banner

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 15, 2024

 

“বন্ধ্যাত্বের জন্য কোনক্রমে কি আপনি দায়ী”—ডা.মারুফ রায়হান খান

১ বছর যাবত অরক্ষিত শারীরিক মিলনের পরেও গর্ভধারণ না করতে পারাটাকেই বন্ধ্যাত্ব বলা হয়। প্রজননের বয়সের ১০-১৫% দম্পতি এ সমস্যায় ভুগে থাকেন।
img20171210_233801
অনেকগুলো জীবনযাত্রার ব্যাপার আছে যার প্রাকৃতিক জন্মদানক্ষমতার ওপর প্রভাব রয়েছে। সেগুলো হলো :
img20171210_234142
১. বয়স : বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। পুরুষের বয়সও গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের অক্ষমতাটা শেষ বয়সে পরিলক্ষিত হয়।
img20171210_234109
২. বিগত মাসিকের দশম থেকে আঠারোতম দিনে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টাতেই যৌনমিলন করা প্রয়োজন।
img20171210_234049

৩. সাফল্য পেতে প্রতি ১-২ দিনে একবার যৌনমিলন করা উচিত। তবে মানসিক চাপ থেকে রেহাই পেতে, আরও কম যৌনমিলন করা গ্রহণযোগ্য।
img20171210_234214
৪. কোনো নির্দিষ্ট আসনে যৌনমিলন গর্ভধারণের সম্ভাবনার উন্নতি ঘটায় না।

৫. বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) যদি অনেক বেশি থাকে (>৩৫) বা অনেক কম থাকে (<১৯) তবে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়। img20171210_233931
৬. ধূমপান, মদ্যপান (দিনে ২ বারের বেশি) এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান ( দিনে ৫ কাপের বেশি) বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. স্বামীর জন্যে – উষ্ণ, আঁটসাঁট, নাইলনের অন্তর্বাস পরিহার করা উচিত। তাদেরকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে বলা হয়। কারণ শরীরের অভ্যন্তরে যে তাপমাত্রা তারচেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপমাত্রা অণ্ডথলিতে থাকতে হয় কার্যকর শুক্রাণু তৈরির জন্যে।
img20171210_234235
৮। খাবার : মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের কিছু ভূমিকা আছে সন্তান জন্মদান-সক্ষমতার ক্ষেত্রে। ফলিক এসিড এবং জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে শুক্রাণু তৈরি কমে যেতে পারে। তাছাড়া খাবারে এন্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন : বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, রেটিনল এবং আলফা টকোফেরোলের ঘাটতি থাকলে জননতন্ত্রের নিঃসরণ কমে যেতে পারে। ফলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।

৯. অনেক দম্পতি যৌনমিলনের সময় শুষ্ক যোনিপথের কারণে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহার করেন। এসব পদার্থ প্রায়শই অম্লীয় হয়ে থাকে এবং শুক্রাণুকে হত্যা করে।

১০. অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমায়।

১১. সামাজিক শ্রেণি : গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহুরে নারীদের বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ বেশ বেশি। কারণ উচ্চশ্রেণির নারীরা তাদের ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা না করে সাধারণত সন্তান নিতে চান না। আবার কিছু কিছু রোগ এ শ্রেণির মধ্যে বেশি হয়; যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, যা নিজেই কিনা বন্ধ্যাত্বের জন্যে দায়ী। যে বয়সে এসে প্রাকৃতিকভাবেই সন্তান জন্মদানের ক্ষমত কমে যায় এবং বিভিন্ন গাইনোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, তখন সন্তান নেবার চেষ্টা বন্ধ্যাত্বকে প্রভাবিত করে।
img20171210_234125
১২. সন্তান জন্মাদানের সক্ষমতার ওপর কিছু কিছু ওষুধের প্রভাব আছে।

তাই নিঃসন্তান দম্পতির দুজনকেই গাইনী বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া উচিত।

 

রত্নগর্ভা এক মায়ের গল্প

২০১৭ সালে পেয়েছেন সেরা জয়িতা- রত্নগর্ভা অ্যাওয়ার্ড ‘রত্নগর্ভা মা’ মোছা:হামিদা বেগম। সুন্দর আলোয় উদ্ভাসিত এই মা নিজের দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস ও সততা কারণে গৌরব অর্জন করেছেন।
img20171210_145908
মা তার সন্তানদের রত্ন বানানোর স্বপ্ন থেকে কখনও সরেননি একচুলও।

একজন গ্রাম্য মাতব্বরের খুব সাধারণ স্ত্রী ছিলেন তিনি। এক সংগ্রামী মা। তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। যে সংগ্রামের শুরু তার শৈশব। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন তার বড় পরিচয় তিনি একজন সফল মা।
হামিদা বেগম ছিলেন একান্নবর্তি সংসারের পরিবারের বউ আর তাই দায়িত্বটাও ছিল বেশি। ৩০/ ৩৫ জনের ঢেকি-হেঁসেল-হাড়ী ঠেলে ক্লান্ত। হাজবেন্ড কর্মপাগল সামাজিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততার জন্য সন্তানদের শাসন-সোহাগের যে শুন্যতা তৈরী হত তাও তিনি একাই পুষিয়ে দিয়েছেন। সব ক্লান্ত ঠেলে সেই মা রাতের বিছানায় স্বপ্ন বুনতেন রোজ। সংকল্প করেন হামিদা সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলার।

হামিদা বেগমের ছেলে মেয়েরা সবাই স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছেন। তার সন্তানদের সম্পর্কে জানা যায়,

বড় সন্তান ড. আব্দুস সালাম আযাদী। তিনি লেখাপড়া করেছেন রিয়াদের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল সহ মাস্টার্স। বৃটেনের অয়েলস এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি প্রখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

মেজো ছেলে, আর্মি মেডিক্যাল কোরে জয়েন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন।

ছোট ছেলে আব্দুস সামাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে ইংরেজী বিভাগ থেকে এম এ করেছেন। বর্তমানে ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন।

বড় মেয়ে তাসলিমা রহমান একটি কুরআন একাডেমি পরিচালনা করছেন। হাজবেন্ড একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল।

মেজো মেয়ে সেলিনা হাবীব কামিল এম এ। একটি ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসায় অধ্যাপনা করছেন। তার হাজবেন্ড একটি মহিলা মাদরাসায় অধ্যাপক।

সেজো মেয়ে নুরুন্নাহার লাভলি কামিল এম এ করেছেন।একটি কুরআন একাডেমির ইনস্টাক্টর হিসাবে আছেন।

এরপর নাজমুন্নাহার স্বপ্না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ করেছেন। তার হাজবেন্ড কর্মরত আছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে।

সবার ছোট শামসুন্নাহার মলি আই আই ইউ সি থেকে ইংরেজীতে অনার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে আছেন ফেমিলী সহ।

মা কে নিয়ে একজন সন্তান লিখেছেন— ‘তার ঘরটি ছিল মাটির কিন্তু তিনি সোনা ফলানোর স্বপ্ন দেখতেন। শীতের রাতে যে বিছানাটাতে ঘুমোতেন সেটার ভিতরে তুলো ছিলো না। যে জায়নামাজে বসে আরশের মালিকের কাছে আমাদের জন্য হাত তুলে বসে থাকতেন সেটা মখমলের ছিল না। এতগুলো ভাইবোনের কত প্রয়োজন মিটাতে হত অথচ তার হাতে দুটো টাকা থাকতো না। অনেক বড় বড় স্বপ্নভরা গল্প শুনাতে শুনাতে আমাদের দুচোখে স্বপ্ন এঁকে দিতেন।’

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত আট সন্তানের এই জননী। তিনি প্রতিটি সন্তানকে শিক্ষায় এবং নৈতিকতায় পরিপূর্ণ আলোয় আলোকিত করে তুলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন।

আট সন্তানকে গর্ভে ধারন করে তিনি যেমন মা হয়েছেন আবার গর্ভে ধারন না করেও অনেকের মা ডাক শুনে যাচ্ছেন। স্বমহিমায় উজ্জ্বল পথের দিশারী অন্যদের কাছেও।

ফাতেমা শাহরিন