banner

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: April 15, 2024

 

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য “সুন্দর সামাজিক পরিবেশ” -ফাতেমা শাহরিন

শিশুদের সুস্থতার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও।মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সুষ্ঠ স্বাস্থ্যকর সামাজিক পরিবেশ ভূমিকা অপরিসীম। সন্তানদের মা-বাবাসহ এবং সকল কেয়ারগিভারদের (দাদা-দাদীসহ সকল পারিবারিক সদস্য) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান জানা থাকলে মানসিক বিকাশ সুন্দর হয়।
img20171204_233625
প্রবাদে আছে “একটি মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুর পেছনে কাজ করে একটি অসুস্থ পরিবারের প্রভাব।”
শিশুটি পরিবারের সবার সন্তান। মা-বাবার অথবা অন্যান্য পারিবারিক সদস্যদের মাঝে যদি সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে ছেলেমেয়েদের মনের গঠন প্রক্রিয়ার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
img20171204_225706
আসুন প্রথমে জানা যাক ‘সামাজিক পরিবেশ’ আসলে কি?
সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠে মুলত এই তিনটি সেক্টর মাধ্যমে।যেমন-
img20171204_234018
একজন ব্যক্তির চারপাশের পরিবেশ(physical surroundings): একজন বক্তির চারপাশের পরিবেশ বলতে নিরাপদ ঘর, শিক্ষার সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি এবং বিনোদন অন্তর্ভুক্ত।
img20171204_225756
জনসমাজ (community resources):জনসমাজে অন্তর্ভুক্ত আছে হোম পলিটিক্স, গড়ে ওঠা সংগঠন, যেখানে থেকে শিশুরা পায় নানান জ্ঞান, দক্ষতা এবং সামাজিকতা।
img20171204_224508
সামাজিক সম্পর্ক (social relationships): পরস্পরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক, একে অপরের সাথে আবার দল বা গ্রুপের সাথে ইতাদি।
শিশুদের সামাজিকভাবে বিকশিত করার জন্য তাই এই তিনটি সেক্টরের গুরুত্বপূণ ভূমিকা আছে। মনে রাখতে হবে, এখানে শিশুদের সামাজিক ক্ষেত্র হল “পরিবার”।

এবার অসুস্থ সামাজিক পরিবেশের কতকগুল বৈশিষ্ট্য দেখি,
img20171204_225308
♦দাম্পত্য কলহ:
মা-বাবার মধ্যে অথবাা অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে সর্বদাই যদি খিটিমিটি বা দাম্পত্য কলহ লেগে থাকে। তাহলে মা-বাবার স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যেমন ক্ষুণ্ণ হয় তেমনি তাদের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। ফলে তার পভাব সন্তানের উপর পড়ে।
img20171204_225356
♦বাবার মেজাজ:
অত্যাধিক কড়া বাবা “বাবার হুকুমই সর্বোচ্চ হুকুম”। বাবা যখন রাগী এবং রুক্ষ স্বভাবের, হুকুমের নড়চড় হলে বাড়িতে অশান্তি বেঁধে যাবে। শিশুদের মনের ভেতরে রাগ ক্ষোভ বা বেদনা ধুমায়িত হয়ে ঘোরাফেরা করে।
img20171204_225442
♦রাগী মা:
খুব ব্যক্তিত্বশালী মায়েরা সংসারে ঠিক উল্টো ছবি আঁকেন। তার রাগারাগির ভয়ে শিশুরা তটস্ত হয়ে থাকে।কখনো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে উঠতি বয়সী শিশুরা। মায়ের এতবেশি নিয়মকানুন মানতে রাজি থাকেন না তারা।
img20171204_234602
♦অন্যান্য কেয়ারগিভারের আচরণ:
দাদা দাদীরা যদি বাবা বা মায়ের নামে বিভিন্ন অভিযোগ নাতী নাতনীর কাছে পেশ করে। অথবা কেয়ার গিভারদের সম্পর্কে অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং দুই পরিবারের সদস্য সম্পর্কে বাবা অথবা মা সন্তানদের কাছে বিরূপ এবং বিভিন্ন দোষারোপ করে এক্ষেত্রে বাচ্চাদের সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
যেহেতু শিশুর সমাজ বলতে তার পরিবার, রাষ্ট্রও তার পরিবার।
img20171204_225212
অসুস্থ সামাজিক বিকাশের ফলে বাচ্চাদের আচরণগত কতকগুল সমস্যা দেখা যায়।
সেগুল হলো-
১.শিশুরা অস্বাভাবিক চালচলন শুরু করে।জেদ, রাগ, মারামারি।
২.ঠিকমতো স্কুলে না যায় না।
৩.পড়াশোনায় ভালোভাবে মনোযোগ দেয় না।
৪.রাতের বেলা না ঘুমানো।
৫.মিথ্যা কথা বলে।
৬কথায় কথায় বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্ক করে বা বাবার হুকুম অমান্য করার সাহস দেখায়।
৭.খাওয়ার টেবিলে খাবার ছুড়ে ফেলে।

শিশুটি কি আদৌ সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বড় হচ্ছে নাকি সামাজিক পরিবেশে সমস্যা আছে। খুঁজে দেখুন। আমরা আমাদের শিশুটিকে সুশীল করে গড়ে তুলতে চাই। এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তোলা সম্ভব কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহাতীত প্রশ্ন আছে।

তাহলে শিশুদের ভবিষ্যৎ এর জন্য কি করব আমরা?
img20171204_225016
♥বাবা-মার নিজেদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি:
শিশুরা যেহেতু প্রতিটি মা-বাবাদের খুবই প্রিয় এক অস্তিত্ব। সুতরাং মা-বাবা তাদের জীবনে সুন্দর করার লক্ষ্যে সর্বদাই নিজেদের সুখ ও শান্তির দিকে শুধু নয় বরং সার্বিক সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখবে। নিরাপদ বসবাসের জন্য পৃথিবীটাকে তাদের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হলে হতে হবে সচেতন।
img20171204_230130
♥পারিবারিক সুন্দর বন্ধন:
একটি শিশু যদি পরিবারে জন্ম না নেয়, তাহলে সেই পরিবারের মুখ থেকে হাসি হারিয়ে যায়। নিজেদের খুবই দুর্ভাগা বলে মনে করে। শিশুটি জন্মের পর থেকে যেন পুরো পরিবারের বন্ধনগুলর বিশৃঙ্খলার জন্য শিশুর বিকাশে সমস্যা হয়ে না দেখা যায় সে জন্য পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে যেন থাকে সুন্দর বন্ধন।
img20171204_224533
♥শিশুকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিযোগী না হয়ে ওঠা:
আজকাল শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে সীমাহীন এবং অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ঢুকে গেছে যা শিশুদের কোথাও আর ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগ দেয় বা। আজকাল শিশুদের মা-বাবারা অন্য শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় করে। ফলে শিশুটি পরীক্ষায় ফল খারাপ করলে মা-বাবা তার সঙ্গে কথা বলে না। স্বামী-স্ত্রীর ভেতর শিশুকে নিয়ে প্রচণ্ড বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এই নোংরা প্রতিযোগিতা ক্ষতিকর। সুতরাং সচেতনতা প্রয়োজন।
img20171204_231409
শিশুদের জন্য যেমন গভীর ভালবাসা আছে তেমনি দ্বায়িত্ববোধ। আমরা যা কিছু করি না কেন, সব সময়ই থাকে শিশুরা আমাদের জীবনের প্রতিটি ভাবনায় নিয়ে, তাই আমরা সবসময় তাদের কল্যাণ চাই। আমরা তাদের অনেক ভালোবাসি।