা নেই-ই, মা-কে শেষ পর্যন্ত আই সি ইউতে পাঠাতে হলো। ৭ বছরের সংসার জীবনে এখনও সন্তানের মুখই দেখা হয়নি তার, ‘মা’ ডাক শুনে অন্তর জুড়ানো তো আরও অনেক দূরের গল্প।

১০ বছর, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর পেরিয়ে গেলো দাম্পত্যজীবনের। কতো জায়গায় ঘুরলো, কতো ডাক্তার দেখালো। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর কিছু তো বাদ নেই। শুধু একটা সন্তানের আশায়। জীবনে আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই। শুধু একটা সন্তান চায়। স্রষ্টার কাছে কতো কেঁদেছে, কতো আকুতি-মিনতি করেছে। যতো টাকা লাগুক চিকিৎসায়, জায়গা-জমি সব বিক্রি করে দেবে, যা করতে বলবে করবে–শুধু সন্তানের মুখটা দেখতে চায়। এক মানব জীবন পূর্ণ করতে চায়। পারে না। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারে আর সন্তান এলো না। কতো শত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার আর কান্নার গল্প।

আমরা প্রায়ই এমন রোগী পাই যারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান ধারণ করে ফেলেন। এই বাচ্চা রাখতে তারা কিছুতেই চান না। কতো বাচ্চা পূর্ণাঙ্গ শরীর ধারণ করে ফেলে, হৃদয় স্পন্দিত হতে থাকে–তবুও তারা নষ্ট করে ফেলেন। এবোর্টিফেশিয়েন্ট ওষুধ খান। এটা সেটা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে মেরে ফেলেন। অবৈধভাবে অবৈধ মানুষ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নষ্ট করিয়ে ফেলেন। ওয়ার্ডে একবার দেখেছিলাম মা’টা বাচ্চা নষ্ট হবার ওষুধ খেয়ে এসেছিলেন–হসপিটালে এসে ১৯ সপ্তাহের সেই সত্ত্বাটি যখন বের হলো, এই এতোটুকুন হাত-পা-নাক-কান-গলা-বুক-পেট…ছোট্ট বুকে ছোট্ট হৃদয়টা তখনও স্পন্দন দিয়ে যাচ্ছিলো…।

হায়রে বাচ্চা! কতোজনের পরম আরাধ্য আবার কতোজনকে বিপদে ফেলে দিয়ে, অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে জন্মের আগেই মরে যাবার ইতিহাস…

নদীর এপার আর ওপার…

আমার খুব প্রিয়…রবীন্দ্রনাথ…
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস…।